সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৬৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

১৯৭২-এর সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ঢুকেছে পেছনের দরজা দিয়ে। ১৯৭০-এর নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা ছিলো না। বরং ছিলো ‘কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’-এ প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতিই ২০০৮-এর নির্বাচনে পুনঃউচ্চারিত হয়েছে মাত্র।

ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দ শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশে উচ্চারণের প্রয়োজন হয় না। রাষ্ট্রদ্বীন ইসলামের দেশেও প্রয়োজন হয় না। কারণ, মুসলমান- ওই কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর উপর বিশ্বাস করেই মুসলমান; যে কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এ অন্য সব ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনের সর্বোচ্চ সুযোগ দেয়া হয়েছে।

সেক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধিবাসী থাকলেই অমুসলমানদের ধর্মনিরপেক্ষতা দাবির প্রয়োজন হয় না। পক্ষান্তরে ধর্মনিরপেক্ষতা বিধিবদ্ধ থাকলেই যে নিরপেক্ষতা পালন হয় না, আমেরিকা-ভারত-ইংল্যান্ডসহ বড় বড় কথিত ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দেশগুলো তার প্রমাণ।

সেখানে ‘মুহম্মদ’ নাম দেখলেই তার উপর হাজারো নির্যাতন। মুসলমানকেই শুধু সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করা হয়। অথচ এখন বৌদ্ধ অধ্যুষিত চীন-জাপানের সমর্থনে মায়ানমারের বৌদ্ধরা লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমানকে শহীদ করছে। তারপরও তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে না।

উল্লেখিত দেশে অবাধে নামায পড়ার সুযোগ নেই।

বিভিন্ন ইসলামী পোশাক পরার অবকাশ নেই।

অনেক দেশে ঈদের ছুটি নেই। মুসলমানিত্ব প্রকাশ করার অধিকার নেই। ধর্মনিরপেক্ষতা যুক্ত হলেই যে ধর্মনিরপেক্ষতা কার্যকর হবে তা নয়। বরং সবক্ষেত্রে এখন এ অবস্থাই দৃশ্যমান যে, ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলামকেই কাটছাঁট করা হয়। মুসলমানকে অমুসলমানী কালচারে ভাসতে বাধ্য করা হয়।

এদেশে শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমান। তাদের দ্বীন পবিত্র ‘ইসলাম’।

পবিত্র দ্বীন ‘ইসলাম’ তথাকথিত অন্যান্য ধর্মের মতো নয়। পবিত্র দ্বীন ‘ইসলাম’ পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। অন্য কোনো ধর্মই খেলাধুলা, নির্বাচন, গান-বাজনা, মূর্তি, অভিনয়, উলঙ্গপনা ইত্যাদির বিরুদ্ধে কিছু বলেনি।

সে সুবাদে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও ধর্মের প্রেক্ষিতে স্বাধীনতাউত্তর এদেশে গান-বাজনা, কথিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, সিনেমা এগুলোকে সরকারি পর্যায়ে শুধু সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়নি;

পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যাতে অন্যান্য বিধর্মীদের সাথে তাল মিলিয়ে নাচতে পারে, সেজন্যও সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হয়েছে ও হচ্ছে। এক্ষেত্রে এদেশের জনগণের শতকরা ৯৮ ভাগ মুসলমানের দ্বীন- পবিত্র ‘ইসলাম’ সম্পূর্ণই উপেক্ষিত, অবহেলিত ও অস্বীকার্য থেকে যায়।

কিন্তু এদেশের ৯৮ ভাগ মুসলমান কী মানতে পারে যে, তাদের দ্বীন- ‘ইসলাম’ রাষ্ট্রযন্ত্র স্বীকার করবে না?

৯৮ ভাগ মুসলমান কী মানতে পারে যে,

তাদের প্রাণাধিক দ্বীন- পবিত্র ‘ইসলাম’কে রাষ্ট্রযন্ত্র সম্মান করবে না?

৯৮ ভাগ মুসলমান সহ্য করতে পারে যে,

তাদের ঈমান- ‘ইসলাম’কে রাষ্ট্রযন্ত্র পদে পদে ধিকৃত করবে?

ইসলামের দৃষ্টিতে খেলাধুলা হারাম। কিন্তু তারপরেও রাষ্ট্রযন্ত্র দেশের কোটি কোটি নাগরিককে না খাইয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা হারাম খেলাধুলার পিছনে ব্যয় করে; তখন ৯৮ ভাগ মুসলমান, রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে কী ধরনের আশাহত ও চরম বিপরীতমুখী আচরণের মুখোমুখি হয়; তা কী ভাবা যায়?

রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় যখন সিনেমাসহ যাবতীয় অশ্লীলতার অবাধ অনুশীলন হয়; তখন দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের দ্বীনী অনুভূতিতে কত চরম আঘাত হানা হয়? তাও কী সম্যক উপলব্ধি করা যায়?

দিনে দিনে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া দেশের ৯৮ ভাগ মুসলমানকে কু-প্ররোচনা দিচ্ছে- কীভাবে কত সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা যেতে পারে, মদ ধরা যেতে পারে, পরকীয়া, লিভ টুগেদার তথা অবাধ ব্যভিচার-অনাচারে ভাসা যেতে পারে।

অথচ ৯৮ ভাগ মুসলমানের দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো কঠিন হারাম এবং চূড়ান্ত ইসলামবিরোধী।

৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশে এসব ইসলামবিরোধী কাজগুলোই হচ্ছে অবাধে, ব্যাপক উৎসাহে এবং সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সাহায্যে।

এতে করে ইসলাম হচ্ছে বিপন্ন। মুসলমান হচ্ছে বিপর্যস্ত থেকে বিভ্রান্ত, হতাশাগ্রস্ত থেকে নেশাগ্রস্ত।

অর্থাৎ এদেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের দ্বীনী অনুভূতি রাষ্ট্রযন্ত্রে স্বীকৃত নয়।

শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমান এদেশে তাদের দ্বীন ইসলাম পালনে নিরাপদ নয়। অনৈসলামিক কাজে বাধা দিলে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ ও শাস্তি থেকে মুক্ত নয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে, মুসলমান হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিটি অনৈসলামিক কাজে বাধা দেয়া ফরয। কিন্তু এ ফরয কাজ স্বাধীনতাউত্তর থেকেই মুসলমানরা করতে পারছে না।

অথচ পাকি যালিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ তথা যুদ্ধ করা ফরয ছিলো; সেটি এদেশের নামধারী ও ধর্মব্যবসায়ী সন্ত্রাসবাদী-জামাতীরা ব্যতীত সত্যিকার মুসলমানরা যথার্থরূপে করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

কিন্তু সে ফরয আদায়ের অভিজ্ঞতা বিস্তারে রাষ্ট্রযন্ত্র বাধা দিয়ে রেখেছে।

সঙ্গতকারণেই তাই প্রশ্ন জোরদার হয় যে, রাষ্ট্রযন্ত্র কী ইসলাম স্বীকার করে? নাকি করে না? স্বীকার কি করবে? নাকি করবে না?

রাষ্ট্রযন্ত্র কী মুসলমানদের দ্বীনী অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখাবে? নাকি দেখাবে না?

রাষ্ট্রযন্ত্র কী তবে ইসলাম আর মুসলমান বাদ দিয়ে অন্য সব ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বীদের প্রতিই চরম সম্মান দেখাবে এবং পরম পৃষ্ঠপোষকতা করবে?

কারণ, অন্য সব ধর্ম এবং ধর্মাবলম্বীদের খেয়ালখুশি অনুযায়ী রাষ্ট্রযন্ত্র খেলাধুলা থেকে সিনেমাসহ সব ধরনের অশ্লীলতার অবাধ পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে।

কিন্তু ইসলাম ও মুসলমান সেখানে হয়ে যাচ্ছে অপাঙ্ক্তেয়। এবং এটা হচ্ছে কথিত ধর্মনিরপেক্ষতার সুবাদে।

দেখা যাচ্ছে, কথিত ধর্মনিরপেক্ষতা অন্য সব ধর্ম তথা সব অনৈসলামীপানার প্রভূত পরিচর্যা করে; কিন্তু দ্বীন ইসলামের উপর শুধুই আঘাত হানে।

সঙ্গতকারণেই দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ অধিবাসী মুসলমান ধর্মনিরপেক্ষতার এ অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়।

মূলত, ইসলামী প্রজ্ঞার অভাবে কোনো সরকারই এ সত্যটি আদৌ উপলব্ধি করতে পারেনি।

সঙ্গতকারণেই আমরা মনে করি, সরকারেরও প্রয়োজন রয়েছে নেক পরামর্শ তথা নেক ছোহবত, রূহানী সংস্পর্শ তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম উনার নেক ছোহবতেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়