সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৮৯তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক-এর জন্য। যিনি সব কিছু ফায়সালার মালিক। সব ছলাত ও সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। যিনি সব কিছুর বণ্টনকারী।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তাক্বদীর খুব স্পর্শকাতর বিষয়। তাক্বদীর সম্পর্কিত বিভ্রান্তিকর আলোচনা অতীতের অনেক জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে। তবে তাক্বদীর দোয়া দ্বারা পরিবর্তিত হয় তাও হাদীছ শরীফেরই কথা।

বিশেষ দুঃখজনক এবং অগ্রহণীয় ও অসহণীয় হলেও সত্য যে, গত কয়েক বছর ধরে ধর্মব্যবসায়ী, রাজাকার মহলটি খুব জোরদার প্রচারণা চালাচ্ছে যে ‘শবে বরাত’ বলে ইসলামে কিছু নেই। অথচ ‘সূরা দুখান’সহ অনেক অনেক ছহীহ হাদীছ শরীফ-এই ‘শবে বরাত’-এর কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে।

পাশাপাশি তারা আরো বলছে- মীলাদ শরীফ, মাজার শরীফ জিয়ারত, কদমবুছি এগুলো ইসলামে জায়িয নেই। কিন্তু তার বিপরীতে মহিলাদের জুমুয়া ও ঈদের জামাত, মহিলা মসজিদ, মহিলা জামাত, টিভি চ্যানেলে প্রোগ্রাম এসব কাজের জন্য তারা বড়ই উজ্জীবিত ও নিবেদিত। এক্ষেত্রে একটি বিষয় খুব স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, যেসব বিষয় মানুষকে আমলমুখী করে সেসব বিষয়কে তাদের খুব ভয়। তারা সেগুলোর ঘোর বিরোধী। আর যেসব কাজ তাদের তথাকথিত ইসলামী রাজনীতি তথা তাদের ধর্মব্যবসার সহযোগী বলে তারা মনে করে সেসব কাজের জন্য তারা খুব উদ্যোগী।

উল্লেখ্য, শবে-বরাতের পর থেকেই মানুষের মধ্যে একটা আমলের চেতনা জাগরিত হয়। পরবর্তী পনের দিনের মাথায় রমজানের আগমন ধ্বনি সাধারণের মনে গুনাহ ত্যাগের মানসিকতা তৈরীর পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত বেশী নেক আমলের দ্বারা রোজার মাস অতিবাহিত করণের একটা পবিত্র ইচ্ছা জাগরুক হয়। তাই রমাদ্বানে মসজিদে বেশী মুছুল্লী হয়, মানুষ অধিকহারে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, দান-খয়রাত করে, পাশাপাশি ঝগড়া-ফ্যাসাদ, পাপাচার পূর্ণ আনন্দ এবং যাবতীয় হারাম কাজ পরিত্যাগে প্রচেষ্টা চালায়।

মূলতঃ এসব কিছুই হচ্ছে তাক্বওয়া তথা পরহেজগারী অর্জনের পরিক্রমা। আল্লাহ্ পাক বলেন, “হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনটি করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া হাছিল করতে পার।” (সূরা বাক্বারা-১৮৩)

উল্লেখ্য, তাক্বওয়ার সাধারণ অর্থ খোদাভীতি হলেও এর ক্ষেত্র অতি ব্যাপক। কারণ তাকওয়া- কাম, ক্রোধ, লোভ, হিংসা, বেপর্দা, বেহায়া তথা ফাহেশা কাজ, কথা, গানবাজনা, সিনেমা দেখা ইত্যাদি যাবতীয় কু-রিপু দমনের নাম। সংযম এসব কু-রিপু দমনে বিশেষ সহায়ক। মুলতঃ নফসের স্বাদ অনাস্বাদন তথা নফস দমন করাটাই সংযমের পরিচয়।

নফস দমনের সাথে ‘রিয়াজত মাশাক্কাত’ কথাটি বিশেষভাবে সম্পৃক্ত। আর এটি পরিপূর্ণভাবে ইল্মে তাছাউফে তথা তাক্বওয়া হাছিলেরই বিষয়। কিন্তু অধুনা তথাকথিত আলেম সমাজ নফস দমনের পরিবর্তে নফসের পায়রবির প্রাবল্যে তাক্বওয়ার অনুভূতিকে যেন বিলুপ্ত করতে বসেছে। তাক্বওয়ার প্রচেষ্টার বিপরীতে আজকে তাদের মধ্যে তৎপরতা এসেছে কট্টর নাস্তিক বা কম্যুনিষ্টের লংমার্চের পথে, কট্টর মুশরিক গান্ধীর হরতালের কর্মসূচীতে, খ্রীষ্টান প্রোটেষ্ট্যান্টদের মৌলবাদী অনুভূতিতে, হিন্দুদের কুশপুত্তলিকা দাহে, ইহুদী-নাছারার ব্লাসফেমী আইন দাবীতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী পদক্ষেপে এবং বেপর্দা ও বেহায়াপনায় সম্পৃক্ত হতে।

উল্লেখ্য, যত ফিৎনা-ফাসাদ, গযব, অত্যাচার, নিপীড়ন সবই মুসলমানের নফসের পায়রবির পরিণতি তথা তাক্বওয়াহীনতার কুফল। কি লেবানন, কি ফিলিস্তীন, কি ইরাক তথা গোটা মধ্যপ্রাচ্য সহ গোটা মুসলিম বিশ্বই আজ আমেরিকান আগ্রাসী শক্তি তথা মুসলিম বিরোধি শিবিরের কাছে পদানত ও পর্যুদস্ত। কিন্তু এর প্রতিবাদে মুসলমানের প্রতিক্রিয়া সামান্য থাকলেও তার প্রতিকারের প্রচেষ্টার পথ মোটেও ছহীহ নয়।

উল্লেখ্য প্রচারণার এ যুগে মুসলমানও পিছিয়ে নেই। ইন্টারনেট খুললে হাজার হাজার কথিত বা তথাকথিত  ইসলামিক ওয়েব সাইট তার প্রমাণ। এদিকে অস্ত্র ও প্রযুক্তির প্রক্রিয়ায় মুসলমান পিছিয়ে নেই। পাকিস্তানের পারমানবিক বোমা তৈরী ও আরো কয়েকটি মুসলিম দেশের অগ্রগতি এক্ষেত্রে উদাহরণ। কিন্তু তারপরেও মুসলমানের পরে পরে মার  খাওয়ার কারণ মুসলমান নিজেই। কারণ আজ মুসলমান নিজেই ইসলামী আমল ছেড়ে দিয়েছে।

তারা আমেরিকা, ইউরোপ, ইসরাইল আক্রমণ করছে বলে আর্তনাদ করছে কিন্তু নিজেদের লাইফ স্টাইলে মুসলমান সেই ইহুদী-নাছারাদেরকেই হুবহু অনুসরণ করছে। মুসলমান বলতে তাদের জীবন আচরণে ইসলামের অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে না বা মুসলমানের আমলে কোন ব্যতিক্রমই পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। ইহুদী-খ্রীস্টানদের মতই তারা উদ্বাহু নাচ-গানে মত্ত হচ্ছে। “ক্লোজআপ ওয়ান- তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ, গাও বাংলাদেশ গাও, দারুচিনি দ্বীপের নায়িকা খুঁজছি, লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা, লিভ টুগেদার, ‘পার্টটাইম রোমানস’ এসব সংবাদ শিরোনামই মুসলমানের আমল আজ কত নীচ পর্যায়ে পৌঁছেছে তার প্রমাণ বহন করে।

অতএব, ঈমানের দাবীতে যারা আমেরিকা ইসরাইলের আগ্রাসী হামলায় ব্যথিত হবেন, গুমরে মরবেন কিন্তু মুসলমান হিসেবে অনৈসলামী আমল থেকে দূরে সরবেন না ইসলামী আমল দ্বারা নিজেদের রূহানী কুওওয়ত বৃদ্ধি করবেন না তথা খোদায়ী রহমত পাবার পথকে প্রশস্ত করবেন না তাদেরকে মনে রাখতে হবে, লাঞ্ছনা আর নিপীড়ন তাহলে অনিবার্য যা তাদের একান্তই হাতের কামাই।

মূলতঃ নামধারী মাওলানা তথা ধর্মব্যবসায়ীদের বদ তাছিরেই সাধারণ মুসলমান নিজেদের আমলকে ইসলামীকরণের ক্ষেত্রে উৎসাহ পাচ্ছে না। বরং ইহুদীদের ক্রীড়নক ধর্মব্যবসায়ীদের অপতৎপরতার কারণেই সাধারণ মানুষ ওদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে বেশামাল তথা আমলহীন হয়ে পড়ছে।

সুতরাং উম্মাহ্ স্বার্থেই আজ আমাদের এসব ধর্মব্যবসায়ীদের প্রতিহত করার উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ তথা  মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহ্বতে গিয়ে  তার ফয়েজ বরকতে সুন্নতী আমল দ্বারা নিজ জীবনকে সুশোভিত করতে হবে। আল্লাহ পাক-এর মাস রমাদ্বান শরীফে এই পবিত্র ইচ্ছাই হোক আমাদের আগামী দিনের চলার অনুপ্রেরণা। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়