কোনরূপ স্তম্ভবিহীন সমুন্নত আকাশ তৈরিকারী কুদরতময় আল্লাহ পাক-এর পবিত্রতা ও প্রশংসা। কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দানকারী, তাযকিয়া বা পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়া প্রবর্তনকারী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সমুদয় ছলাত ও সালাম।
পবিত্র কুরআন শরীফ-এ বর্ণিত চারটা হারাম বা সম্মানিত মাসসমূহের মধ্যে একটি রজব। এর প্রথম রাত দুয়া কবুলের রাত, যা শবে বরাত, শবে ক্বদরের বা দু’ঈদের রাতের সমপর্যায়। অপরদিকে এ মাসের প্রথম শুক্রবার ‘লাইলাতুল রাগায়িব’রূপে বিশেষ মর্যাদাবান।
আশ্চর্যজনক ঘটনা রজব মাসের তাৎপর্য ও গুরুত্বকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে, তা মি’রাজ শরীফ। মি’রাজের শব্দগত অর্থ উর্ধ¦ারোহন।
মূলতঃ এ রাতের সফর আল্লাহ্ পাক-এর সাথে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর সর্বাপেক্ষা মুহব্বতর প্রেক্ষিতে খোদাতায়ালার সবিশেষ কুদরতের কথা প্রতীয়মান করে।
উল্লেখ্য, আল্লাহ্ পাক-এর কুদরতের প্রতি এহেন অবিচল আস্থার করুন ঘাটতি আজকের তথাকথিত উলামা গোষ্ঠীর মাঝে খুবই প্রকট। যে কারণে তাদের বুঝে আসে না পত্রিকায় ছবি প্রকাশ না করলে, ওয়াজ ভিডিও না করলে কি করে প্রচারণা চলবে, কমিউনিস্ট পন্থায় হারাম লংমার্চ না করলে কি করে আলোড়নকারী পদক্ষেপ নেয়া যাবে? খ্রিস্টান মৌলবাদ সমর্থন না করলে কি করে অনন্য পরিচয় প্রকাশ পাবে? কট্টর হিন্দু গান্ধীর হরতাল না করলে কি করে প্রতিবাদের তেজ জ্বলে উঠবে? ইহুদী আইন ব্লাসফেমী আইন না চাইলে কি করে ইসলামের অবমাননা ঠেকানো যাবে? হারাম গনতন্ত্র না করলে কি করে ইসলামের কাজ করা যাবে? এবং সর্বোপরি কুফরী নির্বাচন না করলে কি করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে তথা খিলাফত কায়েম করা যাবে?
স্মর্তব্য আল্লাহ্ পাক-এর এ কুদরতের প্রতি স্বতঃস্ফুর্ত আক্বীদা তখনই অর্জিত হয় যখন অন্তর তায্কিয়া প্রাপ্ত বা পরিশুদ্ধ হয়, দিল ইছলাহ্ হয় তথা আল্লাহ্ওয়ালা হয়। তায্কিয়া প্রাপ্ত ওলীআল্লাহগণের জীবনধারায় আমরা এ সত্যটি খুব গভীরভাবে উপলদ্ধি করতে পারি।
ইতিহাস বলে- দীর্ঘ সাতশত বৎসরের মুসলিম শাসনের পুর্বে ভারত ছিল হিন্দু রাজপুতদের পীঠস্থান। পুজা, অর্চনা, মন্দির, মুর্তি ব্রাহ্মন পুরোহিতদের প্রবল অধীপত্যবাদী এক ভুমি। বিশেষ করে বার শতাব্দীর প্রাক্কালে চৌহান বংশীয় রাজা পৃথ্বীরাজ-এর প্রবল প্রতাপান্বিত হিন্দু রাজত্বের কথা এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
কিন্তু বেমেছাল আল্লাহ্ওয়ালাদের শান! ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল মাশায়িখ, সুলতানুল হিন্দ, খাঁজায়ে খাঁজেগা, মাহবুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, রৌশন জামীল, হাবীবুল্লাহ, গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাত্র চল্লিশ জন সূফী ছাহেবসহ আল্লাহ্ পাক-এর অসীম কুদরতের প্রতি অবিচল আস্থার বেমেছাল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, প্রতাপশালী পৃথ্বীরাজের শত শত দেব-দেবীর অর্চনালয় ও হাজার হাজার পূজারীর ঘাঁটি স্থলের পাশেই তাশরীফ রাখেন। ফলশ্রুতিতে কেবল সাধারণভাবেই নয় অসাধারণ সকল বান, তন্ত্র-মন্ত্র ইত্যাদি তাঁর প্রতি চরম আক্রোশে নিক্ষিপ্ত হয়।
কিন্তু আল্লাহ্ পাক-এর কুদরতে আস্থা পোষণকারী, সুন্নত জিন্দাকারী, মুহ্ইস সুন্নাহ্ বেমেছাল ওলীআল্লাহ্ খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি সেগুলো তাঁর কারামতি শক্তির দ্বারা খুব সহজেই প্রতিহত করেন। আল্লাহ্ পাক-এর সাথে তাঁর এই অবর্ণনীয় সম্পর্কের স্বীকৃতি আরো স্পষ্ট হয়েছিল তাঁর বিছাল শরীফ-এর মুহূর্তে। স্বর্ণাক্ষরে তখন তাঁর কপাল মুবারকে পরিস্ফুটিত হয়েছিল “হাজা হাবীবুল্লাহ মাতা ফি হুব্বিল্লাহ্” অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব আল্লাহ পাক-এর মুহব্বতে বিদায় নিলেন। (সুবহানাল্লাহ) উল্লেখ্য রজব মাসের ছয় তারিখে এই মহান ওলীআল্লাহর বিছাল শরীফ-এর ঘটনা দিনটিকে করেছে তাৎপর্যম-িত।
উছূল রয়েছে, “পূর্ববর্তীদের ঘটনা পরবর্তীদের জন্য নছীহত স্বরূপ।” তাই মাহ্বুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী, ছুম্মা আজমীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর জীবন চরিত পর্যালোচনা করলে তাঁর সুন্নত পালনের আদত মূল্যায়ন করলে, তাঁর রূহানী শক্তির ও তাওয়াজ্জুহ্ দানের ক্ষমতা অনুভব করার চেষ্টা করলে, তাঁর প্রতি বাতিল শক্তির বিরোধ বিবেচনা করলে আজকের উলামায়ে “ছূ”দের সহজেই চিহ্নিত করতে পারা যায়। আর তার সাথে সত্যিকার, সর্বোচ্চ স্তরের বা আল্লাহ্ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলী আল্লাহ্র পরিচয় পাওয়াও সহজ হয়।
স্মর্তব্য যে, গরীবে নেওয়াজ, সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ হযরত খাঁজা মুঈনুদ্দীন হাসান চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী-এর চল্লিশ জন সহযাত্রীর বিশিষ্ট জনের উত্তর পুরুষই হলেন বর্তমান যামানায় আল্লাহ পাক-এর খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, ইমামুল আইম্মাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, আওলাদে রসুল, সাইয়্যিদুনা, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আল হাসানী, ওয়াল হুসাইনী, ওয়াল কুরাঈশী, মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। রূহানী তায়াল্লুকের বদৌলতে যিনি স্বয়ং রসুলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছ থেকে খিলাফত প্রাপ্ত। সার্বিক সুন্নত পালনে এবং তা মুসলমানদের মাঝে জারিকরণে যিনি অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব, ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীনের প্রতি যিনি বেমেছালভাবে নিবেদিত। একমাত্র যাঁর মাধ্যমে সত্যিকার ইসলাম বর্তমানে উদ্ভাসিত।
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে তার নেক ছোহবত, নিয়ামত ও নেক সন্তুষ্টি নছীব করুন। (আমীন)