সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২৮৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, রহমাতুল্লিল আলামীন, রউফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে গোটা আলমের জন্য সম্মানিত রহমত মুবারক হিসেবে প্রেরণ করেছি।” সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেমন কোনো একটি এলাকার জন্য প্রেরিত হননি; তেমনি তিনি কোনো একটি সময়ের জন্যও আবির্ভূত হননি। বরং উনার মুবারক তাশরীফ অনন্তকালের জন্য। উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উনার সম্মানার্থে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফও অনন্তকালের জন্য। দিনের চব্বিশ ঘণ্টা, বৎসরের সবসময় এবং অনন্তকালের অনন্ত সময় পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উনার খিদমতেই ব্যাপৃত। সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গত, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করেন। অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করেন। হে ঈমানদারগণ! আপনারাও উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করুন এবং পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করুন অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করুন যথাযথ সম্মানের সাথে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

উল্লেখ্য, এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বর্ণনা করা হয়নি। অর্থাৎ তা অনন্তকালের জন্য। সুবহানাল্লাহ!

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান মুবারক সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার যিকির মুবারক উনাকে বুলন্দ হতে বুলন্দতর করেছি।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা ইনশিরাহ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪)

যা এমন যে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি যদি শুধু ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সাক্ষ্য দেয় তথাপিও ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত উনাকে সে ব্যক্তি ‘মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মনে-প্রাণে গ্রহণ না করবে এবং স্বীকার না করবে। সুবহানাল্লাহ!

বস্তুত কোনো ব্যক্তি কখনো বান্দা বা মুসলমান হতে পারবে না, কোনো দেশ ততক্ষণ পর্যন্ত সমৃদ্ধ হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা যথাযথভাবে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে বিলাদতে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ যথাযথভাবে পালন না করবে। সুবহানাল্লাহ!

উল্লেখ্য, এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’- এ কালিমা শরীফ-এ বিশ্বাসী।

এদেশে দশ লাখের ঊর্ধ্বে মসজিদের ৫ ওয়াক্ত আযানে দৈনিক দশবার করে অর্থাৎ কোটিবারেরও বেশি উচ্চারিত হয় ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল।’

এদেশের রাষ্ট্রদ্বীন হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্বীকৃত। কিন্তু কথা হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম মানে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্বীকার করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলামী মূল্যবোধ এর উজ্জীবন ঘটায়? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী আচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়?

বলাবাহুল্য, ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার দেশ হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে উপরোল্লিখিত জিজ্ঞাসার জবাব ‘হঁ্যা বোধক’ হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো- রাষ্ট্রযন্ত্র তা করতে চরমভাবে ব্যর্থ। বরং উল্টোদিকে তার বল্গাহীন অগ্রযাত্রা। নাঊযুবিল্লাহ!

কিন্তু এক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্র তথা সরকার কিন্তু বার বার বাধাগ্রস্থ তথা বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়ছে।

সরকারের তরফ থেকে দীর্ঘদিন যাবত প্রচার করা হয়েছে উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে আমরা কী দেখলাম। ইউক্রেন যুদ্ধে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ল। বিশ্ব বাজারের উর্ধ্বগতিতে দেশীয় বাজারেও উত্তাপ বাড়ালো। সিলেটে বন্যায় প্রায় লাখ কোটির ক্ষতি হলো। এর আগে করোনার নামে লক ডাউনে ক্ষতি হলো ৩ লাখ কোটি টাকা। বেকার হল ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। এতদিন শতভাগ বিদ্যুতায়নের দাবীদার সরকার শেষ পর্যন্ত ১৪/১৫ ঘন্টা লোডশেডিং দিতে বাধ্য হল। রিজার্ভ বহুগুণ কমল। মুদ্রাস্ফীতি অনেক বাড়লো। সুতরাং দেখা যাচ্ছে সরকারের কথিত অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন আমলে অপ্রতিরোধ্য সারাদেশ।

মেগা প্রকল্পে বাজেট কাটছাট করা হল। অনেক প্রকল্প বন্ধ হলো মন্ত্রী এমপি পুলিশ ইত্যাদির জ্বালানির ব্যায় কমানো হলো। এসি ব্যবহার সীমিত করা হলো। এমনকি ব্যায় সংকোচনের জন্য কাগজের ২ পৃষ্ঠার পরিবর্তে ১ পৃষ্ঠাতেই প্রিন্ট দিতে বলা হলো।

প্রমাণিত হচ্ছে অনেক কিছুই সরকারের ধারণায় থাকেনা। আবার অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের করারও কিছুই থাকে না।

কি করতে পেরেছিল সরকার করোনার ক্ষেত্রে?

নমরুদের মশার চেয়েও ক্ষুদ্র ছিলো এ করোনা ভাইরাস। কারণ নমরুদকে ধ্বংসকারী মশা অন্ধ হইলেও ল্যাংড়া হলেও, বধির হলেও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হলেও তার একটা অস্তিত্ব ছিল। তা দৃশ্যমান ছিলো। আর করোনা ভাইরাসের আকৃতি হচ্ছে ১ মাইক্রো মিটারের ১০ ভাগের ১ ভাগ। ১ মাইক্রো মিটার হচ্ছে ১ মিলিমিটারের ১০০০ ভাগের ১ ভাগ। অর্থাৎ করোনা ভাইরাসের আকৃতি হচ্ছে ১ মিলিমিটারের ১০০০ ভাগের ১ ভাগ। শক্তিশালী ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপ ছাড়া দেখা সম্ভব নয়।

কিন্তু সরকারের এত তোর-জোর, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ, কোষ্টগার্ড, আনসার, ডিবি, এস.বি, সি.আইডি, কথিত প্রায় দশ কোটি আওয়ামী লীগ নেতা-কমীর্, মন্ত্রী-এম.পি- সবাই মিলেও তো করোনা ভাইরাসকে জব্দ করতে পারেনি।

কাজেই সরকার অনেকক্ষেত্রে বড়ই অসহায়। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যার্থ ও বিকল।

প্রশ্ন হল অসহায় সরকার কী আপাদকালীন সময় এভাবে দ্বিকবিদিক জ্ঞান শূন্য থাকবে? আর জনগণের উপর যথেচ্ছাচার করবে? জুলুমবাজি করবে? এসব তো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ সরকারের চালিকাশক্তি সংবিধানেই ২(ক) ধারায় রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম বিধিবদ্ধ আছে। আর ইসলামে সব বিপদ থেকে মুক্তির হাক্বীক্বী দিক নির্দেশনা আছে।

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন মহাসম্মানিত হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত তাশরীফ মুবারক এনেছেন, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার কাছে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের ভালাই চান। তিনি মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, সীমাহীন দয়ালু।” সুবহানাল্লাহ! (সম্মাানিত ও পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৮)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ওই মহাসম্মানিত হযরত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যখন তুমি কোন বিপদে-আপদে বা দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হও তখন তুমি আমার নিকট দোআ মুবারক করলে আমি তোমার দুঃখ-দূর্দশা দূর করে দেই। যখন তোমার জমিনে ফসল হয় না, তখন তুমি আমার নিকট দোআ মুবারক করলে আমি তোমার ক্ষেতে ফসল ফলিয়ে দেই। যখন তুমি কোন জনমানব শূন্য স্থানে, (খাল-বিল, নদী বা পানিতে) নির্জন প্রান্তরে, নির্জন মরুভূমিতে অথবা বনে, ঝোপ-ঝার, জংগলে থাকো আর তোমার বাহন হারিয়ে যায় বা বাহন না থাকে, তখন তুমি আমার নিকট দোআ মুবারক করলে আমি তোমার বাহন ফিরিয়ে দেই, বাহনের ব্যাবস্থা করে দেই।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ মুসলমান তাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শান-মান মুবারক, দয়া-ইহসান মুবারক সম্পর্কে বিন্দু থেকে বিন্দুতমও অবগত নয়। উনার সম্পর্কে ইলম অর্জনে নিবেদিত নয় এবং উনার এতটুকু অনুসরণ অনুকরণে বিন্দু মাত্রও স্বপ্রণোদিত নয়। অথচ উনিই রিযিক বন্টনকারী যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন- মহাসম্মানিত মহাপবিত্র দাতা আর আমি হচ্ছি মহাসম্মানিত  ও মহাপবিত্র বন্টনকারী। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)

কাজেই উন্নয়নের জন্য, হেফাজতের জন্য, বাঁচার জন্য, চলার জন্য তথা সুচারুভাবে দেশ চালানোর জন্য সরকারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে রুজু হতে হবে। উনার সম্পর্কিত সার্বিক সহীহ আক্বীদার বিস্তার ঘটাতে হবে। জনগণের মাঝে উনার মহব্বত-মারিফাত মুবারক লাভের চেতনা জাগরুক করতে যথাযথ সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।

বিশেষ করে মহাসমারোহে মহাআয়োজনে, ব্যাপক জওক-শউক, উৎসাহ-উদ্দীপনায়, শান-শওকতের সাথে অনন্তকালব্যাপী পবিত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাদ শরীফ পালনের ঘনঘটা করতে হবে ইনশাআল্লাহ!

ছহিবে সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়াদ শরীফ, রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার নেক ফায়েজ-তাওয়াজ্জুহ লাভেই মহাসম্মানিত সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ উত্তমভাবে পালন করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ।  খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়