কোনরূপ স্তম্ভবিহীন সমুন্নত আকাশ তৈরিকারী কুদরতময় আল্লাহ পাক-এর পবিত্রতা ও প্রশংসা। কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দানকারী, তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়া প্রবর্তনকারী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সমুদয় ছলাত ও সালাম।
পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাসসমূহের মধ্যে একটি মাস হলো রজব। যে আশ্চর্যজনক ঘটনা রজব মাসের তাৎপর্য ও গুরুত্বকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে, তা মি’রাজ শরীফ। মি’রাজের শব্দগত অর্থ ঊর্ধ্বারোহণ।
আল্লাহ পাক আকাশকে সাত স্তরে তৈরি করেছেন। পৃথিবীর নিকটতম আকাশকে করেছেন তারকারাজি তথা গ্রহ নক্ষত্র দ্বারা সুশোভিত। যাদের সংখ্যা, প্রকৃতি ও অস্তিত্ব সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান আজও খুবই নগণ্য।
সম্প্রতি অতি নিকটতম গ্রহ মঙ্গলগ্রহে পাথ ফাইন্ডারের গুটি কয়েক তথ্যাবিষ্কারের পর সম্প্রতি মঙ্গলগ্রহ ও বৃহস্পতির কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান টেম্পল-১ নামে ধূমকেতুতে নাসার পাঠানো ডিপ ইম্প্যাক্ট নামের গবেষণা উপগ্রহ থেকে ইম্প্যাক্টর নামের অনুসন্ধান যন্ত্র আঘাত হানে। তখন নিরাপদ দূরত্বে থেকে মহাকাশ যান ডিপ ইম্প্যাক্ট ছবি তুলে। এতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান যব জোশেফ বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম কোন পরীক্ষা কেউ কখনো করেননি। আমরা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছি। উল্লেখ্য কথিত এই বিশেষ অর্জনের পরও বলতে হয় যে, তাদের গবেষণা এখনও প্রথম আসমানের নিচে। নিকট সৌরজগতের গ-ীই তারা এখনও অতিক্রম করতে পারেনি।
কাজেই মি’রাজ শরীফ সম্পূর্ণই আল্লাহ পাক-এর কুদরত ও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মু’জিযার অন্তর্ভুক্ত। বলা আবশ্যক, মি’রাজ শরীফে যেসব অনন্য নিয়ামত হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাভ করেছেন তাতে অংশীদার করেছেন স্বীয় উম্মতকেও। ছলাত-ই তার মূল সওগাত।
হিসাব মতে প্রায় শত কোটি লোক সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন নামায পড়ছেন। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে তার দ্বারা স্বাভাবিকভাবে কোন পাপ কাজ হওয়া সম্ভব নয়।” তাহলে প্রতিভাত হচ্ছে, যে সব মুসলমান নামায পড়ছে কিন্তু পাপ ছাড়তে পারছে না আসলে তাদের নামাযই হচ্ছে না। এর পেছনে কারণ হলো তাদের কলুষযুক্ত ক্বলব বা অন্তঃকরণ। তারা নামাযে দাঁড়িয়ে মুখে আওড়াচ্ছে সূরা ফাতিহা। কিন্তু মাথায়, মনে গিজগিজ করছে বিভিন্ন চিন্তা। এ ধরনের নামাযী সম্পর্কেই ইরশাদ হয়েছে, “ঐ মুছুল্লীর জন্য জাহান্নাম যে নামাযে বেখেয়াল থাকে।” (সূরা মাঊন-৪,৫)
সাবেত হয় যে, নামাযে দাঁড়িয়ে তারা মুখে যতই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করুক তা তাদের ক্বলব বা অন্তঃকরণ পর্যন্ত পৌঁছায়না।
এ জন্য ইসলামে ক্বলবী যিকির বলে আলাদা যিকিরকে ফরয বলে স্বীকার করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের শরীরে এক টুকরা গোশত পি- রয়েছে। তা যখন শুদ্ধ হয়ে যায় তখন গোটা মানুষটাই শুদ্ধ হয়ে যায়। আর তা যখন অশুদ্ধ হয়ে যায় তখন গোটা মানুষটাই অশুদ্ধ হয়ে যায়।’ অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের ক্বলব যখন যিকির করে তখন ক্বলবে ফেরেশ্তা আসন নেয় এবং নেক কাজে আনন্দ দেয়। আর ক্বলব যখন যিকির থেকে গাফিল থাকে তখন সে শূন্য স্থানে শয়তান বসে যায় এবং পাপ কাজে ওয়াসওয়াসা ও আনন্দ দেয়।’
উল্লেখ্য, বর্তমান যামানায় বেসামাল উম্মাহকে অনৈসলামিক সংস্কৃতি তথা নাচ-গান ফ্যাশন, কনসার্ট, থার্টি-ফার্স্ট নাইট কালচার ইত্যাদির উদ্দামতা থেকে ঘুরিয়ে ইসলামী ভাবধারার দিকে প্রত্যাবর্তন করাতে হলে ক্বলবী যিকিরের বিকল্প নেই।
কিন্তু তা করতে সম্পূর্ণ অপারগ হচ্ছেন এ যুগের দাবীকৃত শাইখুল হাদীছ, মুফতি, মাওলানা, আমীর, মুফাস্সির কুরআন তথা খতীব গং। এর পেছনে মূল কারণ হলো যে ক্বলবী যিকিরের শিক্ষা দিতে হলে আগে নিজের ক্বলবের শুদ্ধতা, পরিচ্ছন্নতা ও রূহানী সমৃদ্ধতা অনিবার্য। শুদ্ধ ক্বলব যা রূহানী কুয়তে সমৃদ্ধ তার রূহানী ছটা বা ফয়েজ তাওয়াজ্জুহ নিক্ষেপেই অন্য ব্যক্তির ক্বলবে এই ক্বলবী যিকির জারি হয়। ক্বলবী যিকির জারির অর্থ হচ্ছে যে, তখন ২৪ ঘণ্টায়ই ক্বলবে আল্লাহ আল্লাহ যিকির চলতে থাকবে। কথা বলা, ঘুমানো, উঠা-বসা, কাজ-বিশ্রাম কোন ক্ষেত্রেই এ যিকির বন্ধ থাকবে না। বাইরে যে অবস্থায়ই হোক অন্তরে বা ক্বলবে সব সময়ই আল্লাহ আল্লাহ যিকির চলতে থাকবে। ফলতঃ তার পক্ষেই সম্ভব বাইরের দুনিয়ায় বিরাজমান পাপস্রোতের বিপরীতে চলে পরিপূর্ণ ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করা বা থাকা।
স্মর্তব্য, নামাযের মধ্যে মি’রাজ হওয়া তথা আল্লাহ পাক এর দীদার হাছিল হওয়া এটা আলাদা কোন অর্জন নয়। বরং এটা প্রতিটি মু’মিনের জন্যই প্রযোজ্য। হাদীছ শরীফে মু’মিন শব্দ প্রয়োগ করে এর ব্যাপকতা তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি মু’মিনের জন্যই এটি সহজ প্রাপ্তি। তবে তা শুধু ক্বলবী যিকির হাছিলের দ্বারাই সম্ভব।
উল্লেখ্য এই ক্বলবী যিকির থেকে গাফিল থাকার কারণেই নামধারী, ধর্মব্যবসায়ী উলামায়ে ‘ছূ’দের প্রকট প্রাদুর্ভাব চলছে। তারা আজ ইসলামের নামে ছবি, বেপর্দা, নারী নেতৃত্ব, হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, ভোট চাওয়া নির্বাচন করা ইত্যাদি করে যাচ্ছে। এদের সম্পর্কে তাই কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “সেই ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা, যার ক্বলবকে আমার যিকির থেকে গাফিল করেছি। অর্থাৎ যার ক্বলবে আমার যিকির নেই সে নফসকে (শয়তানকে) অনুসরণ করে। আর তার কাজগুলো শরীয়তের খিলাফ।” (সূরা কাহাফ-২৮)
অতএব, ক্বলবী যিকিরবিহীন এসব ধর্ম ব্যবসায়ীদের দ্বারা কোনদিনই ক্বলবের শুদ্ধতা হাছিল ও ধর্মের স্বাদ আস্বাদন এবং নামাযে মি’রাজ হাছিল হওয়া সম্ভব নয়। তা সম্ভব কেবলমাত্র মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবতে। যার ক্বলব মুবারক বেমেছাল রূহানী ক্ষমতায় সমৃদ্ধ।