যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, খ¦লীফাতুল্লাহ, খ¦লীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত, মুহইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, রসূলে নু’মা, সুলত্বানুল আরিফীন, সুলত্বানুল আউলিয়া ওয়াল মাশায়িখ, ইমামুল আইম্মাহ, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানুন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল, মাওলানা,
পূর্ব প্রকাশিতের পর
সে বুঝতে পারলো তার হালাকী, তার ধ্বংস। তখন সে ওয়াসওয়াসা দিলো যে, তোমরা এক কাজ করতে পারো। এই বনী ইসরায়ীল যারা রয়েছে তাদের বিভ্রান্ত করার জন্য যা বিরুদ্ধবাদী ও বাতিল ফিরকারা সবসময় প্রয়োগ করে থাকে, ইহুদী, নাছারা, মুসলমান উনাদের বিরুদ্ধে তাহলো শরাব এবং মহিলা। সে বললো, তোমরা সেগুলো প্রয়োগ করো। অর্থাৎ কিছু খারাপ মহিলা শরাবসহ ছেড়ে দাও। হয়তো সৈন্য সামন্ত যারা রয়েছে তারা সেইদিকে ঝুকে যাবে। তোমাদের পক্ষে জয়লাভ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এরপরে দেখা গেলো যদিও কিছু সৈন্য ঝুকে গেলো। সেখানে মহামারী দেখা দিলো। ৭০ হাজার লোক মারা গেলো। হযরত নবী এবং রসূল আলাইহিমাস সালাম উনারা কি করলেন, যারা জড়িত ছিলো তাদেরকে ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদ- দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রাখলেন। সবাই ইস্তিগফার তাওবা করলো শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল আলাইহিমাস সালাম উনার কামিয়াবী হাছিল করলেন। সেই মরদূদ দরবেশ বালয়াম বিন বাউরা তার শেষ পরিণতি হলো, সে মরদূদ হয়ে সে জাহান্নামী হয়ে গেলো। নাউযুবিল্লাহ! এক বর্ণনা। আরেক বর্ণনায় রয়েছে সে যখন বদদোয়া করবে না বারবার বলতেছিলো। সে বাদশার চাপের কারণে এবং তার স্ত্রীর ওয়াসওয়াসায় দুনিয়ার লোভে বিভ্রান্ত হয়ে, সে যেই গুহাতে সাধনা করতো সেখানে সে গেলো। যখন সে সেখানে গেলো তখন সে দেখতে পেলো, গুহার ভিতর থেকে দুটা বড় আকারের বাঘ বের হয়ে তাকে আক্রমন করার জন্য আসতেছে। এটা দেখে সে পালিয়ে গেলো সেখান থেকে। এসে জানালো বাদশার লোকদেরকে এবং তার স্ত্রীকে তার পক্ষে বদদোয়া করা সম্ভব নয়। কিন্তু এরপরও তারা তাকে তাকীদ করলো। তোমাকে অবশ্যই বদদোয়া করতেই হবে। নাউযুবিল্লাহ! আবারো সে আসলো। গুহায় দুটা বড় সাপ তাকে তাড়া করলো, সেখান থেকে এবারও সে পালিয়ে আসলো। এসে সে একই কথা বললো তার পক্ষে বদদোয়া করা সম্ভব নয়। কিন্তু বাদশা ও তার লোকজন এবং তার স্ত্রী যারা ছিলো তারা তাকে ওয়াসওয়াসা দিতে থাকলো এবং বাদশা আমীর উমরারা তাকে ঘুষ দিলো। যাতে সে হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমাস সালাম উনাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করে। একটা গাধায় চড়ে সে যাচ্ছিলো। গাধাটা থেমে গেলো। গাধাকে সে অনেক বেত্রাঘাত করলো। গাধার যবান খুলে গেলো। গাধা বললো, হে বালয়াম বিন বাউরা! তুমি সেখানে যেওনা। বদদোয়া করো না। তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন সে যখন ফিরে আসবে তখন ইবলীস মানুষের ছূরতে এসে বললো, হে বালয়াম বিন বাউরা দরবেশ! গাধা কি কখনও কথা বলতে পারে। গাধার ভিতরে শয়তান প্রবেশ করেছে, তোমাকে ওয়াসওয়াসা দিচ্ছে, তুমি ভালো কাজে যাচ্ছো। নাউযুবিল্লাহ! তাকে বুঝালো ইবলীস। অসুবিধার কি রয়েছে, তুমি দেশটা দখল করে এখানে তোমার যে তর্জ-তরীক্বা রয়েছে ও তুমি যে শরয়ী হুকুম-আহকাম, মুতাবিক চলো সেটা তুমি জারি করবে। কাজেই তুমি বাদশার পক্ষ হয়ে হযরত নবী রসূল আলাইহিমাস সালাম উনাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করো। নাউযুবিল্লাহ! এ সমস্ত ওয়াসওয়াসা বাদশাও দিয়েছে, আমীর উমরারাও দিয়েছে। যে, বিদেশী হযরত নবী রসূল আলাইহিমাস সালাম উনারা আসবেন, দেশ দখল করবেন, কি প্রয়োজন রয়েছে। হে দরবেশ! তুমি এদেশে খোদায়ী আইন-কানুন জারি করবে। নাউযুবিল্লাহ! শেষ পর্যন্ত ওয়াসওয়াসায় পড়ে সে বদদোয়া করলো। নাউযুবিল্লাহ!
দেখা গেলো মুসলমান যারা সৈন্য রয়েছেন অর্থাৎ হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইউশা বিন নূন আলাইহিস সালাম উনাদের যারা সৈন্য সামন্ত ছিলেন উনারা দেখলেন যুদ্ধের পরিস্থিতি মনে হচ্ছে ঘুরে যাচ্ছে তখন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম তিনি সিজদায় গিয়ে বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! এটা আপনার কি কুদরত? মহান আল্লাহ পাক তিনি জানালেন, এখানে এক দরবেশ রয়েছে তার দোয়া আমি কবুল করে থাকি। মহান আল্লাহ পাক উনার নবী এবং রসূল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আয় মহান আল্লাহ পাক! আপনি তার সমস্ত নিয়ামত যা তার রয়েছে, তা ছলব করে নিন এবং তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা করুন। তাই হলো। মহান আল্লাহ পাক উনার নবী এবং রসূল আলাইহিমাস সালাম উনারা কামিয়াবী হাছিল করলেন। বাদশাকে, দরবেশকে গ্রেফতার করা হলো। উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হলো। এই বালয়াম বিন বাউরা যখন ধরা পড়লো, সে তখন তওবা করতে চাইলো। কিন্তু তার তওবাতো কবুলযোগ্য নয়। কি হলো শেষ পর্যন্ত। তাকে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী এবং রসূল আলাইহিস সালাম তিনি জানালেন, তোমাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি তিনটা সুযোগ দিয়েছেন তোমার তিনটা দোয়া কবুল করা হবে, তুমি যা চাও সেটাই তুমি পাবে। এখন তিনটা দোয়ায় তুমি যেটাই চাবে সেটাই পাবে। এখন মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নততো তার উপর পড়ে গেছে। সে হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমাস সালাম উনাদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করেছে, গইরুল্লাহ’র মুহতাজ সে হয়ে গেছে এবং ফাসিক-ফুজ্জার, কাফির-মুশরিক রাজা বাদশাদের সে তাবে হয়ে গেছে। তার স্ত্রীর কথায় সে দুনিয়ামুখী হয়েছে। দুনিয়ার মোহে সে লালায়িত হয়েছে। উলামায়ে সূদের যতগুলি বদ খাছলত সব তার মধ্যে জারি হয়ে গেছে। তখন তার স্ত্রী তার কাছে চেয়েছিলো, সে যেন তার জন্য দোয়া করে যাতে সে খুবছূরত হয়। যেহেতু তার উপর লা’নত পড়ে গিয়েছে তাই সে সেটাই করলো। যখন সে সেটা করলো তখন তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে গেলো। তখন সে গোসসা করে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে আরেকটা বদদোয়া করলো তার চেহারা যেনো কুকুরের মত হয়ে যায় এবং তাই হলো। শেষ পর্যন্ত জনগণ ধরলো যে, তুমি এটা কি করলে? তাকে স্বাভাবিক করে দাও। আরেকটা দোয়া দিয়ে সে তাকে স্বাভাবিক করলো। তার তিনটা প্রাপ্যই যা ছিলো তা শেষ হয়ে গেলো। সে মারদূদ হয়ে গেলো আকৃতি-বিকৃতি হয়ে গেলো এবং সে অবস্থায় সে মারা গেলো। নাউযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি সেটাই বলেন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে –
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِى آتَيْنَاهُ اياتنا
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি তাদেরকে জানিয়ে দিন ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে, যাকে আমি নিয়ামত দিয়েছিলাম, নিদর্শন দিয়েছিলাম। সেটা কি হলো –
فَانسَلَخَ مِنْهَا
মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বলেন, সে ব্যক্তি সে নিয়ামত থেকে বের হয়ে গেলো। সেটা সে রক্ষা করতে পারলো না। সেটা রক্ষা করতে না পারার কারণে কি হলো-
فَاتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ
শয়তান তার পিছনে লেগে গেলো শয়তান তাকে বিভ্রান্ত করলো, সে গোমরাহদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো। নাউযুবিল্লাহ! এটাই হচ্ছে উলামায়ে সূদের একটা বৈশিষ্ট্য।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حضرت ابِى هُرَيْرَةَ رضى الله تعالى عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللّهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللّهِ عَزَّ وَجَلَّ لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِى رِيحَهَا.
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا
যে ইলিম শিক্ষা করলো-
مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللّهِ عَزَّ وَجَلَّ لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا
মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি ইলিম শিখলো, যে ইলিম উনার দ্বারা উদ্দেশ্য ছিলো মহান আল্লাহ পাক উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল করা। সে কিন্তু সেটা করলোনা। সে দুনিয়া হাছিল করতে চাইলো। তার ফলে কি হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. يَعْنِى رِيحَهَا.
যে ইলিম উনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাছিল করার কথা ছিলো, সেই ইলিম দ্বারা সে দুনিয়া হাছিল করার চেষ্টা করলো, যার ফলশ্রুতিতে সে এমন এক পর্যায় গিয়ে পৌঁছলো, এমন জাহান্নামী সে হলো, যে জাহান্নামী হওয়ার কারণে সেতো জান্নাতে যাওয়ার প্রশ্নই হয়না বরং এই জান্নাতের ঘ্রান ৫শ’ বছরের রাস্তা দূর থেকে পাওয়া যাবে। এতো ঘ্রান জান্নাতের। কেউ যদি জান্নাত থেকে ৫শ’ বছরের রাস্তা দূর দিয়েও যায়। যেমন যমীন থেকে আসমান সেই আসমানেও যদি জান্নাত থাকে আর সেই যমীনে কেউ যদি যায় তাহলে সে জান্নাতের ঘ্রান পাবে। কিন্তু এই উলামায়ে সূ এরা কিন্তু জান্নাতের ঘ্রানও পাবে না। নাউযূবিল্লাহ! (অসমাপ্ত)