(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এখন রোযা রেখেছেন ইফতার করবেন, ইফতারের সমস্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে বা বন্দোবস্তও করা হয়েছে। এমন সময় একজন ইয়াতীম এসে উনাদের বাড়ির দরজায় হাক দিলো যে, আমাকে দয়া করে কিছু খাদ্য দান করুন, আমি কয়েকদিন ধরে না খাওয়া রয়েছি।
যখন সে ইয়াতীম ছেলে হাক দিল তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি হযরত আসাদুল্লাহিল গালিব কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, আমরাতো গত রাতে সাহরী করেছি; এখন এই ইয়াতীম বলতেছে, সে কয়েকদিন ধরে না খাওয়া তাহলে আমাদের ইফতারীর যা ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটা আমরা তাকে দান করে দেই।
তখন উনারা সেটা দান করে দিলেন সেই ইয়াতীমকে। এরপর উনারা পানি দিয়ে ইফতার করলেন। সুবহানাল্লাহ! আবার সেই রাত্রিতে উনারা কিছু সাহরীর ব্যবস্থা করলেন, পরের দিন আবার ইফতারীর ব্যবস্থা করা হয়েছে, ইফতারী করবেন। ইফতারীর সময় নিকটবর্তী ঠিক সেই মুহূর্তে একজন মিসকীন এসে দরজায় হাক দিলো যে, আমি একজন মিসকীন আমাকে কিছু খাদ্য দান করুন, আমি কয়েকদিন ধরে না খাওয়া।
এটা শুনে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, হযরত আসাদুল্লাহিল গালিব কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে, আমরাতো গতরাতে খাওয়া-দাওয়া করেছি। এখন এই মিসকীন সেতো কয়েকদিন ধরে না খাওয়া, কাজেই আমাদের ইফতারগুলো তাকে দান করে দেই। উনারা সেটা দান করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা শুধু পানি দিয়ে ইফতার করলেন।
এরপর তৃতীয় দিন উনারা আবার রোযা রাখলেন; কিছু সাহরী করলেন। তৃতীয় দিন যখন উনারা আবার ইফতার করবেন; কিছু ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিক সেই মূহুর্তে একজন আসীর (বন্দি) সে এসে হাক দিলো। সে কয়েকদিন ধরে না খাওয়া। তাকে কিছু খাদ্য দিলে তার জন্য ভালো হত।
এটা শুনে আবার সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আবার একই কথা বললেন যে, আমরাতো কিছু খেয়েছি গত দিন। এখন এই আসীর বা বন্দি ব্যক্তি, সে তো কয়েক দিন ধরে না খাওয়া রয়েছে। কাজেই, আমরা আমাদের ইফতারী তাকে দান করে দেই। সত্যিই সেটা উনারা দান করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
উনাদের এই আমলে সন্তুষ্ট হয়ে যিনি খালিক্ব¡, যিনি মালিক, যিনি আল্লাহ পাক তিনি উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করলেন। সুবহানাল্লাহ!
উনাদের এই আমলে সন্তুষ্ট হয়ে যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব আল্লাহ পাক তিনি আয়াত শরীফ নাযিল করলেন-
ويطعمون الطعام على حبه مسكينا ويتيما واسيرا. انما نطعمكم لوجه الله لا نريد منكم جزاء ولا شكورا
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি আল্লাহ পাক তিনি আয়াত শরীফ নাযিল করেন উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যে উনারা কেমন, যাঁরা আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম তথা সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আমলগুলো আল্লাহ পাক তিনি কতটুকু পছন্দ করেন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত আসাদুল্লাহিল গালিব কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে, উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে নিজেরা খাদ্য না খেয়ে ইয়াতীম, মিসকীন, আসীর-বন্দী তাদেরকে দান করে দিয়েছেন শুধুমাত্র উনাদের রেযামন্দী, সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে। সুবহানাল্লাহ! এবং এর বিনিময়ে উনারা কিছুই চাচ্ছেন না। শুধু সন্তুষ্টি তলব করেছেন। বিষয়টা ঠিক এই রকমই। উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, ফযীলত বেমেছাল। যেটা হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سيدة نساء اهل الجنة حضرت فاطمة الزهراء عليها السلام بضعة منى فمن احبها فقد احبنى و من اغضبها اغضبنى
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
سيدة نساء اهل الجنة حضرت فاطمة الزهراء عليها السلام بضعة منى
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আমার গোশত মুবারক-এর এক টুকরা গোশত মুবারক। সুবহানাল্লাহ!
فمن احبها فقد احبنى
উনাকে যারা মুহব্বত করলো তারা আমাকেই মুহব্বত করলো। সুবহানাল্লাহ!
ومن اغضبها اغضبنى
আর উনার সাথে যারা বিদ্বেষ পোষণ করলো তারা আমার সাথেই বিদ্বেষ পোষণ করলো। নাউযুবিল্লাহ! উনাদের মর্যাদা, উনাদের ফযীলত, উনাদের যে খুছূছিয়ত, সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। উনাদেরকে কতটুকু মর্যাদা, ফযীলত, খুছূছিয়ত দেয়া হয়েছে। সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনারা সবসময়ই একদিক থেকে যিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দী সন্তুষ্টি তলব করতেন। ঠিক একইভাবে যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি উনারা তলব করতেন।
হাদীছ শরীফ এ বর্ণিত রয়েছে, একদিন স্বয়ং নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একখানা জামা মুবারক তৈরি করে হাদিয়া স্বরূপ পাঠালেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার কাছে। উনার কাছে যখন সেই জামা মুবারক পৌঁছানো হল ঠিক সেই মুহূর্তে একজন গরীব মহিলা এসে সাহায্য চাইলো যে, আমাকে দয়া করে একখানা জামা দান করুন। উনাদের বৈশিষ্ট্যগুলো, মর্যাদাগুলো, ফযীলতগুলো আল্লাহ পাক তিনি কিভাবে উম্মতদেরকে, বান্দাদেরকে, বান্দীদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন সেটা চিন্তা ফিকিরের বিষয়। উনার কাছে গরীব মহিলা এসে তলব করলো, আমাকে দয়া করে একটা জামা যদি দিতেন তাহলে আমার জন্য ভালো হতো। এখন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, উনার কাছে আগে এক জোড়া, এক সেট জামা ছিল। এখন আরেক সেট পৌঁছেছে নতুন, পুরাতনও রয়েছে। এখন তিনি কোনটা দান করবেন এই মহিলাকে; নতুনটা না পুরাতনটা? তিনি বললেন, যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব আল্লাহ পাক তিনি তো নাযিল করেছেন-
لن تنالوا البر حتى تنفقوا مما تحبون
তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত কোন নেকী ও সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের পছন্দনীয় বিষয়গুলো দান না করবে। সুবহানাল্লাহ! তোমাদের প্রিয় পছন্দনীয় বিষয়গুলো দান না করা পর্যন্ত নেকী হাছিল করতে পারবে না। এখন উম্মতদেরকে শিক্ষা দিতে হবে, তা’লীম দিতে হবে, নছীহত করতে হবে, উনারাই তো করবেন সেটা। তিনি কি করলেন, সেই নতুন জামা সেটা সেই গরীব মহিলাকে দান করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট তো সবসময় রয়েছেন, মাঝে মাঝে উনার সন্তুষ্টি কখনো কখনো তিনি প্রকাশ করেন। সেটা তিনি প্রকাশ করলেন। কি প্রকাশ করলেন? তৎক্ষনাৎ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে দিয়ে এক জোড়া জান্নাতী লিবাস নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে পেশ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো জানেন তারপরেও ইয়া রাসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যে জামা মুবারক হাদিয়া করেছিলেন সেটাতো সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনি অনেক পছন্দ করেছিলেন, মুহব্বত করেছিলেন। উনার অন্তর চাচ্ছিল না সেটা দিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু যেহেতু যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন পছন্দনীয় জিনিস দান করতে হবে সেজন্য তিনি সেটা দান করেছেন। এখন স্বয়ং যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট হয়ে উনাকে জান্নাত থেকে এক জোড়া লিবাস তিনি পাঠিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এই যে উনাদের মর্যাদা-মর্তবা, ফযীলত, খুছূছিয়ত এটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন এই দান খয়রাতের ব্যাপারে উনারা বেমেছাল ছিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শানে বলা হয়েছে তিনি এত দান খয়রাত করতেন, দ্রুতগ্রামী বাতাসের চাইতেও বেশি তিনি দ্রুতগতিতে দান খয়রাত করতেন। সুবহানাল্লাহ! তিনি তো উনার লখতে জিগার। উনার কলিজা মুবারক-এর টুকরা মুবারক। কাজেই উনি তো সেভাবেই করবেন।
(অসমাপ্ত)