মহিমাময় ও মহানুভব মালিক আল্লাহ্ পাক-এর জন্যই সব ছানা-ছিফত। যার অপার মেহেরবাণীতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর হিদায়েত বিকাশের পথে আরেকটি নতুন বছর সংযোজিত হলো। এ মুবারক সূচনার মূল্যায়ন, গত পনের বছরে প্রকাশিত আল বাইয়্যিনাতের লিখনী দ্বারা যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শরীয়তের পরিপূর্ণ অনুসরণ, গোমরাহীর পূর্ণ উন্মোচন এবং আবশ্যিক ও প্রাসঙ্গিক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ তাজদীদের অবদানে আল বাইয়্যিনাতের ভূমিকাই এ সময়ে একমাত্র বিচার্য ও গ্রহণীয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। পরম করুণাময় আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে আল বাইয়্যিনাতের এই সফলতার জন্য অশেষ শোকরিয়া এবং তাঁর প্রিয় রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সংখ্যাতীত সালাত ও সালাম।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “আলিমের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র।” শহীদের সর্বশেষ আত্মাহুতি তার রক্ত। আর আলিম-এর স্বাভাবিক অবদান তার কালি তথা লিখনী। লিখিত রূপ উম্মাহ্র জন্য জীবনীশক্তি স্বরূপ।
উম্মাহ যখন বিদয়াত, বিশরা, বিপথে বিভ্রান্ত হবার উপক্রম হয় তখন ছহীহ লিখাই উম্মাহর ইসলাহর চালিকাশক্তি হয়ে দাঁড়ায়। লেখার এমন বিশেষ সমৃদ্ধরূপ উপহার দিয়েছেন অনেক মকবুল ওলীআল্লাহ। হযরত জালালুদ্দীন রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি লিখিত “মসনবী শরীফ”কে ফার্সী ভাষায় কুরআন শরীফ আখ্যা দেয়া হয়। হুজ্জাতুল ইসলাম, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লেখনী না থাকলে সে সময়ে ইসলাম গ্রীক দর্শনের দিকে ঝুঁকে পড়ত বলে বিশেষভাবে মন্তব্য করা হয়। আফযালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর “মাকতুবাত শরীফ” কে অভিহিত করা হয় তাজদীদী মুখপত্ররূপে। মুলতঃ লিখনীও তাজদীদের অন্যতম প্রকাশিত রূপ।
মহান আল্লাহ পাক-এর গায়েবী মদদে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শুরু থেকেই বাতিলের বিরুদ্ধে লিখনী চালনা করছে। বর্তমান আখিরী যামানায় নামধারী আলিমরা ইসলামী জ্ঞান বিতরণের নামে তথাকথিত ইসলামী পত্রিকাগুলোতে এমন বিভ্রান্তিকর, মনগড়া ও জেহালতপূর্ণ লিখনী প্রকাশ করছে যা রীতিমত উদ্ভটই কেবল নয় বরং মহা উদ্বেগজনক। এসব কথা সম্পর্কেই হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে “যা তোমরা শোননি, তোমাদের বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষ শুনেনি।” (মুসলিম শরীফ)
বিগত পনের বছরের খতিয়ানে দেখা যায় মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় কেবল মাত্র মাসিক মদীনার ক্ষেত্রে ১৬৫টি, হাটহাজারী পত্রিকার ১০২টি, রাহমানী পয়গামের ৭১টি এবং অন্যান্য পত্রিকার ভুলসহ মোট প্রায় পাঁচশত ভুলের ছহীহ জাওয়াব দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ উক্ত পত্রিকাগুলো অব্যাহতভাবে ভুল জাওয়াব দিয়ে মূলতঃ কুরআন শরীফেরই অবমাননা করছে।
আর মাসিক আল বাইয়্যিনাত সে ভুলগুলো বহু দলীল দ্বারা খণ্ডন করে মানুষের ঈমান-আক্বীদা হিফাযতে স্বার্থক ভূমিকা পালন করে তার তাজদীদী ভূমিকা যথাযোগ্যভাবে পালন করে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ।
অপরদিকে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ১৫৪তম সংখ্যার অবকাশে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে ফতওয়া দেয়া হয়েছে ২৫টি এবং তাতে দলীল দেয়া হয়েছে প্রায় ১৩ হাজারেরও বেশী। সুওয়াল দেয়া হয়েছে দু’হাজারের মত। আর তাতে দলীল দেয়া হয়েছে প্রায় সাড়ে একুশ হাজার।
উল্লেখ্য, এটিই হক্ব ও সত্য হওয়ার প্রমাণ। আল্লাহ্ পাক ইরশাদ ফরমান, “তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে দলীল সমূহ পেশ কর।” (সূরা বাক্বারা/১১১)
মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর এই বেমেছাল ভূমিকার পাশাপাশি অভিযুক্ত পত্রিকাগোষ্ঠী তথা সিলসিলাগুলোর বিভ্রান্তি বিস্তৃতি বিশেষরূপে সমালোচনাযোগ্য। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যাকে ইল্ম ব্যতীত কোন ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর যতজন লোক তদানুযায়ী আমল করেছে এর গুনাহ ফতওয়া দানকারীর উপরই বর্তাবে। (আবূ দাঊদ, মিশকাত শরীফ)
স্মর্তব্য, ভুল ফতওয়া, মাসয়ালা শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে ইলমে ফিক্বাহর স্বল্পতাই কেবল নয়, ইলমে তাছাউফ হাছিলে ব্যর্থতাই তার মূখ্য কারণ।
“মিনহাজুল আবেদীন” কিতাব লিখতে গিয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাকতুবাত শরীফ লিখতে গিয়ে হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, “ফেরেশতারা তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রেখেছিল। যাতে কোন দিক থেকে শয়তান ওয়াসওয়াসা না দিতে পারে।”
উল্লেখ্য, এখানেই ছহীহ ও সমৃদ্ধ রচনার মূল বিষয়টি নিহিত। ইলমে তাছাউফে পরিপূর্ণ কামালত হাছিল না হলে, লেখা নফসানিয়ত ও জেহালত থেকে মুক্ত থাকে না। আর তা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত বরং ইলমে তাছাউফে বেমেছাল সমৃদ্ধ ও গায়েবী মদদপ্রাপ্ত মাসিক আল বাইয়্যিনাত। বলার অপেক্ষা রাখেনা, মাসিক আল বাইয়্যিনাত প্রকাশিত না হলে ইসলাম ঝুঁকে পড়তো উলামায়ে ‘ছূ’দের কৃত লংমার্চ, হরতাল, মৌলবাদ, ব্লাসফেমী, গণতন্ত্র ইত্যাদি যাবতীয় ইহুদী-নাছারার কর্মকাণ্ডে।
আমাদের বিশ্বাস ইনশাআল্লাহ, আগামী বছরগুলোতেও মহান আল্লাহ পাক “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর দ্বারা মকবুল ভাবে স্বীয় রহমতে, মদদে যাবতীয় তাজদীদের যথাযথ প্রকাশ ঘটাবেন। হক্ব ও বাতিল পার্থক্য করে দিবেন। কারণ মাসিক আল বাইয়্যিনাত, বর্তমান যামানায় আল্লাহ পাক-এর লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর খাছ ইলমে লাদুন্নীর পরশে ও তাঁর খাছ রূহানী ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহর বরকতে পরিচালিত ও প্রকাশিত। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “যে যামানার ইমামকে চিনলনা সে যেন জাহিলিয়াতের মধ্যে মারা গেল।”
মহান আল্লাহ পাক আমাদের সবাইকে এই মহান ইমাম ও মুজাদ্দিদে আ’যমের নেক ছোহবত নছীব করুন ও কামিয়াবী দান করুন। (আমীন)