সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৮৩তম স | বিভাগ:

সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-এর জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম।

হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “আমার উম্মতের উলামায়ে ‘ছূ’দের (ধর্মব্যবসায়ীদের) প্রতি লা’নত অর্থাৎ তাদের জন্য জাহান্নাম। কারণ তারা ইলমকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালাবে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব উলামায়ে ছূ’দের বিরুদ্ধে এই বদ দোয়া করেন যে, আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইলম দ্বারা সরকার বা দুনিয়াবী ক্ষমতার সাথে ব্যবসা করতে চায়, তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না।” (কান্যুল উম্মাল)

উল্লেখ্য, এদেশের সাধারণ মুসলমান সঙ্গতকারণেই ইসলামের লেবাসধারীদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি করাকে প্রথম থেকেই ভাল চোখে দেখতেন না। কারণ তারাও বুঝতেন যে গণতান্ত্রিক রাজনীতির কলুষতা থেকে ইসলাম অনেক ঊর্ধ্বে ও পবিত্র। গণতান্ত্রিক রাজনীতির চোরাবালির পথে পরিচালিত হলে, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধোঁকাবাজী, নীতিহীনতা, আদর্শবর্জন, ঘন ঘন রং বদল, ওয়াদা ভঙ্গ ইত্যাদি মুনাফিকীর আবর্তে আকণ্ঠই নিমজ্জিত হতে হয়। তারপরেও তথাকথিত ইসলামী গণতন্ত্রীরা ইসলাম আর গণতন্ত্র সমার্থক অপপ্রচার চালিয়ে প্রচলিত গণতন্ত্রের সাথে ইসলামের যে বৈরীতা রয়েছে সে মূল্যবোধকে দূর্বল করেছে।

বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, গণতন্ত্রে জনগণই সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। যদিও তথাকথিত ইসলামিক দলগুলো প্রকাশ্যে দাবী করে যে, তারা পাশ্চাত্য গণতন্ত্র এবং ‘সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ’ এ কথায় তারা বিশ্বাসী নয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই বিশ্বাসই তারা তাদের কাজে প্রতিফলিত করে। যার প্রমাণ হচ্ছে- তাদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়, জনগণকে ভোট দানের মালিক করে সে সার্বভৌম ক্ষমতারই অধিকারী করে দেয়া হয়। এ ক্ষমতা অবিভাজ্য; যা প্রয়োগে কোন দায়বদ্ধতা তথা জবাবদিহিতা থাকেনা। আর স্বেচ্ছাচারী এই ক্ষমতা প্রয়োগের ফলেই গণতন্ত্রে কোন সরকার গঠিত হয় বা পতিত হয়। এবং এভাবেই গণতন্ত্রে জনগণ, তাদের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়ে থাকে। অতএব স্মরণীয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণই হচ্ছে “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস”- এ বিশ্বাসে স্বীকৃতি জ্ঞাপন। ইসলামের দৃষ্টিতে যা কুফরী এবং ঈমান হারাবার প্রত্যক্ষ কারণ।

বলাবাহুল্য আল বাইয়্যিনাত-এ এ পর্যন্ত বহুবার গণতন্ত্র নাজায়িয, নির্বাচন নাজায়িয, ভোট দেয়া নাজায়িয, হাদীছ শরীফ-এর বরাত সাপেক্ষে প্রার্থী হওয়া নাজায়িয ইত্যাদি বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর দলীল সমৃদ্ধ সারগর্ভ আলোচনা করা হয়েছে। এবং তা থেকে বিরত থাকার জন্য বিশেষ করে ইসলামের দোহাই দানকারী দলগুলোকে বার বার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু কুরআন শরীফ-এর সেই আহ্বানের দিকে তারা মনোযোগী হয়নি।

তাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তার চেয়ে অধিক জালিম আর কে আছে? যাকে তার পালনকর্তার কালাম দ্বারা বোঝানো হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (সূরা কাহফ/৫৭)

আল্লাহ পাক অন্যত্র ইরশাদ করেন, “আল্লাহ পাক-এর পথে চলতে অস্বীকার যারা করেছে, তাদের অবস্থা ঠিক এরূপ যেমন রাখাল পশুগুলোকে ডাকে কিন্তু তারা ঐ ডাকের আওয়াজ ব্যতীত আর কিছুই শুনতে পারেনা, এরা বধির, বোবা, অন্ধ। এজন্য কোন কথা এরা বুঝতে পারে না।” (সূরা বাক্বারা/১৭১)

প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য অধুনা ইসলামের নামে গণতন্ত্রীরা এ ধারণা প্রবর্তনে প্রচেষ্ট যে, ইসলামের দোহাই দিয়ে নির্বাচন অস্বীকার করার অর্থ হলো জঙ্গিবাদ সমর্থন করা। বিষয়টি যুগপৎ জেহালতি ও  প্রতারণা ছাড়া কিছুই নয়। বরং সত্য কথা এই যে, ইসলাম যেখানে নির্বাচন নামক ফাসাদই সমর্থন করেনা; সেখানে নির্বিচারে হত্যা, বোমা হামলা, মৌলবাদ তথা জঙ্গিবাদ সমর্থন করে কী করে?

তথাকথিত “ইসলামী দলের নির্বাচনী প্রচারণা” যে কতবড় প্রতারণা তা বোঝার জন্য সামান্য ফিকিরই যথেষ্ট। তারা যদি নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভও করে তবে তাদেরকে প্রথমেই বাংলাদেশের সংবিধানকে সমুন্নত রাখার পক্ষে শপথ নিতে হবে। সেই শপথ নেয়ার পর তা ভঙ্গ করে তথাকথিত ইসলামী খিলাফতের পক্ষে এবং প্রচলিত সংবিধানের বিপক্ষে তারা কাজ করবেন। কিন্তু সৃষ্টি যেমন সৃষ্টিকর্তাকে ধ্বংস করতে পারেনা তেমনি উল্লেখ্য সংবিধানের সৃষ্টি হল পার্লামেন্ট। কাজেই গণতান্ত্রিক ধারণায় পার্লামেন্ট কখনো সংবিধানকে ধ্বংস করতে পারেনা। সে কারণে প্রচলিত গণতন্ত্রের নির্বাচনে কখনই ইসলাম প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়না। যেমনটি সম্ভব হয়নি তুরস্কে, আলজেরিয়ায়।

অতএব, যারা প্রচলিত গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে পরে প্রচলিত গণতন্ত্র মিটিয়ে দিতে চায় তারা স্বঘোষিত, চিহ্নিত, সাক্ষাৎ মুনাফিক তথা উলামায়ে ‘ছূ’ বা ঘৃণ্য ধর্মব্যবসায়ী। মুনাফিক তথা ধর্মব্যবসায়ী বলেই এরা ইসলামের নামে হরতাল, লংমার্চ, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, নারী নেতৃত্ব সমর্থন, জোট সরকারের যাবতীয় অনৈসলামী কর্মসূচী সমর্থন ইত্যাদি হারামে লিপ্ত রয়েছে। কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “হারাম থেকে হারামেরই জন্ম হয়” কাজেই তাদের দ্বারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত ইসলামী খিলাফত কায়েম সম্ভব নয়।

সঙ্গতকারণেই, এসব মতলববাজ, ব্যবসায়ী, বাচাল, মুনাফিক এবং জাহেল, বিদয়াতী ও গোমরাহ উলামায়ে ছুদের সম্পর্কে আমাদেরকে সাবধান ও সচেতন হতে হবে। তাদেরকে প্রতিরোধ করার দীপ্ত শপথ নিতে হবে এবং উলামায়ে হক্কানী-রব্বানী তথা মুজাদ্দিদে আ’যমের স্বতঃস্ফুর্ত অনুসারী হতে হবে। তাতে করেই আল্লাহ পাক-এর রহমতে আমাদের কামিয়াবীর পথ প্রশস্ত হবে ইনশাআল্লাহ। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়