হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
স্বীয় শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার গভীর তায়াল্লুক, নিছবত, মুহব্বত তথা নৈকট্য হাছিলের পথে যেমন বিশুদ্ধ নিয়ত সহকারে শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার নির্দেশিত বা তর্জ-তরীকা মুতাবিক আমল বা কোশেশ করতে হবে। তেমনি এ পথে ইস্তিক্বামত বা অবিচল থাকতে হবে। কেননা ইস্তিক্বামত বা অবিচল থাকতে না পারলে কামিয়াবী লাভ করা খুবই কঠিন। মহান আল্লাহ পাক ইস্তিক্বামত বা অবিচল প্রসঙ্গে বলেছেন-
فاستقم كما امرت
অর্থ: “আপনাকে যে বিষয়ে আদেশ করা হয়েছে তাতে আপনি ইস্তিক্বামত বা অবিচল থাকুন।”
তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا اصبروا وصابروا ورابطوا واتقوا الله لعلكم تفلحون.
অর্থ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্যধারণ কর, ধৈর্যশীল হও এবং নেক কাজে লেগে থাক তথা সবসময় নেক কাজে নিমগ্ন থাক এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো বা তাক্বওয়া অবলম্বন করো তাহলে অবশ্যই কামিয়াব হবে। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২০০)
এ পথে ইস্তিক্বামত বা অবিচল থাকার জন্য প্রিয় বস্তুর মুহব্বত হতে অন্তর মুক্ত করা আবশ্যক। কেননা যতক্ষণ পর্যন্ত প্রিয় বা পছন্দনীয় বস্তুর মুহব্বত হতে অন্তর মুক্ত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ইস্তিক্বামত থাকতে পারবে না। অর্থাৎ যিনি যত নৈকট্য বা নিয়ামতই হাছিল করুন না কেন তাতে ইস্তিক্বামত থাকতে পারবেন না। এরূপ সালিক বা মুরীদের যে কোন সময় সেই নৈকট্য বা নিয়ামত হাতছাড়া হতে পারে। বিরাগভাজন হয়ে যেতে পারে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের। ইবলিস ছয় লক্ষ বছর ইবাদত-বন্দেগী করেছিল। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুয়াল্লিম বা তা’লীম দাতার মর্যাদা পেয়েছিল। কিন্তু ইস্তিক্বামত থাকতে পারেনি। কারণ সে আকর্ষণ মুক্ত হতে পারেনি। একইভাবে বণী ইসরাইলের বিশিষ্ট দরবেশ বালয়াম বিন বাউরা সে ৩০০ বছর সাধনা করে অনেক নৈকট্য-নিয়ামত লাভ করেছিল কিন্তু প্রিয় বস্তুর আকর্ষণের কারণে সেও ইস্তিক্বামত থাকতে পারেনি। সে অনেক কিছু করলেও স্বীয় অন্তরকে প্রিয় বস্তুর আকর্ষণ মুক্ত করতে পারেনি। ফলে পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি পরবর্তী উম্মতকে তার অবস্থা থেকে ইবরত-নছীহত গ্রহণ করতে বলেছেন। পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ১৭৫নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে যে-
واتل عليهم نبا الذى اتينه اياتنا فانسلخ منها فاتبعه الشيطان فكان من الغاوين. ولو شئنا لرفعنا بـها ولكنه اخلد الى الارض واتبع هواه
অর্থ: (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি তাদের নিকট বর্ণনা করুন, সেই ব্যক্তির অবস্থা, যাকে আমি অনেক নিদর্শন দিয়েছিলাম। অথচ সে উহা হতে সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে গেল। আর শয়তান তার পিছনে লেগে গেল। ফলে সে গোমরাহ বা বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হলো। আর যদি আমি ইচ্ছা করতাম তাহলে তাকে সেই নির্দশনসমূহের কল্যাণে উচ্চ মর্যাদাশালী করে দিতাম। কিন্তু সে তো দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়লো এবং নিজের নফস বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে লাগলো।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
فمثله كمثله الكلب ان تحمل عليه يلهث او تتركه يلهث ذلك مثل القوم الذين كذبوا باياتنا فاقصص القصص لعلهم يتفكرون
অর্থ: সে ব্যক্তির দৃষ্টান্ত হচ্ছে কুকুরের মতো, যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাপাবে। আর ওই অবস্থা হচ্ছে সেই সকল লোকদের যারা আমার পবিত্র আয়াত শরীফ তথা নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। কাজেই, আপনি ঘটনাটি বর্ণনা করে শুনান হয়তো তারা বিষয়টি নিয়ে ফিকির বা গবেষণা করবে। (সূরা আল আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৬)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৭)
-ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার- মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৮)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৯)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৩০)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৩১)