সম্পাদকীয় 

সংখ্যা: ২৭৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

সব প্রশংসা মুবারক খ্বলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য; যিনি সব সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ ও সালাম মুবারক।

(১)

খ্বলিক্ব মালিক রব্বুল আলামীন মহান আল্লাহ পাক তিনি কি কোনো আমল করেন? করলে কতক্ষণ করেন? কখন থেকে শুরু করেছেন? কতদিন পর্যন্ত করবেন? এখনি বা কী করছেন? এসব মহান প্রশ্নের সুমহান তাজদীদী ইলম বিতরণ করেছেন যামানার সুমহান ইমাম ও মুজতাহিদ, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ ইমামুল উমাম, সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!

তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সৃষ্টির শুরু হতে খ্বলিক্ব মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত মুবারক পড়ছেন। এখনো পড়ছেন এবং অনাদিকাল থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত পড়তেই থাকবেন। এ বিষয়টিই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ পাঠ করবেন অর্থাৎ দুরূদ শরীফ পাঠ করেন অর্থাৎ পবিত্র ও সম্মানিত ছানা ছিফত মুবারক করেন। হে মু’মিনগণ! তোমরাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত শরীফ তথা দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং সালাম শরীফ প্রেরণ করো প্রেরণ করার মতো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মহান আল্লাহ পাক উনার সুন্নত অবলম্বনে যমীনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি- প্রতিদিন, প্রতিমাস, প্রতি বছর, প্রতি যুগ, প্রতি শতাব্দী, প্রতি সহস্রাব্দী থেকে ক্বিয়ামতকাল এবং ক্বিয়ামতকাল থেকে অনন্তকাল তথা প্রতিক্ষণ, অনুক্ষণ সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জারি করেছেন সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি। মহিমান্বিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ নামে যা আজ সমধিক পরিচিত। সুবহানাল্লাহ!

শুধু পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেই নয়, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও ইরশাদ মুবারক হয়েছে সুমহান সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সম্পর্কে অকাট্য দলীল।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদা আমি আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনার প্রতি বেশি বেশি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ অর্থাৎ মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করতে চাই। আমি কি পরিমাণ সময় আপনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ অর্থাৎ মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার জন্য নির্দিষ্ট করবো?” তিনি বললেন, ‘যে পরিমাণ আপনি ইচ্ছা করেন।’ আমি বললাম, ‘তাহলে পুরো দিনের এক চতুর্থাংশ সময় অর্থাৎ ৬ ঘণ্টা?’ তিনি বললেন, ‘আপনি যা ইচ্ছা করেন। তবে আরো বেশি সময়ব্যাপী করলে তা হবে আপনার জন্য খায়ের বরকত উনার কারণ।’ আমি বললাম, ‘তাহলে কি অর্ধেক সময় অর্থাৎ ১২ ঘণ্টা নির্ধারণ করে নিবো?’ তিনি বললেন, ‘তা আপনার ইচ্ছা। তবে যদি এর চেয়েও অধিক সময় নির্ধারণ করেন, তা হবে আপনার জন্য অধিক খায়ের বরকত উনার কারণ।’ আমি বললাম, ‘তাহলে কি দুই-তৃতীয়াংশ সময় অর্থাৎ ১৬ ঘণ্টা নিধারণ করবো?’ তিনি বললেন, ‘তা আপনার ইচ্ছা। তবে আরো অধিক সময়ব্যাপী করলে তা আপনার জন্য আরো অধিক খায়ের বরকত উনার কারণ হবে।’ আমি বললাম, তাহলে কি আমার জীবনের সম্পূর্ণ সময়টাই আপনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠের জন্য অর্থাৎ মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করার জন্য নির্ধারণ করবো?’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘যদি তা করতে পারেন, তাহলে আপনার সমস্ত মাকছুদ পূরা করা হবে এবং আপনার সমস্ত গুনাহখাতা ক্ষমা করা হবে।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ) সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর মহাপবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ মহাপবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ এমন মহাসম্মানিত ঈদণ্ড যার কেবল শুরুই আছে। যার কোনো শেষ নেই। যার কোনো বিরতি নেই। যা অনন্তকালের জন্য। পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম অনন্তকালের পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার তাজদীদ করেছেন, ধারণ করেছেন, বিচ্ছুরণ ঘটিয়েছেন, কুল-কায়িনাতবাসীকে বিতরণ করেছেন সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ!

(২)

প্রসঙ্গত, এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’- এ কালিমা শরীফ-এ বিশ্বাসী।

এদেশে দশ লাখ ঊর্ধ্ব মসজিদের ৫ ওয়াক্ত আযানে উচ্চ স্বরে দৈনিক দশবার করে অর্থাৎ কোটিবারেরও বেশি উচ্চারিত হয় ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত রসূল।’

এদেশের রাষ্ট্রদ্বীন হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্বীকৃত। কিন্তু কথা হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম মানে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্বীকার করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম পালনে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা করে? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলামী মূল্যবোধ উনার উজ্জীবন ঘটায়? রাষ্ট্রযন্ত্র কী পবিত্র দ্বীন ইসলাম বিরোধী আচার বন্ধে পদক্ষেপ নেয়?

বলাবাহুল্য, ৯৮ ভাগ মুসলমানের দেশ হিসেবে রাষ্ট্রদ্বীন ইসলাম উনার দেশ হিসেবে রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষে উপরোল্লিখিত জিজ্ঞাসার জবাব ‘হ্যাঁ বোধক’ হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো- রাষ্ট্রযন্ত্র তা করতে চরমভাবে ব্যর্থ। বরং উল্টোদিকে তার বল্গাহীন অগ্রযাত্রা। নাঊযুবিল্লাহ!

এজন্য ব্যক্তি মুসলমানও কম দায়ী নয়। ব্যক্তি মুসলমান প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাযের আযানে ও ইক্বামতে ২০বার করে শুনে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এবং বিতরসহ ৫ ওয়াক্ত নামাযের মধ্যে তাশাহুদে কমপক্ষে ১৭ বার সাক্ষ্য দেয়, “……ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” অর্থাৎ ব্যক্তি মুসলমান দৈনিক কমপক্ষে ৩৭বার সাক্ষ্য দেয়, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’ সুবহানাল্লাহ!

আর মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যা এনেছেন তা আঁকড়িয়ে ধরো এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাকো।” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)

বলাবাহুল্য, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রসূল হিসেবে কমপক্ষে ৩৭বার সাক্ষ্য দেবার পরও দেশের ৯৮ ভাগ মুসলমান ফরয-ওয়াজিব পালন থেকে দূরে থাকে কিভাবে? সুন্নত পালন থেকে গাফিল থাকে কীভাবে? হারাম-হালাল একাকার করে কী করে? বেপর্দা-বেহায়া-বেশরায় মশগুল হয় কী করে? তাহলে কীভাবে বিশবার ‘মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ কানে শোনা ও স্বীকৃতি দেয়া হয়? এবং বিতরসহ ৫ ওয়াক্ত নামাযে কমপক্ষে ১৭বার তাশাহুদে নিজ মুখে উচ্চারণ করা ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বলার অর্থ কিসে পরিণত হয়?

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি মহাসম্মানিত সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারীরূপে।” (পবিত্র সূরা ফাতহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৯)

প্রসঙ্গত জান্নাতের সুসংবাদ এবং জাহান্নামের ভয় এখানে উল্লেখ্য। বলাবাহুল্য, দেশের মুসলমান এখনও জান্নাত আশা করে জাহান্নামকে ভয় পায়। আর জান্নাত-জাহান্নামের আমল সম্পর্কেও তারা অজ্ঞাত নয়। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে জান্নাত-জাহান্নামের মূলত মালিক- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক মর্যাদা মূল্যায়ন, শান-মান অনুধাবন, আদেশ-নিষেধ পালন থেকে তারা কী করে পিছিয়ে থাকতে পারে?

কাজেই মুসলমানকে ‘মুসলমানিত্ব’ বুঝতে হবে। ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ হাক্বীক্বীভাবে বলতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে ও আমলে আনতে হবে।

মূলত, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথাযথ ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালনের দ্বারাই মুসলমান সে ঈমানী চেতনা ও প্রেরণা তথা কুওওয়াত বা নিয়ামত পাবে।

সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর, পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থাৎ পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সুমহান সম্মানার্থে সেসব নিয়ামত হাছিলই হোক আমাদের অন্তরের একান্ত আরজু। আমীন!

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়