সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ এমন মহাসম্মানিত ঈদ- যে ঈদ উনার কেবল শুরুই আছে। কোনো শেষ নেই। কোনো বিরতি নেই। যা অনন্তকালের জন্য। পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম এ অনন্তকালের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সুমহান তাজদীদ মুবারক করেছেন, ধারণ করেছেন, বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন, কুল-কায়িনাতবাসীকে বিতরণ করেছেন যামানার মহাসম্মানিত ইমাম ও মুজতাহীদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সার্বক্ষণিক বেমেছাল তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক উনার অধিকারী। বিশেষত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে সর্বপ্রথম বেমেছাল ও পরিপূর্ণভাবে চরম-পরম তথা ভাষাহীনভাবে ফানা ও বাক্বা হয়ে আছেন। সুবহানাল্লাহ!
উহারই বিন্দুমাত্র বহিঃপ্রকাশ হিসেবে ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ ওজুদ মুবারক, যিনি এই উম্মাহকে, কুল-কায়িনাতের সবাইকে অনন্তকালের জন্য হাদিয়া করেছেন ‘সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ তথা “পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ”। সুবহানাল্লাহ! এ উপলক্ষে সুমহান রাজারবাগ দরবার শরীফ উনার মাঝে আবাদুল আবাদের জন্য প্রতিদিনই অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহিমান্বিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সুমহান মাহফিল এবং উনার সম্মানে বিশেষ তাবাররুক। সুবহানাল্লাহ! যা মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার অনন্য কারামত শরীফ ও অনবদ্য তাজদীদ মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
সঙ্গতকারণেই মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার এই সুমহান অনবদ্য তাজদীদ মুবারক ও অনন্য কারামত শরীফ উনাকে সবারই সম্যক হৃদয়াঙ্গম করতে হবে। সার্থকভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং সর্বাত্মকভাবে মুবারক খিদমতে শরীক হতে হবে ব্যক্তি থেকে সরকারকে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষা বোর্ডের কারিকুলামে সাধারণ শিক্ষায়, সর্বোত্তম আদর্শ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কোনো নিবন্ধ স্থান পায়নি। অবশিষ্ট শ্রেণীগুলোতে নামকাওয়াস্তে সংক্ষিপ্তাকারে মাত্র একটি নিবন্ধ স্থান পেয়েছে। এভাবে পরবর্তীতে উচ্চ মাধ্যমিক এবং গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করে এদেশের মুসলমান সন্তান কথিত ‘প্রথম শ্রেণী’র নাগরিক হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কিত সর্বমোট দশ থেকে বারোটি নিবন্ধ পড়ে। অর্থাৎ বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষায় শিক্ষিত বাংলাদেশের কথিত ‘প্রথম শ্রেণী’র মুসলমান নাগরিকটি থেকে যাচ্ছে তার রসূল ও পবিত্র ঈমান উনার মূল- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক জীবনচরিত ও উনার সর্বোত্তম আদর্শ মুবারক সম্বন্ধে নেহায়েত অজ্ঞতায়। আর সেক্ষেত্রে শিক্ষাঙ্গনে সর্বোচ্চ বাজেট তথা হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট করেও সুশিক্ষিত সন্তান পেতে জাতি করুণভাবে বঞ্চিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, শিক্ষাঙ্গনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রসঙ্গ এতটা সঙ্কুচিত হওয়ার ক্ষেত্রটি মূলত লুটেরা ব্রিটিশ বেনিয়াদেরই কুচক্রী কর্মের ফসল। ১৮১৩ সালে কুচক্রী ব্রিটিশ বেনিয়ার এদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রথম নজর দেয়। এ ধারাবাহিকতায় ১৮২৩ সালে শিক্ষার ব্যাপারে নীতি নির্ধারণ ও পরামর্শদানের জন্য ‘জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন’ নামে সংস্থা গঠিত হয়। মুসলিম ভাবধারায়, ফার্সী ভাষায় শিক্ষাদানের সুপারিশ করা হলেও ইংরেজ বেনিয়ারা প্রভূভক্ত রামমোহন রায়গং ও খ্রিস্টান মিশনারীদের সহযোগিতায় মুসলমানদের সে ন্যায্য দাবিকে ভূলুণ্ঠিত করে। বিশেষ করে এক্ষেত্রে বেন্টিঙ্কের সময় তার প্রিয়ভাজন, খ্রিস্টান মিশনারীদের মদদদাতা অ্যাংলিসিস্ট মেকলে ১৮৩৫ সালে তার কুখ্যাত মেমোরেন্ডমে সম্পূর্ণ ব্রিটিশ ধাঁচে এদেশের শিক্ষা-ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার কথা বলে। এক্ষেত্রে তার অহমিকা ভরা বক্তব্য এখনো স্মর্তব্যের বিষয়। সে বলেছিল- ‘আমরা এমন একটি শ্রেণী তৈরি করবো, যারা রক্তে গোশতে এদেশীয় হলেও চিন্তা-চেতনায় হবে বিলেতী।’
বলা চলে, সে হীনউদ্দেশ্য সাধনে ব্রিটিশরা সার্থক হয়েছে। আর সেটি তারা করতে পেরেছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিবর্জিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনচরিতশূন্য সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যমেই। নাউযুবিল্লাহ!
বলাবাহুল্য, ব্রিটিশউত্তর, চিন্তা-চেতনায় মেকলে কথিত বাঙালি সাহেবরাই এ দিকটি সঞ্জীবিত করে রেখেছে। তথাকথিত কুদরাত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনসহ বর্তমানের হিন্দত্ববাদী কুফরী শিক্ষানীতি মূলত তারই প্রবাহ।
স্মর্তব্য, বস্তুতান্ত্রিক শিক্ষা অর্থাৎ হালাল কামাই করার জন্য যে শিক্ষা, যা হুনরের অন্তর্ভুক্ত, তার প্রয়োজনীয়তা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে বলা হয়েছে। কিন্তু শর্ত হচ্ছে- তার সাথে সম্মানিত ইসলামী আদর্শ উনার সমন্বয়। অর্থাৎ সর্বকালের, সর্বোৎকৃষ্ট আদর্শ, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর আক্বদাছ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান আদর্শ মুবারক উনার যোগসাধন ও রূপায়ণ।
উল্লেখ্য, এদেশের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্বীকৃত। কিন্তু কথা হচ্ছে- রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে মানে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে স্বীকার করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে পালনে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধ উনার উজ্জীবন ঘটায়? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী আচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়?
বলাবাহুল্য, ৯৮ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ হিসেবে, রাষ্ট্রধর্ম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার দেশ হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে উপরিল্লিখিত জিজ্ঞাসার জবাব ‘হ্যাঁ বোধক’ হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো- রাষ্ট্রযন্ত্র তা করতে চরমভাবে ব্যর্থ। বরং উল্টো দিকে তার বল্গাহীন অগ্রযাত্রা। নাঊযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)
প্রসঙ্গত জান্নাতের সুসংবাদ এবং জাহান্নামের ভয় এখানে উল্লেখ্য।
বলাবাহুল্য, দেশের মুসলমান এখনো জান্নাত আশা করে জাহান্নামকে ভয় পায়। আর জান্নাত-জাহান্নামের আমল সম্পর্কেও তারা অজ্ঞাত নয়। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে জান্নাত-জাহান্নামের মূলত মালিক- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মর্যাদা মুবারক, মূল্যায়ন মুবারক, শান-মান মুবারক অনুধাবন, আদেশ-নিষেধ মুবারক পালন থেকে তারা কী করে পিছিয়ে থাকতে পারে?
কাজেই মুসলমানকে ‘মুসলমানিত্ব’ বুঝতে হবে। ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাক্বীক্বীভাবে বলতে হবে ও আমলে আনতে হবে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (স্বীয় উম্মতদেরকে) বলে দিন, মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় ফদ্বল ও রহমত স্বরূপ অর্থাৎ অপার দয়া ও অনুগ্রহ হিসেবে উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন; সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশের আমলটি তাদের সমস্ত নেক আমল অপেক্ষা উত্তম বা শ্রেষ্ঠ।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
উল্লেখ্য, এই খুশি প্রকাশকে কোনো মুহূর্ত, ঘণ্টা বা দিন বা মাস অথবা সময়ের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং তা অনন্তকালের জন্য।
শুধু ১২ই শরীফ নয়; বরং অনন্তকালব্যাপী সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাযথ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনেই প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয।
তবে আবশ্যকীয়ভাবে মনে রাখতে হবে, হামিলু লিওয়ায়িল হামদ, হাবীবে আ’যম, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সার্বক্ষণিক রূহানী সংযোগ সমৃদ্ধ ও উনার মহান সুন্নত দ্বারা সুশোভিত
মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম উনার নেক ছোহবত মুবরকের মাধ্যমেই আমাদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব
সনদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জাত মুবারক ও পবিত্র ছিফত মুবারক সম্পর্কিত ইলম ও ফিকির,
উনার হাক্বীক্বত সম্পর্কিত মা’রিফাত এবং
উনার পূর্ণ অনুসরণ ও সুন্নত পালনের এবং সর্বোপরি চরম, পরম ও গভীর মুহব্বত,
তা’যীম-তাকরীম ও আদবের সাথে অনন্তকালের জন্য সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালনের কুওওয়ত।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তা নসীব করুন। (আমীন)