–হযরত মাওলানা মুফতী সাইয়্যিদ মুহম্মদ আব্দুল হালীম
শিক্ষা জীবন:
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুসলিম সমাজের নিয়মানুসারে শৈশবকালে সর্বপ্রথম কুরআন শরীফ পাঠ আরম্ভের মাধ্যমেই শিক্ষা জীবন শুরু হয়। অতি শৈশবেই প্রথম কুরআন শরীফ পাঠ শিক্ষা করার পর জিলান নগরীর এক মক্তবে উনাকে ইলিম হাছিলের জন্য ভর্তি করে দেয়া হয়। অবশ্য তিনি এই মক্তবে ভর্তি হওয়ার পুর্ব থেকে ঘরে বসে উনার মাতার মুবারক মুখে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শুনে এর অনেকাংশই কণ্ঠস্থ করে ফেলেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম
উনার সাথী
আগ্রা নিবাসী আল্লামা মাওলানা মুহম্মদ ছাদেক আলী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রণীত একখানা জীবনী গ্রন্থে বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন এক বছর তখন উনাকে ইলিম হাছিলের উদ্দেশ্যে জিলান নগরীর একটি মক্তবে পাঠানো হলো। পথিমধ্যে জনৈক ফেরেশতা উনার সাথী হয়ে উনাকে নিয়ে মক্তবে উপস্থিত হলেন। মক্তবের প্রতিটি কক্ষে তলিবে ইলিম বা শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত ভীড়। কোথাও একজন ছাত্র বসারও কোন স্থান নেই। তখন সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথী মানুষরূপী ফেরেশতা আলাইহিস সালাম কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে আওয়াজ দিয়ে বললেন, “তোমরা উঠে জায়গা করে দাও। আল্লাহ পাক উনার ওলী এসেছেন। তিনি আসন গ্রহন করবেন।” এরূপ বাণী শুনে মক্তবের উস্তাদ-ছাত্র শিক্ষক সবাই আশ্চর্য হয়ে উঠলেন। ছাত্ররা উঠে তাড়াতাড়ি উনার জন্য জায়গা করে দিয়ে সকলে চাপাচাপি করে বসলো। এখান থেকেই শুরু হয় উনার জীবনের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক ইলিম হাছিলের কার্যক্রম।
“আখবারুল আখইয়ার” কিতাবে বর্ণিত আছে, একদিন তিনি জিজ্ঞাসিত হলেন- আপনি যে আল্লাহ পাক উনার মাহবূব ওলী, তা কিভাবে, কখন বুঝতে পেরেছিলেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমি বাড়ী থেকে মক্তবে যাওয়ার পথে ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামগণ উনারা আমার সাথী হতেন। উনারা আমার চারিদিক ঘিরে রাখতেন। যখন মক্তবে উপস্থিত হতাম তখন শুনতাম উনারা বালকদেরকে বলতেন- তোমরা আল্লাহ পাক উনার ওলীর জন্য জায়গা করে দাও।
একদিন আমি একজন লোককে দেখেছিলাম যাকে ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি। তিনি একজন ফেরেশতা উনাকে বললেন, ঐ বালক তিনি কে? আপনারা যার এত সম্মান করছেন? তখন ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, ইনি এমন একজন ওলীআল্লাহ যিনি শ্রেষ্ঠতম মাক্বামের অধিকারী হবেন। উনি বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা লাভ করবেন। আমি চল্লিশ বছর পর বিস্তারিতভাবে অবগত হয়েছিলাম যে, প্রশ্নকারী ব্যক্তি ছিলেন একজন আবদাল শ্রেণীর লোক।
কুরআন শরীফ হিফয
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মক্তর্বে ভর্তি করার সময় ওস্তাদগণ উনার সাথে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করলেন। অতঃপর উনাকে একান্ত প্রাথমিক স্তরের ছাত্র মনে করে শিক্ষক উনাকে তাঊজ-তাসমিয়া পড়ে শুনাতে বললেন। তিনি তাঊজ-তাসমিয়া পাঠ শেষে থামবেন, আবার ওস্তাদ দ্বিতীয় সবক প্রদান করবেন এটাই সাধারণ নিয়ম। কিন্তু ঘটে গেল অন্যরকম। সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রজীম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম পড়ে আর থামলেন না। তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এর প্রথম সূরা হতে মুখস্থ পাঠ করতে লাগলেন। ওস্তাদজী উনাকে মুখস্থ পাঠ করতে দেখে মনোযোগ দিয়ে শুনতে লাগলেন। বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি থামছিলেন না। তিনি নির্ভুলভাবে মধুর কণ্ঠে অনবরত পাঠ করে চললেন। ওস্তাদজী অবাক হয়ে উনার মধুর কণ্ঠের পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ শুনে চললেন। সময় চলে যেতে লাগলো। এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা এক পারা, দুই পারা তিন পারা এমনি করে আঠারো পারা পর্যন্ত পড়ে তিনি থেমে গেলেন।
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই অলৌকিক কাজ দেখে ওস্তাদজী সবিস্ময়ে বললেন, “প্রিয় শিশু! আপনি থামলেন কেন? আরও পাঠ করুন। আপনার তিলাওয়াত খুবই সুন্দর ও মধুর। শুনার আগ্রহ শুধু বাড়তেই থাকে। আমার শুনতে ইচ্ছা করছে। আপনি পড়ে যান।
বিনীত কণ্ঠে তিনি বললেন, “ওস্তাদজী! আমি এ পর্যন্ত মুখস্থ করেছি। আম্মার রেহেম শরীফ-এ থেকেই ১৮ পারা পর্যন্ত মুখস্থ করেছিলাম। এখন বাকী অংশ আপনার কাছে শিখব। ওস্তাদজী আরো বিস্ময় হয়ে উনাকে প্রশ্ন করলেন, এটা কি করে আপনি হিফয করলেন। সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হুযূর! আমার সম্মানিত মা পবিত্র কুরআন শরীফ-এর আঠারো পারার হাফিযা। আমি উনার রেহেম শরীফে থাকা অবস্থায় তিনি অধিকাংশ সময় তিলাওয়াত করতেন। আমি তা শুনতে পেতাম। এরূপ শুনে শুনে রেহেম শরীফ-এ থাকা অবস্থায় আমার এ পর্যন্ত মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। সুবহানাল্লাহ! বুযূর্গ ওস্তাদজী উনার মুখে এরূপ কথা শুনে অত্যন্ত খুশি হলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফ-এ হাত তুলে উনার জন্য দোয়া করলেন।