রিয়াযত-মাশাক্কাত সম্পর্কে ইমামে রব্বানী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য-২
(সুন্নতের খিলাফ হলে) অতিরিক্ত ক্ষুধার মধ্যে অতীব সূক্ষ্ম অনিষ্ট থেকে যায়। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতপূর্ণ ছোহবত ও সুন্নতের ইত্তিবার কারণে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সে ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। কিন্তু অন্যান্যদের বেলায় বিষয়টি চিন্তার বিষয়।
অর্থাৎ অধিক ক্ষুধা সহ্য করার ফলে বাতেনী ছাফাই বা অন্তর্জগৎ পরিশুদ্ধ হয়ে থাকে যদি সুন্নতের ইত্তিবার নিয়তে হয়। কারো ‘ক্বলব’ বা অন্তঃকরণ পরিশুদ্ধ হয়। আবার কারো ‘নফছ’ বা প্রবৃত্তি (আমিত্ব) পরিষ্কার না হয়ে গুমরাহী বৃদ্ধি পায়। ক্বলবের ছাফাই বা পরিশুদ্ধিতা পথ প্রদর্শক এবং নূর প্রদানকারী, আর নফছের সাধনাকারী পথভ্রষ্টকারী এবং তমসা বর্ধক।
গ্রিক দার্শনিক ও ভারতীয় যোগী সন্ন্যাসীরা অনশন ব্রত পালন করতঃ নফছের গুমরাহী বৃদ্ধি করে তারা পথভ্রষ্ট এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে। নির্বোধ আফলাতুন (প্লেটো) নফছের গুমরাহীর প্রতি নির্ভর করতঃ তদীয় ধারণার বিকশিত মূর্তিসমূহকে অগ্রগামী মনে করে গর্বিত হয়েছিল এবং তৎকালে প্রেরিত নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম উনার প্রতি ঈমান আনলো না বরং বললো যে, “আমরা পথপ্রাপ্ত ও পরিমার্জিত দল। আমাদের জন্য কোনো পথপ্রদর্শকের দরকার নেই।” নাউজুবিল্লাহ! তার নফছের সাধনা ও গুমরাহী যদি তমসা বর্ধক না হতো, তবে তার ধারণার বিকশিত আকৃতিসমূহ তার পথের প্রতিবন্ধক হতো না। আর মতলব বা উদ্দেশ্যে উপনীত হতে বিঘœ ঘটাতো না। আফলাতুন এই গুমরাহীকে পূর্ণ বলে ধারণা করলো, কিন্তু সে জানলো না যে, এটা তার ‘নফছে আম্মারার সূক্ষ্ম চামড়াকেও ভেদ করতে পারেনি। এটা (নফছ) পূর্বের মতোই খবিছ ও অপবিত্রই রয়েছে। এই হতে অধিক নয় যে, এটা মল-মূত্র তথা শর্করা ম-িত করা হয়েছে। ক্বলব স্বভাবতই পবিত্র ও সমুজ্জ্বল। নফছের সংসর্গে তার বদনে মরিচা পড়ে। অতএব, যৎসামান্য চেষ্টা বা কোশেশ দ্বারাই তা পরিষ্কৃত হয়ে তার পূর্ব অবস্থা লাভ করতে সক্ষম হয় তথা নূরানী হয়ে যায়। অবশ্য নফছ এটার বিপরীত। সে স্বভাবতই অপবিত্র, তমসাচ্ছন্নতা তার নিজস্ব গুণ। যে পর্যন্ত তা ক্বলবের প্রভাবে প্রভাবাম্বিত ও পরিচালিত না হয় এবং সুন্নত তথা শরীয়তের অনুকরণকারী সর্বোপরি আল্লাহ তায়ালা উনার একান্ত অনুগ্রহ দ্বারা পবিত্র না হয়, সে পর্যন্ত তার অশুদ্ধিতা বিদূরীত হবে না। কাজেই, তার দ্বারা কোনোরূপ কল্যাণের আশা করা যায় না। পূর্ণ অজ্ঞতা হেতু আফলাতুন তার নফছের গোমরাহীকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার ক্বলবের পরিশুদ্ধিতা বা পরিচ্ছন্নতা তুল্য ধারণা করতঃ নিজেকে উনার অনুরূপ পবিত্র ও পরিমার্জিত জেনেছে। কাজেই, উনার অনুসরণ করার সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত হয়ে অনন্তকালের জন্য ক্ষতিগ্রস্তই রয়ে গেলো।
সুন্নতের খিলাফ পানাহার বর্জন বা ক্ষুধা সহ্য করার মধ্যে এই প্রকারের ক্ষতির সম্ভাবনা আছে বলে এই ত্বরীক্বার বুযুর্গগণ তা পরিত্যাগ করে থাকেন। আর পানাহারের ক্ষেত্রে মধ্যবর্তী অবস্থা অর্থাৎ সুন্নত তরীক্বা বজায় রাখার নির্দেশ দেন। উনারা সুন্নতের খিলাফ ক্ষুধার এই ভয়াবহ ক্ষতির প্রতি লক্ষ্য করে তার উপকারিতা গ্রহণ হতে বিরত থাকেন।
(অসমাপ্ত)
-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৩)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৪)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৫) –
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৬)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার পীর ছাহেব ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৮৭)