পূর্ব প্রকাশিতের পর
ইদানিংকালে কয়েকজনের আকৃতি-বিকৃতি হয়েছে। আমরা লোক পাঠিয়েছিলাম, আমাদের লোকেরা সেটা দেখেছে। যেমন চামড়া ছাড়া ফজলুল করীম সে মারা গেছে তার আকৃতি-বিকৃতি হয়েছে। সেই আনছার আলী সে মারা গেছে তারও আকৃতি-বিকৃতি হয়েছে। সেই সুনামগঞ্জের আব্দুল বাসিত সে মারা গেছে তারও আকৃতি-বিকৃতি হয়েছে। এরকম আরো অনেকের। বি-বাড়িয়ার কথিত এক বড় মালানা মারা গেছে তাকে বড় মালানা তারা বলতো, তারও আকৃতি-বিকৃতি হয়েছে। এদের সকলেরই মৃত্যুর পর আকৃতি-বিকৃতি হতেই হবে। যেহেতু এরা মালউন হয়ে যায়, লা’নতগ্রস্ত হয়ে যায়। আপনারা দেখবেন যারা হারাম কাজ করে থাকে, হারাম কাজের জন্য ওয়াছ ওয়াছ দিয়ে থাকে এরা মারা গেলে এদের সকলেরই আকৃতি-বিকৃতি ঘটেছে অর্থাৎ এদের আকৃতি বিকৃত হতেই হবে, এটা হবেই, এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ তারা মালঊন। সেই আবুল হারেছা মালানা তার আকৃতি-বিকৃতি হয়েছিল, সে মানুষ থেকে সাপ হয়ে গিয়েছিলো। বালয়াম বিন বাউরা তারও আকৃতি-বিকৃতি হয়েছিলো। তার জিহ্বা লম্বা হয়ে গিয়েছিলো। তা চক্ষু কপালে এসে গিয়েছিলো। ইবলীস তারও আকৃতি-বিকৃতি হয়েছে, তার চক্ষু কপালে এবং সিনার মধ্যে গিয়ে পৌঁছেছে, অর্থাৎ এদের সকলেরই আকৃতি-বিকৃতি হয়েছে। যারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করবে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাফরমানী করবে, এদের আকৃতি-বিকৃতি হয়ে যাবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। এরা মালউন অর্থাৎ লা’নতগ্রস্ত। তাই তাদের এই পরিণতি।
এদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, যদিও তারা মালানা হয়ে থাকুক, মুফতী, মুহাদ্দিছ হয়ে থাকুক আরো কিছু হয়ে থাকুক না কেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি এজন্য পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ إِلَّا أَمَانِيَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هٰـذَا مِنْ عِندِ اللَّـهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمِنْهُمْ أُمِّيُّونَ
তাদের মধ্যে মূর্খ লোকগুলি
لَا يَعْلَمُونَ الْكِتَابَ
কিতাব সম্পর্কে জানেনা
إِلَّا أَمَانِيَّ
কিছু মিথ্যা আকাঙ্খা ব্যতিত
وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ
তাদের কাছে জল্পনা কল্পনা ও ধারণা ছাড়া কিছু নেই।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন এদের মধ্যে কিছু মূর্খ রয়েছে। যারা আসলেই মূর্খ। এরা কিতাব বুঝেও না এবং জানেও না, এরা গন্ড মূর্খের অন্তর্ভুক্ত। এদের কিছু মিথ্যা আকাঙ্খা রয়েছে, আর কিছু জল্পনা-কল্পনা রয়েছে। এছাড়া তাদের কিছু নেই। এরা কিতাব পড়লেও বুঝতে পারে না। এরা মহরাঙ্কিত হয়ে গেছে, এদের অন্তরে মহর পরে গেছে যার জন্য এরা কিতাব পড়ার পরেও, পড়ানোর পরও তারা মূর্খ এবং তারা মিথ্যা আশা আকাঙ্খা নিয়ে অবস্থান করতেছে এবং কিছু জল্পনা-কল্পনা নিয়ে। এরা মনে করে থাকে, মাদরাসায় পড়াচ্ছে, পড়ায় অথবা তারা ওয়ায নছীহত করে অথবা তারা তাফসীর করে অথবা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যা করে অথবা তারা বিরাট ছূফী দরবেশ পীর ছাহিব হয়ে গেছে, অনেক মুরীদ মু’তাকিদ সে করে ফেলেছে এতে সে মনে করে থাকে এ দিয়ে সে উদ্ধার হয়ে যাবে অথবা এ কাজটা তার শুদ্ধ রয়েছে। নাউযূবিল্লাহ! একটাও তার শুদ্ধ নয় কারণ সে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের খিলাফ করে থাকে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটাই পরবর্তিতে ইরশাদ মুবারক করেন-
فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ
এই সমস্ত লোকগুলি আসলে মূর্খ, কিছু কল্পনা-জল্পনা, মিথ্যা আকঙ্খা ছাড়া কিছুই তাদের নেই। তাদের জন্য আফসুস যারা নিজেরা কিতাব রচনা করে অর্থাৎ এরা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অপব্যাখ্যা করে, ভুল ব্যাখ্যা করে অতঃপর বলে-
هَـٰذَا مِنْ عِندِ اللَّـهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا
এটা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে উনার কিতাব, (মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ-নির্দেশ বলে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নির্দেশ মুবারক) যেন এর দ্বারা তারা কিছু দুনিয়াবী টাকা পয়সা কামাই করতে পারে। নাউযূবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
فوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ
এরা যা লিপিবদ্ধ করে যাচ্ছে, অপব্যাখ্যা করে যাচ্ছে, মিথ্যা ব্যাখ্যা করে যাচ্ছে এজন্য তাদের জন্য ওয়াইল জাহান্নাম রয়েছে। এরা যা উপর্জন করে যাচ্ছে তার বিনিময় সেটার জন্য তাদের জাহান্নাম রয়েছে। নাউযূবিল্লাহ! এরা ফতওয়া দিয়ে থাকে ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা ওয়াজিব। নাঊযুবিল্লাহ! ভোট দেয়া ওয়াজিব। নাঊযুবিল্লাহ! অথচ সম্মানিত দ্বীন ইসলামে এগুলো সর্ম্পূরূপে হারাম। সমস্ত তন্ত্র-মন্ত্র যা কিছু রয়েছে একমাত্র দ্বীন ইসলাম ছাড়া পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ ব্যতীত সমস্ত কিছু নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরা সেগুলি তাদের পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায়, তাফসীর উনার আলোচনায় এবং ফতওয়ার মধ্যে অপব্যাখ্যা করে জায়িয ফতওয়া দিয়ে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বলেই দিয়েছেন এরা অপব্যাখ্যা করে তারা বলবে।
هٰذَا مِنْ عِندِ اللّـهِ
এটা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে, এই আদেশ-নির্দেশ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে। নাঊযুবিল্লাহ!
لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا
উদ্দেশ্য যেন কিছু টাকা-পয়সা হাছিল করা যায়। এদের উদ্দেশ্য যদি টাকা-পয়সাই না হতো তাহলে এরা আমীর-উমরাদের দরবারে কেন ঘুরে? রাজা-বাদশাদের পিছনে পিছনে তারা কেন ঘুরে? বেপর্দা মহিলার গোলামী তারা কেন করে? তার পায়ের তলে তলে কেন তারা ঘুরে থাকে? সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে যেটা হারাম সেটাকে তারা হালাল কেন বলে থাকে? যেটা অবৈধ সেটা কেন তারা বৈধ বলে থাকে? এরা পয়সার জন্য, টাকার জন্য, গইরুল্লাহর জন্য, দুনিয়ার জন্য, আমীর-উমরাহ, রাজা-বাদশাহর পিছনে পিছনে ঘুরে থাকে। দুনিয়াবী কিছু ফায়দা লাভের জন্য। এরা এ সমস্ত হারাম কাজগুলো করে থাকে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটা আগেই বলে দিলেন যে দেখ, এ সমস্ত লোকগুলো মূর্খ হবে, কিতাব তারা বুঝবে না, মিথ্যা আশা-আকাঙ্খা থাকবে, কল্পনা-জল্পনা থাকবে আর এরা অপব্যাখ্যা করবে আর এরা বলবে কি, এটা হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এসেছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তরফ থেকে এসেছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, কিছু টাকা-পয়সা হাছিল করা। নাঊযুবিল্লাহ! যেমন বলা হয়ে থাকে, এরা বলে থাকে, এদের মুফতীয়ে আ’যম মুফতী শফী সাহেব পাকিস্তানের। এরা মুফতীয়ে আ’যম বলে থাকে, বেশ ভালো মুফতীয়ে আ’যম। সেই মুফতিয়ে আ’যম শফী সাহেব মা‘আরিফুল কুরআন একটা তাফসীর লিখেছে, খুব ভালো কথা। কিন্তু এই তাফসীরটা কোথায় কিভাবে করা হয়েছে সেটা কিন্তু মানুষ ইতিহাসটা দেখে না। এই মুফতী সাহেব পাকিস্তান রেডিওতে ১৪ বছর তাফসীর করেছিলো সেই রেডিওর তাফসীরটা একত্রিত করে মা’আরিফুল কুরআন নাম দিয়ে বাজারে ছাড়া হয়েছে। এখন মুফতী সাহেবের কাছে প্রশ্ন, শফী সাহেবতো মারা গেছে অনেক দিন আগে। মুফতী সাহেব ১৯৭৬ সালে মারা গেছে। এখন সেই মুফতীয়ে আ’যম মুফতী শফী সাহেবের কাছে প্রশ্ন করা উচিত ছিলো, তুমি যে রেডিওতে তাফসীর করলে, সেখানে কি পবিত্র ক্রুআন শরীফ তাফসীর করা জায়িয রয়েছে? তুমি সকালে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে তাফসীর করে ছেড়ে দিলে, সারাদিন গান-বাজনা হলো, নাটক, নোবেল সব কিছু হলো, তাহলে সেটা কি জায়িয হয়েছিলো? এই ফতওয়া আগে মুফতী সাহেবকে দিতে হবে। যদি সেটা হারাম হয়ে থাকে তাহলে সেখানে তফসীর করাটা হারাম হয়েছে। আর ঐ তাফসীরের মধ্যে সে লিখেছে, মুফতী শফী সাহেব বলেছে, ভোট দেয়া ওয়াজিব। নাঊযুবিল্লাহ!
কাজেই রেডিও অফিসে, টেলিভিশন অফিসে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ ফতওয়া রয়েছে, কোন বাথরুমে, গোসলখানায় কেউ পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করলে সেটা মাকরূহে তাহরীমী। অথচ গোসলখানায় মানুষ পবিত্র হয়ে থাকে। আর রেডিও অফিসে, টেলিভিশন অফিসে কেউ পবিত্র হয় না, পুরুষ-মহিলা একাকার হয়ে বেপর্দা-বেহায়া, গান-বাজনা যত যমীনের হারাম কাজ সেই রেডিও অফিস ও টেলিভিশন অফিসে হয়ে থাকে। সব লা’নত সেখানে বর্ষিত হতে থাকে। সেখানে তাফসীর করা জায়িয কোথায় পেলো। আর সেই তাফসীরে কি করে ফতওয়া দিলো, ভোট গনতন্ত্র নির্বাচন ওয়াজিব। নাঊযুবিল্লাহ!
কাজেই, সেখানে অনেক অসংখ্য ভুল রয়েছে। আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে সে ফতওয়া যাচ্ছে, দৈনিক আল ইহসান শরীফেও যাচ্ছে। (অসমাপ্ত)