খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন-
قل بفضل الله وبرحمته فبذالك فليفرحوا هو خيرما يجمعون
অর্থাৎ “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে পবিত্র দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সে জন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সবকিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাত উনার জন্য সঞ্চয় করে।” এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা কেন সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করা ফরয-ওয়াজিব হবে না? অবশ্যই তা ফরয ওয়াজিব সাব্যস্ত হবে। কেননা এই আয়াত শরীফ উনার মাঝেও আমরের ছীগাহ فليفرحوا এসেছে। অনুরূপভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- امنوا كما امن الناس তোমরা ঈমান আনয়ন কর যেমনিভাবে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঈমান এনেছেন। এ আয়াত শরীফ উনার দ্বারা বুঝা যাচ্ছে- হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মতো ঈমান আনা, আমল করা, উনাদের অনুসরণ করা ফরয। তাছাড়া নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عليكم بسنتى وسنة خلفاء الراشدين الـمهديين تـمسكوا بـها وعضوا عليها بالنواجذ.
অর্থ : “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও আমার খুলাফায়ে রাশিদীন (হিদায়েতপ্রাপ্ত ছাহাবায়ে কিরাম) রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সুন্নত পালন করা ফরয-ওয়াজিব। তোমরা তা মাড়ির দাঁত দিয়ে শক্তভাবে আঁকড়ে ধর।” (পবিত্র তিরমিযী শরীফ, পবিত্র আহমদ শরীফ, পবিত্র মিশকাত শরীফ, পবিত্র মিরকাত শরীফ)
আর অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اصحابى كالنجوم بايهم اقتديتم اهتديتم
অর্থ : “আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই তারকা সদৃশ। উনাদের যে কোন একজনকে অনুসরণ করলেই হিদায়েত প্রাপ্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, রযীন)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারাও প্রমানিত হয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মিয়ারে হক্ব। উনাদের অনুসরণ করা ফরয-ওয়াজিব।
এখন অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করেছেন। যেমন- “আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম” কিতাব উনার মাঝে এসেছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.
অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজগৃহে ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে সমবেত করে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাছবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত ও সালাম তথা) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى رضى الله تعالى عنه وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والـملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
অর্থ : “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলেছেন, এই সেই দিবস এই সেই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এই দিবসে ইহা সংঘটিত হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি)। এমন সময় নূরে মুজাসসাম রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন, নিশ্চয়ই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সমস্ত রহমতের দরজা আপনাদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যে কেউ আপনাদের মতো এরূপ কাজ করবে, আপনাদের মতো তারাও নাযাত (ফযীলত) লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এ প্রসঙ্গে আল্লামা হযরত শিহাবুদ্দীন ইবনে হাজার হাইছামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ কিতাব “আন নি’য়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম” উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
قال حضرت ابو بكر الصديق عليه السلام من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم كان رفيقى فى الجنة.
অর্থ : “হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠ অর্থাৎ মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে সে ব্যক্তি জান্নাতে আমার বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
وقال حضرت عمر عليه السلام من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم فقد احيا الاسلام.
অর্থ : “হযরত উমর ফারূক আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাহফিল উনাকে অর্থাৎ বিলাদত শরীফ দিবস উনাকে বিশেষ মর্যাদা দিলো সে মূলত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ!
وقال حضرت عثمان عليه السلام من أنفق درهما على قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم فكانـما شهد غزوة بدر وحنين.
অর্থ : “হযরত উছমান যিন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে এক দিরহাম খরচ করলো সে যেন বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ!
وقال حضرت على عليه السلام وكرم الله وجهه من عظم مولد النبى صلى الله عليه وسلم وكان سببا لقرائته لايخرج من الدنيا الا بالايـمان ويدخل الجنة بغير حساب.
অর্থ : “হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো সে ব্যক্তি অবশ্যই ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ পালন করেছেন অবশ্যই এবং পালন করার জন্য মানুষদেরকে উদ্বুদ্ধও করেছেন।
অতএব উপরোক্ত আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ ইত্যাদি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ‘সাইয়্যিদুল আইয়াদ শরীফ’ পালন করা ফরয।
-মাওলানা মুহম্মদ নাজমুল হুদা।