পূর্ব প্রকাশিতের পর
আরেক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهِ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ سَـمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِىْ فَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً أَوْ لِيَخْلُقُوْا حَبَّةً أَوْ شَعِيْرَةً
হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে আমি শুনেছি তিনি ইরশাদ মুবারক করেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন- পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ।
وَمَنْ اَظْلَمُ مِـمَّنْ ذَهَبَ يَـخْلُقُ كَخَلْقِىْ
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম কে রয়েছে? অর্থাৎ সে হচ্ছে সবচেড়ে বড় জালিম যে মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির মত কিছু তৈরী করতে চায়, বানাতে চায়, তুলতে চায়।
فَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً
মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, তাহলে তাকে বল, সে যেন তৈরী করে একটা দানা। একটা পিপড়ার ডিম যে রয়েছে তার চল্লিশ ভাগের এক ভাগ সে তৈরী করুক।
اَوْ لِيَخْلُقُوْا حَبَّةً أَوْ شَعِيْرَةً
একটা বীজ সে তৈরী করুক, একটা শস্যদানা তৈরী করুক। কোনটাই সে তৈরী করতে পারবে না। এখন মানুষ সে একটা শস্যদানা তৈরী করতে পারবে না। একটা দুব্বা ঘাস সে তৈরী করতে পারবে না। একটা ডিম সে তৈরী করতে পারবে না। কিছুই সে পারবে না। তাহলে সে কি করে মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির মত কিছু তৈরী করতে চায়। মূর্তি বানাতে চায়, ছবি আঁকতে চায়, ছবি তুলতে চায়, সেটা কি করে সম্ভব। তাহলে ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় জালিম কে রয়েছে? সে হচ্ছে সবচেয়ে বড় জালিম।
কাজেই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সরাসরি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলার অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনারই বলা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا ۚ وَاتَّقُوا اللهَ ۖ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা এনেছেন তা আঁকড়িয়ে ধর, আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।
কাজেই এটা খুব ফিকির করতে হবে। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ এ যেভাবে রয়েছে ঠিক সেভাবে আমল করতে হবে। উলামায়ে সূদের বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা শুনে বিভ্রান্ত হওয়া কখনই ঠিক হবে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা নিষেধ করে দিয়েছেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও নিষেধ করে দিয়েছেন। তোমরা এ বিষয়ে শতর্ক থাকো। কারণ উলামায়ে সূরা অনেক বিভ্রান্তি মূলক কথাবার্তা বলবে। এ সমস্ত বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা শুনে তোমরা বিভ্রান্ত হয়োনা। তারা হালালকে হারাম করবে, হারামকে হালাল করবে। অর্থাৎ তারা বিপরীত করার চেষ্টা করবে।
বুখারী শরীফে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
اَلْـحَلاَلُ بَيِّنٌ وَالْـحَرَامُ بَيِّنٌ
হালালও স্পষ্ট, হারামও স্পষ্ট।
কাজেই সেটা যদি স্পষ্ট হয়েই থাকে তাহলে এ সমস্ত উলামায়ে সূরা কি করে মসজিদের মধ্যে ছবি সম্পর্কে প্রচার করতে পারে। এটা খুব চিন্তা ফিকির করতে হবে। এবং এদের ওয়াসওয়াসা থেকে, বিভ্রান্তি থেকে নিজেদের হিফাযত করতে হবে। আর এ জন্যই এরা মসজিদে প্রবেশ করারই যোগ্যতা রাখে না।
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِيْنَ أَنْ يَعْمُرُوْا مَسَاجِدَ اللهِ شَاهِدِيْنَ عَلٰى أَنْفُسِهِمْ بِالْكُفْرِ أُولٰئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُـهُمْ وَفِـى النَّارِ هُمْ خَالِدُوْنَ
কোন মুশরিক সেতো কোন মসজিদ আবাদ করতে পারেনা। এ যোগ্যতা তার নেই। কোন মুশরিকের মসজিদ আবাদ করার যোগ্যতা নেই। সে নিজেই তার কুফরীর কথা, সে নিজেই স্বাক্ষী দিচ্ছে সে কুফরী করে থাকে।
أُولٰئِكَ حَبِطَتْ اَعْمَالُـهُمْ
তারা তাদের সমস্ত আমল নষ্ট করে দিয়েছে।
وَفِـى النَّارِ هُمْ خَالِدُوْنَ
তারা জাহান্নামে অনন্তকাল ধরে থাকবে।
পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে অনেক কারণে। এজন্য বলা হয়, নুযূল খাছ হুকুম হচ্ছে আম। যদিও পবিত্র কা’বা শরীফ উনার খিদমত কারা করবে সেই প্রসঙ্গে পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। পবিত্র কা’বা শরীফ হচ্ছেন মসজিদ। আর সমস্ত মসজিদই হচ্ছেন মসজিদ।
اَلْـمَسْجِدُ بَيْتُ الله
সমস্ত মসজিদ মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর।
কাজেই, কোন মুশরিক মহান আল্লাহ পাক উনার ঘরের আবাদকারী হতে পারে না। সে প্রকাশ্যে কুফরী করতেছে। এই কুফরীর কারণে তার সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাচ্ছে এবং সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে সে অনন্তকাল জাহান্নামে থাকবে। এখন এখানে সরাসরি মুশরিকের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু যারা ছবি জায়িয বলবে সম্মানিত শরীয়ত উনার ফতওয়া মোতাবিক তাদের উপর কি ফতওয়া বর্তাবে।
আক্বায়িদের কিতাবে রয়েছে-
اِسْتِحْلَالُ الْـمَعْصِيَةِ كُفْرٌ
কোন গুনাহকে কেউ হালাল বললে সে কাফির হয়ে যাবে। তাহলে ছবি তোলা হারাম, আঁকা হারাম। এখন কেউ যদি সেটাকে হালাল বলে তাহলে সেতো কাফির হয়ে যাবে। সেতো কাফির মুশরিকের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাহলে সে কি করে মসজিদ আবাদ করতে পারে। এই শ্রেণীর লোকতো ইমাম হতে পারে না, মুয়জ্জিন হতে পারে না, মসজিদের খাদিম হতে পারে না, মসজিদের মুতাওয়াল্লি হতে পারে না, মসজিদের যে কমিটি থাকবে, নিয়ন্ত্রন করবে পরিচালনা করবে সেই কমিটির অন্তর্র্ভুক্ত সে হতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি নিষেধ করে দিয়েছেন। যারা জালিম, যারা কাফির, যারা মুশরিক, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার বিরোধিতা করে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধীতা করে, এদের যিন্দিগীর আমল নষ্ট হয়ে গেছে তারা জাহান্নামী হবে। এই শ্রেণীর লোক কখনই মসজিদ আবাদকারী হতে পারে না।
কাজেই খুব ফিকির করতে হবে। এজন্য আমরা ফতওয়া দিয়ে থাকি। এটা আমাদের ফতওয়া নয়। এটা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরই ফতওয়া। যারা উলামায়ে সূ এদের এই আক্বীদা থাকলে তাদের পিছনে নামায পড়লে কখনই নামায শুদ্ধ হবে না। যারা পড়বে তাদের সকলের নামাযগুলো বাতিল হয়ে যাবে। ইহকাল পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। এজন্য তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। কাজেই উলামায়ে সূ যারা রয়েছে যারা হারামকে হালাল, হালালকে হারাম করে, এদের পিছনে কখনই নামায শুদ্ধ হবে না। আর এটা হচ্ছে ক্বিয়ামতের আলামত। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে যেভাবে ইরশাদ মুবারক করেন ঠিক একই ভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন। (অসমাপ্ত)