বিছাল শরীফ
পূর্ব প্রকাশিতের পর
ফিরে এসে তারা হযরত গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে জিজ্ঞেস করলেন। হে গাউসূল আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি কি কারণে আপনার এই অবস্থা এবং ইস্তিঞ্জা মুবারকের এই হাল? তখন গাউসুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার একটা পবিত্র আয়াত শরীফ। যেটা তিলাওয়াত করার কারণে আমার ভিতরের কলিজা-গুর্দা সব চূর্ণবিচূর্ণ ও তছনছ হয়ে গিয়েছে। যেগুলো ইস্তিঞ্জা মুবারকের রাস্তা দিয়ে রক্ত আকারে বের হয়ে যাচ্ছে। উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, কোন সে পবিত্র আয়াত শরীফ যা আপনার কলিজা-গুর্দা তছনছ করে দিয়েছে? গাউসুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا اتقوا الله حق تقته ولا تموتن الا وانتم مسلمون
অর্থঃ “হে ইমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ভয় করার মত ভয় কর। অর্থাৎ হাকীক্বীভাবে ভয় কর। তোমরা মারা যেওনা মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০২)
হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, এই পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করার পর আমার ভয় হচ্ছিল আমি প্রকৃত মুসলমান হতে পেরেছি কিনা। যেটা চিন্তা ফিকিরের কারণে আমার ভিতরের কলিজা, গুর্দা আর যা কিছু আছে সব তছনছ হয়ে রক্ত আকারে আমার ইস্তিঞ্জার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
বাহজাতুল আসরার নামক কিতাবে হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত গাউসুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৫৬০ হিজরীর পবিত্র রবিউল আউয়াল শরীফ মাস হতে কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। মাশারিকে আউলিয়া নামক কিতাবে শায়েখ আব্দুল ফতেহ্ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রবিবার দিবাগত রাতে অর্থাৎ সোমবার শরীফ রাতে গাউসুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গোসল করেন। গোসলান্তে ইশার নামায পড়ে তিনি উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গুনাহ্খাতা মাফ ও খাছ রহ্মতের জন্য দোয়া করলেন। এরপর গায়েব হতে আওয়াজ আসল-
يايتها النفس الـمطمئنة. ارجعى الى ربك راضية مرضية. فادخلى فى عبادى. وادخلى جنتى.
অর্থ: “হে প্রশান্ত নফ্স, আপনি প্রসন্ন ও সন্তুষ্টচিত্তে নিজ প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন করুন। আপনি আমার নেক্কার বান্দার মধ্যে শামিল হয়ে যান এবং বেহেশ্তে প্রবেশ করুন।” (পবিত্র সূরা আল ফজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
এরপর তিনি পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করে তাআজ্জাজা (অর্থ বিজয়ী হওয়া) উচ্চারণ করতে লাগলেন এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক, মহান আল্লাহ পাক, মহান আল্লাহ পাক বললেন। অতঃপর পর জিহ¡া মুবারক তালুর সাথে লেগে গেল। এভাবে ৫৬১ হিজরীর (১১১৬ ঈসায়ী) ১১ই রবিউস্সানী মাসে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত গাউসুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মহিউদ্দীন বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহান দরবার শরীফ-এ প্রত্যাবর্তন করলেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
হযরত গাউসুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্রমান্বয়ে চারটি বিবাহ করেছিলেন। উনাকে বিবাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে বিবাহ করেছেন। উনার মোট ৪৯ জন সন্তান সন্ততি ছিলেন। উনাদের মধ্যে ২৭ জন পুত্র সন্তান এবং ২২ জন মেয়ে সন্তান ছিলেন। উনারা সকলেই অতি উঁচু দরজার ওলীআল্লাহ্ ছিলেন।