সম্পাদকীয়

সংখ্যা: ২২০তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম মুবারক।

বাংলাদেশ সংবিধানের ২ (ক) ধারায় বলা হয়েছে-

“প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম।” এরপরে ৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-

“প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা।”

বলাবাহুল্য রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলার’ বিষয়ে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। কিন্তু অষ্টম সংশোধনী আইনের বলে ১৯৮৮ সালের ৩০ নং আইনের ৩ ধারাবলে ২ (ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সন্নিবেশিত হলেও; সূচনার পর হতে অদ্যাবধি রাষ্ট্রযন্ত্র, রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিষয়ে বিন্দুমাত্র পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, তার কিছু উল্লেখ করতে পারবে কী?

জনজীবনের কোথাও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো পৃষ্ঠপোষকতা আছে কী?

পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাতে যা কিছু হালাল আর যা কিছু হারাম বলে বর্ণিত;

রাষ্ট্রযন্ত্র তা কিছু মানে কী?

কী আইন? কী বিচার? কী অর্থনীতি? কী প্রশাসন? কী শিক্ষা?

রাষ্ট্রযন্ত্র কোথাও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিন্দুমাত্র প্রতিফলন ঘটিয়েছে কী?

দেশের প্রধানমন্ত্রী একদিকে বলেন, আইন করে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবেনা। তিনি সুদখোরের সমালোচনা করেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মিতব্যয়ী হওয়ার আহবান জানান।  অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও আইন দ্বারা মাদক নির্মূল করা যাবেনা বলে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দেন। এর দ্বারা প্রকারন্তরে তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মূল্যবোধই গভীরভাবে স্বীকার করে নেন। কারণ কেবলমাত্র পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও চেতনা দ্বারাই সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রতিকার সম্ভব। কিন্তু সে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও চেতনা প্রতিফলনে সরকার অথবা রাষ্ট্রযন্ত্র কতটুকু প্রতিশ্রুতিশীল?

বলার অপেক্ষা রাখেনা মূল্যায়নের মানদণ্ডে তা শূন্যের কোঠায়। তাহলে সংবিধানিকভাবে বর্ণিত ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ উনার স্বার্থকতা কোথায়? রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পৃষ্ঠপোষকতার প্রতিফলন কোথায়?

মনে রাখতে হবে রাষ্ট্রের চেয়ে সমাজ অনেক ব্যাপক ও শক্তিশালী। রাষ্ট্রযন্ত্রকে সুসংহত করতে হলে সমাজকে সুশৃঙ্খল করতে হবে। আর সমাজের একক হল পরিবার। আবার সে পরিবারের একক হলো ব্যক্তি। কাজেই এ ব্যক্তি থেকে পরিবারকে পরিশুদ্ধ করতে চাইলে প্রচলিত দেওয়ানী অথবা ফৌজদারী দ-বিধি নয়; প্রয়োজন পবিত্র দ্বীন ইসলামিক পরিশুদ্ধিগত চেতনা ও আহবান।

সুতরাং টিকে থাকার স্বার্থেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনারই আদর্শ ও চেতনার প্রচার প্রসার ঘটাতে হবে। বিশেষ করে ৯৭ ভাগ মুসলমান জনগোষ্ঠীর দেশে তার কোনো অন্যথা থাকতে পারেনা। কোনো বিকল্প হতে পারেনা।

বলার অপেক্ষা রাখেনা বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্র ৯৭ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশে নূন্যতম ইসলামী মূল্যবোধের বিকাশ না ঘটিয়ে একদিকে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ এ সাংবিধানিক বিধিবদ্ধতা রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে অপরদিকে পঙ্কিল আবহ তৈরী ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণতি ডেকে আনা হচ্ছে।

অথচ রাষ্ট্রযন্ত্র যদি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কেবলমাত্র ‘দোযখ’ এই শব্দের ভাবধারা ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানের এদেশে সমন্বিতভাবে ছড়িয়ে দিতে পারতো; তাহলে দোযখের ভয়ে ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠীই- সব দুর্নীতি, অনিয়ম, অরাজকতা থেকে বহু দূরে থাকতো। রাষ্ট্রযন্ত্র আদর্শিক হতো। নিরাপদ থাকতো।

আজকের যুগকে বলা হয় অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ। এ তথ্যও জানা গেছে পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে ১.৭৮ জন, প্রতি মিনিটে ১০৭ জন, প্রতি ঘণ্টায় ৬,৩৯০ জন এবং প্রতিদিন ১,৫৩,০০০ লোক মারা যাচ্ছে। এভাবে যারা মারা যাচ্ছে মৃত্যুর সাথে সাথে তাদের পরিণতি কী হচ্ছে? সে তথ্য কী রাষ্ট্রযন্ত্র দিতে পারছে?

রাষ্ট্রযন্ত্র যাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করে; কবরে তাকে শোয়ানোর সময় বিউগিল বাজায়, স্যালুট দেয়। প্রশাসনিক সমাবেশ ঘটায়। কিন্তু কবরে শোয়ানোর পর কী হয়? সে তথ্য দিতে এবং সে তথ্যের আলোকে কিছু করতে রাষ্ট্রযন্ত্র যথারীতি নিশ্চুপ এবং নিস্ক্রিয় কেন?

রাষ্ট্রযন্ত্রের এ ব্যর্থতা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “এবং সেদিন দোযখকে আনা হবে, সেদিন মানুষ স্মরণ করবে, কিন্তু এই স্মরণ তার কি কাজে আসবে? সে বলবেঃ হায়, এ জীবনের জন্যে আমি যদি কিছু অগ্রে প্রেরণ করতাম! (পবিত্র সূরা ফজর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩-২৪)

মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে সে বলে, পুরাকালের উপকথা। কখনও না, বরং তারা যা করে, তাই তাদের হৃদয় মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে। কখনও না, তারা সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার অন্তরালে থাকবে। অতঃপর তারা দোযখে প্রবেশ করবে।” (পবিত্র সূরা তাতফীফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩-১৬)

আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “পক্ষান্তরে যারা অবাধ্য হয়, তাদের ঠিকানা দোযখ। যখনই তারা দোযখ থেকে বের হতে চাইবে, তখনই তাদেরকে তথায় ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা দোযখের যে আযাবকে মিথ্যা বলতে, তার স্বাদ আস্বাদন কর।” (পবিত্র সূরা সিজদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২০)

মূলত: দোযখ  অত্যন্ত ভয়াবহ স্থান। এটা গুনাহগারদের জন্যে নির্ধারিত।

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই দোযখ সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য ঘাঁটি, উহা অবাধ্যগণের ঠিকানা, তথায় অবস্থান করবে তারা অনন্তকাল, তথায় তারা ঠান্ডা বস্তু ও শরবতের স্বাদ আস্বাদন করবে না, কিন্তু গরম পানি ও পুঁজ ব্যাতীত।”

দোযখের শাস্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরো অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন।

সঙ্গতকারণেই রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার এদেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের উচিৎ ‘দোযখ’ সম্পর্কে ৯৭ ভাগ জনগোষ্ঠীকে যথাযথ ইলম দেয়া। সচেতন করা। দোযখের আমল থেকে ৯৭ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীদের রক্ষার কোশেশ করা। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম উনার পৃষ্ঠপোষকতা করা।

মূলতঃ এসব অনুভূতি ও দায়িত্ববোধ আসে  পবিত্র ঈমান ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাদের অনুভূতি ও প্রজ্ঞা থেকে। আর তার জন্য চাই নেক ছোহবত মুবারক তথা ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ মুবারক। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবারক-এ সে মহান ও অমূল্য নিয়ামত হাছিল সম্ভব। খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের তা নছীব করুন। (আমীন)

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়     

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়