প্রশংসার সবকিছুই মহামহিম রব্বুল আলামীন উনার জন্য। সাথে ছলাত ও সালাম-এর সবই রহমতুল্লিল আলামীন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ঘিরে আবর্তিত ও ব্যাপ্ত।
সাংবিধানিকভাবে ‘ইসলাম’ যে এদেশে রাষ্ট্রধর্ম; শুধু তাই নয়। বিষয় হচ্ছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ও যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে তাতে একজন মুসলমানও পরিপূর্ণ ইসলাম পালনের সুযোগ পাবেন।
একজন ‘মুসলমান’ তাঁর ‘ইসলামী’ জীবন-যাপনের সুযোগ পাবেন।
এজন ‘মুসলমান’, ‘ইসলামী মূল্যবোধ’ বজায় রেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলতে পারবেন; ফিরতে পারবেন।
একজন ‘মুসলমান’ তার চার পাশের আবহে ‘ইসলামী পরিবেশ’ পাবেন।
একজন মুসলমান- ‘তিনি চলাফেরা করলে কোনো বেপর্দা নারীর মুখোমুখি হবেন না।’ একজন মুসলমান তার কানে- ‘কোনো গান-বাজনার আওয়াজ আসবে না।’ একজন মুসলমান- তিনি ‘সুদমুক্ত অর্থনীতির’ সুযোগ পাবেন। একজন মুসলমান- ‘তিনি শিক্ষায় ইসলামী শিক্ষার গভীরতা পাবেন।’
একজন মুসলমান ‘তিনি শরীয়তী আইনের সমাহার পাবেন।’
মূলত: এসবই হচ্ছে একজন মুসলমানের একান্ত ধর্মীয় অধিকার। আর রাষ্ট্রধর্ম- ‘ইসলাম’ অথবা সব ‘ধর্মাবলম্বীর ধর্ম পালনের’ সুযোগের অধিকার প্রদান সাপেক্ষে রাষ্ট্রযন্ত্র অবশ্যই সাংবিধানিকভাবে প্রতিটি মুসলমানকে সে সুযোগ দানের জন্য দায়বদ্ধ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ৯৭ ভাগ মুসলমানের এদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র মুসলমানদের সে কাঙ্খিত ধর্মীয় অধিকার প্রদানে লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ।
রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি আচরণে একথা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত। এক বিজ্ঞাপনের উদাহরণ যদি এক্ষেত্রে দেয়া হয় তাও চরম।
একজন মুসলমান পথচারীর আজ প্রতি মুহূর্তে হাজারো কবীরাহ গুনাহ হয়। হাজারো চোখের ব্যভিচার হয়। শুধুমাত্র রাষ্ট্রযন্ত্রে চলমান বিজ্ঞাপন বাহারের কারণে। প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, লক্ষ লক্ষ বিল্ডিংয়ের ছাদে ছাদে বা দেয়ালে দেয়ালে প্রায় বিবস্ত্র নারীর বিশাল বিজ্ঞাপন টানানো আছে। এসব বিবস্ত্র বাহারী বিজ্ঞাপন মূলত রাষ্ট্রযন্ত্রকে ক্ষত-বিক্ষত করে চলছে।
এসব বিজ্ঞাপন একজন রক্ত-গোশতের মানুষকে বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত সুন্দরী নারীর সান্নিধ্য পাবার জন্য প্ররোচিত করছে। যার পরিণতি হচ্ছে নারীটিজিং, সম্ভ্রমহরণ, পরকীয়া থেকে খুন-খারাবী ইত্যাদি।
আবার বিলাসী ফ্ল্যাট বা আয়েশী উপকরণের চটকদার বিজ্ঞাপন প্রতি মুহূর্তে প্রত্যেক মানুষকে অঢেল বিত্ত-বৈভবের অধিকারী হতে প্রলুব্ধ করছে।
যার পরিণতি হচ্ছে ঘুষ, দুর্নীতি থেকে মজুদদারী, মুনাফাখোরী তথা সিন্ডিকেট। তার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
অপরদিকে ‘ইসলামী মূল্যবোধ’ অনুযায়ী একজন সাধারণ মুসলমান যে শুধু দুনিয়াতেই বঞ্চিত হচ্ছে তা নয়; বরং আখিরাতেও সে লাঞ্ছিত হবার উপক্রম হচ্ছে।
সাধারণ মুসলমান সাধারণ প্রবৃত্তির অধিকারী। যার প্রভাবে সে বিজ্ঞাপনে প্রদর্শিত বিবস্ত্র সুন্দরী নারীর প্রতি দৃষ্টিপাতে বিভোর হতেই পারে। নাঊযুবিল্লাহ!
এতে করে হচ্ছে তার লক্ষ লক্ষ কবীরাহ গুনাহ। যার পরিণতি আখিরাতে হাবিয়াহ দোযখ। অথবা আগুনের তৈরি নারীর আলিঙ্গনের শাস্তি। নাঊযুবিল্লাহ!
দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের বেখেয়ালের বিজ্ঞাপনে সাধারণ মুসলমান, পরকালে দোযখের আগুনে প্রজ্বলিত হবার উপযুক্ত হচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্র এর অবাধ পৃষ্ঠপোষকতা করছে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রই যে ৯৭ ভাগ মুসলমানকে, ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’-এর এদেশে প্রতি মুহূর্তে জাহান্নামী তৈরি করছে; রাষ্ট্রযন্ত্র সে দায় এড়াতে পারে কী?
রাষ্ট্রযন্ত্র ৯৭ ভাগ মুসলমানকে, ইসলাম পালনের পরিবেশ বা অধিকার দিচ্ছে; সে কথা বলতে পারে কী?
এদিকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকেও বর্তমানে বিজ্ঞাপনে যেভাবে মিথ্যা জরিপ,
বাংলাদেশী ঐতিহ্য-অস্বীকার, বিদেশী মডেলে বিজ্ঞাপন, নীতিহীন শিক্ষা,
প্রতারণামূলক চর্চা
ইত্যাদির অনুশীলন করছে তাও বা রাষ্ট্রযন্ত্র কীভাবে মেনে নিচ্ছে?
পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে যেভাবে নারীকে পণ্য হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে তাও নারীবাদীরা কিভাবে মেনে নিচ্ছে?
এছাড়াও গোপন রোগ-চিকিৎসার যে প্রকাশ্য বিজ্ঞাপন প্রচারিত হচ্ছে; তাতে পিতা-পুত্র বা মা-মেয়ে একসাথে রাস্তায় চলবে কীভাবে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী আদৌ তা ভেবে দেখেছে?
বলার অপেক্ষা রাখে না, রাষ্ট্রযন্ত্র আজ নীতিহীন পুঁজিপতিদের দখলে। সেখানে পুঁজিই বড় কথা। নীতি মূল্যহীন।
প্রসঙ্গত, একটা বিষয় স্পষ্ট যে, প্রতারণা, মিথ্যা, নারীটিজিং, সম্ভ্রমহরণ, পরকীয়া, খুন, ঘুষ, দুর্নীতি ইত্যাদি বন্ধ অথবা নারীত্ব মূল্যায়ন কিংবা বিজ্ঞাপনের সুষ্ঠু, সুস্থ ও সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন সেটা তখনই প্রযোজ্য হবে যখন তাতে ইসলামী নীতিমালা সর্বাংশে প্রতিফলিত হবে। অন্য কথায় সব অন্ধকার দূর করে আলোর প্রজ্জ্বলনে- ইসলামকেই প্রতিভাত করতে হবে।
মূলত: এসব দায়িত্ববোধ আসে ইসলামী অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ।
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল, রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক লাভেই কেবলমাত্র সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নছীব করুন। (আমীন)