সব প্রশংসা মুবারক খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও পবিত্র সালাম মুবারক।
মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “সময়কে আমি পর্যায়ক্রমে মানুষের মাঝে পরিবর্তন করি।” সময় বহতা নদীর মত। সাধারণ মানুষ সময় দ্বারা প্রভাবিত হয়।
সময়ের প্রবাহে পুষ্ট অধিকাংশের বিশ্বাস এরূপ যে, ‘চলমান পরিস্থিতিতে প্রচলিত অনৈসলামিক আচারও অনৈসলামিক থাকে না। তাদের ধারণা গান-বাজনা, খেলা-ধুলা, সুদ, ঘুষ, টিভি, সিনেমা, বেপর্দা, বেহায়া এগুলো বর্তমান সময়ের দাবি। যা সময়ের প্রেক্ষিতে জায়িয ও সহনীয়।’ নাউযুবিল্লাহ!
আওয়ামুন নাসের ভিতরে এসব বিশ্বাস শক্ত করে এঁটে বসার কারণে তাদের সে অনুভূতির বিপরীতে চালিত হতে ভয় পায়, স্বার্থান্বেষী মালানারা। চলমান আবহের প্রতিকূলে ইসলামী আদর্শকে প্রকাশ ও প্রচার করা নয় বরং তার উপর ইসলামী লেবেল আঁটার অপচেষ্টার প্রেক্ষিতে ছবি তোলা, ভিডিও, টেলিভিশন জায়িয করা হয়েছে বহু পূর্বেই। এ ধারাবাহিকতায় যাবতীয় অনৈসলামিক কাজের প্রতি বাধাদান এবং দ্বীন ইসলাম কায়িমের পথটিকেও করা হয়েছে বিকৃত, কলঙ্কিত।
মূলত এ সবকিছুই বিধর্মীদের থেকে উৎপত্তি লাভ করে সাধারণভাবে সমাজে সম্পৃক্ত হয়েছে। কিন্তু এসবের বিপরীতে স্বকীয় আদর্শে পরিচালিত হওয়াই ছিল সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধের দাবি। সম্মানিত ইসলামী আদর্শ সম্পর্কে অজ্ঞতা, চলমান মানসিকতার প্রতিকূলে চলার গভীর শঙ্কা, সংশ্লিষ্ট স্বার্থান্বেষী মালানাদের পরাভূত করেছে। সময়ের স্রোতে এরা ভেসে চলছে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পরিভাষায় এদেরকে আখ্যা দেয়া হয়- ‘ইবনুল ওয়াক্ত’ বা ‘সময়ের সন্তানরূপে।’
সময়ের প্রকৃতি ও প্রবাহে যারা চলবে, সময়ের দোহাই যারা দিবে তাদের জন্য মূলতঃ দ্বীন ইসলাম উনার ধারক ও বাহক হওয়া সম্ভব নয়। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সময়ের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিগ্রস্ততার মধ্যে লিপ্ত। তবে তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আছর শরীফ)
এখানে শপথ করা হয়েছে সময়ের। আর এর তাফসীর হচ্ছে, সময়ের স্রোতে নির্বিচারে যারা গা ভাসিয়ে দিবে অর্থাৎ যারা ইবনুল ওয়াক্ত তারা মূলতঃ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বলাবাহুল্য, সমঝদার না হলে এসব ইবনুল ওয়াক্ত মালানাদের অন্তঃসার শূন্যতা উপলব্ধি কষ্টকর। বিশেষত তাদের অনুসারীদের জন্য তা আরো দুরূহ। যেহেতু তারা দৃশ্যত: সমজাতীয়দের বিরাট সমাবেশ দেখতে পায়।
স্মর্তব্য, বিরাট সমাবেশ বা বেশি সংখ্যাই কিন্তু হক্বের মাপকাঠি নয়। তা বরং নাহক্বের সূচকও বটে। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে নেন, তবে তারা আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ থেকে বিপথগামী করে দিবে। তারা শুধু অলীক কল্পনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা বলে থাকে। আপনার প্রতিপালক তিনি তাদের সম্পর্কে জ্ঞাত রয়েছেন, যারা উনার পথ থেকে বিপথগামী হয়।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আনয়াম শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৬)
এ সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে ব্যক্ত যে, পৃথিবীর অধিকাংশ লোক নাহক্ব। সুতরাং যেসব নামধারী মালানারা তাদেরকে তোয়াজ করে, তাদের মুখী যারা হয় তারাও মূলত নাহক্ব। আর উভয়ের সম্মিলিত শক্তিটি ধাবিত হয় হক্ব যামানার লক্ষ্যস্থল উনার প্রতি অর্থাৎ যামানার মুজাদ্দিদ উনার বিরুদ্ধে।
কারণ, সময়ের নাহক্ব গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কেবল তিনিই হক্ব কথা উচ্চারণ মুবারক করেন। দ্বীন ইসলাম উনাকে সম্মানিত ইসলামী পন্থায় প্রতিষ্ঠা করার মত নীতিবোধ মুবারক, আকল মুবারক, হিম্মত মুবারক ও তাওয়াক্কুল মুবারক থাকায় সম্মানিত দ্বীন ইসলামকে, সম্মানিত ইসলামী কায়দায়ই রূপায়নে কেবল তিনিই হন যোগ্য ও নিবেদিত। অর্থাৎ সম্মানিত ইসলামী মূল্যবোধের বিপরীতে সময় বা সমসাময়িক তর্জ-তরীকা, মানসিকতা উনার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা মোটেই। বরং সে সবের উপর তিনিই হন জয়ী। সম্মানিত ইসলামী পরিভাষায় তিনি “আবুল ওয়াক্ত” বা সময়ের উপর প্রাধান্য বিস্তারকারী রূপে অতীব সম্মানিত। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, সময়ের বিপরীতে চলা তথা সময়ের সন্তান- ‘উলামায়ে ছূ’ ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত সাধারণ মানুষের মানসিকতার বিরুদ্ধে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার কথা বলা মূলত খুবই দুরূহ। কারণ, সবাই তখন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। অপবাদ রটনা করে, বিরোধিতা করে। তারপরেও আবুল ওয়াক্ত অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সময়ের বিপরীতে সত্য দ্বীন উনার কথা বলেন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক উনার মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীনকে তুলে ধরেন। কারণ তা মহান আল্লাহ পাক উনার আদেশ মুবারক এবং এটাই উনার হক্ব হওয়ার ও যোগ্যতার বিশেষ পরিচয় মুবারক। সম্মানিত ও পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “অতএব, আপনার পালনকর্তা উনার আদেশ মুবারক পালনের জন্য ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করুন এবং ওদের মধ্যকার কোন পাপিষ্ঠ (উলামায়ে ‘ছূ’) ও কাফিরের আনুগত্য করবেন না।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা আদ দাহর শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
প্রসঙ্গত, সাইয়্যিদুনা হযরত সুলতানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশক্তিমান আবুল ওয়াক্তই নয়, পাশাপাশি তিনি হলেন ‘আল জব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল’। তিনি উনার রূহানী শক্তি মুবারক দিয়ে গোটা পৃথিবীকে তছনছ করে আবার নতুনভাবে তা ইসলামী আবহে সজীব ও সাবলীল করে সাজাতে পারেন এবং সাজাচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! আবুল ওয়াক্ত হয়ে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক বিকশিত করছেন। সময়ের স্রোতে ঢুকে পড়া বেশরা, বিদ্য়াত থেকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে তিনি মুক্ত করছেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ মুবারক করত সমসাময়িক গুমরাহী হতে হিফাজত করুন এবং হিদায়েত নছীব করুন। (আমীন)