সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২২৩তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব ছানা-ছিফত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। এমন ছানা-ছিফত যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন। অপরিসীম, অকৃত্রিম, অগণিত দুরূদ ও সালাম মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। এমন দুরূদ ও সালাম মুবারক যা তিনি পছন্দ করেন। যেমন দাবি করা হয় তেমন গণতন্ত্র পৃথিবীর কোথাও প্রচলিত আছে কিনা তা একটি জোরালো প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। আর আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এ প্রশ্ন আরো সংবেদনশীল ও গুরুতর। এদেশের ‘সংবিধান’ থেকে ‘সরকার’ কোথাও অতীতেও জনগণের চরম অভিব্যক্তি প্রকাশিত হয়নি এবং এখনো হচ্ছে না। এমনকি সরকারেও ক্ষমতাসীন দলের নীতি ও প্রথা প্রবর্তিত হচ্ছে না- সে কথাও এখন ওপেন সিক্রেট। পাশাপাশি সরকারের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাচ্ছে বামপন্থী মন্ত্রী-কর্মীরা- তা এখন সর্বমহলে সমালোচিত।

বামপন্থীরা ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা করতে পারতো না, তা বর্তমান সরকারের কাঁধে ভর করে অনায়াসে তারা করে যাচ্ছে। দেশের জনমতকে উপেক্ষা করে চলছে। জনমত লাঞ্ছিত হচ্ছে। জনমত নিষ্পেষিত হচ্ছে। জনমত বিপন্ন হচ্ছে। গণতন্ত্রের কবর রচিত হচ্ছে। জয় হচ্ছে বামপন্থীদের। প্রচার হচ্ছে বামনীতির- এসব কথা আজ সংক্ষুব্ধ জনতার মুখে মুখে।

বিশেষ করে বর্তমান শিক্ষানীতিতে, নাস্তিক শিক্ষামন্ত্রী যে তার বামদর্শন ও নাস্তিক্যবাদী চিন্তা পুরোটাই ঢুকিয়েছে, তা এখন রাখ-ঢাকের সম্পূর্ণ বাইরে। শিক্ষানীতিতে দেশের ৯৭ ভাগ মুসলমানদেরকে অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া হয়েছে। শিক্ষানীতিতে মুসলমানদের ধর্মীয়-বিশ্বাসকে লঙ্ঘন করা হয়েছে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে সমূলে উৎপাটনের কূটকৌশল করা হয়েছে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে অন্যধর্মের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে নিয়ে খেলা করা হয়েছে। পবিত্র দ্বীন ‘ইসলাম’মুবারক শব্দটুকুর অক্ষুন্নতা ও অখ-তা নিয়ে পরিহাস করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা হয়েছে ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ নামে। অথচ পবিত্র দ্বীন ‘ইসলাম’ একটি ওহীক শব্দ মুবারক। যার মূল্যায়ন ওহী মুবারক হিসেবে। পক্ষান্তরে ‘নৈতিকতা’ একটি সমাজে প্রচলিত শব্দ। যা পরিবর্তনশীল, রকমফেরযুক্ত এবং অনৈসলামিক। তাহলে পাঠ্যপুস্তক বইটির অর্থ দাঁড়ায় ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও অনৈসলামিক শিক্ষা।’ এ স্ববিরোধিতার জন্য নাস্তিক মন্ত্রীই দায়ী। কূটকৌশলে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে অনৈসলামের দিকে ধাবিত করা অথবা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উঠিয়ে দেয়াই তার আসল ষড়যন্ত্র।

নৈতিকতা বা Morality শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Moralitas থেকে। যার অর্থ- প্রথা, চরিত্র, যথাযথ ব্যবহার। উল্লেখ্য, এসব শব্দ একটিও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। যথার্থ নয়।

উদাহরণত বলা যায়, আমাদের সমাজে ঘুষ অনৈতিক। কিন্তু সুদ নৈতিক। অথচ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে সুদ ও ঘুষ দুটোই অনৈতিক। আবার আমাদের দেশে মিনি স্কার্ট পরা অনৈতিক। কিন্তু আমেরিকায় মিনিস্কার্ট কেন, বিবস্ত্র হয়েও সমুদ্র সৈকত, পার্কে ঘোরা অনৈতিক নয়। অপরদিকে ফ্রান্সসহ কয়েকটি দেশে বোরকা পরা অনৈতিক। নাঊযুবিল্লাহ!

পক্ষান্তরে ফ্রান্স, ইতালী, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে সমকামিতাও নৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় আইনে সমর্থিত। নাঊযুবিল্লাহ!

দেখা যাচ্ছে, নৈতিকতার সংজ্ঞা হলো- যে সমাজে যা প্রচলিত তাই নৈতিক। নাঊযুবিল্লাহ! কিন্তু পবিত্র দ্বীন ইসলাম এ সংজ্ঞার ঘোর বিরোধী।

চাপের মুখে আমাদের দেশে সরকার কালো টাকা সাদা করার নৈতিকতা দিয়েছে। আর এখন যেভাবে বিবস্ত্রপনা, অশ্লীলতা, লিভ-টুগেদার ইত্যাদি বাড়ছে, সামনে খোদা না করুন, জনগণের চাপে এগুলোও রাষ্ট্রীয় আইনে নৈতিক হয়ে যেতে পারে। উদাহরণত কিছুদিন আগে সরকার বিশেষ বিবাহ আইন প্রণয়ন করেছিল। কিন্তু উল্লিখিত সব কিছুই প্রচ- রকমের অনৈসলামী। কাজেই ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম’ আর ‘নৈতিকতা’ এক নয়।

প্রসঙ্গত, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক ফরমান, “নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র পবিত্র ইসলাম।” তথাকথিত কোনো নৈতিকতা নয়। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ১৯)

“যদি তারা আপনার সাথে বিতর্কে অবতীর্ণ হয়, তবে বলে দিন, আমি এবং আমার অনুসরণকারীগণ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছি।” তথাকথিত নৈতিকতা নয়। (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ২০)

“তারা কি মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত দ্বীন উনার পরিবর্তে অন্য ধর্ম তালাশ করছে? অর্থাৎ পবিত্র দ্বীন ইসলাম ছাড়া তথাকথিত অন্য কোনো নৈতিকতা গ্রহণযোগ্য নয়।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৩)

“যে লোক পবিত্র দ্বীন ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে, অর্থাৎ তথাকথিত নৈতিকতা গ্রহণ করে; কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৫)

“আর এটাই আপনার মহান পালনকর্তা উনার সরল পথ। আমি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্যে আয়াতসমূহ পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করেছি।” এখানে অন্য কোনো ধরনের নৈতিকতা গ্রহণযোগ্য নয়। (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৬)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ সাপেক্ষে প্রতিভাত হয়, ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম’ ও ‘নৈতিক’ শিক্ষার মূল অর্থ হচ্ছে- ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম’ ও ‘অনৈসলামী শিক্ষা।’ যার ফলাফল হচ্ছে শূন্য ধর্মীয় শিক্ষা। মূলত, এটাই নাস্তিক শিক্ষামন্ত্রীর গোপন উদ্দেশ্য। এদেশের মুসলমান ছেলে-মেয়েদের ধর্মীয় শিক্ষা শূন্য করাই তার বামদর্শন ও নাস্তিক্যবাদী মিশন। এর বিরুদ্ধে ৯৭ ভাগ মুসলমানদেরকে পবিত্র ঈমান উনার দায়বোধ থেকেই জেগে উঠতে হবে।

মূলত, এসব জযবা ও জিহাদীবোধ আসে পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও আমল থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা মুবারক ফয়েজ, তাওয়াজ্জুহ। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়