সকল ছানা-ছিফত মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। এমন ছানা-ছিফত যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন। অপরিসীম, অকৃত্রিম, অগণিত দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক যা তিনি পছন্দ করেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, æহে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি (স্বীয় উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় ফদ্বল ও রহমত স্বরূপ অর্থাৎ অপার দয়া ও অনুগ্রহ হিসেবে উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন; সে জন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশের আমলটি তাদের সমস্ত নেক আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
এ আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ ও যামানার লক্ষ্যস্থল আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল উমাম, ইমামুল আইম্মাহ, ইমামে আ’যম, যামানার সুমহান ইমাম ও মুজতাহিদ, সাইয়্যিদুনা মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনি ইরশাদ মুবারক করেন, ২৪ ঘন্টাই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদ, শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করা, সে উদ্দেশ্যে খিদমতের আঞ্জাম দেয়া, তা’যীম-তাকরীম করা, ছলাত ও সালাম তথা পবিত্র মীলাদ শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ ইত্যাদি পাঠ করা সর্বোত্তম এবং ফরয।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ইমামুল উমাম, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সার্বক্ষণিক বেমেছাল তায়াল্লুক নিছবতের অধিকারী বিশেষত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে সর্বপ্রথম বেমেছাল ও পরিপূর্ণ, চরম-পরম তথা ভাষাহীনভাবে ফানা ও বাকা হয়ে আছেন। সুবহানাল্লাহ!
তারই বিন্দুমাত্র বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ওজুদ মুবারক যিনি এই উম্মাহকে, কুল-কায়িনাতের সবাইকে অনন্তকালের জন্য হাদিয়া করেছেন ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ তথা æপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ”। এ উপলক্ষে সুমহান দরবার শরীফ এ আবাদুল আবাদের জন্য প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহিমান্বিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার মাহফিল এবং উনার সম্মানে বিশেষ তবারক। সুবহানাল্লাহ! যা সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার অনন্য কারামত অনবদ্য তাজদীদ। সুবহানাল্লাহ!
সঙ্গতকারণেই সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার এই সুমহান অনবদ্য তাজদীদ ও অনন্য কারামতকে সবারই সম্যক হৃদয়াঙ্গম করতে হবে। সার্থকভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং সর্বাত্মক খিদমতে শরীক হতে হবে ব্যক্তি থেকে সরকারকে।
সরকার ব্যক্তি নির্ভর। ব্যক্তির জন্যই সরকার। সরকারের জন্য ব্যক্তি নয়। আর এই ভূখ-ের ব্যক্তি সমষ্টির ৯৭ ভাগই মুসলমান। সুতরাং ৯৭ ভাগ মুসলমানকে যেমন এ বিষয়ে অনুপ্রাণিত হতে হবে তেমনি তাদের সরকারকেও এ অনুভূতির প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
উল্লেখ্য, এদেশের ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’- এ কালিমা শরীফ-এ বিশ্বাসী।
এদেশে দশ লাখ ঊর্ধ্ব মসজিদের ৫ ওয়াক্ত আযানে দৈনিক দশবার করে অর্থাৎ কোটিবারেরও বেশি উচ্চারিত হয় ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ।’ অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল।’
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, æমহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে (সমস্ত দ্বীন ও মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে) এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষ্যই যথেষ্ট। (যার সাক্ষী মহান আল্লাহ পাক তিনি) আর রসূল হচ্ছেন, সাইয়্যিদুনা মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (পবিত্র সূরা ফাতহ্ : পবিত্র আয়াত শরীফ- ২৮, ২৯)
অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম হচ্ছেন- মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মুবারক ওহী উনার মাধ্যমে নাযিলকৃত একমাত্র মনোনীত ও সম্মানিত দ্বীন। যা বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত কোনটিই জায়িয নেই। যে বাড়াবে-কমাবে, সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, এদেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্বীকৃত। কিন্তু কথা হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম মানে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে স্বীকার করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালনে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধ এর উজ্জীবন ঘটায়? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী আচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়?
বলাবাহুল্য, ৯৭ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দেশ হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে উপরিল্লিখিত জিজ্ঞাসার জবাব হ্যাঁ বোধক হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হল রাষ্ট্রযন্ত্র তা করতে চরম-পরমভাবে ব্যর্থ। বরং উল্টোদিকে তার বল্গাহীন অগ্রযাত্রা। নাঊযুবিল্লাহ!
এজন্য ব্যক্তি মুসলমানও কম দায়ী নয়। ব্যক্তি মুসলমান প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাযের আযানে ও ইক্বামতে ২০ বার করে শুনে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ।’ অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এবং বিতরসহ ৫ ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে তাশাহ্হুদে কমপক্ষে ১৭ বার সাক্ষ্য দেয়, æ……ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহ।” অর্থাৎ মুসলমান ব্যক্তি দৈনিক ৩৭ বার সাক্ষ্য দেয়, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ।’ সুবহানাল্লাহ!
আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা এনেছেন তা আঁকড়িয়ে ধরো এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো।” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
বলাবাহুল্য, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে ৩৭ বার সাক্ষ্য দেবার পরও দেশের ৯৭ ভাগ মুসলমান ফরয-ওয়াজিব পালন থেকে দূরে থাকে কীভাবে? সুন্নত পালন থেকে গাফিল থাকে কীভাবে? হারাম-হালাল একাকার করে কী করে? বেপর্দা-বেহায়া-বেশরায় মশগুল হয় কী করে? তাহলে কীভাবে বিশবার ‘মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ কানে শোনা ও স্বীকৃতি দেয়া হয়? এবং বিতর সহ ৫ ওয়াক্ত নামাযে কমপক্ষে ১৭ বার তাশাহ্হুদে নিজ মুখে উচ্চারণ করা ‘ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রসূলুহ।’ বলার অর্থ কিসে পরিণত হয়?
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।” (পবিত্র সূরা ফাত্হ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)
মূলত পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাযথ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনের দ্বারাই মুসলমান সে ঈমানী চেতনা ও প্রেরণা তথা কুওওয়াত বা নিয়ামত পাবে।
রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার এদেশে, ৯৭ ভাগ মুসলমান অধিবাসীর এদেশে- সর্বপ্রধান, সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোচ্চ সরকারি উৎসব হবে পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পালনের উৎসব। এ উৎসবকে উপলক্ষ করেই হাজার হাজার কোটি টাকা বাজেট করতে হবে। দেশের সব গরিব-দুঃখীদের এ ঈদ পালনের জন্য প্রভূত সরকারি সাহায্য দিতে হবে। গোটা পবিত্র রবীউল আউয়াল শরীফ মাস উনাকেই ছুটির মাস হিসেবে গণ্য করতে হবে। দেশের দশ লাখ মসজিদে ব্যাপক সরকারি সহযোগিতায় ওয়াজ মাহফিল, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মাহফিল ও উন্নতমানের তবারক বিতরণ ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে আবশ্যকীয়ভাবে মনে রাখতে হবে, হামিলু লিওয়ায়িল হামদ, হাবীবে আ’যম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সার্বক্ষণিক রূহানী সংযোগ সমৃদ্ধ ও উনার মহান সুন্নত দ্বারা সুশোভিত মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক উনার মাধ্যমেই আমাদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব সনদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক জাত ও মুবারক ছিফত সম্পর্কিত ইলম ও ফিকির, উনার হাক্বীক্বত সম্পর্কিত মা’রিফাত এবং উনার পূর্ণ অনুসরণ ও সুন্নত পালনের এবং সর্বোপরি চরম, পরম ও গভীর মুহব্বত, তা’যীম-তাকরীম ও আদবের সাথে সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পালনের কুওওয়ত। পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে সেসব নিয়ামত হাছিলই হোক আমাদের অন্তরের আরজু। (আমীন)