সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ১৫৬তম সংখ্যা | বিভাগ:

সমুন্নত, সুমহান আল্লাহ পাক-এর জন্যই সকল প্রশংসা। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যই সকল ছানা-ছিফত।  মহান আল্লাহ পাক-এর আটটি জাতি ছিফতের মাঝে কুদরত অন্যতম। মহান আল্লাহ পাক ইল্ম এবং কুদরতের দ্বারা সমস্ত সৃষ্টি জগতের সাথে বিরাজমান। আল্লাহ পাক-এর মা’রিফাত লাভ, এবং তাঁর মনোনীত দ্বীন ইসলাম পালনে কুদরত সম্পর্কিত ইল্ম অনিবার্য। ইসলামের বিবিধ অনুষঙ্গ অনুধাবনে যেখানে সাধারণ বর্ণনার অসামঞ্জস্য দেখা দেয়, কুদরতের বিশ্বাসই সেখানে সমাধান ব্যক্ত করে। সন্দেহবাদীদের থেকে তাই উত্থাপিত সংশয়মূলক জিজ্ঞাসা  “বাঘ-কুমিরের পেটে কেউ গেলে, তার সুওয়াল-জাওয়াব হবে কি করে? প্লেন ক্র্যাশ হয়ে  মারা গিয়ে ছাইয়ে পরিণত হলে অথবা মিশরের পিরামিডে শায়িত মৃতদেহের সুওয়াল-জাওয়াব হবে কি করে?” মূলত: প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে আল্লাহ পাক-এর কুদরতের ধারণার অবকাশই সকল জিজ্ঞাসাকে প্রশমিত করে। কায়িনাতের সবকিছুই কুদরতের অন্তর্ভুক্ত। তথাপি প্রচলিত ধারণায়, যা সাধারণ অভিজ্ঞতার বাইরে তাকেই কুদরত বলে মূল্যায়ণ করা হয়।  আলমে খালক তথা দুনিয়া স্বাভাবিক নিয়মের অধীন। আর আলমে আমর বা রূহানী জগৎ সম্পূর্ণই কুদরতের অধীন।  আল্লাহ পাক যেহেতু কারো মুখাপেক্ষী নন তাই দুনিয়াতেও প্রচলিত ধারণায় আল্লাহ পাক-এর অনেক কুদরত জাহির হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, ইসলামের স্বার্থে, মুসলমানদের কল্যাণার্থে মহান আল্লাহ পাক-এর কুদরত জাহিরের ঘোষণা রয়ে গেছে। কিন্তু খোদায়ী কুদরত সম্পর্কে কার্যতঃ মুসলমানদের মাঝে কাঙ্খিত ইয়াক্বীনের ঘাটতি প্রকট। বিশেষতঃ নামধারী উলামাদের কার্যকলাপে এ শুন্যতা করুণভাবে দৃশ্যমান। ইসলামী আন্দোলন দাবী করলেও তারা চলমান প্রবাহের গণ্ডীর বাইরে উঁকি দিতে পারেনি। বরং মনগড়া ব্যাখ্যার দ্বারা তারা শ্বাশত ইসলামকে কাঁট-ছাট করে তথাকথিত আধুনিকীকরনের প্রচেষ্টায় লিপ্ত। মূলতঃ অনৈসলামের বিরূদ্ধে নয় ইসলামী তর্জ-তরীক্বায় নয় বরং স্বার্থান্বেষী কারণে ইসলামের নামেই বিজাতীয় কায়দায় চলার পথে তারা প্ররোচিত ও প্রলুব্ধ। তারা আজ ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, মাওসেতুং-এর লংমার্চ, গান্ধীর হরতাল, ধর্ম রক্ষার জন্য খ্রিস্টানদের ব্লাসফেমী আইন ও মৌলবাদ দাবী এবং ইসলামী খেলাফতের জন্য ইহুদী-নাছারার অনুকরণে ইসলামের নামে হারাম নির্বাচন ভিত্তিক ভোট ব্যবসার রাজনীতি করছে।  বলার অপেক্ষা রাখেনা, এ সবই হচ্ছে স্পষ্টতঃ আল্লাহ পাক-এর কুদরতী ক্ষমতার প্রতি তাদের অবিশ্বাসের প্রমাণ। অথচ আল্লাহ পাক-এর কুদরতে বিশ্ব রাজনৈতিক পটেও যে অবলীলাক্রমে কী পরিবর্তন ঘটতে পারে অধুনা সারা বিশ্বে কমুনিজমের পতন তারই প্রকৃষ্ট প্রমাণ।  এছাড়া এ যুগেও ছবির ভিত্তিতে পরিচালিত মিডিয়াকে ব্যবহার না করেও কুদরতীভাবে কিরূপ প্রচার-প্রসার হওয়া সম্ভব হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস্ সালাম-এর কা’বা শরীফ পুনঃনির্মাণকালে জনশুন্য ময়দানে দেয়া আযানের জবাবে লক্ষ কোটি হাজীর হজ্জে যোগদান তারই প্রমাণ। ‘পূর্ণ শরীয়তের উপর দায়িম-ক্বায়িম থাকলে আল্লাহ পাক যে কুদরতী মদদ করবেন ও খাছ রহমত নাযিল করবেন’- এ আক্বীদার অভাবই আজকে বিজাতীয় পথে চলার মূল কারণ। উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক-এর কুদরতী মদদ তার প্রতিই হবে যার প্রতি রয়েছে তার রহমত। মূলতঃ বান্দা সবচেয়ে বেশী যে জিনিসটির মুখাপেক্ষী সেটি হল আল্লাহ পাক-এর ‘রহমত’। ‘রহমত’ শব্দটি পবিত্র কুরআনে কারীমায় সরাসরি ৭৯ বার এবং বিভিন্নভাবে ২৫৮ বার এসেছে। আল্লাহ পাক-এর রহ্মত নাযিলের ফলেই ফসল হয়, বৃষ্টি নামে, ঝিনুকের ভিতরে মুক্তা হয়, মানুষের ছূরত সুন্দর হয়। আল্লাহ পাক-এর রহমত পেলেই মানুষ হিদায়েত পায়।  আল্লাহ পাক-এর রহমত যাঁদের উপর পড়ে কেবল মাত্র তাঁরাই হাদী হতে পারেন। কারণ আল্লাহ পাক-এর রহমতে তাঁদের দিল কোমল হয়। যা মানুষের হেদায়েতের জন্য অনিবার্য শর্ত। আল্লাহ পাক বলেন, “আল্লাহ পাক-এর রহমতেই আপনি তাঁদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন, পক্ষান্তরে আপনি যদি রূঢ় ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।” (সূরা আলে ইমরান-১৫) উল্লেখ্য, যারা জাহিরী মাওলানা তাদের দিলে খোদার রহমতের অভাব থাকার কারণে তারা মানুষের হিদায়েতের জন্য উপযোগী নয়। বরং যাঁরা ওলী আল্লাহ্ তাঁরাই রহমতের ধারক-বাহক বিধায় সে কাজের উপযোগী। আল্লাহ পাক বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক-এর রহমত আল্লাহ্ ওয়ালাগণের নিকটবর্তী।” (সূরা আরাফ-৫৬) আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে খাছভাবে রহমতপ্রাপ্ত এধরণের  একজন ওলী আল্লাহ্ হচ্ছেন সুলতানুল হিন্দ, খাঁজায়ে খাজেগাঁ, গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী সান্জেরী, আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি। বর্ণিত রয়েছে যে, এক কোটিরও বেশী বিধর্মী তাঁর উছীলায় মুসলমান হয়। অসংখ্য, অগণিত লোক ওলী আল্লাহ্ হন এবং তাঁরাও হিদায়েতের কাজ চালান। মূলতঃ তিনি ছিলেন আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলী আল্লাহ। তাই ইন্তিকালের পর মুহূর্তে তাঁর কপাল মুবারকে সোনালী অক্ষরে লেখা উঠেছিল- “হাযা হাবীবুল্লাহ্ মাতা ফী হুব্বিল্লাহ্।” অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, আল্লাহ পাক-এর মহব্বতে ইন্তিকাল করেছেন।  উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক-এর কুদরতের ইলম ও রহমত পরিপূর্ণভাবে হাছিলের কারণেই তার মাঝে শেষ মুহূর্তেও এ কুদরত ও রহমত প্রকাশ পেয়েছিল।  মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর কুদরত ও রহমতের সাথে নিবিড় সম্পৃক্ততা আল্লাহ পাক-এর জাত-পাকের পরিচয় তথা মা’রিফাত লাভের মাধ্যমেই সম্ভব।  মুজাদ্দিদে আযমের নেক ছোহ্বতেই তা অব্যর্থরূপে সম্ভব। মহান আল্লাহ পাক আমাদের তা নসীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

 সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়