আলিম হাকিম, আল্লাহ পাকই সকল প্রশংসার মালিক। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই সব ছলাত ও সালামের ব্যাপ্তিস্থল।
মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মনোনীত ধর্ম ইসলাম। মুসলমানদের প্রাণপ্রিয় ধর্ম ইসলাম। ইসলাম তাদের জীবনের ধর্ম, যুগের ধর্ম, চেতনার ধর্ম। ইসলামের অবমাননা, তার উপর আঘাত, তার প্রতি শত্রুতা, মুসলমানদের ঈমানের মর্মমূলে তাই গভীরভাবে নাড়া দেয়। তাদেরকে উজ্জীবিত করে জিহাদী জজবায়। যে জজবা অপার্থিব, অমূল্য এবং অপ্রতিরোধ্য। বলাবাহুল্য নুবুওওয়াতের ধারাবাহিকতা সমাপ্তি লাভের পর আলিমগণই (উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী) মুসলমানদের সে জজবার কা-ারীরূপে কাজ করছেন। তবে এর পাশাপাশি আলিম পরিচয়ে, বর্ণিত জজবাকে ভ্রান্ত পথে পরিচালনার এবং সে সুবাদে স্বীয় স্বার্থ হাসিলের উদ্যোক্তাদের অভাব, অতীতে যেমন ছিলনা এখনও তেমন নেই। বরং বর্তমানে রয়েছে তাদের বিশেষ প্রাদুর্ভাব। ইসলাম বুলন্দ রাখার প্রেক্ষিতে আলিম শব্দটি তাই কেবল স্পর্শকাতর, শ্রদ্ধাযুক্ত এবং গুরুত্ববহই নয় সে সাথে আলিম নামধারীদের, ইসলামের নামে অনৈসলাম করার প্রেক্ষিতে তা পর্যালোচনা সাপেক্ষ, অনুধাবনযোগ্য এবং বিশেষভাবে বিচার্য।
পবিত্র কুরআন শরীফ এবং হাদীছ শরীফে তাই আলিম সম্পর্কে বিশদ আলোচিত হয়েছে। কুরআন শরীফে বলা হয়েছে- “যারা ইলম প্রাপ্ত হয়েছেন তাঁরাই মর্যাদাবান।” (সূরা মুযাদালাহ) এরপর এই মর্যাদার পাশাপাশি তাদের নিদর্শন সম্পর্কে সংযুক্ত করা হয়েছে- “ নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর বান্দাগণের মঝে আলিমরাই আল্লাহ পাককে বেশি ভয় করেন।” (সূরা ফাতির) এই আয়াতদ্বয়ের পরস্পরের সমন্বয়ে প্রতিভাত হয়ে যে, যারা ইলম লাভ করেছেন এবং সে প্রেক্ষিতে আমল করেন ও আল্লাহ পাককে ভয় করেন তাঁরাই মর্যাদাবান, তাঁরাই আলিম। কুরআন শরীফ-এর সাথে সাথে হাদীছ শরীফেও এই বক্তব্যের পূর্ণ সমর্থন রয়ে গেছে। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ক্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আলিম নামের উপযুক্ত কারা হবেন? তিনি বললেন, যারা ইলম অনুযায়ী আমল করেন তাঁরাই।” (দারিমী) অর্থাৎ আলিম বলে দাবি করলেও আলিম নামের উপযুক্ত না অনেকেই।” অনুপযুক্তরা কেবলই নামধারী আলিম।
মূলতঃ নামধারী আলিম সম্পর্কে ইসলামের শুরু হতেই অনেক আলোচনা হলেও আজ আখিরী যামানায় একই বিষয়ে পর্যালোচনার, মূল্যায়নের এবং চিহ্নিতকরণের অবকাশ ও অত্যাবশ্যকতা পূর্বাপেক্ষা অতিবেশি। যদিও কোন কোন মহল মনে করেন, আলিম নামধারীদের সমালোচনা তাদের কুকীর্তির বয়ান, আমভাবে, আম জনতাকে জানানো যাবে না। যদি বা করতে হয় তবে তা চুপিসারে। সাধারণকে সে বিষয়ে অবহিত করতে তাদের ঘোর আপত্তি। তবে এ আপত্তি যে কেবলই অমূলক, তাতে সন্দেহ নেই। যেহেতু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফেই নামধারী, দুষ্টমতি উলামায়ে ‘ছূ’দের সরাসরি কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, “যারা তাওরাতের হাফিয হয়েছে, তৎপর তদ্রুপ আমল করেননি, তারা কিতাবরাশি বহনকারী গর্দভের ন্যায়।” (সূরা জুমুয়া) আর হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “সাবধান! খারাপ আলিমগণ সবচেয়ে কুৎসিৎ।” (মিশকাত শরীফ)
অতএব, আমভাবে, আম মানুষের কাছে আলিম নামধারীদের সমালোচনা করলে, তাদের আমলশূন্যতা ব্যক্ত করলে, সুন্নতের খিলাফ বিদ্য়াতীদের চিহ্নিত করলে, হর-হামেশা হারামকে হালালকারীদের এবং বিদয়াতী, বিজাতীয় ও বেশরা পথ অনুসরণকারী তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনকারীদের হাক্বীক্বত তুলে ধরলে, যারা আঙ্গুল দিয়ে দাঁত কামড়ায়, যাদের আঁতে ঘা লাগে তারা আসলে সেসব নামধারী দুষ্টমতি উলামায়ে ‘ছূ’দেরই দোসর।
স্মরণীয় আলিমদের ইলম পরিব্যাপ্তির পথে ইজতিহাদ ও ইজমা দুটো বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ। কিন্তু আলিমের নামে যেমন নামধারী রয়েছে তেমনি ইজতিহাদ ও ইজমার নামেও নামধারী উলামায়ে ‘ছূ’দের অশুভ ও অশুদ্ধ, মিথ্যা ও মনগড়া এবং বিজাতীয় ও বিদয়াতী পন্থাকেই প্রবর্তনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ পর্যায়ে রয়েছে মাও সেতুং এর লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, ইহুদী খ্রিস্টানদের গণতন্ত্র তথা নির্বাচন প্রক্রিয়া। মূলতঃ এসবের দ্বারা ইসলাম রক্ষা নয়, ইসলাম ধ্বংসের পথই পরিষ্কার করা হয়। এ ধ্বংসাত্মক ইজতিহাদে, তথাকথিত ইজমার তাই কোনই মূল্য নেই। যদিও তা নামধারী শতশত উলামা ‘ছূ’দের তরফ থেকে থাকুক না কেন? মূলতঃ বিদয়াতী ও হারাম পথে সংখ্যাধিক্যের সমষ্টি কেবল গুমরাহীর পাল্লাই ভারী করে। তাদের দ্বারা হাক্বীক্বত ইসলামের ক্ষতিই হয়, উপকার কিছুমাত্র নয়।
প্রসঙ্গক্রমে স্মর্তব্য হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, “আলিমের ভুল, মুনাফিকের বিরোধ ও ভ্রান্তপথে চালিত শাসকদের হুকুম, ইসলাম বিনষ্টের কারণ।” বলাবাহুল্য উপরোক্ত তিনটি অবস্থাই বর্তমানে বিশেষভাবে বিরাজ করছে। আজ ভ্রান্ত শাসকের হুকুমে ইসলাম যেমন বিপন্ন হচ্ছে তেমনি তার সঠিক প্রতিকার না করে, উরন্তু আরো গুমরাহী, বিদয়াতী ও বিজাতীয় পন্থায় প্রতিকার করতে গিয়ে নামধারী তথা উলামায়ে ‘ছূ’র দল ইসলাম বিদ্বেষীদের পথকেই শুধু প্রশস্ত করছে।
অতএব, ইসলামের ন্যায়, ইসলামী আন্দোলন কথাটি চেতনাম-িত হলেও সে আন্দোলনের কৌশল ও কর্মপদ্ধতি এবং তাতে নেতৃত্ব দানকারীদের সম্পর্কে সকলকে সম্যক অবগত হতে হবে। তাদের আসল অভিলাষ ও আমল সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। নতুবা আম মুসলমানকে কেবলই বিড়ম্বিত হতে হবে। যে বিড়ম্বনা তাদের ঈমানী জজবাকে নিয়ে বিড়ম্বনা, তাদের প্রিয় ধর্ম ইসলামের দোহাই দিয়ে বিড়ম্বনা।
মূলতঃ সকলকে স্পষ্টভাবে হৃদয়াঙ্গম করতে হবে, ইসলামের নামে আহ্বান করলেই তা ইসলামের আন্দোলন হয়না যদি সে আহ্বানের পথ হয় বিদয়াতের পথ, বিজাতীয়দের পথ বা বিধর্মীদের পথ। সেটি তখন ইসলামী আন্দোলনের যোগ্যতা হারিয়ে ইসলাম অজ্ঞ ও ইসলামের নামে ব্যবসাধারী উলামা ‘ছূ’দের স্বার্থান্বেষী প্রক্রিয়ায় পর্যবসিত হয়। এ পর্যন্ত যার প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহু বহু।
আমরা তাই, সময় থাকতে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে শিক্ষালাভের আহ্বান জানাই। অনুরোধ করি ইসলামের কাজ ইসলামের আদর্শেই রূপায়নের জন্য।
অন্যথায় স্বার্থান্বেষী কর্মক্রিয়া ও নিছক হেয়ালিপনার ব্যর্থতা আম মানুষকে অতীতের ন্যায় আবারো বীতশ্রদ্ধ করে তুলবে। এবং স্বভাবতঃ উলামায়ে ‘ছূ’দের প্রতি তাদের ক্ষোভ আরো বিস্তার লাভ করবে। যার পরিণাম অতি ভায়বহ এবং যার মাশুল উলামায়ে “ছূ”দেরকে অবশ্যই দিতে হবে। তা যেমন দুনিয়ায় তেমনি পরকালে।
জ্ঞাতব্য যে, উলামায়ে ‘ছূ’দের বিড়ম্বনার হাত হতে বাঁচতে হলে তাদের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের অসাঢ়তা উপলব্ধি করতে হলে, ছহীহ সমঝদার তথা আল্লাহওয়ালাদের ছোহবতের বিকল্প নেই। যে প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, “আল্লাহ পাক যার ভালাই চান তাকে দ্বীনের ছহীহ সমঝ দেন।” (বুখারী শরীফ) অর্থাৎ যারা আল্লাহওয়ালা তারাই কেবল ছহীহ সমঝ প্রাপ্ত হন। তাই উলামায়ে ‘ছূ’দের চিহ্নিতকরণে পাশাপাশি উলামায়ে হক্বানী-রব্বানী তথা মুজাদ্দিদে আ’যম-এর ছহীহ সমঝের আলোকে পথ চললেই কেবল আল্লাহ পাক-এর রহমত প্রাপ্তির সাথে সাথে কাঙ্খিত কামিয়াবী হাছিল সম্ভব।