সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৮১তম সংখ্যা | বিভাগ:

মহান আল্লাহ্ পাকই সব প্রশংসার মালিক। যিনি বিচার দিনের অধিপতি। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ছালাত ও ছালাম যিনি মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করেছেন, সু-সংবাদ দিয়েছেন এবং তাযকিয়া করেছেন।

মানুষকে, আল্লাহ্ পাক শুধুমাত্র  তার ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য তৈরী করেছেন। ইবাদত-বন্দেগী কেবল আনুষ্ঠানিকতা সর্বস্ব নয়। বরং অন্তরের সমগ্র অনুভূতির পুঞ্জীভূত নিবেদনের সঠিক প্রয়াস।

অন্তরের উৎস আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে। সে প্রেক্ষিতে অন্তরের আগমণটা ভালই থাকে। কিন্তু সামাজিক আবহ অন্তরের উপলব্ধি ও চেতনাকে পরিবর্তিত করে। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “প্রত্যেক শিশুই সত্যপথের উপর জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তার বাবা-মা তাকে বিপথগামী করে।”

বলাবাহুল্য, বাবা-মা পরিবেষ্টিত পরিবার, সমাজের একক। পরিবার সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা, পরিবেশ প্রতিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। তাই আগত মানব শিশুকে একটি অনাচার, পাপাচার মুক্ত আদর্শ পরিবেশ দেবার প্রেক্ষিতে সমাজ দায়বদ্ধ।

মুসলমান শিশুকে জন্ম হওয়া মাত্রই ডান কানে আযান  ও বাম কানে ইক্বামত শোনানো হয়। এর দ্বারা মূলতঃ তাকে শিরক, কুফরী, বেশরা, বিদ্য়াত মুক্ত পরিবেশের অঙ্গীকারই জানানো হয়।

কিন্তু তাতে ব্যাত্যয় ঘটিয়ে মানব শিশু যখন বেড়ে উঠে অনৈসলামিক আবহে আর রকমফের পাপাচার যুক্ত পরিবেশে, সমাজের অবহেলায়, অনাগ্রহে, তখন তা তার জন্মলগ্ন নেক চেতনাকে অবলুপ্ত করে অন্তরের উপলব্ধিকে বিকারগ্রস্থ করে।

তাই সমাজের কাছে সুস্থ পরিবেশ পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। সে অধিকার থেকে যখন সে বঞ্চিত হয় তখন তাকে শোষিতের পর্যায়েই গণ্য করতে হয়। কেবল অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা আর চিকিৎসাহীনতার কারণেই নয় বরং মূল্যবোধ বিবর্জিত সামাজিকতার প্রেক্ষিতেও মানুষ গভীরভাবে শোষিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত।

সুদ-ঘুষ, জুলুম, দুর্নীতি, মাদকাসক্তি, পরকীয়া, বহুগামিতা, চরিত্রহীনতা এক অর্থে সবই সামাজিক ব্যাধি। এরকম ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েই মানুষ সাধারণভাবে গান-বাজনায় অভ্যস্ত হয়। গানের সূরলহরী তার হৃদয়-তন্ত্রীকে আবিষ্ট করে। সুদকে মুনাফা মনে করে। ঘুষকে প্রয়োজন মনে করে। দ্বিধাহীন চিত্তে মাদকাসক্ত হয়। পরকীয়া তথা চরিত্রহীনতাকে উপভোগ মনে করে এবং এভাবে প্রবাহমান সমাজকে ক্রমাগত ক্ষতির দিকে ধাবিত করে।

সমাজের এই কলুষতা অধিকাংশ সময়েই বিদ্যমান ছিল। সময়ের কছম করে তাই আল্লাহ্ পাক বলেন, “সময়ের কছম! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে।” (সূরা আসর)

উল্লেখ্য, সমাজকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই চাই সামাজিক সচেতনতা। এই উপলব্ধির তীব্র জাগরণ তাই অপরিহার্য যে, কেবল সমাজের নীচতলার মানুষগুলোই নয় বরং কথিত উচ্চবিত্ত ওয়ালারাও মূলতঃ অবক্ষয় যুক্ত সমাজের আবহে আচ্ছন্ন হওয়ার কারণে তথা সমাজ থেকেও প্রাপ্ত মূল্যবোধহীন মানসিকতা লালনের প্রেক্ষিতে শোষিত ও বঞ্চিত এবং নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত আর মূল্যায়ণের মাপকাঠিতে ধিকৃত ও লাঞ্ছিত।

বলা বাহুল্য, সামাজিক এই সচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে আলিম সমাজের ভূমিকা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু নামধারী আলিমরা তথাকথিত আন্দোলনের নামে এই কাঙ্খিত ও অনিবার্য সামাজিক সচেতনতা তথা সামাজিক মূল্যবোধের আন্দোলন থেকে ন্যাক্কারজনক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে।

প্রসঙ্গতঃ দূর্নীতিতে বাংলাদেশ বারবার শীর্ষস্থান লাভ করার পাশাপাশি বর্তমান দূর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্যেরর পেছনে ধর্মব্যবসায়ী আলেমদের ধর্মব্যবসার দুষ্ট প্রভাবকে কোনক্রমেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। ধর্মের অভিভাবক সেজে ধর্মের নামে অধর্মের অনুশীলনই সাধারণ মানুষকে ধর্মের অনুভুতি সম্পর্কে সংবেদনশীল না করে ধর্ম পালনে উৎসাহিত না করে বরং দূর্নীতিতে উৎসাহিত করে। কাজেই ধর্মের প্রতি এ বৈরী মনোভাবের জন্যই সাধারণ মানুষের মাঝে দূর্নীতির সংক্রমণ হয়েছে। বাংলাদেশ দূর্নীতিতে জরাগ্রস্থ হয়ে আছে।

সমাজে দূর্নীতির উৎসও বিস্তারকারী ধর্মব্যবসায়ী মালানারা তথাকথিত লংমার্চ, ব্লাসফেমী, ইসলামের নামে নির্বাচন ইত্যাদি বিজাতীয়, বিধর্মীয় ইস্যূর উপর আন্দোলন তৈরীর নিস্ফল প্রয়াস পেলেও, নফসানিয়ত তথা স্বার্থান্বেষী কারণে আজও- আদৌ প্রচেষ্ট হয়নি গান-বাজনা, বে-পর্দা, সিনেমা, টিভি, ছবি, সুদ-ঘুষ, মাদকাসক্তি, দূর্নীতি ইত্যাদি হারাম এর বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে তথা সমাজের পরিবর্তন ঘটাতে।

স্মর্তব্য, কথিত রাষ্ট্রীয় কাঠামোর পট পরিবর্তনের অনিবার্য পূর্ব শর্ত হচ্ছে- ইসলামী আদর্শ ভিত্তিক সুস্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট তৈরী।

আর সে প্রেক্ষাপট তৈরীর জন্য কেবল মৌসুমী ও সুযোগ-সন্ধানী তথাকথিত ইসলামী আন্দোলন আর মুখোশধারী  ইসলামী ব্যক্তিত্ব নয় চাই মানুষের অন্তর শীতলকারী ইল্মে তাছাউফের আলো ও যোগ্যতাধারী ব্যক্তিত্ব। কেবলমাত্র যুগের মুজাদ্দিদ তথা মুজাদ্দিদে আযমের ছোহবতেই তা পাওয়া সম্ভব।

মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের তা যথাযথভাবে নসীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়