আল্লামা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
বালয়াম বিন বাউরা ইস্তিক্বামাত
বা অবিচল থাকতে পারেনি।
বালয়াম বিন বাউরা সে তার স্ত্রী ও সম্পদের প্রতি আকর্ষিত ছিল। স্ত্রীই ছিল তার সর্বাপেক্ষা প্রিয় ও আকর্ষনীয়। সেই প্রিয় ও আকর্ষনীয় বিষয় ও বস্তুর মুহব্বত কুরবান বা বিসর্জন না দেয়ার কারণে তার ৩০০ বছরের সাধনালব্ধ নিয়ামত হাত ছাড়া হয়েছে। ফলে সে মরদুদ বা বিতাড়িত হয়েছে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি এ ঘটনার পরেও তাকে অনেক দয়া-ইহসান করেছেন। তিনি তাকে বলেছিলেন- তোমার তিনটি দোয়া কবুল করা হবে। তুমি দোয়া করতে পার। তখন সে দোয়া করলো, মহান আল্লাহ পাক! আমার স্ত্রীর চেহারা- ছূরত বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সে দোয়া কবুল করতঃ তার স্ত্রীর চেহারা-ছূরত বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিলেন। ফলে সে মহিলার প্রতি অনেকেই আকৃষ্ট হলো। এক পর্যায়ে সে মহিলা বালয়াম বিন বাউরাকে রেখে অপর একজন লোকের সাথে চলে গেল। এটা দেখে বালয়াম বিন বাউরা খুবই কষ্ট পেল। সে আবার বদ দোয়া করে বললো, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি তার চেহারা অত্যন্ত কুৎসিত ও কদাকার করে দিন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সে বদ দোয়াও কবুল করলেন। সে মহিলার চেহারা অত্যন্ত কুৎসিত ও কদাকার হয়ে গেল। তখন সে ব্যক্তি তাকে ছেড়ে দিল। সে মহিলা বিভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে লাগলো।
এটা দেখে এলাকাবাসী বালয়াম বিন বাউরার কাছে এসে অনেক কাকুতি-মিনতি করলো। বললো, একটা নিরীহ মানুষকে এভাবে শাস্তি দেয়া ঠিক হয়নি। কাজেই, তার জন্য দোয়া করতে বললো। সে তাদের চাপের মুখে দোয়া করলো, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি তাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সে দোয়া কবুল করলেন। তার স্ত্রীকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিলেন। আর বালয়াম বিন বাউরার তিনটি দোয়াই শেষ হয়ে গেল। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, পবিত্র মা’রিফাত-মুহব্বত, সš‘ষ্টি-রেযামন্দি তালাশ কারীগণের অন্তরে কখনোই কোন বিষয়, বস্তু‘, ব্যক্তি ইত্যাদির প্রতি আকর্ষন থাকতে পারবে না। সবকিছুর আকর্ষনমুক্ত থাকতে হবে। তাহলে স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার প্রতি ফানা হওয়া সহজ ও সম্ভব হবে। আর ‘ফানা ফিশ শায়েখ’ হতে পারলেই ‘ফানা ফির রসূল’ এবং ‘ফানা ফিল্লাহ’ ‘বাকা বিল্লাহ’ উনার মাক্বামে পৌঁছা সম্ভব হবে। অন্যথায় কখনোই এই কাঙ্খিত মাক্বামে উপনিত হতে পারবে না।
আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফেছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘মাকতুবাত শরীফে’ উল্লেখ করেছেন- নফসের ফানা এবং ক্বলবের ফানা হচ্ছে এ পথের প্রথম পদক্ষেপ। নফসের ফানা বলা হয়- নফসের খারাপ খাছলতগুলো হতে নফসকে পবিত্র রাখা। আর ক্বলবের ফানা বলা হয়- ক্বলবকে সর্বপ্রকার আকর্ষন তথা সকল ব্যক্তি, ব¯‘ ও বিষয়ের মুহব্বত হতে ক্বলবকে মুক্ত রাখা।
ক্বলবের ফানা এবং নফসের ফানা
হাছিলের উপায়
মহান আল্লাহ পাক তিনি মানব জাতিকে ভাল-মন্দ উভয় কাজ করার ইখতিয়ার (স্বাধীনতা) দিয়েছেন। সে যা ই”ছা সেটাই করতে পারে। নিয়তকরতঃ কোশেশ করতে থাকলে তার জন্য সেটা সহজ হয়ে যায়।
কাজেই, ক্বলবের ফানা ও নফসের ফানা হাছিলের জন্য সর্বপ্রথম তাকে বিশুদ্ধ নিয়ত বা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা-বিশ্বাসে বিশ্বাসী হতে হবে।
দ্বিতীয়ত: একজন কামিল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত হতে হবে। অর্থাৎ পূর্বের সমস্ত গুনাহ থেকে খালিছভাবে তওবা করতে হবে। আর ভবিষ্যতে কোনো প্রকার গুনাহ করবে না বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
তৃতীয়: শায়েখ উনার নির্দেশ অনুযায়ী নিয়মিত ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে।
চতুর্থত: উনার দেয়া সবক নিয়মিত গুরুত্বের সাথে গভীর মনোযোগের সাথে আদায় করতে হবে।
পঞ্চমত: ফরয-ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা যথাযথভাবে আদায় তো করতেই হবে, এমনকি সুন্নতে যায়িদা বা মুস্তাহাব আমলগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়মিত আদায় করতে হবে। মনে রাখতে হবে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
অর্থ: “আমার বান্দা নফল বা সুন্নতে যায়িদা আমল করতে করতে এমন নৈকট্য হাছিল করে যে, আমি উনাকে মুহব্বত করি। যখন আমি উনাকে মুহব্বত করি তখন আমি উনার কান হয়ে যাই, তিনি সেই কান মুবারকে শোনেন। আমি উনার চোখ হয়ে যাই, তিনি সেই চোখ মুবারক দ্বারা দেখেন। আমি উনার যবান হয়ে যাই, তিনি সেই যবান মুবারকে কথা বলেন। আমি উনার হাত হয়ে যাই, তিনি সেই হাত মুবারক দ্বারা ধরেন। আমি উনার পা হয়ে যাই, তিনি সেই পা মুবারক দ্বারা চলেন। (মুহব্বতের আধিক্যের কারণে) তিনি তখন আমার কাছে যা প্রার্থনা করেন আমি তা উনাকে দিয়ে দেই। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৭৬)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮২)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৩)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৪)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৫) –