মুহিউদ্দীন লক্বব মুবারকের তাৎপর্য
একবার সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে ‘মুহিউদ্দীন’ লক্বব মুবারকের তাৎপর্য জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, আমি একবার এক দীর্ঘ সফর শেষ করে বাগদাদ শরীফে ফিরে আসছিলাম। পথে এক অসুস্থ লোকের দেখা হলো, যার চেহারা ছিল ফ্যাকাশে এবং শরীর ছিল শীর্ণকায়। সে আমাকে সালাম করলো। আমি ‘ওয়ালাইকুমুস সালাম’ বললাম। সে আমাকে তার কাছে ডাকলো। আমি কাছে গেলে সে বললো, দয়া করে আমার হাত ধরুন। আমি তার হাত ধরে তাকে উঠালাম। তৎক্ষণাত সে একজন খুব ছুরত এবং তরুন যুবকে পরিণত হলো। সে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি হলাম দ্বীন ইসলাম। আমি জীর্ণ-শীর্ণ এবং দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম। আল্লাহ পাক আপনার ওসীলায় আমাকে নতুন জীবন দান করেছেন। আজ থেকে আপনার লক্বব মুবারক মুহিউদ্দীন তথা দ্বীন যিন্দাকারী। যখন আমি জামে মসজিদে ফিরে আসলাম, তখন এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হলো। সে আমাকে “হে সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন’ বলে সম্বোধন করলো। নামায আদায় করার পর দেখলাম লোকেরা আদব সহকারে আমার সামনে দাঁড়িয়ে গেল। আমার হাত মুবারকে চুমু দিতে লাগলো। আর মুখে ‘ইয়া সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন’ বলতে লাগলো, অথচ ইতোপূর্বে কেউ আমাকে এ লক্ববে সম্বোধন করেনি। সুবহানাল্লাহ! (যুবদাতুল আছার-৫৫, নুজহাতুল খাতিরিল ফাতির ফী মানাকিবিশ শায়েখ আব্দিল কাদির-৪২)
যুগের গাউছ উনার প্রতি আদব প্রদর্শন
শাইখুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, সুলতানুল আরিফীন, মুবাহিসে আ’যম, হযরতুল আল্লামা মাওলানা রুহুল আমীন বশিরহাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
হযরত আবূ সাঈদ আব্দুল্লাহ তামিমী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৫৮০ হিজরীতে দামেস্কে বর্ণনা করেছিলেন, “আমি যুবক অবস্থায় ইলিম অর্জনের জন্য বাগদাদ শরীফ-এ উপস্থিত হয়েছিলাম। সে সময় নিজামিয়া মাদরাসাতে ইবনুছ সাক্কাহ নামে আমার একজন সহপাঠী ছিলেন। আমরা উভয়ে ইবাদত-বন্দেগী, যিকির-ফিকির করতাম। পাশাপাশি তথাকার বুযুর্গগণ উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করতাম। বাগদাদ শরীফ-এ সে সময় একজন গাউছ ছিলেন। তিনি অনেক সময়ে মানুষের চোখের আড়াল হয়ে যেতেন। একবার আমি, ইবনুছ ছাক্কা ও হযরত শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত গাউস উনার সাক্ষাত লাভের ইচ্ছায় বাড়ী থেকে বের হলাম। আমরা রাস্তা দিয়ে গমনকালে ইবনুছ ছাক্কাহ বললো, আমি উক্ত গাউস উনাকে এমন প্রশ্ন করবো যার উত্তর দিতে তিনি সক্ষম হবেন না। আমি বললাম, আমিও একটি প্রশ্ন করবো, দেখি তিনি কি উত্তর দেন। সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, নাঊযুবিল্লাহ, আমি যার দীদারে, বরকত লাভের আশা পোষণ করি, উনার সামনে উপস্থিত হয়ে কোন প্রশ্ন করতে পারবো না। আমরা উনার নিকটে উপস্থিত হয়ে উনার স্থানে উনাকে দেখতে পেলাম না। একটু পর উনাকে সেখানে বসা দেখতে পেলাম। তারপর তিনি ইবনুছ ছাক্কার দিকে অসন্তুষ্ট অবস্থায় তাকালেন এবং বললেন, হে ইবনুছ ছাক্কাহ, তোমার জন্য আফসোস, তুমি আমার নিকট এরূপ প্রশ্ন করবে, যার উত্তর দিতে আমি সক্ষম হবো না। তোমার সে প্রশ্ন এই, তার উত্তর এই। নিশ্চয়ই আমি দেখছি, কুফরীর আগুন তোমার মধ্যে প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে। এরপর তিনি আমার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন, হে আব্দুল্লাহ! তুমি আমার নিকট এরূপ একটি প্রশ্ন করবে, যার উত্তর আমি দিতে পারি কিনা তা তুমি দেখবে। তোমার প্রশ্ন এই, তার উত্তর এই। তুমি যে আমার সাথে বেয়াদিব করেছ সে কারণে দুনিয়া তোমার মাথা ঘিরে নিবে। তারপরে তিনি শায়খ হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। উনাকে বললেন, হে হযরত আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি যে আদব রক্ষা করেছেন সেজন্য আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা আপনার উপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন। আমি যেন আপনাকে দেখছি যে, আপনি কুরসির উপর আরোহন পূর্বক শ্রোতাদেরকে উপদেশ প্রদানকালে বলছেন, “আমার এ ক্বদম মুবারক প্রত্যেক ওলীআল্লাহ উনাদের গর্দানের উপর।” আমি আপনার সময়ের ওলীআল্লাহ উনাদেরকে দেখছি, আপনাকে সম্মান করার উদ্দেশ্যে উনারা নিজেদের গর্দান নত করছেন, তারপর উক্ত গাউছ অদৃশ্য হয়ে গেলেন। এরপর আমরা আর উনাকে দেখতে পাইনি।
তিনি হযরত শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে যা বলেছেন, পরিণামে তাই সংঘটিত হয়েছে। ইবনুছ ছাক্কা ইলমে ফিক্বাহ বা কিতাবী ইলিম শিক্ষা করে তাতে পরাদর্শী হয়েছিলো। তার সাথে বাহাছে কেউ বিজয় লাভ করতে পারেনি। তৎকালীন খলীফা তাকে উন্নত পদে সমাসীন করলেন এবং তাকে কনস্টান্টিনোপালের খ্রিস্টান রাজার নিকট দূতরূপে পাঠালেন। খ্রিস্টান রাজার চোখে সে অত্যন্ত সম্মানিত প্রতিপন্ন হলো। এক পর্যায়ে সে রাজ কন্যাকে দেখে বিমুগ্ধ হয়ে রাজার নিকট বিবাহের প্রস্তাব দিলো। রাজা তার খ্রিস্টান হওয়া ব্যতীত বিবাহে সম্মত হলো না। ইবনুছ ছাক্কাহ খ্রিস্টান হয়ে রাজ কন্যাকে বিবাহ করলো। আর সুলতান নুরুদ্দীন শাহী আবু ছাইদ আব্দুল্লাহকে দামেস্কে নিয়ে এসে ওয়াকফ সম্পত্তিগুলোর কর্তৃত্ব দিলেন। এতে সে তার কর্তত্ব ভার গ্রহণকরতঃ সম্পূর্ণরূপে দুনিয়াদারিতে লিপ্ত হয়ে গেল। নাঊযুবিল্লাহ! (নুযহাতুল খাতিবিল ফাতির ফী মানাকিবে শায়েখ আব্দুল কাদির-৬৬)
হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (২৫৪) ছবর উনার মাক্বাম এবং তা হাছিলের পন্থা-পদ্ধতি