সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৫৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “বলুন, সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার। যিনি না কোনো সন্তান রাখেন, না উনার সার্বভৌমত্বে কোনো শরীক আছে এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে উনার কোনো সাহায্যকারীর প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং আপনি তা’যীমের সহিত উনার মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে থাকুন।” (পবিত্র সূরা বণী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১১)

‘সার্বভৌম’ শব্দটি শুধু ব্যাপকই নয়, তা বিশ্লেষণধর্মীও বটে। সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে সহজ ধারণার অভাব অনেকের মাঝেই রয়েছে। অথচ সম্মানিত ইসলামী আক্বীদার সাথে সার্বভৌম ক্ষমতার সঠিক মূল্যবোধের বিষয়টি গভীরভাবে সম্পৃক্ত।

অধুনা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে যে কথাটির প্রচলন রয়েছে, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে তা গভীর আপত্তিকর। “সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণ” একথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজ্মা শরীফ এবং পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে কোনোভাবেই বরদাশ্ত করা যায় না। একটি-দুটি নয়, অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে এ বিষয় স্পষ্টরূপে প্রকাশ পেয়েছে। যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবই উনার পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)

“তিনিই মহান আল্লাহ পাক। তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। ইহকাল ও পরকালে উনারই প্রশংসা। বিধান উনারই ক্ষমতাধীন এবং তোমরা উনারই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।” (পবিত্র সূরা কাসাস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭০)

“নিশ্চয়ই তোমাদের মা’বুদ এক। তিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর পালনকর্তা এবং তিনি পালনকর্তা উদয়াচলসমূহের।” (পবিত্র সূরা আস্সাফফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪, ৫)

“(মহান আল্লাহ পাক) উনার রয়েছে আসমান ও যমীনে সার্বভৌমত্ব। তিনি কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি। সার্বভৌমত্বে উনার কোনো অংশীদার নেই।” (পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)

মুসলমান মাত্রই জানা রয়েছে যে, ইসলামী মূল্যবোধের ক্ষেত্রে র্শিক সবচেয়ে অমার্জনীয় অপরাধ। যে প্রেক্ষিতে সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার অভাব মূলত র্শিকের দিকেই ধাবিত করে। এ কথা তাই কখনো বলা শুদ্ধ নয় যে, ‘জনগণই সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক’।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সার্বভৌম ক্ষমতা সম্পর্কে সাধারণের সমঝের ঘাটতির পিছনে মূলত এক শ্রেণীর নামধারী আলেমের ইলম ও আক্বীদাগত ত্রুটি অনেকাংশে দায়ী। মাত্র কিছু দিন পূর্বেও তারা নির্দ্বিধায় গণতন্ত্রকেই মূল্যায়ন করতো। কিন্তু মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার পৌনঃপুনিক আলোচনায়, অনেকটা ইসলামী খোলস আগলে রাখতেই যেন তারা নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও বলতে বাধ্য হচ্ছে, ‘সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক জনগণ’-এ কথা পবিত্র দ্বীন ইসলাম সম্মত নয়।

অথচ তাদের গৃহীত কর্মসূচি তাদেরকে সে আদর্শে অবিশ্বাসী এবং অজ্ঞই প্রমাণ করে। বলাবাহুল্য, গণতন্ত্র জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের প্রক্রিয়াটি কি? সে বিষয়ে তারা এখনো সমঝদার নয়। সার্বভৌম ক্ষমতার মালিকানা, জনগণ রাষ্ট্রীয় সকল কাজে সমান অংশীদারিত্বের হারে প্রয়োগ করে না। বরং ভোট প্রদানে তার অবিভাজ্য, জবাবদিহি ক্ষমতাবিহীন, নিরষ্কুশ ক্ষমতার দ্বারাই সে তার কথিত সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে। যা কিনা নির্বাচনী ব্যবস্থার মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, সম্মানিত ইসলামী আদর্শানুযায়ী পদের জন্য প্রার্থী হওয়া নাজায়েয। যা দাবিকৃত শাইখুল হাদীছ, মাওলানা- মুফতীদেরও প্রকৃতপক্ষে অজানা নেই। তাই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে এ ধরনের নির্বাচন ব্যবস্থার অগ্রহণযোগ্যতার কথাও তাদের অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। হালে সাধারণেও উপলব্ধি করতে পারছে খোদায়ী রহমত না থাকার কারণে মিডিয়া ক্যু, কালো টাকা এবং পেশীশক্তির মাধ্যমে অবর্ণনীয় অরাজকতা দ্বারা এ নির্বাচন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সুতরাং সাধারণ দৃষ্টিতেই যখন তা এক অস্বস্তিকর প্রক্রিয়া, তখন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার লেবেলে কথিত ইসলামী দলগুলো, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার নামে তাদের স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য কি করে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে? তা সত্যিই গভীর আশ্চর্যবোধক, আক্ষেপ ও ক্ষোভজনিত প্রশ্ন।

কাজেই আমরা মনে করি, কোনো দলই ‘ইসলামী’ বা ইসলামী ভাবধারার শব্দ যোগ করে দল করতে পারে না। প্রচলিত রাজনীতি করতে পারে না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলোকেই জামাতে ইসলামীসহ কোনো তথাকথিত ইসলামী দলের নিবন্ধন থাকতে পারে না। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আলোকেই তথাকথিত সব ইসলামী দল নিষিদ্ধ করা উচিত।

পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার এদেশে সর্বভৌম ক্ষমতা জনগণের নয়, বরং সর্বভৌম ক্ষমতা মহান আল্লাহ পাক উনার- একথা সাংবিধানিকভাবে স্পষ্ট করা এবং রাষ্ট্রীয় কাজে প্রতিফলিত করা উচিত।

প্রসঙ্গত, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলো তাদের সব পোস্টারের শীর্ষে লেখা হয়- মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বশক্তিমান। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনাকে সব ক্ষমতার একচ্ছত্র মালিক বা সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মহান আল্লাহ পাক এ কথা দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ ও প্রচার করেই ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় এসেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক- এ কথা ক্ষমতাসীন দলের আদর্শ ও এবং মূল্যবোধ ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। যা ‘পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’- এ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সমার্থক। বলার অপেক্ষা রাখে না, আজকে চূড়ান্ত সময় যখন ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমান সে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ও প্রচারণার প্রতিফলন পেতে চায়, সত্যতা দেখতে চায়।

মূলত, এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েয, তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম দিচ্ছেন অনন্তকালব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার মহামহিম নিয়ামত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়