সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৯৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-উনার জন্য। যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।

মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার মনোনীত ধর্ম ইসলাম। মুসলমানদের প্রাণপ্রিয় ধর্ম ইসলাম। ইসলাম তাদের জীবনের ধর্ম, যুগের ধর্ম, চেতনার ধর্ম। ইসলামের অবমাননায়, তার উপর আঘাত, তার প্রতি শত্রুতা, মুসলমানদের ঈমানের মর্মমূলে তাই গভীরভাবে  নাড়া দেয়। তাদেরকে উজ্জীবিত করে জিহাদী জজবায়। যে জজবা অপার্থিব, অমূল্য এবং অপ্রতিরোধ্য।

বলাবাহুল্য, নুবুওওয়াতের ধারাবাহিকতা সমাপ্তি লাভের পর আলিমগণই (উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী) মুসলমানদের সে জজবায় কা-ারীরূপে কাজ করছেন। তবে এর পাশাপাশি আলিম পরিচয়ে, বর্ণিত জজবাকে ভ্রান্ত পথে পরিচালনার এবং সে সুবাদে স্বীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্যোক্তাদের অভাব, অতীতে যেমন ছিলো না, এখনও তেমন নেই। বরং বর্তমানে রয়েছে তাদের বিশেষ প্রাদুর্ভাব। ইসলাম বলুন্দ রাখার প্রেক্ষিতে ‘আলিম’ শব্দটি তাই কেবল স্পর্শকাতর, শ্রদ্ধাযুক্ত এবং গুরুত্ববহই নয় সে সাথে আলিম নামধারীদের, ইসলামের নামে অনৈসলাম করার প্রেক্ষিতে তা পর্যালোচনা সাপেক্ষ, অনুধাবনযোগ্য এবং বিশেষভাবে বিচার্য।

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ তাই আলিম সম্পর্কে বিশদ আলোচিত হয়েছে। কুরআন শরীফ-এ বলা হয়েছে, ‘যারা ইলমপ্রাপ্ত হয়েছেন, তারাই মর্যাদাবান।’ (সূরা মুজাদালাহ)

এরপর এ মর্যাদার পাশাপাশি তাদের নিদর্শন সম্পর্কে সংযুক্ত করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-উনার বান্দাগণের মাঝে আলিম উনারাই আল্লাহ পাক, উনাকে বেশি ভয় করেন।’ (সূরা ফাতির)

এ আয়াত শরীফদ্বয়ের পরস্পরের সমন্বয়ে প্রতিভাত হয় যে, যারা ইলম লাভ করেছেন এবং সে প্রেক্ষিতে আমল করেন ও আল্লাহ পাক, উনাকে ভয় করেন তারাই মর্যাদাবান, তারাই আলিম। কুরআন শরীফ-এর সাথে হাদীছ শরীফ-এও এই বক্তব্যের পূর্ণ সমর্থন রয়ে গেছে।

হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, উনাকে জিজ্ঞাস করলেন, ‘আলিম নামের উপযুক্ত কারা হবেন?’ তিনি বললেন, ‘যারা ইলম অনুযায়ী আমল করেন উনারাই।’ (দারিমী শরীফ) অর্থাৎ আলিম বলে দাবী করলেও আলিম নামের উপযুক্ত না অনেকেই। অনুপযুক্তরা কেবল নামধারী আলিম।

মূলত নামধারী আলিম সম্পর্কে ইসলামের শুরু হতেই অনেক আলোচনা হলেও আজ আখিরী যামানায় একই বিষয়ে পর্যালোচনার, মূল্যায়ণের এবং চিহ্নিতকরণের অবকাশ ও অত্যাবশ্যকতা পূর্বাপেক্ষা অতিবেশি। যদিও কোন কোন মহল মনে করেন, আলিম নামধারীদের সমালোচনা, তাদের কুকীর্তির বয়ান, আমভাবে, আমজনতাকে জানানো যাবে না। যদি বা করতে হয় তবে তা চুপিসারে। সাধারণকে সে বিষয়ে অবহিত করতে তাদের ঘোর আপত্তি। তবে এ আপত্তি যে কেবলই অমূলক, তাতে সন্দেহ নেই। যেহেতু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফেই নামধারী, দুষ্টমতি উলামায়ে ‘ছূ’দের সম্পর্কে সরাসরি কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। কুরআন শরীফ-এ বলা হয়েছে, যারা তাওরাতের হাফিয হয়েছে, তৎপর তদ্রুপ আমল করেনি, তারা কিতাবরাশি বহনকারী গর্দভের ন্যায়।’ (সূরা জুমুয়া)

আর হাদীছ শরীফ-এ বলা হয়েছে, ‘সাবধান! খারাপ আলিমরা সবচেয়ে নিকৃষ্ট।’ (মিশকাত শরীফ)

অতএব, আমভাবে, আম মানুষের কাছে আলিম নামধারীদের সমালোচনা করলে, তাদের আমলশূন্যতা ব্যক্ত করলে, সুন্নতের খিলাফ বিদয়াতীদের চিহ্নিত করলে, হরহামেশা হারামকে হালালকারীদের এবং বিদয়াতী, বিজাতীয় ও বেশরা পথ অনুসরণকারী তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারীদের হাক্বীক্বত তুলে ধরলে, যারা আঙ্গুল দিয়ে দাঁত কামড়ায়, যাদের আঁতে ঘা লাগে তারা আসলে সেসব নামধারী, দুষ্টমতি উলামায়ে ‘ছূ’দের দোসর।

স্মরণীয়, আলিমের ইলম পরিব্যাপ্তির পথে ইজতিহাদ ও ইজমা দুটো বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ। কিন্তু আলিমের নামে যেমন নামধারী রয়েছে তেমনি ইজতিহাদ ও ইজমার নামেও নামধারী উলামায়ে ‘ছূ’দের অশুভ ও অশুদ্ধ, মিথ্যা ও মনগড়া এবং বিজাতীয় ও বিদয়াতী পন্থাকে প্রবর্তনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যায়ে রয়েছে মাওসেতুংয়ের লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, ইহুদী-খ্রিস্টানদের গণতন্ত্র তথা নির্বাচন প্রক্রিয়া।

মূলত এসবের দ্বারা ইসলাম রক্ষা নয়, ইসলাম ধ্বংসের পথই পরিস্কার করা হয়। এ ধ্বংসাত্মক ইজতিহাদে, তথাকথিত ইজমার তাই কোনই মূল্য নেই। যদিও তা নামধারী শত শত উলামায়ে ‘ছূ’দের তরফ থেকে হয়ে থাকুক না কেন। মূলত বিদয়াতী ও হারাম পথে সংখ্যাধিক্যের সমষ্টি কেবল গোমরাহীর পাল্লাই ভারী করে। তাদের দ্বারা হাক্বীক্বত ইসলামের ক্ষতিই হয়, উপকার কিছুমাত্র নয়।

প্রসঙ্গক্রমে স্মর্তব্য, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, ‘আলিমের ভুল, মুনাফিকের বিরোধ ও ভ্রান্তপথে চালিত শাসকদের হুকুম- ইসলাম বিনষ্টের কারণ।’

বলাবাহুল্য, উপরোক্ত তিনটি অবস্থাই বর্তমানে বিশেষভাবে বিরাজ করছে। আজ ভ্রান্ত হুকুমে ইসলাম যেমন বিপন্ন হচ্ছে তেমনি তার সঠিক প্রতিকার না করে, উপরন্তু আরো গোমরাহী, বিদয়াতী ও বিজাতীয় পন্থায় প্রতিকার করতে গিয়ে নামধারী তথা উলামায়ে ‘ছূ’র দল ইসলাম বিদ্বেষীদের পথকেই শুধু প্রশস্ত করছে।

অতএব, ইসলামের ন্যায়, ইসলামী আন্দোলন কথাটি চেতনাম-িত হলেও সে আন্দোলনের কৌশল ও কর্মপদ্ধতি এবং তাতে নেতৃত্ব দানকারীদের সম্পর্কে সকলকে সম্যক অবগত হতে হবে। তাদের আসল অভিলাষ ও আমল সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নতুবা আম মুসলমানকে কেবল বিড়ম্বিত হতে হবে। যে বিড়ম্বনা তাদের ঈমানী জজবাকে নিয়ে বিড়ম্বনা, তাদের প্রিয় ধর্ম ইসলামের দোহাই দিয়ে বিড়ম্বনা।

মূলত সকলকে স্পষ্টভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে, ইসলামের নামে আহ্বান করলেই তা ইসলামের আন্দোলন হয়না, যদি সে আহ্বানের পথ হয় বিদয়াতের পথ, বিজাতীয়দের পথ বা বিধর্মীদের পথ। সেটি তখন ইসলামী আন্দোলনের যোগ্যতা হারিয়ে ইসলাম অজ্ঞ ও ইসলামের নামে ব্যবসাধারী উলামায়ে ‘ছূ’দের স্বার্থান্বেষী প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত হয়। এ পর্যন্ত যার প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত বহু বহু।

আমরা তাই, সময় থাকতে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে শিক্ষা লাভের আহ্বান জানাই। অনুরোধ করি ইসলামের কাজ ইসলামের আদর্শেই রূপায়নের জন্য। অন্যথায় স্বার্থান্বেষী কর্মক্রিয়া ও নিছক হেয়ালিপানার ব্যর্থতা আম মানুষকে অতীতের ন্যায় আবারো বীতশ্রদ্ধ করে তুলবে। এবং স্বভাবতই উলামায়ে ‘ছূ’দের প্রতি তাদের ক্ষোভ আরো বিস্তার লাভ করবে। যার পরিণাম অতি ভয়াবহ এবং যার মাশুল উলামায়ে ‘ছূ’দেরকে অবশ্যই দিতে হবে। তা যেমন দুনিয়ায় তেমন পরকালে।

আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, æযে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন অনুসরণ করে সে কি তার সমান, যার কাছে তার মন্দ কর্ম শোভনীয় করা হয়েছে এবং যে তার খেয়ালখুশির অনুসরণ করে।” (সূরা মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-১৪)

স্মর্তব্য, খাহেশাতে নফসের অনুসরণকারী উলামায়ে ‘ছূ’ আর হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহ কখনও এক নয়। আর কেবলমাত্র হক্কানী ওলীআল্লাহ তথা মুজাদ্দিদে আ’যম উনার ছোহবতেই ঈমানী চেতনা ও জজবাপ্রাপ্তি সম্ভব।

 

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়