সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২১৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমুন্নত, সুমহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই সকল প্রশংসা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই সকল ছানা-ছিফত।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮(১) ধারায় বর্ণিত হয়েছে- ‘মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেজষের ব্যবহার নিষিদ্ধ করণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ ১৮(২) ধারায় বর্ণিত রয়েছে, ‘পতিতাবৃত্তি ও জুয়াখেলা নিরোধের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

সংবিধানের ২৩নং ধারায় বলা হয়েছে- ‘রাষ্ট্র জনগণের সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’ বলাবাহুল্য, সংবিধানের এই তিনটি অনুচ্ছেদের একটিও বর্তমানে আদৌ কার্যকর হচ্ছে না। বরং রাষ্ট্রের প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতায় মিডিয়া আজ অবলীলাক্রমে এমন সব শব্দ আওড়িয়ে যাচ্ছে, পত্রিকায় প্রকাশ করে যাচ্ছে; যা ৯৭ ভাগ অধিবাসী মুসলমানের জন্য চরম-পরম ক্ষোভের। আজ রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পত্রিকায় প্রকাশ্যে পত্রস্থ হচ্ছে ‘বিশ্বের সেরা যৌন আবেদনময়ী’, ‘যৌনকর্মী’, ‘সেলিব্রেটি’, ‘র‌্যাম্প মডেল’, ‘ক্যাটওয়াক’, ‘সেক্স সিম্বল’, ‘আইটেম গার্ল’ ইত্যাদি সব বিবস্ত্রপনা সম্পৃক্ত শব্দ। তার বিপরীতে ৯৭ ভাগ মুসলমানের জন্মগত ও স্বভাবজাত যে শব্দসমূহ পরিচিত ও বহুল প্রচলিত হবার কথা ছিল তার কোন ব্যবহার আজ নাই বললেই চলে। অথচ ৯৭ ভাগ মুসলমানের স্বভাবগতভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার ‘কুদরত’ ও ‘রহমত’ ছিফতদ্বয়ের সাথে সম্পৃক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বেশি বেশি উচ্চারিত হওয়ার কথা ছিল। সমাজ জীবনে সর্বত্র প্রতিফলিত হওয়ার দরকার ছিল।

উল্লেখ্য,  মহান আল্লাহ পাক উনার আটটি জাতি ছিফতের মাঝে ‘কুদরত’ অন্যতম। মহান আল্লাহ পাক উনার ইলম এবং ‘কুদরতের’ দ্বারা তিনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের সাথে বিরাজমান। মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত লাভ এবং উনার মনোনীত দ্বীন ইসলাম পালনে কুদরত সম্পর্কিত ইলম অনিবার্য। ইসলামের বিবিধ অনুষঙ্গ অনুধাবনে যেখানে সাধারণ বর্ণনার অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, কুদরতের বিশ্বাসই সেখানে সমাধান ব্যক্ত করে। সন্দেহবাদীদের থেকে উত্থাপিত সংশয়মূলক জিজ্ঞাসা “বাঘ-কুমিরের পেটে কেউ গেলে, তার সুওয়াল-জাওয়াব হবে কি করে? প্লেন ক্র্যাশ হয়ে মারা গিয়ে ছাইয়ে পরিণত হলে অথবা মিশরের পিরামিডে শায়িত মৃতদেহের সুওয়াল-জাওয়াব হবে কি করে?”

এসব ক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতের ধারণার অবকাশই সকল জিজ্ঞাসাকে প্রশমিত করে।

উল্লেখ্য, ইসলামের স্বার্থে, মুসলমানদের কল্যাণার্থে মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত জাহিরের ঘোষণা রয়ে গেছে। কিন্তু খোদায়ী কুদরত সম্পর্কে কার্যত মুসলমানদের মাঝে কাঙ্খিত ইয়াক্বীনের ঘাটতি প্রকট। বিশেষত নামধারী উলামাদের কার্যকলাপে এ শূন্যতা করুণভাবে দৃশ্যমান।

ইসলামী আন্দোলন দাবি করলেও তারা চলমান প্রবাহের গণ্ডির বাইরে উঁকি দিতে পারেনি। বরং মনগড়া ব্যাখ্যার দ্বারা তারা শাশ্বত ইসলামকে কাট-ছাঁট করে তথাকথিত আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টায় লিপ্ত।

তারা আজ ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, মাওসেতুংয়ের লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, ধর্ম রক্ষার জন্য খ্রিস্টানদের ব্লাসফেমী আইন ও মৌলবাদ দাবি এবং ইসলামী খিলাফতের জন্য ইহুদী-নাছারার অনুকরণে ইসলামের নামে হারাম নির্বাচন ভিত্তিক ভোট ব্যবসার রাজনীতি করছে।

বলার অপেক্ষা রাখেনা, এ সবই হচ্ছে স্পষ্টত মহান আল্লাহ পাক উনার ‘কুদরতী’ ক্ষমতার প্রতি তাদের অবিশ্বাসের প্রমাণ। অথচ মহান আল্লাহ পাক উনার ‘কুদরতে’ বিশ্ব রাজনৈতিক পটেও যে অবলীলাক্রমে কী পরিবর্তন ঘটতে পারে সারা বিশ্বে কমিউনিজমের পতন তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ। এছাড়া এ যুগেও ছবির ভিত্তিতে পরিচালিত মিডিয়াকে ব্যবহার না করেও কুদরতীভাবে কিরূপ প্রচার-প্রসার হওয়া সম্ভব হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণকালে জনশূন্য ময়দানে দেয়া আযানের জবাবে লক্ষ-কোটি হাজীর হজ্জে যোগদান তারই প্রমাণ। ‘পূর্ণ শরীয়তের উপর দায়িম-ক্বায়িম থাকলে মহান আল্লাহ পাক তিনি যে ‘কুদরতী’ মদদ করবেন ও খাছ ‘রহমত’ নাযিল করবেন’- এ আক্বীদার অভাবই আজকে বিজাতীয় পথে চলার মূল কারণ।

উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার ‘কুদরতী’ মদদ উনার প্রতিই হবে যার প্রতি রয়েছে উনার রহমত। মূলত বান্দা সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটির মুখাপেক্ষী সেটি হলো আল্লাহ পাক উনার ‘রহমত’। ‘রহমত’ শব্দটি পবিত্র কুরআনে কারীমায় সরাসরি ৭৯ বার এবং বিভিন্নভাবে ২৫৮ বার এসেছে। আল্লাহ পাক উনার রহমত নাযিলের ফলেই ফসল হয়, বৃষ্টি নামে, ঝিনুকের ভিতরে মুক্তা হয়, মানুষের ছূরত সুন্দর হয়। মহান আল্লাহ পাক উনার ‘রহমত’ পেলেই মানুষ হিদায়েত পায়।

আল্লাহ পাক উনার রহমত যাঁদের উপর পড়ে কেবলমাত্র উনারাই হাদী হতে পারেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে উনাদের দিল কোমল হয়; যা মানুষের হিদায়েতের জন্য অনিবার্য শর্ত। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “আল্লাহ পাক উনার রহমতেই আপনি তাঁদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।” (সূরা আলে ইমরান : আয়াত শরীফ ১৫)

উল্লেখ্য, যারা জাহিরী মাওলানা তাদের দিলে খোদার রহমতের অভাব থাকার কারণে তারা মানুষের হিদায়েতের জন্য উপযোগী নয়। বরং যাঁরা ওলীআল্লাহ উনারাই রহমতের ধারক-বাহক বিধায় সে কাজের উপযোগী। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটবর্তী।” (সূরা আরাফ : আয়াত শরীফ ৫৬)

মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার ‘কুদরত’ ও ‘রহমতের’ সাথে নিবিড় সম্পৃক্ততা মহান আল্লাহ পাক উনার জাত-পাক উনার পরিচয় তথা মা’রিফাত লাভের মাধ্যমেই সম্ভব। মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবতেই তা অব্যর্থরূপে সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নসীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়