প্রসঙ্গ: ফানা ও বাক্বা
শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পথে ফানা ও বাক্বা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। কারণ, পূর্ণ ফানা হতে না পারলে পূর্ণ বাক্বা লাভ করা যায় না।
স্মর্তব্য, মুরীদ নিজের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে যেরূপ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করবে আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সেরূপ সম্পর্কই প্রতিষ্ঠিত হবে।
কাজেই, নিজের শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে গভীর সম্পর্ক, নিছবত, প্রতিষ্ঠার জন্য ফানা হতে হবে। গাইরুল্লাহর সর্বপ্রকার আকর্ষণ হতে ক্বলব (অন্তর) কে মুক্ত রাখতে হবে। দুনিয়ার কোন জিনিষের আশা বা আকর্ষণ মুরীদের অন্তরে থাকতে পারবে না।
সেই সাথে নফসের বদ খাছলত বা বদ স্বভাবগুলো থেকে নফসকে মুক্ত রাখতে হবে। সেগুলোর পূর্ণরূপে বিনাশ সাধন করতে হবে। তাহলে অতি সহজেই শায়খ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে।
فناء (ফানা) শব্দের অর্থ: ধ্বংস, বিনাস, লয়, শেষ, মৃত্যু। আর بقاء (বাক্বা) অর্থ হচ্ছে- অবশিষ্ট থাকা, টিকে থাকা, বাকি থাকা, স্থায়ী হওয়া। ছূফীয়ানে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেছেন-
ہستی کو مٹادو اگر کچھ مرتبہ چاہو.دانہ بخاک ملکر گل گلزار ہوتا ہیں.
অর্থ: æযদি কোন মর্যাদা-মর্তবা হাছিল করতে চাও তাহলে তোমার অস্তিত্বকে বিলীন করে দাও। কারণ, শস্য দানা মাটির সাথে মিশে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করার কারণে ফুলে ফলে সুশোভিত হয়।”
যুগে যুগে ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনার ফানা ও বাক্বা-এর উজ্জল দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। যা আগত-অনাগত সকল লোকের জন্যই আদর্শরূপে বিরাজ করছে। ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত ত্বরীকত, সামছুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন খাজায়ে খাজেগাঁ, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি সবসময় নির্জনে একাকী বসে গভীর মনোযোগের সাথে আল্লাহ তায়ালা উনার মুরাকাবা ও মুশাহাদা করতেন।
একদিন উনার কান মুবারকে হঠাৎ একটি আওয়াজ আসলো- æহে হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি! দুনিয়াবী সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে সবকিছুর আকর্ষণ হতে মুক্ত হয়ে একমাত্র আমারই চিন্তায় গভীরভাবে মনোনিবেশ করার সময় কি এখনও হয়নি?
এ নেদা বা আওয়াজ শুনে হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিচলিত হলেন এবং উক্ত স্থান ত্যাগ করে রাতের অন্ধকারে শহরের বাইরে নদীর তীরে উপস্থিত হলেন। তিনি বলেন, æআমি নদীর নিকট উপস্থিত হয়ে আমার কাপড় ধুলাম এবং তওবার নিয়তে গোসল করলাম।
দুনিয়াবী সকল সম্পর্ক ছিন্ন করতঃ সম্পূর্ণ ভগ্ন হৃদয়ে নিজেকে অত্যন্ত অসহায় চিন্তা করে আযিযী-ইনকিসারী তথা অত্যন্ত কাকুতি মিনতির সাথে দুই রাকায়াত নামায আদায় করলাম।
এরপর বহুদিন এ আশা করেছিলাম যে, পুনরায় ওইরূপ দুই রাকায়াত নামায আদায় করবো কিন্তু সেরূপ পরিবেশের সুযোগ আর কখনো হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, প্রথম জজবাতেই আমার প্রতি ইলহাম হয়েছিল যে, আপনি কিভাবে এই পথ ইখতিয়ার করতে চান?
আমি আরয করলাম, আমি যা চাই তাই যেন বাস্তবে পরিনত হয়। জাওয়াব আসলো, æনা, বরং আমি যা হুকুম করবো আপনাকে তাই করতে হবে।” আমি পুনরায় আরয করলাম, ইহা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি যা ভিক্ষা চাই তাই যদি হয়, তবেই হয়তো আমি এই পথে ইস্তিক্বামাত বা অবিচল থাকতে পারবো। দুবার এরূপ সুওয়াল-জাওয়াব হলো। তারপর পনের দিন পর্যন্ত আমি সিজদায় পরে থাকলাম। নামাযের সময় শুধু নামায আদায় করে পুনরায় সিজদায় যেতাম। আমার এরূপ বেকারার অবস্থা উত্তেরোত্তর বৃদ্ধি পেতে লাগলো। আর এরই মধ্যে একদিন ইলহাম হলো- আপনার প্রার্থনা কবুল করা হলো। আপনি যা চান যেভাবে চান তা সেভাবেই দেয়া হবে। (হালাতে মাশায়িখে নকশবন্দীয়া মুজাদ্দিদীয়া-২০৯)
-হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
উপরোল্লিখিত ঘটনায় প্রতিভাত হয় যে, দুনিয়ার সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে হযরত বাহাউদ্দীন নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মাঝে পূর্ণ ফানা হয়েছিলেন। যে কারণে উনি খালিছ বাক্বাও লাভ করেছিলেন। এবং মহান আল্লাহ পাক তার পুরস্কার স্বরূপ উনার দোয়াও কবুল করেছেন। এবং ত্বরীকার ছবক নফস থেকে শুরু না করে ক্বলব থেকে শুরু করতে ইলহাম-ইলকা লাভ করেছেন। আগের মত রিয়াজত-মাশাক্কাত-এর পরিবর্তে সুন্নতের আমল শুরুতেই শুরু করার নির্দেশ পেয়েছিলেন। (অসমাপ্ত)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে-১২০
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১২১)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (১২২)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে-১২৪
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৫)