পূর্ব প্রকাশিতের পর
সেটা ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক এ বর্ণিত রয়েছে, উনি ছিলেন মুখলিছ বা মুখলাছ। ইখলাছপ্রাপ্ত বা ইখলাছ হাছিলকারী। এখন ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক এ বর্ণিত রয়েছে যে, মুখলিছ, যারা ইখলাছকারী উনারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন, কতটুকু ভয় করেন? কঠিন বিষয়, সূক্ষ্ম বিষয়। যে সম্পর্কে আমি পূর্বে বলেছি গউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার যে ওয়াকিয়া, ঠিক ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ওয়াকিয়াও মশহূর ওয়াকিয়া। কিন্তু এর মধ্যেতো ফিকির নেই। এর মধ্যে ফিকিরের অভাব রয়েছে। গউসূল আ’যম সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যেমন এই ইখলাছের কারণে, মহান আল্লাহ পাক উনার ভীতির কারণে উনার যে হাল হয়েছিলো ঠিক ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনারও একই হাল হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে ইমামে আ’যম হিসেবে মশহূর। এমন কোন বিষয় নেই যে বিষয় মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে ইলম দান করেননি। সুবহানাল্লাহ! শুধু ইলমই নয় প্রত্যেক বিষয়ে তিনি ইমাম এবং ইমামে আ’যম। সুবহানাল্লাহ! ইলম, আমল, ইখলাছ, জাহিরী, বাতিনী, জিসমানী, রূহানী, বাহ্যিক, আভ্যন্তরীণ যত প্রকার ইলম রয়েছে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ, পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ, ফাছাহাত, বালাগাত মানতিক, উছূল, ক্বওয়ায়িদ যা কিছু রয়েছে, যত প্রকার ইলম রয়েছে সমস্ত প্রকার ইলম উনার তিনি ইমাম, ইমামে আ’যম। সেই ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার শত্রু ছিল। প্রত্যেক যুগে মহান আল্লাহ পাক উনার যারা ওলী থাকেন উনাদের কিছু শত্রু থাকে।
যেটা উছুল রয়েছে-
لكل حضرت موسى عليه السلام فرعون و لكل فرعون حضرت موسى عليه السلام
প্রত্যেক ফিরআউন, যালিমদেরকে হিদায়েত করার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রতি যামানায় হাদী পাঠান আর যারা হাদী থাকেন উনাদের পিছনে সেই ফিরআউনের মত কিছু যালিম সবসময় লেগে থাকে, উনাদেরকে কষ্ট দেয়ার জন্য। তবে এর কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি যারা হাদী উনাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি বিশ্বখ্যাত আলিম বেমেছাল ইমাম। উনার ছানা-ছিফত করার প্রয়োজন হয়না। তিনি কত বড় ইমাম ছিলেন? ইমাম ছুফিয়ান ছাওরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী বুযুর্গ, তিনিও বড় আলিম। তিনি বলেন, আমরা যখন ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে যেতাম এমন অবস্থায় আমরা থাকতাম, যেমন একটা বাজ পাখির সামনে একটা চড়ূই পাখি থাকে। এতো ভীত-সন্ত্রস্ত, আদবের সহিত আমরা থাকতাম, যার মিছাল নেই। হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার মর্যাদা সম্পর্কে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মাকতুবাত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। পূর্ববর্তী আরো অনেক কিতাবে বর্ননা করা হয়েছে। উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি এতো মর্যাদা দিয়েছেন, তিনি ইজতিহাদ করে যে মাযহাব হাদিয়া করেছেন তা হচ্ছেন হানাফী মাযহাব। আখিরী যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল যিনি জলীলুল ক্বদর রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম আসবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব তিনিতো মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন একক। উনার পরে মর্যাদাসম্পন্ন যে সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা রয়েছেন উনাদের প্রথম কয়েকজনের মধ্যেই রয়েছেন হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি। তিনি যখন আখিরী যামানায় আসবেন উম্মতে হাবীবী হিসেবে সরাসরি। তিনি এসে কিন্তু ইজতিহাদ করে চলবেন। কারণ তিনিতো রসূল। তিনি কোন উম্মতকে তাকলীদ করতে পারেন না। তিনি ইজতিহাদ করে চলবেন।
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, হযরত ঈসা রুহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ইজতিহাদ করে চলবেন। কিন্তু মানুষ মনে করবে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বোধ হয় হানাফী মাযহাবের মুক্বাল্লিদ। কি কারণ, দেখা যাবে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যে ইজতিহাদ আর জলীলুল ক্বদর রসূল যার প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি ইনজীল শরীফ কিতাব নাযিল করেছেন সেই রসূল হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ইজতিহাদ এক হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ! এমন বেমেছাল ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি। উনারও অনেক শত্রু ছিলো। উনাকেতো গ্রেফতার করে জেলখানায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। নাউযুবিল্লাহ! জীবনের শেষ দু’বছর তিনি জেলখানায় ছিলেন। তখন যে খলীফা ছিলো মনছুর সে উনাকে গ্রেফতার করে জেলখানায় থাকার ব্যবস্থা করেছিলো। নাউযুবিল্লাহ! আস্তে আস্তে উনাকে সেøা পয়জনিং করে অর্থাৎ আস্তে আস্তে উনাকে বিষ দিয়ে তারা উনাকে শহীদ করে। নাউযুবিল্লাহ! তিনি যখন জেলখানায় ছিলেন তখনও অনেক লোকজন আসতো পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ফতওয়া নেয়ার জন্য। তিনি ফতওয়া দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
এক বৃদ্ধা মহিলা ছিলো উনার বিদ্বেষী, দুষ্ট প্রকৃতির। সে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মানুষের কাছে খারাপ করার জন্য, নাউযুবিল্লাহ! উনার যারা ছাত্র ছিলেন উনাদেরকে বললো, আপনাদের যিনি ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি কি (বৃদ্ধা মহিলার) একটা মাসয়ালার জবাব দিতে পারবেন? উনার যারা ছাত্র ছিলেন উনারা বললেন, হে বৃদ্ধা মহিলা! তুমি কেন তোমার মত অনেক শত সহস্র মানুষের মাসয়ালার জবাব তিনি দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ! এটাতো উনার জন্য কোন ব্যাপারই নয়। প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধা মহিলার ভিতরে ছিলো দুষ্টামী, সে হযরত ইমামে আ’যম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট এসে বললো, হে হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি! আমার একটা মাসয়ালা রয়েছে। কি মাসয়ালা রয়েছে? মাসয়ালা হচ্ছে তার একটা ছাগল রয়েছে, ছাগলের থোতার মধ্যে কিছু পশম রয়েছে। ছাগলের থোতাতে যে পশম রয়েছে সেটা উত্তম, না আপনার যে দাড়ি মুবারক রয়েছে সেটা উত্তম? এটার জবাব জানতে চাই। উদ্দেশ্য তার এখানে প্রতারণা করা। উনাকে কোন রকম আটকানো যায় কি না সেই অসৎ উদ্দেশ্যে তার জিজ্ঞাসা। ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেটা বুঝতে পেরেছেন। বুঝতে পেরে তিনি বললেন, হে বৃদ্ধা মহিলা! তোমার এই মাসয়ালার জবাব যদিও আমার জানা রয়েছে তথাপি আজকে আমি জবাব দিবো না। তিনদিন পরে আমি এ মাসয়ালার জবাব দিবো। তুমি তিনদিন পরে এসো। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার ওলী উনাদেরকে তো অনেক সম্মান দিয়েছেন, অনেক বুযুর্গী দিয়েছেন, বেমেছাল। তিনদিন পর তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করলেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত মুবারক-এ চলে গেলেন। বৃদ্ধা মহিলা সে রটাতে লাগলো, রটনা করতে লাগলো, সে ছড়াতে লাগলো যে ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তার মাসয়ালার জবাব দেয়ার ভয়ে ইন্তিকাল করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! এদিকে যখন উনার গোসল মুবারক সম্পন্ন করে কাফন মুবারক পরায়ে জানাযা মুবারক আদায় করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো দাফন মুবারক সম্পন্ন করার জন্য। রাস্তার মোড়ে এসে যখন পৌঁছলেন লোক জন; উনার সেই জিসিম মুবারক নিয়ে। বৃদ্ধা মহিলা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো, সেতো আজে বাজে কথা বলতেছিলো। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত! হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যবান মুবারক খুলে গেলো। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! তিনি খাটিয়া থেকে বলতে লাগলেন, হে বৃদ্ধা মহিলা! তুমি জেনে রাখো, তোমার এই মাসয়ালার জবাব হচ্ছে, তোমার ছাগলের থোতার পশমের চাইতে আমার দাড়ি মুবারক উনার মর্যাদা লক্ষ কোটিগুণ বেশি রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! আমি সেই দিনই এই মাসয়ালার জবাব দিতে পারতাম। তবে যেহেতু ঈমান উনার একটা বিষয় রয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার ভীতি রয়েছে, তাক্বওয়া-পরহেযগারির বিষয় রয়েছে। এখন ঈমান উনার সহিত আমি বিদায় নিয়েছি। কাজেই আমার দাড়ি মুবারক উনার মর্যাদা তোমার ছাগলের থোতার পশমের চেয়ে লক্ষ কোটিগুণ বেশি রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! তার ব্যতিক্রম হলে তোমার ছাগলের থোতার পশমই মূল্যবান হয়ে যেতো। নাউযুবিল্লাহ! তিনি জবাব দিয়ে আবার আগের মতোই চুপ হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! (অসমাপ্ত)