আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
মুহলিকাত (আত্মার ধ্বংস সাধনকারী, বদ খাছলত) পরিত্যাগ করা এবং মুনজিয়াত (আত্মার সুস্থতা দানকারী, নেক খাছলত) অর্জন করাই ইলমে তাছাওউফের লক্ষ।
যিনি যত বেশি বদখাছলত স্বভাব থেকে দূর করতে পারবেন তিনি তত বেশি নেক খাছলতের অধিকারী হতে পারবেন। আর যিনি যত বেশি নেক খাছলত অর্জন করতে পারবেন তিনি তত বেশি নৈকট্যশীল, মর্যাদাসম্পন্ন, হুসনুল খুলুক বা সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিত্ব। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই বদখাছলত পরিত্যাগ করতে না পারলে তার জিন্দিগীই বৃথা। কেননা সে সচ্চরিত্রবান হতে পারবে না। সে যত কিছু দাবী করুক না কেন তা সবই মিথ্যা বা কল্পনাপ্রসূত, ধোকা বা প্রতারণা এবং আত্মপ্রস্বাদে পর্যবসিত হবে। সে উদ্দেশ্য ও লক্ষভ্রষ্ট সালিক বা সাধক। সাধনার জগতে ব্যর্থ।
হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা মুহলিকাত (ধ্বংস সাধনকারী) পরিত্যাগ এবং মুনজিয়াত (মুক্তি দানকারী) গুণাবলী অর্জন করার জন্য দশটি গুণকে মৌলিক গুণ বলে মনে করে থাকেন। উনারা বলেন, এই দশটি গুণাবলী স্বভাবে বদ্ধমূল করতে পারলে অন্যান্য গুণাবলীগুলো সহসাই স্বভাবে বদ্ধমুল হয়ে যাবে। যার ফলে মুহলিকাত বা ধ্বংস সাধনকারী বিষয়াবলী কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারবে না। তখন সে হাক্বীক্বী মানুষ হতে পারবে। হাক্বীক্বী ঈমানদার হাক্বীক্বী মু’মিন হতে পারবে।
সচ্চরিত্রবান হওয়ার জন্য মৌলিক দশটি গুণ
হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা সচ্চরিত্রবান হওয়ার জন্য দশটি গুণকে মৌলিক গুণ মনে করেন। উনারা বলেন, যারা এই দশটি গুণাবলী হাছিল করতে পারবেন তারা সচ্চরিত্রবান ব্যক্তিত্ব বলে পরিগণিত হবেন। তার দ্বিতীয় গুণাবলী হচ্ছে- ‘ইনাবত’।
انابة (ইনাবত) অর্থ: মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আকৃষ্ট হওয়া। খালিছভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু বা প্রত্যাবর্তন করাকে ইনাবত বলে। রূহ লতিফা ইনাবতের মাকাম। তরীক্বতের মাকাম হাছিলে মনোনিবেশ করা। কোনো মাকাম হাছিলের পর তাতে তৃপ্ত হওয়া উচিত। হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে তৃপ্ত সে বঞ্চিত। যে অতৃপ্ত সেই প্রাপ্ত।”
কাজেই অধিকতর নিগুঢ় রহস্যের প্রতি ঝুঁকা, মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দরবার শরীফে খাছ নৈকট্য বা মাকাম অর্জনের জন্য দৃঢ়ভাবে রুজু হওয়া। অতঃপর সবকিছু হতে জুদা (পৃথক) হয়ে একাগ্রচিত্তে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে মনোনিবেশ করা।
প্রথম গুণাবলী হচ্ছে তওবার মাক্বাম। ক্বলব লতিফা হচ্ছে তওবার মাক্বাম। সালিক বা মুরীদ ক্বলব লতিফা সবক আদায় করতঃ ক্বলব লতিফায় ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ যিকির জারি বা চালু হলে স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে তা জানাতে হবে। তিনি প্রয়োজনবোধ করলে রূহ লতিফা যা ইনাবতের মাক্বাম তা হাছিলের অনুমতি দান করতঃ সবক আদায়ের নির্দেশ দিবেন। উনার ইজাযত বা অনুমতি পেলে রূহ লতিফার সবক তথা মুরাকাবা করবে।
মুরাকাবার হালতে রূহ লতিফা উনার দিকে খেয়াল করে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ যিকির করতে থাকবে। আযীযী-ইনকেছারীর (অত্যন্ত অনুনয়-বিনয়) সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে খাছভাবে রুজু হওয়ার, দুনিয়ার সবকিছু হতে বিমুখ হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে গরক বা মশগুল থাকার তাওফিক মনে মনে আরজু করবে অর্থাৎ মুরাকাবার হালতে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ যিকিরের সাথে সাথে মনে মনে ইনাবতের ফয়েজ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু করবে।
রূহ লতিফা সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বদম মুবারকের নীচে। অর্থাৎ উনার মুবারক উসীলায় ফয়েজ পাওয়া যায়। রূহ লতিফার নূর বা আলো ছোরখ বা লাল।
উল্লেখ্য যে, তওবার মাক্বাম হাছিল করা ব্যতীত কোনো সালিক বা মুরীদ মহান আল্লাহ পাক উনার গোলামীতে এক ক্বদমও অগ্রসর হতে পারে না। যারা তওবা করেন তারা তিন শ্রেণীতে বিভক্ত।
(১) যারা কবীরাহ গুনাহ হতে বিরত থেকে একাগ্রতার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু বা মনোনিবেশ করে তাকে ‘তায়িব’ বা ‘তওবাকারী’ বলে।
(২) যারা কবীরাহ-ছগীরাহ (ছোট-বড়) সকল গুনাহ হতে বিরত থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে খাছভাবে রুজু হয়, সর্বদা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে অন্তরের সম্পর্ক রাখে তাকে ‘মুনীব’ বা ‘ইনাবাতের মাকাম হাছিলকারী বলে।
(৩) যারা তওবা-ইস্তিগফার এবং ইনাবতের সাথে সাথে নিজের অস্তিত্ব ও সত্ত্বাকে মহান আল্লাহ পাক উনার তায়াল্লুক-নিছবত, মুহব্বত, নৈকট্য, সন্তুষ্টি, রেযামন্দির জন্য বিলীন করে দেয় তাদেরকে ‘আওয়ার’ বলে।
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১০৯)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১১০)
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১১১)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১১২)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১১৪)