মাহে শা’বান ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সংখ্যা: ২১৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ

 

মাহে শা’বান আরবী মাসের অষ্টম মাস। এ মাসটির অন্যতম ও বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতটি।’ এই রাতটিকে কুরআন শরীফ-এ ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ এবং হাদীছ শরীফ-এ ‘লাইলাতুন্ নিছফি মিন শা’বান’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ফার্সী ভাষায় এই রাতটিকে বলা হয় ‘শবে বরাত’ বা ভাগ্য রজনী এবং এ নামেই আমাদের এ উপমহাদেশে রাতটি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।

এ মাস ও তন্মধ্যে অবস্থিত উক্ত রাতটির ফযীলত ও আমল সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘মাহে রজব ও রমযান শরীফ-এর মধ্যখানে এমন এক মাস রয়েছে, যার মর্যাদা সম্পর্কে মানুষের জানা নেই। এই মাসে মানুষের আমল আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট পৌঁছানো হয়। সুতরাং আমার আকাঙ্খা, যখন আমার আমল আল্লাহ তায়ালা উনার দরবারে পৌঁছানো হয় তখন যেনো আমি রোযা অবস্থায় থাকি।’ অর্থাৎ মাহে শা’বান-এর চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতটিতে মানুষের বিগত এক বছরের আমলগুলি আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট পেশ করা হয়।

বস্তুত শা’বান মাসের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতটিই হচ্ছে সেই বরকতপূর্ণ রাত যেই রাতটিতে কেবল আমলনামা আল্লাহ পাক উনার দরবারে  পেশ করা হয় না বরং বান্দার রুযী-রোযগার, হায়াত-মউত ইত্যাদি বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরও ফায়ছালা করা হয়।

যেমন এ প্রসঙ্গে সূরা দুখান-এর ৪নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “এটি এমন এক রাত, যে রাতে সমস্ত প্রজ্ঞাসম্পন্ন বিষয়ের ফায়ছালা করা হয়।”

হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘শা’বান-এর মধ্য রাতে হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম আমার নিকট আগমন করে বলেন, আসমানের দিকে মাথা মুবারক উত্তোলন করুন, কেননা এটি বরকতের রাত। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেই বরকত কি? তিনি বললেন, এ রাতে আল্লাহ তায়ালা তিনি রহমতের তিনশ’ দরজা খুলে দেন এবং উনার সাথে যারা শরীক করে না তাদেরকে ক্ষমা করে দেন। তবে জাদুকর, গণক, সর্বদা মদ্যপায়ী, সুদখোর, ব্যভিচারী- এরা খালিছ তওবা না করা পর্যন্ত ক্ষমা পাবে না।’

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, ‘এই মুবারক রাতটির চতুর্থাংশ অতিবাহিত হওয়ার পর হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম পুনরায় আমার কাছে আসেন এবং বলেন, আপনার মাথা মুবারক উত্তোলন করুন। আমি মাথা মুবারক উঠিয়ে আসমানের দিকে তাকিয়ে দেখতে পাই, জান্নাতের সব দরজা খোলা রয়েছে। প্রথম দরজায় একজন ফেরেশতা দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছেন, যে এই রাতে রুকু করে, তার জন্য সুসংবাদ। দ্বিতীয় দরজায় দণ্ডায়মান ফেরেশতা ডেকে বলছেন, যে এই রাতে সিজদা করে, তার জন্য সুসংবাদ। তৃতীয় দরজায় দাঁড়ানো ফেরেশতা ডেকে বলছেন, যে এই রাতে দুয়া করে, তার জন্য সুসংবাদ। চতুর্থ দরজায় দাঁড়ানো ফেরেশতা ঘোষণা করছেন, যে এই রাতে আল্লাহ তায়ালা উনার ভয়ে কান্নাকাটি করে, তার জন্য সুসংবাদ। পঞ্চম দরজায় দাঁড়িয়ে একজন ফেরেশতা বলছেন, আজ রাতে যে তাসবীহ-তহালীল পাঠ করেছে, তার জন্য সুসংবাদ। ষষ্ঠ দরজায় দাঁড়িয়ে আরেকজন ফেরেশতা বলছেন, এই রাতে সকল মুসলমানের জন্য সুসংবাদ। সপ্তম দরজায় দাঁড়িয়ে একজন ফেরেশতা ডেকে বলছেন, কারো কিছু প্রার্থনা করার থাকলে করুক, তার প্রার্থনা পূরণ করা হবে। অষ্টম দরজায় দাঁড়ানো ফেরেশতা বলছেন, মাগফিরাত বা ক্ষমার আবেদন জানাবার কেউ আছে কি? তার আবেদন কবুল করা হবে।’ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ‘আমি হযরত জিব্রীল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, জান্নাতের এইসব দরজা কখন পর্যন্ত খোলা থাকে? তিনি বললেন, ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত। আরো বললেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি এই রাতে বণী কালব গোত্রের মেষের পশম সংখ্যক লোককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন।’ (গুনিয়াতুত্ ত্বালিবীন)

অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত এ মুবারক রাতটিতে সারা রাত সজাগ থেকে ইবাদত-বন্দিগী করা, নিজের গুনাহসমূহ হতে তওবা-ইস্তিগফার করা, মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দরবারে কাকুতি মিনতি সহকারে কান্নাকাটি করা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায় মহান আল্লাহ তায়ালা উনার রহমত প্রার্থনা করা সর্বোপরি মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মত ও পথে ইস্তিক্বামত থাকার তাওফীক কামনা করা। আর দিনের বেলায় রোযা রাখা।

স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মনোনীত ওলীগণ উনাদের ওসীলায় বান্দাগণকে ক্ষমা ও কবূল করে থাকেন। তাই দুয়া কবুলের এ খাছ রাতটিতে পরিপূর্ণ বারাকাত, ফুয়ূযাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত লাভ করার জন্য যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদ আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মক্ববূল মুনাজাত শরীফ-এ শামিল হওয়া কর্তব্য। সরাসরি উপস্থিত থেকে শামিল হতে পারলে উত্তম। অন্যথায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অথবা ইন্টারনেট Voci al Hikmah এবং Paltalk-এ ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস রুম Noorun Ala Noor-এর মাধ্যমে শামিল হওয়া উচিত। মহান আল্লাহ পাক কবুল করার মালিক।

মাহে রমাদ্বান শরীফ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

 মাহে শাওয়াল ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

সম্মানিত রজবুল হারাম শরীফ, সম্মানিত শা’বান শরীফ ও সম্মানিত রমাদ্বান শরীফ মাস এবং উনাদের প্রাসঙ্গিক আলোচনা

  মাহে যিলক্বদ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা

মাহে যিলহজ্জ ও তার প্রাসঙ্গিক আলোচনা –