সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৮২তম সংখ্যা | বিভাগ:

লা-শরীক আল্লাহ পাক সব নেয়ামত, হামদ ও মুলকিয়তের মালিক। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুসরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম। যিনি পরিপূর্ণ দ্বীন নিয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন।

আখিরী উম্মতের জন্য হজ্জ ফরয হিসেবে গণ্য। বদনী ও মা’লী ইবাদতের সমন্বয়ে জামিউল ইবাদত হজ্জের মত আলাদা বৈশিষ্টমণ্ডিত একটি ফরয আদায় করতে গেলেও এখন তুলতে হচ্ছে ছবি। কিন্তু কুরআন শরীফের তাফসীর এবং শত শত হাদীছ শরীফের প্রেক্ষিতে এ কথা স্বতঃসিদ্ধ যে, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, দেখা, আঁকা হারাম।’

অথচ নামধারী মাওলানারা বর্তমান যুগের দোহাই দিয়ে বলছে যে, ‘বর্তমান যুগে মিডিয়ার প্রভাব সর্বগ্রাসী। এ যুগে ছবিকে নাজায়িয মানা, টিভি চ্যানেলকে অস্বীকার করার অর্থ যুগ থেকে পিছিয়ে পড়া। শুধু পিছিয়ে পড়াই নয়, ইসলামের প্রচার-প্রসারের কাজ থেকে বর্ণনাতীতভাবে পিছিয়ে যাওয়া।”

উল্লেখ্য, তাদের মতের প্রেক্ষিতে আজ ইন্টারনেটে প্রায় হাজার হাজার  তথাকথিত ইসলামী ওয়েব সাইট, ইসলামী টিভি চ্যানেল, রেডিও, ম্যাগাজিন, ইসলামিক সেন্টার তথা প্রকাশনালয় রয়েছে যারা ছবির মাধ্যমে ইসলামের প্রচার-প্রসার করছে বলে দাবী করছে।

কিন্তু কথা হলো যে, তাদের এ প্রচারণা অমুসলিম বিশ্বের ক’জনকে মুসলমান করতে পেরেছে? বা আড়াইশ’ কোটি মুসলমানের ক’জনের অন্তরে ঈমানী ও আমলী জজ্বা তৈরী করতে পেরেছে?

বরং ছবিকে জায়িয বলার প্রেক্ষিতে আজ সিনেমা, নাটক, ব্যান্ড শো, ফ্যাশন শো, র‌্যাগডে, থার্টি ফার্স্ট নাইট কালচার ইত্যাদির গ্যাড়াকলে পড়ে এখন আড়াইশ’ কোটি মুসলমানের ক’জন হাক্বীক্বী মুসলমান তাই খুঁজে বের করা কঠিন কষ্টসাধ্য কাজ হয়ে পড়েছে।

তাহলে ছবিভিত্তিক এই প্রচারণার কি গুরত্ব থাকতে পারে? যেমন, হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আখিরী জামানায় মসজিদগুলো হবে নকশাখচিত, কারুকার্যমণ্ডিত, মনোলোভা, সুরম্য অট্টালিকা; কিন্তু তা হবে অন্তঃসারশূন্য, আমলহীন।”  অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে ঘরে ছবি থাকে সে ঘরে রহমতের ফেরেশ্তা থাকেনা।”  অর্থাৎ ছবি মাধ্যম, রহমতশূন্য মাধ্যম।  এ মাধ্যমে কাজ করলে রহমতের পরিবর্তে জহমত হাছিলই অনিবার্য। ছবির মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের প্রেক্ষিতে বর্তমান বিরাজমান অবস্থা তারই উদাহরণ।

“বর্তমান যুগে ইসলাম প্রচারে ছবির ব্যবহার অত্যাবশ্যকীয়”- এ বক্তব্যধারীরা আদৌ মুসলমান কি-না ইসলামের নিরিখে তাই বিবেচ্য। কারণ, ছবি ব্যবহারকারীরা মনে করছে যে, ‘দৃশ্যমান মাধ্যম ছাড়া ইসলামের প্রচার ফলপ্রসূ হয়না।’ অথচ ইসলাম এমন অন্তর্নিহীত শক্তিসম্পন্ন যে, দৃশ্যতা এখানে গৌণ। অদৃশ্যতাই এখানে মুখ্য। এজন্য কুরআন শরীফের একেবারে প্রথমেই মুসলমানের পরিচয় দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, “যারা অদৃশ্যের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে।”  (সূরা বাক্বারা/৩)

বস্তুতঃ ইসলামের নামধারী মৌলবাদী, বস্তুবাদী, ঈমান-আক্বীদা, আমল হারানো উলামায়ে ‘ছূ’রা অদৃশ্যের উপর বিশ্বাস, আল্লাহ পাক-এর কুদরতের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে বলেই সন্দেহচিত্তে হতাশাগ্রস্ত দিলে বলছে, ‘ছবি ছাড়া কি করে ইসলামের প্রচার হবে?’ ভাবখানা এমন যে, যেন তারাই ইসলামের মালিক বনে গেছে।

কিন্তু ইসলাম প্রচারের মালিক আল্লাহ পাক। হযরত ইবনে আবী হাতিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালামকে হজ্জ ফরয হওয়ার কথা ঘোষণা করার আদেশ দেয়া হয় তখন তিনি আল্লাহ পাক-এর কাছে আরয করেন, ‘এখানে তো জনমানবহীন মরু প্রান্তর। ঘোষণা শোনার মত কেউ নেই।’ আল্লাহ পাক বললেন, ‘আপনার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা দেয়া, সারাবিশ্বে পৌঁছানোর দায়িত্ব আমার।” বর্ণনা রয়েছে, অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম আবু কুবায়স পাহাড়ে উঠে ঘোষণা দেন, ‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমাদের রব নিজের ঘর তৈরী করেছেন। তোমাদের এই ঘরের হজ্জ ফরয। তোমরা তোমাদের রবের আদেশ পালন কর।’

রেওয়ায়েতে বলা হয়েছে যে, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর এই আওয়াজ আল্লাহ পাক স্বয়ং বিশ্বের কোণে কোণে পৌঁছে দেন এবং শুধু তখনকার জীবিত মানুষ পর্যন্তই নয় বরং ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমনকারী, সবার কানে তথা আলমে আরওয়াহ্ পর্যন্ত এ আওয়াজ পৌঁছে দেয়া হয়। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম-এর আওয়াজের জাওয়াবই হচ্ছে, ‘লাব্বাইকা  বলার আসল ভিত্তি।” (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে মাযহাবী)

অতএব, প্রতিভাত হচ্ছে যে, দৃশ্যমান, ছূরতান বা সাধারণ দুনিয়াবী অবস্থা ও মানসিকতা নিয়ে চলা ঠিক নয়। বিরাজমান দুনিয়াবী অবস্থা কুরআন-সুন্নাহ্র প্রতিকূল থাকলেও তার উপর ইস্তিকামত থাকতে হবে। তখন তা আল্লাহ পাক-এর নির্দেশিত মতে, পছন্দনীয় পথে হচ্ছে বলে গ্রহীত হবে। তখন তার জিম্মাদারী স্বয়ং আল্লাহ পাক নিবেন। তিনি কুদরতী সাহায্য করবেন। যা সব মানবীয় প্রচেষ্টার বহুগুণ ঊর্ধ্বে। রাতে মানুষ লক্ষ-কোটি বাতি জ্বালায়। আর সকালে আল্লাহ পাক-এর এক সূর্য সারাবিশ্বকে আলোয় ঝলমল করে।

সুতরাং “প্রাণীর ছবি তোলা, রাখা, দেখা, আঁকা হারাম”- কুরআন-সুন্নাহ শরীফ এই নির্দেশের উপরই আমাদের ইস্তিকামত থাকতে হবে। অতঃপর মিডিয়ার কি হবে, ইসলাম প্রচারের কি হবে তা আল্লাহ পাক-এর বিষয়। যেমন, তিনি উপস্থিত না থাকতেও মানবম-লীকে হজ্জের আহ্বান শুনিয়েছেন।

বিদায় হজ্জের মশহুর সেই হাদীছ শরীফেও এই কথাই গুরুত্বের সাথে বলা হয়েছে, “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত লাঞ্ছিত হবেনা, পদদলিত হবেনা যতক্ষণ তোমরা কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক থাকবে। আর যখন তা থেকে বিচ্যুত হবে তখনই তোমরা বিজাতীয় ও বিধর্মীদের দ্বারা নিষ্পেষিত হবে, লাঞ্ছিত হবে, পদদলিত হবে।”

হারাম ছবির পাশাপাশি, লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, ইসলামের নামে  গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিজাতীয় ও বিধর্মীয় কর্মসূচী গ্রহণের ফলে সত্যিই মুসলমান আজ ভীষণভাবে লাঞ্ছিত, অপমানিত ও নিগৃহীত।

মূলতঃ এ লাঞ্ছনা হতে উদ্ধার পেতে হলে উলামায়ে ‘ছূ’দের পরিত্যাগ করে, মুজাদ্দিদে আ’যমের সান্নিধ্যে আসা অত্যাবশ্যকীয়। তাঁর ছোহবতেই সম্ভব প্রাণীর ছবি বর্জনের জন্য যথেষ্ট ঈমানী কুওয়ত, রূহানী তাকত তথা তাক্বওয়া হাছিল করা। মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়