সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৮৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

দিন-রাতের পরিবর্তনকারী আল্লাহ পাক-এর জন্যই সব প্রশংসা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যই সব ছলাত ও সালাম।

 সৃষ্টির শুরু থেকেই গণনায় মাসের সংখ্যা বারটি বলে, রব তায়ালা নির্ধারিত করে দিয়েছেন; এবং এক্ষেত্রে মুর্হরমুল হারাম হিজরী সালের প্রথম মাস বা পয়লা মুর্হরম নতুন হিজরী সালের প্রথম দিন। তাই মুর্হরমের আগমন মুসলমানদের জন্য যেমন বিগত এক বৎসরের জিন্দেগীর মূল্যায়নের অবকাশ রাখে তেমনি প্রেরণা দেয় পরিশুদ্ধ চেতনায় নতুন সালে পদার্পণ করার দীপ্ত অভিপ্রায়ের ও রব চেতনার।

কিন্তু বেদনাদায়ক হলেও সত্য যে, মুর্হরম মাসে মুসলিম মানসিকতায় যে আলোড়ণ আন্দোলিত হওয়ার কথা, তার খুব কম স্পন্দনই আমরা দেখতে পাই। এই মুর্হরম মাসেই রয়ে গেছে আশুরা- যে দিনটি পৃথিবী সৃষ্টি, প্রথম বৃষ্টি বর্ষণ, প্রথম রহমত নাযিলসহ অন্য হাজারো গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার সমাবেশে সমৃদ্ধ। অথচ সে সম্পর্কে আলোচনা, পর্যালোচনা ও তার প্রতিফলনের প্রচেষ্টার তেমন কোন পদক্ষেপই সঠিকভাবে লক্ষ্য করা যায়না। রাষ্ট্রীয়ভাবে তো বটেই সমাজ জীবনেও মুসলমানদের ধর্মীয় কেন্দ্রগুলোতে বা মসজিদসমূহে দিবসটি উদযাপনের উদ্যোগে কাঙ্খিত উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়না। এজন্য অবশ্য এক শ্রেণীর উলামাদের গাফলতি এবং অজ্ঞতাই বিশেষভাবে দায়ী।

অধুনা এ ধারণা বিস্তার লাভ করেছে যে, মাদ্রাসা পাস করলেই আলিম হওয়া যায়। আর মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরাও এ অভিমত পোষণ করে যে, আলিম হতে হলে প্রথাগত ও প্রচলিত মাদ্রাসায় পাঠ ও পাশের বিকল্প নেই।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ইসলামিক মূল্যায়ণ এই যে, আলিম হওয়ার সাথে প্রচলিত মাদ্রাসা পাশের আদৌ যথার্থতা নেই। প্রচলিত মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র ও শিক্ষকের অসত্য সংখ্যা অন্তর্ভূক্তিকরণ, নামকাওয়াস্তে সিলেবাসভিত্তিক পড়ালেখা ও পরীক্ষা পদ্ধতি, বিশেষতঃ কি কওমী, কি খারেজী, কি আলীয়া সবক্ষেত্রে যেসব অনাচার ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় তা উপরোক্ত মন্তব্যেরই সত্যতা প্রতীয়মান করে।

ইদানিংকালে আলিয়া মাদ্রাসার বোর্ড পরীক্ষায় দেখা যায় শুধু হাজার হাজার পরীক্ষার্থীই নকলের জন্য বহিস্কার নয় বরং প্রায় শত শত শিক্ষককেও নকল সরবরাহের দায়ে বহিস্কার করা হয়। শুধু প্রথম দিনই নয় পরীক্ষার প্রতিদিনই এভাবে পত্রিকায় মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের ভয়াবহ নকল প্রবণতার নির্লজ্জ খবর প্রকাশিত হতে থাকে। কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে বস্তা বস্তা নকল উদ্ধার করা হয়।

সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চলমান মাদ্রাসা শিক্ষার এই প্রক্রিয়া স্বভাবতই কাঙ্খিত হারে হক্কানী আলিম উপহার দিতে পারে না।

উল্লেখ্য, নকল প্রবণতার বাইরেও যারা পাশ করে, তারাও যে ভাল জ্ঞান অর্জন করে থাকে বিষয়টি তা নয়। বরং অনেকটা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত করে তোলা বর্তমান মাদ্রাসা শিক্ষা পাঠ্যসূচী এতটা স্বল্প ও সীমাবদ্ধ যে তাতে করে সাধারণভাবে সৃজনশীল ও প্রজ্ঞাবান আলিম হওয়া প্রায় এক রকম অসম্ভব। আর এ ধরনের একটা কুপমন্ডুক আবহে বেড়ে উঠার কারণেই আলিম নামধারী বর্তমান মাদ্রাসা পড়ুয়ারা মূলতঃ জাতীয় জীবনে মূর্খতা, হঠকারিতা, শঠতা, নীতিহীনতা তথা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে চরম সমালোচনার পাত্র হয়ে দাড়িয়েছে।

ইসলামকে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল করে তোলার পরিবর্তে তারা প্রবাহমান সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক ডামাডোলে কায়েমী স্বার্থবাদ চরিতার্থ করতে গিয়ে ইসলামকে খন্ডিত ও বিকৃত করতে চাইছে।

অথচ ইসলামের দাবী ছিল কথিত আলিম সমাজ নিজেদের মাঝে ইসলামের অন্তর্নিহিত আদর্শ এমনভাবে ফুটিয়ে তুলবেন যে, তাতে অন্য সকলে নৈতিক শিক্ষার অনুপ্রেরণা পাবে।

উল্লেখ্য, শুধু অন্যান্য রাজনৈতিক মতবাদ ও প্রক্রিয়াই নয় প্রকৃতপক্ষে ইসলামের নামে গণতন্ত্রও সত্যিকারভাবে আচরণ ও অনুভূতির আদর্শিক ও নৈতিক উত্তরণ ঘটায়না। সেক্ষেত্রে শীর্ষ নেতৃত্বে ব্যক্তি ইমেজ চর্চা তথা একগুঁয়েমী, ঔদ্ধত্য খেয়ালীপানা ও অহমিকার অনুশীলন জাতীয় জীবনকে চরম অস্থিতিশীলতায়, সংঘাত ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন করে। আর জাতীয় জীবনে এই আদর্শবোধের শূন্যতার দায়ভার মূলতঃ কথিত আলিম সমাজের উপরই বর্তায়।

বিশেষতঃ কথিত আলিম সমাজ যখন প্রজ্ঞা, বিনয়, জনগণের হক্ব উপলব্ধি, দেশাত্ববোধ প্রভৃতি বাঞ্ছিত আদর্শবোধের প্রতিফলন নিজেদের মাঝেই ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়ার বিপরীতে চলমান রাজনৈতিক প্রবাহে মশগুল হয়ে ইসলামের নামে হারামকে হালাল বা হালালকে হারাম করে, তখন তাদের ব্যবহৃত ও দাবীকৃত ইসলামী মুখোশটি বড়ই বিষদৃশ হয়ে পরে।

কারণ ইসলামের মুল শিক্ষাই হচ্ছে বিজাতীয়, বিদয়াতী প্রথা থেকে আলাদা হওয়া। অথচ তারপরেও নামধারী আলিম সমাজ মাওসেতুং-এর লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, খ্রিস্টান প্রোটেষ্ট্যান্টদের মৌলবাদ, ইহুদী-নাছারাদের নির্বাচন ইত্যাদি বিজাতীয়, বিদয়াতী কাজের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করছে।

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, আশুরার রোযা একটি রাখা মাকরূহ হওয়ার পিছনে এ কারণই নিহিত। কারণ একটি রোযা রাখলে ইহুদীদের সাথে মিল রাখা হয়। সুতরাং মুসলমানদের তার খেলাফ করতে হয়। দু’টি রোযা রাখতে হয়।

কাজেই মুর্হরমুল হারাম-এর শিক্ষা বাস্তবায়িত করতে হলে আমাদেরকে বিজাতীয় পন্থা থেকে বিরত হতে হবে। তথা জাতীয় জীবনের সবক্ষেত্রে ইসলামিক আদর্শ ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে। আর কেবলমাত্র হক্ব ওলী আল্লাহ তথা মুজাদ্দিদে আয’মের ছোহবতের দ্বারাই তা সম্ভব।

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়