যিকির জারি হয় প্রথমে পশমের গোড়ায়, দ্বিতীয়ত: চামড়ার মধ্যে, তৃতীয়ত: চামড়ার নিচে সাদা অংশের মধ্যে, চতুর্থত: গোশতের মধ্যে, পঞ্চমত: হাড়ের মধ্যে, ষষ্ঠত: হাড়ের ভিতরের মগজের মধ্যে, সপ্তমত: সমস্ত শরীরে।
আর ক্বলব লতীফার মধ্যে সাতটি স্তর রয়েছে। তা হলো- ছুদুর, নশর, শামস, নূরী, র্কুব, মাকীন, নফসী। কেউ যখন ক্বলব লতীফার যিকির শুরু করে, তখন ক্বলবের উপরের স্তর ‘ছুদুর’-এর মধ্যে যিকির জারি হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্তরে যিকির জারি হয়।
প্রথমে যখন পশমের গোড়ায় যিকির জারি হয়। তখন সালিক বা মুরীদের মধ্যে একটি গরমীভাব বা বেপরোয়াভাব পয়দা হতে পারে, আত্মতৃপ্তি অনুভব হতে পারে। তাকে কখনই যথেষ্ট মনে করা যাবে না। কারণ নৈকট্যের শেষ নেই। পরিশুদ্ধিতার সীমা নেই। বরং আরও বেশি নৈকট্য, তায়াল্লুক, নিছবত সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় চেষ্টা কোশেশ সবসময়ই অব্যাহত বা জারি রাখতে হবে। মনে করতে হবে এবং কাজে-কর্মে পরিচয় দিতে হবে যে, এটা কোন বিষয়ই না। অন্যথায় মাহরূম বা বঞ্চিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এ স্থানে কত শত ছুফী যে মাহরূম হয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। শয়তান এ স্থানেও ষড়যন্ত্রের শক্ত ও কঠিন জাল বিস্তার করে রাখে। নানাভাবে ধোঁকা দেয়ার পাঁয়তারা করে। আফযালুল আওলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, “এ পথের পথিকগণ যেন মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের দীদার পেয়েও ক্ষ্যান্ত হননা। বরং আরও গভীর থেকে গভীরতম নৈকট্য, দীদার সন্তুষ্টি পাওয়ার প্রত্যাশায় সদা ব্যাকুল থাকেন।” তিনি আরও বলেন, “কাঙ্খিত বস্তুকে আরও উপরে আরও উপরে তালাশ করতে হবে।” তিনি এটাও বলেছেন যে, “যে তৃপ্ত সে বঞ্চিত। যে অতৃপ্ত সেই প্রাপ্ত।” (মাকতুবাত শরীফ)
উনার একজন মুরীদ একদিন বললেন, হে আমার শায়েখ! আমি এ অবস্থায় পৌঁছেছি যে, আমি সারাক্ষণ আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী ছূরত মুবারক-এ সবসময়ই দেখে থাকি। আমার দায়িমী হুযূরী হাছিল হয়েছে। আমার ছোহবত ইখতিয়ারের আরও প্রয়োজন আছে কি?
তার প্রত্যুত্তরে আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউসে সামদানী, মাহবূবে সুবহানী, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, “হে প্রিয় বৎস! তুমি তোমার বাতিনী যে হালতের (অবস্থা) বর্ণনা দিচ্ছ তাতে মনে হচ্ছে, তোমার ক্বলব লতীফার এক তৃতীয়াংশ হাছিল হয়েছে। ক্বলব লতীফার আরও দুই তৃতীয়াংশ বাকী রয়েছে। অন্যান্য নয়টি লতীফা তো রয়েছেই। কাজেই সেগুলো জারির করার ক্ষেত্রে তুমি কি করবে? তোমার আরও কতদিন ছোহবতে থাকা আবশ্যক তা তুমি ফিকির কর।
ক্বলব লতীফা জারি তথা তওবা-এর মাক্বাম হাছিল হলে গুনাহর প্রতি কোন আকর্ষণ থাকে না। বরং তা বিকর্ষণে পরিণত হয়। গুনাহর প্রতি ঘৃণা পয়দা হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের অপ্রিয় বা অপছন্দনীয় বিষয় বা বস্তুগুলো উক্ত সালিক বা মুরীদের নিকট অপ্রিয় বা অপছন্দনীয় বোধ হয়।
নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা উনার পূর্ণ মিছদাক্ব হয়ে যায়। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ولكن الله حبب اليكم الايمان وزينه فى قلوبكم وكره اليكم الكفر والفسوق والعصيان اولئك هم الراشدون.
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক ঈমানকে আপনাদের জন্য প্রিয় এবং উহাকে হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার এবং নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। মূলত ওই সমস্ত লোকই হচ্ছে সৎপথ প্রাপ্ত।” (সূরা হুজুরাত : আয়াত শরীফ ৭)
যদি হঠাৎ একান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বে কখনও কোন ছোট গুনাহর কাজ সংঘটিত হয়ে যায় তখনই অন্তরে অশান্তি সৃষ্টি হয়। সেই গুনাহ ক্ষমার জন্য অত্যন্ত কাকুতি-মিনতি, কান্নাকাটি সহকারে অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মু’মিন ব্যক্তির দ্বারা সামান্যতম পাপের কাজ সংঘটিত হলে সে তাকে পাহাড় পরিমাণ মনে করে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আর ফাসিক-ফুজ্জার, কাফির-মুশরিকরা পাহাড় পরিমাণ গুনাহর কাজ করলেও তাকে মাছির মাথার ন্যায় ক্ষুদ্র মনে করে নিশ্চিন্তে বসে থাকে।”
সালিক বা মুরীদের এই হালত (অবস্থা) পয়দা হওয়ার ফলে মা’রিফাত, মুহব্বত, তায়াল্লুক-নিছবতের নতুন নতুন দ্বার উন্মোচিত হতে থাকে এবং উক্ত মুরীদ বা সাধকের নিত্যনতুন হালত পয়দা হয়। আর এই হালত বা অবস্থা এভাবে দীর্ঘদিন চলতে থাকলে এক পর্যায়ে শয়তান তার প্রতি নিরাশ হয়ে যায় যে, এ মুরীদ বা সালিককে আর ধোঁকায় ফেলা যাবে না। তাছাড়া এই মাক্বামে আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সাক্ষাৎ লাভ হয়। তিনি সুসংবাদ দেন। এমনিভাবে আরও বিভিন্ন মাধ্যমে ক্ষমা ও তায়াল্লুক, নিছবত লাভের সুসংবাদ পাওয়া যায়।
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৭)
-ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার- মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৮)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১২৯)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছারল মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৩০)
ফিক্বহুল হাদীছ ওয়াল আছার মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে- (১৩১)