সব প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক-এর জন্য। যিনি সবকিছু ফায়সালার মালিক। সব ছলাত ও সালাম সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। যিনি সবকিছুর বন্টনকারী।
বর্তমান যামানাকে আখেরেরও আখের বলতে হয়। অর্থাৎ ক্বিয়ামত অতি নিকটবর্তী। ক্বিয়ামতের অনেক লক্ষণই এখন প্রকাশিত ও প্রতিভাত।
নামধারী, ধর্মব্যবসায়ী মাওলানারা- উলামায়ে হক্কানী রব্বানী, উলামায়ে মুহাক্কিক-মুদাক্কিকদের- ফতওয়ার বিরোধিতা করবে, এটাই ক্বিয়ামতের বড় আলামত। হাদীছ শরীফ-এ এদেরকে ‘কায্যাবদের চেলা’ বলা হয়েছে। এই চেলারা নতুন চমক তৈরির লক্ষ্যে এখন প্রচার করছে, ‘ইসলামে শবে বরাত বলতে কিছুই নেই।’ (নাঊযুবিল্লাহ)
অথচ ‘সূরা দুখান’সহ অনেক অনেক ছহীহ হাদীছ শরীফ-এই ‘শবে বরাত’-এর কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে।
তারপরেও ইহুদী-ওহাবীদের নেপথ্য মদদে ‘শবে বরাত’ বিরোধীরা, মুসলিম মন-মানসিকতা থেকে ‘শবে বরাত’ চেতনা উঠিয়ে দিতে কোমর বেঁধে নেমেছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
এদের এহেন অপতৎপরতার কারণে ইতোমধ্যে মুসলিম মানস থেকে ‘নামাযের খুশুখুজু’, ‘রোযার তাক্বওয়া’, ‘হজ্জ্বের মাবরূর’, ‘যাকাতের কবুল’, ‘কলেমা শরীফ-এর ইস্তিকামত- অর্থাৎ ইসলামের চেতনা বা চেতনা সম্বলিত শব্দের ব্যবহার ও তার অনুভূতিই প্রায় তিরোহিত হয়েছে। আরো তিরোহিত হয়েছে ‘ইলমে তাছাউফ’, ‘সুন্নত’, ‘ছূফী’, ‘ওলী আল্লাহ’, ‘বুযূর্গ’, ‘মুমিন’, ইত্যকার ধারার ইসলামী শব্দের জযবা বা মূল্যবোধের পজেটিভ মানসিকতা তথা চেতনা।
পাশাপাশি মুসলিম মানসিকতা থেকে বিরূপ চেতনা, ঘৃণা এখন কমে গেছে হারাম-নাজায়িয, মাকরূহ, ফাসিকী, ফিৎনা, অশ্লীলতা ইত্যাদি অনৈসলামী অনুষঙ্গ থেকে।
অর্থাৎ নেকী মানসিকতা যেমন এ প্রজন্মকে উৎসাহিত করেনা তেমনি বদীর সম্পৃক্ততাও এদেরকে ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত করেনা।
এদেশের আবহে গান শোনা, বেপর্দা হওয়া, সিনেমা দেখা ইত্যাদি কাজ এক সময় ভীষণভাবে নিরুৎসাহিত ছিলো। ইসলামের নিষেধাজ্ঞা উজ্জীবিত ছিলো। গণ-মানুষে তার ছোঁয়া ও ভীতি ছিলো। কিন্তু স্বাধীনতা- উত্তর ধর্মনিরপেক্ষতার সুবাদে মাত্র ৫% অমুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ৯৫% মুসলমানদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, ইসলামী মানসিকতাকে দাফন করে, ঐসব সিনেমা-গানবাজনাতে কথিত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করা হলো।
দেশের ৯৫% মুসলমানকে মুলো দেখিয়ে ঐসব সিনেমার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড গঠন করে ঠা-া করা হলো। অর্থাৎ এদেশের ৯৫% মুসলমানের জন্য ‘গরু মেরে তাকে জুতা দানের’ প্রবাদও প্রয়োগহীন হলো।
বলাবাহুল্য, ১৯৭২ এ বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়নের সময়ে যে প্রেক্ষাপট ছিলো এবং তা মুসলিম ধর্মীয় অনুভূতির আঙ্গিকে যতটা সহনশীল ছিলো; স্বাধীনতা- উত্তর ৩৭ বছর পর আজকে তার চেয়ে বহুগুণ সামাজিক জটিলতা বেড়েছে। অপসংস্কৃতির আগ্রাসন হয়েছে। অনৈসলামিক আবহের বিস্তার ঘটেছে।
কাজেই মুসলিম অনুভূতি ও ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি তথাকথিত সম্মান প্রদর্শন করে শুধুমাত্র চলচ্চিত্র সেন্সর করার যে বোর্ড হয়েছিলো, আজকে চলচ্চিত্র ছাড়িয়েও বহুক্ষেত্র বহুগুণে সেন্সরশীপের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে।
শুধুমাত্র চলচ্চিত্রে যে অশ্লীলতা দমনের জন্য সেন্সরশীপ বোর্ড গঠন; তারচেয়ে বহুগুণ অশ্লীলতার বিস্তার এখন বাস্তবে নায়ক-নায়িকা ছাড়াই সাধারণের মাঝে। বিশেষ করে ফ্যাশন হাউজগুলো এখন ফ্যাশনের নামে মেয়েদের জন্য টপস, ফতুয়া, জীন্স, শর্ট কামীস, হাফ হাতা গেঞ্জি আবার তাও ভীষণ পাতলা অর্থাৎ প্রায় বিবস্ত্র পোশাকই; পোশাকের নামে বাজারজাত করছে। এবং ঐসব পোশাকগুলো হচ্ছে পাশ্চাত্য স্টাইলে হলিউড, বলিউড নায়ক-নায়িকাদের অনুকরণে। (নাঊযুবিল্লাহ)
আজকে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলো, ‘ফ্যাশন শো’র’ নামে প্রায় পুরো বিবস্ত্র নারীদের ক্যাটওয়াকের নামে প্রকাশ্য ন্যুড মহড়া প্রদর্শন করে। আর যাবতীয় পত্র-পত্রিকাগুলো দ্বিধাহীন চিত্তে সেগুলো হাইলাইট করে ছাপে। একই ভঙ্গিমার অশ্লীল চিত্রের প্রদর্শনী করা হচ্ছে রাস্তাঘাটে বিজ্ঞাপনের বিলবোর্ডে।
সুতরাং ১৯৭২ সালের প্রেক্ষাপটে কথিত অশ্লীলতার জন্য যদি চলচ্চিত্র সেন্সরশীপ বোর্ড হয়; তাহলে তার চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ অশ্লীলতা যে আজকে প্রতিদিনের পত্রিকায় পত্রস্থ হচ্ছে এবং ফ্যাশন হাউজগুলো- শীত, বর্ষা, বসন্ত, ঈদ, পুজা, পহেলা বৈশাখ, ভ্যালেন্টাইন ডে- ইত্যাদির নামে প্রায় বিবস্ত্র পোশাক বিপনন করছে; বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো চিত্রায়ন করছে- এগুলো সেন্সর করার ব্যাপারে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের দেশ, বাংলাদেশ সরকার কবে এগিয়ে আসবে?
সংবিধানের প্রস্তাবনায় বিবৃত ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ পাক-এর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ এবং সংবিধানের শুরুতে বিবৃত ‘বিসমিল্লার্হি রাহমানির রহীম’-এর মর্যাদা প্রতিফলনে এবং সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকার সংরক্ষণে তাই সরকারকে শুধু সিনেমাই নয় বরং পোষাক-আশাক, সংস্কৃতি সব ক্ষেত্রেই শুধু তথাকথিত সেন্সরই নয় বরং ইসলামের আলোকে তা নিষিদ্ধ করতে হবে।
স্মর্তব্য, তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে আজ যেসব ধর্মব্যবসায়ীরা সমর্থন দিচ্ছে; তারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কারের জঞ্জাল- ‘বিগত দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক সরকারেরই’ সব সময়ের সহযোগী ছিলো। সুতরাং ধর্মব্যবসায়ীদের নিয়োগকর্তা, সংস্কারের প্রবক্তা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এসব ভেবে দেখতে হবে।
প্রসঙ্গতঃ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি সত্যিই যথাযথ সংস্কার করতে চায় তবে তাদের উচিত হবে যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, আওলাদে রসূল রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর নেক ছোহবতে আসা। তবেই তারা পাবে ছহীহ সমঝ ও প্রজ্ঞা। মহান আল্লাহ পাক সবাইকে সে নেক ছোহবতের ছায়াতলে স্থান দান করুন। (আমীন)