সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৪৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমস্ত প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

সৃষ্টির শুরু হতে যে চারটি মাসকে মহাপবিত্রতা দান করা হয়েছে তার মধ্যে পবিত্র যিলক্বদ ও জিলহজ্জ মাস অন্যতম। যা পবিত্র হারাম মাস এবং পবিত্র হজ্জ ও কুরবানীর মাস হিসাবে সমাদৃত। কুরবানী শব্দটি এসেছে ‘কুরব’ থেকে; যার অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তী হওয়া। কুরবানীর মাধ্যমে কোনো কিছু মহান আল্লাহ পাক উনার নামে নিবেদিত করে উনার নিকটবর্তী হওয়া।

পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র যবেহর বিধান (পবিত্র কুরবানী উনার) নির্ধারিত করেছি। যাতে তারা মহান আল্লাহ পাক উনার দেয়া গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু যবেহ করার সময় মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করে।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)

গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে অন্যতম হলো ‘গরু’। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অন্যতম পবিত্র সূরা শরীফ উনার নাম মুবারক ‘সূরা বাক্বারা শরীফ’ বা ‘গাভী’; যা প্রায় প্রত্যেক মুসলমানই অবগত রয়েছেন।

ইতিহাসে যুগে যুগে দেখা গেছে গরু কুরবানী বন্ধে সবসময় হিন্দুরা জোর-যুলুম করেছে। আর তা প্রতিবাদের দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক বিস্তার হয়েছে। খোদ বাংলাদেশেও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রবেশ হয়েছে গরু কুরবানী বন্ধে যালিম হিন্দু রাজা গৌরগোবিন্দের জোর-যুলুমের প্রতিবাদে হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার জিহাদের দ্বারা। গরু কুরবানী বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে কোনো শাসকই টিকে থাকতে পারেনি এবং কখনো পারবেও না। ইনশাআল্লাহ!

তাই সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রদ্বীন পবিত্র ইসলাম স্বীকৃত সরকারের উচিত ছিলো মুসলমানগণ উনাদের পবিত্র কুরবানী করার সুবিধার্থে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি এলাকায় ও গ্রামে পবিত্র কুরবানীর পশুর হাটের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ পর্যাপ্ত হাটের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তা না করে কথিত জনদুর্ভোগ ও কূটনৈতিক পাড়ার নিরাপত্তার অজুহাতে পবিত্র কুরবানীর পশুর হাট ঢাকার বাইরে নেয়া হয়েছে এবং হাটের সংখ্যা কমানো হয়েছে।

অথচ পূজার সময় দীর্ঘদিন এবং রাজধানীসহ সারা বাংলাদেশে তাদের মন্দিরের বাইরে রাস্তায় রাস্তায় মোড়ে মোড়ে হাজার হাজার পূজামন্ডপ তৈরি করা হয়। নাউযুবিল্লাহ! তখন যে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়ে সেটা তাদের নজরে পড়ে না? তখন নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটে না।

মূলত, রাজধানী থেকে পশুর হাট বাইরে নেয়ার পরিকল্পনাকে মুসলমানগণ পবিত্র কুরবানীর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছে।

উল্লেখ্য, প্রতি বৎসর পবিত্র কুরবানী আসলেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী মালউন ইহুদী, মুশরিক ও নাস্তিক এবং তাদের ভাবাপন্ন বিধর্মী তোষণকারী এদেশীয় ভারতীয় ও বিজাতীয় দালালরা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে।

গত বছরও (১৪৩৫ হিজরী) তারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে কুরবানীর পশুর হাট বসাতে বিলম্ব করেছে, তথাকথিত অ্যানথ্রাক্সের মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কুরবানীর দিনেও গরুর গোশত খাওয়ানো হয়নি, পশু মোটাতাজাকরণে বিষ থাকার অজুহাতে ও পশুর রক্ত পরীক্ষার নামে কুরবানী দাতাদেরকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে।

এবার আরো গভীর যড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তাদের নতুন চক্রান্ত হলো কুরবানীর জন্য আলাদা স্পট করা বা স্থান নির্ধারণ করা অর্থাৎ কুরবানী করাকে বিশেষ ঝামেলাযুক্ত করা ও কুরবানীর গোশত পাওয়াকে চরম বাধাগ্রস্ত করা এবং কার্যত কুরবানীতে মুসলমাদের নিরুৎসাহিত করা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সংবিধানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে। সংখ্যানুপাতে বণ্টন না হওয়া বৈষম্যের বড় পরিচয়। সেক্ষেত্রে দেখা যায় ১% হিন্দুর তুলনায় ৯৮% মুসলমান এদেশে বড় বৈষম্যের শিকার। ১% হিন্দুর পূজায় যেভাবে জেলার ডিসি থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এবং খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে হাজার হাজার মেট্রিক টন চাল, কোটি কোটি টাকা এবং ব্যাপক ও সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা দেয়া হয়, সে তুলনায় মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবগুলোতে কিছুই করা হয় না।

সংবিধানে যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে তার বড় পরিচয় হলো সংখ্যানুপাতে বণ্টন না হওয়া। অর্থাৎ কোনো ধর্মাবলম্বী যদি ১% থেকে থাকে আর তাদের জন্য যদি ১গুণ সুযোগ-সুবিধা বণ্টন করা হয়, তাহলে কোনো ধর্মাবলম্বী যদি ৯৯গুণ থাকে সেক্ষেত্রে তাদের জন্য ৯৯গুণ বেশি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। সরকারের উচিত আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সারা দেশের সর্বত্র গরিব মুসলমানদের জন্য কুরবানী করার ও গোশত বিতরণের ব্যবস্থা করা।

এদিকে আম জনতা এখন কুরবানীর পশু কেনার পর থেকে গোশত কাটাকাটি এবং অতঃপর খাওয়ার দৃশ্য পর্যন্ত ভিডিও করছে।

বলাবাহুল্য, এ ছবক তারা ধর্মব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই পেয়েছে। কারণ ধর্মব্যবসায়ীরাই তাদের কুরবানী ব্যবসার স্যাম্পল দেখানোর কৌশল হিসাবে প্রথম ছবিকে জায়িয করেছে। নাউযুবিল্লাহ!

একটা কুরবানীর গোশত বণ্টন দশবার বিভিন্ন লোকদের দ্বারা ধারণ করে বিদেশে পাঠিয়েছে। তা থেকেই আজকে সাধারণ মানুষের মধ্যেও কুরবানীর মতো ওয়াজিব কাজের ক্ষেত্রেও বিবিধ হারাম চেতনা ঢুকে গেছে। কুরবানীর হাটেও অবিরত গান-বাজনার আয়োজন তার বড় প্রমাণ। নাউযুবিল্লাহ!

অথচ কুরবানীর উদ্দেশ্য হচ্ছে- আক্বলকে সাধারণ যৌক্তিকতার পথ থেকে এবং নফসকে সহজাত প্রবণতার পথ থেকে ফিরিয়ে, শরীয়তের লাগাম লাগিয়ে, নির্ভেজাল আনুগত্যের পথে পরিচালিত করে ঈমানী জজবা জাগ্রত করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে কুরবানীর পশুর গোশত কিংবা রক্ত কিছুই পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া।”

স্মর্তব্য যে, ধর্মের উপর কথিত সংস্কৃতি নয়; বরং কথিত সংস্কৃতির বর্ণনাতীত উপরে দ্বীন ইসলাম। ধর্মের মধ্যে যখন সংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করে  তখন ধর্ম- আর ধর্ম থাকে না। আর ক্রমান্বয়ে দ্বীন থেকে বিচ্যুতিই দ্বীনের সাথে ধর্মের নামে দ্বীনবিরোধী সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটায়। এসব কথা সম্প্রতি ঈদ ও কুরবানীর নামে যা কিছু হচ্ছে তাতে খুব স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে।

সুতরাং আজকে চূড়ান্ত সময় যখন কুরবানীর নামে ঢুকে যাওয়া সব হারাম কাজ ও ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মব্যবসাকে এবং পবিত্র কুরবানী উনার বিরোধী ষড়যন্ত্রকে শক্ত হস্তে বন্ধ করতে হবে। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে এটাই হোক আমাদের সবার চেতনা ও প্রেরণা।

তবে ‘কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন পাস হবে না’- এ প্রতিশ্রুতির সরকারকেই এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে সক্রিয় হতে হবে। আর এসব সদিচ্ছা তখনই অর্জিত হবে, যখন যথাযথ ইসলামী মূল্যবোধ জাগরুক থাকবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন খাছ রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।

যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই কেবলমাত্র তা লাভ করা সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমিন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়