-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
আরবী মাসের অষ্টম মাস শা’বান। আল্লাহ পাক বান্দাকে ক্ষমা করে কবুল করে নেয়ার জন্য যে বিশেষ মাস ও দিন নির্ধারণ করেছেন তন্মধ্যে শা’বান মাস এবং এতে অবস্থিত শবে বরাতের দিনটি উল্লেখযোগ্য। বস্তুতঃ এ মাসটি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে বান্দার প্রতি তথা আখিরী উম্মতের প্রতি এক মহান ইহ্সান।
হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক শা’বানের পনের তারিখ রাত্রিতে (শবে বরাতে) বণী-কল্ব, বণী-মুদ্বার, বণী-রবী এই তিন গোত্রের বকরী ও ভেড়ার পশমের সমপরিমাণ আমার গুনাহ্গার উম্মতকে ক্ষমা করে থাকেন। বর্ণিত আছে, উক্ত প্রত্যেক গোত্রে বিশ হাজারেরও অধিক বকরী ও ভেড়া ছিল। অর্থাৎ আল্লাহ পাক এ উম্মতের সকলকেই ক্ষমা করে দিবেন; যারা উক্ত রাত্রিতে খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার করবে।
এ রাতটির মহত্ব ও বড়ত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে যামানার মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী পূর্ববর্তী যামানার একটি বিশেষ রাতের ফযীলতের কথা বর্ণনা করেন যে, পূর্ববর্তী যামানার উম্মতদেরকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহ পাক বিশেষ একটি রাত্রি দিয়েছিলেন। একবার সেই বিশেষ রাতটি যখন আসলো তখন আল্লাহ পাক হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালামকে বলে পাঠালেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম! আজকে রহমতের রাত্রি, বরকতের রাত্রি, মাগফিরাতের রাত্রি। আপনি যমীনে গিয়ে দেখেন তো আমার বান্দারা কে কি অবস্থায় রয়েছে। হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম সারা যমীন ঘুরে বান্দাদের অবস্থা দেখে আল্লাহ পাককে জানালেন, বারে ইলাহী! আপনার বান্দাদের জন্য আফ্সুস! সমস্ত বান্দারা ঘুমিয়ে রয়েছে। কেবল এক হিন্দু ঠাকুর, সে এক মন্দিরে মূর্তির সামনে বসে ছনম ছনম অর্থাৎ মূর্তি মূর্তি বলে জপছে। সে হিন্দু ঠাকুরের গলায় পৈতা, পরনে ধুতি, মাথায় টিকি। বারে ইলাহী! আপনি যদি ইজাযত দেন তাহলে আমি সেই হিন্দু ঠাকুরকে মন্দির ও মূর্তিসহ উল্টিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে দিয়ে আসি। আল্লাহ পাক বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম! অপেক্ষা করুন। হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম অপেক্ষা করতে লাগলেন।
পরবর্তী বৎসর আবার যখন সেই রহমতের রাত্রি, বরকতের রাত্রি, মাগফিরাতের রাত্রি আসলো তখন পুনরায় আল্লাহ পাক হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালামকে ডেকে বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম! এবার যমীনে গিয়ে দেখেন তো বান্দারা কে কি অবস্থায় রয়েছে। আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ পেয়ে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম সারা যমীন ঘুরে এসে আল্লাহ পাককে জানালেন, বারে ইলাহী! আপনার বান্দাদের জন্য আফ্সুস! এবারও সমস্ত বান্দারাই ঘুমিয়ে আছে। তবে একজন বান্দাকে পাওয়া গেছে আল্লাহ পাক! যে এক ইবাদতখানায় বসে আপনার নাম মুবারক ছমাদ (বেনিয়াজ) ‘ছমাদ’ (বেনিয়াজ) বলে যিকির করছে। আল্লাহ পাক বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম! আপনি কি সেই বান্দাকে চিনতে পেরেছেন? হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম বললেন, বারে ইলাহী! আপনার লক্ষ-কোটি বান্দাদের মধ্যে সবাইকে তো আমার পক্ষে চেনা সম্ভব নয়। তখন আল্লাহ পাক বললেন, আপনার কি স্মরণে আছে সেই হিন্দু ঠাকুরের কথা! যাকে আপনি মন্দির ও মূর্তিসহ উল্টিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম বললেন, বারে ইলাহী! সেই কথা তো আমার স্মরণে আছে। আল্লাহ পাক বললেন, এই বান্দা তো সেই বান্দা। হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম বললেন, বারে ইলাহী! সেই বান্দা এখানে কি করে আসলো? আল্লাহ পাক বললেন, সেই রহমতের রাত্রিতে, বরকতের রাত্রিতে, মাগফিরাতের রাত্রিতে হিন্দু ঠাকুরের যবান পিছলিয়ে হঠাৎ ছনমের পরিবর্তে সে একবার ‘ছমাদ’ বলে ফেলেছিলো আর তৎক্ষণাৎ আমি তার ডাকে সাড়া দিয়ে বলেছিলাম, লাব্বাইকা ইয়া আবদী- হে আমার বান্দা তুমি কোথায়! তোমার বয়স নব্বই হয়ে গেছে। পিঠ বাঁকা হয়ে গেছে। আর কতকাল তুমি ছনম ছনম (মূর্তি মুর্তি) বলে ডাকবে? তোমার মূর্তি তো একবারের জন্যেও তোমার ডাকে সাড়া দেয়নি। কাজেই, তুমি তওবা করে এখনও ফিরে আস। তখন সে বান্দা তওবা করে মূর্তিকে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে মন্দির থেকে বের হয়ে তার গলার পৈতা ছিড়ে, মাথার টিকি কেটে, ধুতি পাল্টিয়ে লুঙ্গি, কোর্তা, টুপি, পাগড়ী পরিধান করে ইবাদতখানায় প্রবেশ করে ‘ছমাদ’ ‘ছমাদ’ যিকিরে মশগুল হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ।
মুজাদ্দিদে আ’যম মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেন, আল্লাহ পাক আখিরী উম্মতকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য খাছ করে বরাতের রাতটি দিয়েছেন। এ রাতে কোন উম্মত যদি খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করে তাহলে তার বিশ, চল্লিশ, আশি, নব্বই, একশ’, দুইশ’ বছরেরও যদি গুনাহখাতা থাকে সেটাও আল্লাহ পাক চোখের পলকে ক্ষমা করে তাকে মা’ছূম হিসেবে কবুল করে নিবেন। সুবহানাল্লাহ।
কাজেই এ রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের রাত্রিতে প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত হবে, সারারাত সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করা ও নিজের অতীত জীবনের গুনাহখাতা থেকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করা এবং দিনের বেলা রোযা রাখা।
মাহে রজব ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা
সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং প্রাসঙ্গিক আলোচনা
মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা