সুওয়াল ও জাওয়াব

সংখ্যা: ২১২তম সংখ্যা | বিভাগ:

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত æমীলাদ শরীফ-ক্বিয়াম শরীফ” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, হাটহাজারী মুখপত্র মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, æবর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়।” …

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, বর্তমানে প্রচলিত যে মীলাদ শরীফ দেখা যায়, সে সম্পর্কে তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসা সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণ উনাদের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধ মত। যা ইতঃপূর্বে আমাদের æমাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খণ্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর æমাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভীদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ। এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বারবার ‘মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ’ সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, æবর্তমানে প্রচলিত মীলাদের মধ্যে এমন কিছু দিক বা ধারা রয়েছে যেগুলো শরীয়ত মনোনীত নয়।” …

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়’ বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফ-এ ‘বর্তমানে প্রচলিত মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে কোন দিক বা কোন ধারাগুলোকে শরীয়ত মনোনীত নয়’ বলা হয়েছে, তা হাটহাজারী মৌলভীরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি। সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নিম্নে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস এবং বুযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-

স্মরণীয় যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ-এর মূল উদ্দেশ্য হলো আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত করা ও উনার বিলাদত শরীফ সম্পর্কে আলোচনা করা এবং উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা।

যেমন- মীলাদ শরীফ-এর প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। কেননা, কোনো নেক কাজ কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু করা রহমত, বরকত, সাকীনা তথা মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি লাভের কারণ। সেহেতু প্রথমেই পবিত্র কালামে পাক হতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ফযীলত সম্বলিত আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করা হয়। যাতে স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই মীলাদ শরীফ বা ছানা-ছিফত বর্ণনা করা হয়েছে।

অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত পাঠ করা হয়। কারণ ছলাত পাঠ করা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই নির্দেশ।

তাছাড়া আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করে থাকি তা খোদ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যামানাতেই ছিল। যার প্রমাণ হাদীছ শরীফ থেকে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

আর হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকেও æমীলাদ শরীফ”-এর প্রমাণ রয়েছে। শুধু তাই নয়, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা স্বয়ং নিজেরাই æমীলাদ শরীফ”-এর তাগিদ করেছেন ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন। যা ‘আন নি’মাতুল কুবরা’ কিতাবে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। (চলবে)

 

মুহম্মদ আলাউদ্দীন

সদর, চাঁদপুর

 

সুওয়াল: মাহিউদ্দীন তার মাসিক পত্রিকার সেপ্টেম্বর, জুন, জুলাই-২০১১ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মাটির তৈরী প্রমাণ করতে গিয়ে যেসব বক্তব্য ও যুক্তি দিয়েছে নি¤েœ তা উল্লেখ করা হলো।

১। নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের তৈরী একথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও নেই।

২। কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী।

৩। সমস্ত নবীগণই হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সন্তান। তিনি যেহেতু মাটির তৈরী, তার সন্তানেরা কি করে নূরের তৈরী হতে পারে?

৪। কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াতে নূর শব্দ দ্বারা কুরআন শরীফ ও হেদায়েতের আলোকে বুঝানো হয়েছে। রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নয়।

৫। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রক্তে গোশতের গঠনে (মাটির) মানুষ ছিলেন বলে উনার শরীর মুবাক থেকে তায়েফ ও উহুদে রক্ত মুবারক ঝড়েছে। নূরের হলে রক্ত মুবারক ঝড়ার প্রশ্নই আসতো না।

মাহিউদ্দীনের উল্লিখিত বক্তব্যসমূহের সঠিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: মাটির তৈরী সম্পর্কে মাহিউদ্দীনের দ্বিতীয় বক্তব্য হচ্ছে-

২। কুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী সম্পর্কিত মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য ভুল, দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরী। কারণ æকুরআন শরীফ-এর যে সকল আয়াত শরীফ-এ  বলা হয়েছে মানুষ মাটির তৈরী সে সকল আয়াত শরীফ-এর আলোচ্য বা লক্ষ হলেন æহযরত আদম আলাইহিস সালাম।” কেননা শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।

যেমন, কুরআন শরীফ-এ্র মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

فانا خلقناكم من تراب ثم من نطفة ثم من علقة ثم من مضغة مخلقة وغير مخلقة لنبين لكم

অর্থ: æ(হে লোক সকল! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দীহান হও, তবে (ভেবে দেখ) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর নুৎফা থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে এরপর পূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতি বিশিষ্ট গোস্ত পিন্ড থেকে। তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে।” (সূরায়ে হজ্জ: আয়াত শরীফ ৫)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত خلقناكم শব্দ দ্বারা মুলত শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে ফক্বীহুল আছর, প্রখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা আবুল লাইছ সামারকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ æতাফসীরে সামারকান্দী” কিতাব-এর  ২য় খণ্ডের , ৩৮০ পৃষ্ঠায় লিখেন-

(فانا خلقناكم …) اى خلقنا اباكم الذى هو اصل البشر يعنى حضرت ادم عليه السلام (من تراب)

অর্থ: æ(আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ তোমাদের পিতা যিনি মানবজাতীর মূল অর্থাৎ æহযরত আদম আলাইহিস সালাম” উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।

ইমামুল মুফাস্সিরীন, আল্লামা ইমাম কুরতুবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ æতাফসীরে কুরতুবী”- কিতাব-এর  ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৬ পৃষ্ঠায় লিখেন-

فانا خلقناكم من تراب) يعنى حضرت ادم عليه السلام من تراب.

অর্থ: (নিঃসন্দেহে আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি) অর্থাৎ আমি æহযরত আদম আলাইহিস সালাম” উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি।”

কুরআন শরীফ-এ্রর সূরা রুম-এর ২০নং আয়াত শরীফ-এ্র মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

ان خلقناكم من تراب ثم اذا انتم بشر تنتشرون.

অর্থ: æউনার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, তিনি মাটি থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। এখন তোমরা মানুষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে।”

উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত خلقناكم শব্দ দ্বারা মুলত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে,

যেমন, এ প্রসঙ্গে আল্লামা আবুল লাইছ সমরকান্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তিনি æতাফসীরে সামারকান্দী” কিতাব- এর ৩য় খণ্ডের, ৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,

(ان خلقناكم من تراب  …) يعنى خلق حضرت ادم عليه السلام من تراب وانتم ولده (ثم اذا انتم) ذريته من بعده (بشر تنتشرون) يعنى تبسطون.

অর্থ: æ(তিনি মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থাৎ æহযরত আদম আলাইহিস সালাম” উনাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। আর তোমরা হলে উনার সন্তান উনার পরে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছো।”

কুরআন শরীফ-এ্রর সূরা ফাতির-এর ১১নং আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

والله خلقكم من تراب ثم من نطفة ثم جعلكم ازواجا.

অর্থ: æমহান আল্লাহ্ পাক তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর নুৎফা থেকে, তারপর করেছেন তোমাদেরকে যুগল।”

উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এ বর্ণিত خلقكم শব্দ দ্বারা মুলত হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে,

যেমন, এ প্রসঙ্গে আল্লামা ছাহেবে খাযেন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি æতাফসীরে খাযেন” কিতাব-এর ৩য় খণ্ড, ৪৯৬ পৃষ্ঠায় লিখেন-

والله خلقكم من تراب يعنى حضرت ادم عليه السلام.

অর্থ: æ(মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন) অর্থ æহযরত আদম আলাইহিস সালাম” উনাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।

উপরোক্ত বিশ্ববিখ্যাত æতাফসীর গ্রন্থ” সমূহের দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, æকুরআন শরীফ-এর যে সকল আয়াত শরীফ-এ  বলা হয়েছে মানুষ মাটির তৈরী সে সকল আয়াত শরীফ-এর আলোচ্য বা লক্ষ্য হলেন, æহযরত আদম আলাইহিস সালাম।” কারণ শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই মহান আল্লাহ পাক সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সরাসরি মাটি থেকে তৈরী নন, বরং মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে তৈরী।

কাজেই, মাসিক মদীনা পত্রিকার সম্পাদক মাহিউদ্দীন যে বলেছে, æকুরআন শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাটির তৈরী” তার এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা, দলীলবিহীন ও তাফসীর বির রায় হওয়ার কারণে কুফরী বলেই প্রমাণিত হলো।

 

খন্দকার মুহম্মদ ফিরোজ আল মুজাহিদ

খন্দকার পাড়া, সূত্রাপুর, বগুড়া।

 

সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাযির-নাযির জানাটাকে কেউ কেউ শিরক মনে করে? এ ব্যাপারে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানতে ইচ্ছুক?

জাওয়াব: কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বত্র হাযির ও নাযির। বুখারী ও মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

انما انا قاسم والله يعطى

অর্থ: æআল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (উক্ত হাদিয়া) বণ্টনকারী।”

অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল-মাখলূক্বাতের যাকে যতটুকু নিয়ামত ইচ্ছা তাকে ততটুকু বণ্টন করে দিয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

এখন যিনি কুল-মাখলূক্বাতের জন্য নিয়ামতের বণ্টনকারী তিনি যদি কুল-মাখলূক্বাতের কাছে হাযির বা উপস্থিত না থাকেন এবং তাদেরকে নাযির বা দেখে না থাকেন তাহলে তিনি তাদের মাঝে কিভাবে নিয়ামত বণ্টন করবেন? কাজেই, কায়িনাতের সমস্ত সৃষ্টির জন্য তিনি যেহেতু নিয়ামতের বণ্টনকারী সেহেতু বলার অপেক্ষা রাখে না তিনি সবখানেই হাযির ও নাযির।

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির বা উপস্থিত ও সবকিছু নাযির বা প্রত্যক্ষকারী। এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত নঈম ইবনে উমর রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে একখানা হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

ان الله قد رفع لى الدنيا فانا انظر اليها والى ما هو كائن فيها الى يوم القيامة كانما انظر الى كفى هذه.

অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি এই পৃথিবীকে আমার চোখের সামনে এরূপভাবে রেখেছেন যে, আমি এ সমগ্র পৃথিবীকে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তার মধ্যে যা কিছু সৃজিত বা সংঘটিত হবে তদসমূহকে ওইরূপভাবে দেখি যেরূপ আমার হাত মুবারক-এর তালু মুবারককে দেখে থাকি। সুবহানাল্লাহ! (তবারানী, মিশকাত)

উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক তিনি জিসিম ও ছূরত এ দুটির কোনো একটি হিসেবে হাযির ও নাযির নন। বরং তিনি ছিফত-অর্থাৎ ইলম ও কুদরতের দ্বারা এবং ছিফত- মিছালী ছূরত মুবারক হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির।

আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিফত-ইলম ও মু’জিযা দ্বারা এবং ছিফত- নূর ও রহমত হিসেবে কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির। আর উনার যেহেতু জিসিম ও ছূরত মুবারক রয়েছে সেহেতু তিনি যে জিসিম মুবারক-এ রওযা শরীফ-এ অবস্থান করছেন উনার ইখতিয়ার ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি সেই জিসিম মুবারক নিয়ে কোথাও হাযির হবেন না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামা‘আতের মুজতাহিদ ইমামগণ উনারা এ বিষয়ে একমত যে, তিনি ওই জিসিম মুবারক নিয়ে রওযা শরীফ থেকে উঠলে ক্বিয়ামত হয়ে যাবে। তাই তিনি উক্ত জিসিম মুবারক-এর অনুরূপ জিসিম ও ছূরত মুবারক ধারণ করে এবং মিছালী ছূরত মুবারক-এ কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির থাকেন, যে কারণে উনার আশিকগণ উনাকে স্বপ্নে, মুরাক্বাবা-মুশাহাদার হালতে এমনকি জাগ্রত অবস্থার মধ্যেও দেখে থাকেন এবং কথোপকথনও করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

প্রতিভাত হলো, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কায়িনাতের সমস্ত স্থানে হাযির ও নাযির।

মুহম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান (রুসেল)

আজমপুর, পলাশবাড়ি, গাইবান্ধা

 

সুওয়াল: আমরা জেনে আসছি, আমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরের সৃষ্টি। উনার নূর মুবারকই সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয় এবং সেই নূর মুবারক হতেই সবকিছুর সৃষ্টি হয়েছে।

কিন্তু ইদানীংকালে কিছু কিছু মৌলভী ছাহেব বলে যে, ‘তিনি নাকি মাটির সৃষ্টি। আবার কেউ কেউ বলে যে, মাটি ও নূর উভয়টির দ্বারা তিনি সৃষ্টি হয়েছেন।’ আসলে কোনটি সঠিক?

জাওয়াব:  আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘নূরের তৈরি’ হিসেবে অস্বীকার করা বা মাটির তৈরি বলা এবং নূর ও মাটি দ্বারা  তৈরি বলা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ ও অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ অস্বীকার করার নামান্তর। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা, অসংখ্য আয়াত শরীফ ও ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র নূরের তৈরি। সেজন্য বলা হয়, তিনি নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ তিনি আপাদমস্তক নূর। মাটির কোন অস্তিত্বই উনার মধ্যে নেই।

যেমন মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক-এ ‘রসূল উনাকে’ নূর বলে উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক æসূরা মায়িদা”-এর ১৫ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন-

قد جاءكم من الله نور.

অর্থ: æনিশ্চয় তোমাদের নিকট আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে ‘নূর’ এসেছেন।”

উল্লেখ্য, এ আয়াত শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক æনূর” শব্দ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝিয়েছেন, যেহেতু তিনি আপাদমস্তক æনূর বা নূরের তৈরি।”

আর æমুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন, উক্ত ‘নূর’ হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।”

যেমন ক্বাজিউল কুজাত হযরত ইমাম আবূ সউদ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইমাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মশহুর তাফসীর æতাফসীরে আবী সউদ”-এর ৩য় জিলদ ১৮ পৃষ্ঠায় লিখেন-

(قد جاءكم من الله نور.) … المراد بالنور هو الرسول صلى الله عليه وسلم

অর্থ: বর্ণিত আয়াত শরীফ-এর প্রথম শব্দ অর্থাৎ নূর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- æসাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম।”

এছাড়া স্বয়ং আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নিজেই নিজেকে নূরের তৈরি বলে উল্লেখ করেছেন বলে অসংখ্য হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে। যেমন, হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انت بابى انت وامى اخبرنى عن اول شىء خلق الله تعالى قبل الاشياء قال يا جابر رضى الله تعالى عنه ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك.

অর্থ: æহযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেন? তিনি বললেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আল্লাহ পাক সবকিছুর পূর্বে আপনার নবীর নূর মুবারককে সৃষ্টি করেন।” মুসনাদে আব্দির রয্যাক, দালায়িলুন নুবুওওয়াত, মাদারিজুন নুবুওওয়াত ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রথম সৃষ্টিই হচ্ছেন উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক। আর সে নূর মুবারক থেকেই মাটিসহ সবকিছুর সৃষ্টি হয়। তাহলে উনাকে মাটির সৃষ্টি বলা কিভাবে শুদ্ধ হতে পারে?

কাজেই, কুরআন শরীফ-এ বাশার, ইনসান বা মানুষ মাটির তৈরি বলতে একমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। আর অপর কাউকে নয়। যেমন আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন-

واذ قال ربك للملئكة انى خالق بشرا من طين

অর্থ: æযখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করবো মাটি দ্বারা।” (সূরা ছোয়াদ: আয়াত শরীফ ৭১)

æতাফসীরে সামারকান্দী”-এর ৩য় জিঃ, ১৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

(انى خالق بشرا من طين) يعنى ادم عليه السلام.

অর্থ: æ(নিশ্চয়ই আমি সৃষ্টি করবো বাশার মাটি থেকে) অর্থাৎ হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে।”

মূলত কুরআন শরীফ-এর যতো আয়াত শরীফ-এ ‘মানুষকে’ মাটির তৈরি বলা হয়েছে সে সকল আয়াত শরীফ-এ উল্লিখিত ‘মানুষ’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো æহযরত আদম আলাইহিস সালাম।” কারণ শুধুমাত্র হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকেই আল্লাহ পাক তিনি সরাসরি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীত আর কেউই মাটি থেকে তৈরি নন।

অতএব, প্রত্যেক মুসলমানকে এ আক্বীদাই রাখতে হবে যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম অর্থাৎ নূরের তৈরি, মাটির তৈরি নন। অথবা নূর ও মাটি মিশ্রিতও নন। উনাকে মাটির বা মাটি ও নূরের তৈরি বলা সুস্পষ্ট গুমরাহী ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

(বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ফতওয়া বিভাগ æ৬০তম থেকে ৮২তম” সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ২৪১টি কুরআন-সুন্নাহর দলীলসহ বিস্তারিত ফতওয়া প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ৯৪তম ও ১৬২তম সংখ্যার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ দেখুন।)

মুসাম্মত জান্নাত আক্তার

পলাশ, নরসিংদী।

 

সুওয়াল: কেউ কেউ সূরা হামীম সাজদাহ-এর ৬ নম্বর আয়াত শরীফ-

قل انما انا بشر مثلكم يوحى الى

আয়াত শরীফকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্যান্য মানুষের মতো বলতে চায়। তাদের বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা অন্যান্য মানুষের মতো বলতে চায় তারা মূলত আশাদ্দুদ দরজার জাহিল ও পথভ্রষ্ট। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অন্যান্য মানুষের মতো মনে করা সুস্পষ্ট কুফরীর শামিল। মূলতঃ যারা কাফির কেবল তারাই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তাদের মতো মানুষ বলে মনে করতো।

যেমন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওম এবং আদ ও ছামূদ গোত্রের লোকেরা নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে বে-আদবী করতে গিয়ে বলেছিলো-

ان انتم الا بشر مثلنا

অর্থাৎ আপনারা তো আমাদের মতোই বাশার (মানুষ)। (সূরা ইব্রাহীম: আয়াত শরীফ ১০)

একইভাবে ফিরআউনের লোকেরা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ও হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনাদের ব্যাপারে বলেছিলো

انؤمن لبشرين مثلنا

অর্থাৎ আমরা কি আমাদের মতোই দু’জন বাশার তথা মানুষ উনাদের উপর ঈমান আনবো। (সূরা মু’মিনূন: আয়াত শরীফ ৪৭)

কাফির সর্দাররা হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনাকে বলেছিলো-

ما نراك الا بشرا مثلنا

অর্থাৎ আমরা তো আপনাকে আমাদের মতোই (বাশার) মানুষ দেখতে পাচ্ছি। (সূরা হুদ-২৭)

হযরত ছালিহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাফিররা বলেছিলো-

ما انت الا بشر مثلنا

অর্থাৎ আপনি তো আমাদের মতোই মানুষ। (সূরা শুয়ারা: আয়াত শরীফ ১৫৪)

হযরত হূদ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে কাফিরেরা বলেছিলো-

ما هذا الا بشر مثلكم ياكل مما تاكلون منه ويشرب مما تشربون

অর্থাৎ এই লোকটি তিনি তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। তোমরা যা আহার করো, তিনিও তা আহার করেন এবং তোমরা যা পান করো তিনিও তা পান করেন। (সূরা মু’মিনূন: আয়াত শরীফ ৩৩)

এমনকি যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কেও কাফিরেরা বলেছিলো-

هل هذا الا بشر مثلكم افتاتون السحر وانتم تبصرون.

অর্থ: æইনি তো তোমাদের মতো ‘বাশার’ ব্যতীত কেউ নন। তা সত্ত্বেও কি তোমরা দেখে শুনে জাদুর শিকার হবে।” (সূরা আম্বিয়া: আয়াত শরীফ ৩)

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে তারা আরো বলতো-

مال هذا الرسول ياكل الطعام ويمشى فى الاسواق

অর্থ: æইনি কেমন রসূল যিনি খাদ্য খান এবং বাজারে যান।” (সূরা ফুরকান: আয়াত শরীফ ৭)

মক্কার কাফির ওলীদ বিন মুগীরা সে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে বলেছিলো-

ان هذا الا قول البشر

অর্থাৎ, ইহা তো মানুষের কথা ছাড়া আর কিছু নয়। (সূরা মুদ্দাছ্ছির: আয়াত শরীফ ২৫)

কাজেই, উল্লিখিত আয়াতে কারীমাসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নিজের মতো মানুষ বলা কাফিরদের অন্যতম একটি স্বভাব।

মূলত কাদিয়ানীরা যেমন  خاتم النبين এর মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করে থাকে তদ্রƒপ বাতিল আক্বীদা ও ফিরক্বার লোকেরা সূরা হামীম সাজদার আয়াত শরীফ-

قل انما انا بشر مثلكم يوحى الى

এর মনগড়া অর্থ ও ব্যাখ্যা করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তাদের মতো মানুষ বলে থাকে। নাউযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে আয়াত শরীফ-এর সঠিক অর্থ ও মর্ম হলো- æহে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি ওই মুশরিকদের বলে দিন যে, আমি তোমাদের মেছাল (মত) একজন মানুষ, (হাক্বীক্বত আমি একজন রসূল) আমার নিকট ওহী এসে থাকে।

আয়াত শরীফ-এ কি আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনাকে আমাদের মতো বলা হয়েছে? মোটেও নয়। কারণ উক্ত আয়াতের মধ্যেই

يوحى الى

অর্থাৎ ‘আমার নিকট ওহী এসে থাকে’ এ বাক্যটি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সকল মানুষ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। যেহেতু অন্যান্য মানুষের নিকট ওহী আসে না।

উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে حيوان ‘হাইওয়ান’ বা প্রাণী বলতে মানুষকেও বুঝায় এবং অন্যান্য জীব-জন্তুকেও বুঝায়। তবে কি কেউ একথা বলবে যে, গরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা ইত্যাদিও আমাদের মতো ‘হাইওয়ান’।

মূলত মানুষ হাইওয়ান বটে কিন্তু গরু-ছাগল, ঘোড়া-গাধা প্রভৃতি হাইওয়ানের মতো নয়। কেননা মানুষ হলো ‘হাইওয়ানে নাতিক’ অর্থাৎ বাকশক্তিসম্পন্ন জীব। মানুষ বিবেক, জ্ঞান ও বাক শক্তির অধিকারী। যেরূপ এ নাতিক বা ‘বাকশক্তি সম্পন্ন’ শব্দটি মানুষকে অন্যান্য জীব-জন্তু হতে পৃথক করে দিয়েছে তদ্রু يوحى الى (আমার নিকট ওহী এসে থাকে) বাক্যটি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সাধারণ মানুষ থেকে পৃথক করে দিয়েছে।

বুখারী ও মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ‘ইহসান’ সম্পর্কে জানতে চাইলে তার উত্তরে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন-

ان تعبد الله كانك تراه فان لم تكن تراه فانه يراك

অর্থাৎ ইহসান হলো: æএমনভাবে আল্লাহ পাক উনার ইবাদত করো অর্থাৎ মুসলমানের প্রতিটি মুহূর্তই যেহেতু ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত সেহেতু প্রতিটি মুহূর্ত এমনভাবে অতিবাহিত করো যেনো তুমি আল্লাহ পাক উনাকে দেখছো, যদি দেখতে না পাও তাহলে ধারণা করো যে তিনি তোমাকে দেখছেন।”

এ হাদীছ শরীফ থেকে মুহাদ্দিছীনে কিরাম ইহসানের দুটি স্তর বর্ণনা করেছেন। এক. বান্দা আল্লাহ পাক উনাকে দেখে দেখে ইবাদত করবে। দুই. বান্দাকে আল্লাহ পাক দেখছেন এ ধারণা করে বান্দা ইবাদত করবে। এ দু’অবস্থা ব্যতীত ইবাদত করা হলে সে ইবাদত আল্লাহ পাক উনার নিকট কবূল যোগ্য হবেনা।

এ হাদীছ শরীফ প্রমাণ করছে, বান্দা যমীনে আল্লাহ পাক উনাকে দেখবে। এখন কিভাবে দেখবে সে বর্ণনা অন্য হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে এবং ইমাম-মুজতাহিদ-আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিতাবাদিতে উনারা সেটা বর্ণনা করেছেন। আর তাহলো- মিছালী ছূরত মুবারক-এর বর্ণনা। কারণ আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, যমীনে আল্লাহ পাক উনাকে হাক্বীক্বী ছূরত মুবারক-এ কেউই দেখবে না। মিছালী ছূরত মুবারক-এ দেখতে পাওয়া বহু বর্ণনার মধ্যে একটি বর্ণনা হলো বাশারী ছূরত মুবারক-এ দেখা।

এখন আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী বাশারী ছূরত মুবারকে দেখে কী একথা বলা শুদ্ধ হবে যে, আল্লাহ পাক তিনি মানুষের মতো? নাঊযুবিল্লাহ!

যদি আল্লাহ পাক উনাকে মিছালী বাশারী ছূরত মুবারক-এ দেখে মানুষের মতো বলা শুদ্ধ না হয় তাহলে আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মিছালী বাশার ছূরত বা আকৃতি মুবারক-এর কারণে অন্যান্য মানুষের মতো বলা শুদ্ধ হবে কি করে?

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির পর থেকে যমীনে আগমণের পূর্ব পর্যন্ত শুধুমাত্র নূর মুবারক-এর ছূরত বা আকৃতি মুবারক-এ ছিলেন। আর ফেরেশতারাও নূরের দ্বারা সৃষ্টি। তাই বলে কি কোন ফেরেশতা কখনও একথা বলেছেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাঁদের মতো? বললে কি সে কথা শুদ্ধ হতো? অবশ্যই না। তাহলে বাশারী ছূরত মুবারক-এর কারণে তিনি অন্য মানুষের মতো হন কি করে?

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের তেইশ বছর যিন্দিগী মুবারক-এ হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি চব্বিশ হাজার বার সাক্ষাৎ করেছেন। এরমধ্যে তিনি অনেক সময় ছাহাবী হযরত দাহইয়াতুল ক্বলবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মুবারক ছূরত বা আকৃতিতে সাক্ষাৎ করেছেন। আর তাই সূরা মারইয়াম-এর ১৭ নম্বর আয়াত শরীফ-এ আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার মানব আকৃতি ধারণ করার কথা উল্লেখ করেছেন। এই আয়াত শরীফেও ‘বাশার’ বা মানব শব্দটি আছে। এখন বাশার ছিফতের অধিকারী হওয়ার কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যারা তাদের মতো সাধারণ মানুষ বলছে, তারা তাহলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে সাধারণ মানুষের মতো বলছে না কেন?

একইভাবে জিনেরাও মানুষের ছূরত ধারণ করে চলাফেরা করে, মানুষের সাথে সাক্ষাৎ করে সেজন্য তাদেরকে কি মানুষ বলা শুদ্ধ হবে? কস্মিনকালেও নয়।

উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে কটূক্তি করে যারা বলছে যে, তিনি নাকি তাদের মতোই সাধারণ মানুষ। নাঊযুবিল্লাহ! যারা এরূপ জঘন্য উক্তি করছে তারা কি কখনও তাদের দলে আমীর, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতকে কুকুরের দাঁতের মতো বলবে? যদিও কুকুরের দাঁত তাদের আমীর, মুরুব্বী, উস্তাদ ও পিতা-মাতার দাঁতের চেয়েও শক্ত।

আরো উল্লেখ্য, জগৎ বিখ্যাত নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাব এরাও তো মানুষ, তাহলে মাঝে মাঝে ওইসব কুলাঙ্গাররা নিজেদের বড়ত্ব প্রকাশ করার জন্য বলুক যে, সে এবং তাদের আমীর ও মুরুব্বী গং নমরূদ, সাদ্দাদ, কারূন, ফিরআউন, আবূ জাহিল, আবূ লাহাবের মতোই।

উপরন্তু ‘মিছলু’ বা ‘মতো’ শব্দটির জন্য সবকিছুকেই যদি একাকার করতে হয় তাহলে পৃথিবীটা তো কমলা লেবুর মতোই গোলাকার। ফলে তারা নিজেদের ঘরের দেয়াল চাটুক আর বলুক যে তারা কমলা লেবু খাচ্ছে। কারণ, তাদের ঘরটাতো পৃথিবীর ভিতরেই। আল্লাহ পাক কত চমৎকারইনা বলেছেন-

من اتخذ الهه هواه واضله الله على علم وختم على سمعه وقلبه وجعل على بصره غشاوه

অর্থ: æযে ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিকে স্বীয় উপাস্য স্থির করে নেয়, আল্লাহ পাক তিনি জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দেন এবং তার চোখের উপর আবরণ বা পর্দা রেখে দেন।” অর্থাৎ সে নফসের পায়রবী করার কারণে পথভ্রষ্ট হয়ে যায় অতঃপর তার কান ও অন্তরে মহর পড়ে যায় এবং চোখে পর্দা পড়ে যায়।

ফলে, এদের পক্ষে হক্ব জানা, বুঝা, অনুধাবন করা এবং তা মানা ও গ্রহণ করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

মুহম্মদ মিজানুর রহমান

বাবুরহাট, চাঁদপুর

সুওয়াল: কারো কারো আক্বীদা হচ্ছে আল্লাহ পাক ব্যতীত আর কেউই ইলমে গইবের অধিকারী নন। এমনকি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও নাকি ইলমে গইব সম্পর্কে অবহিত নন। নাঊযুবিল্লাহ! এ সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার শানে কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

وهو بكل شىء عليم

অর্থ: তিনি সবকিছু সম্বন্ধে জ্ঞাত।” (সূরা হাদীদ, আয়াত শরীফ-৩)

এ আয়াত শরীফ-এর পরিপূর্ণ মিছদাক্ব আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব যিনি কুল মাখলূক্বাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!

আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার মুবারক জাত ও ছিফাত এবং সমস্ত যাহির ও বাতিনের ইলম এবং মাখলূক্বের আউয়াল ও আখিরের সব ইলম উনার কাছেই জমা করা হয়েছে। এ মর্মে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

اعطيت بحوامع الكلم

অর্থাৎ- আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলম হাদিয়া করা হয়েছে।” (মুসলিম শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

انما انا قاسم والله يعطى

অর্থ:  আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (উক্ত হাদিয়া) বণ্টনকারী।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন। আর হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল মাখলূক্বাতের যাকে যতটুকু বা যে পরিমাণ ইচ্ছা তাকে সে পরিমাণ বণ্টন করে দিয়ে থাকেন।

এখন যিনি কুল-মাখলূক্বাতের জন্য বণ্টনকারী তিনি মূলত সৃষ্টির শুরু হতে সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত বণ্টনকারী। আর বণ্টনকারী যাদের মাঝে বণ্টন করবেন তাদেরকে অবশ্যই চিনেন ও জানেন। অন্যথায় না চিনলে ও না জানলে কাকে কতটুকু বা কি পরিমাণ দিবেন? কাজেই বলার অপেক্ষা রাখেনা, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে বাতিন বা ইলমে গইবসহ সমস্ত ইলমের অধিকারী।

উল্লেখ্য, লওহে মাহফূয সম্পর্কে বলা হয়, সৃষ্টির শুরু হতে যা কিছু হয়েছে, হচ্ছে ও হবে সবকিছু সেখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে বলতে হয়, লওহে মাহফূয সৃষ্টি হয়েছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওজুদ পাক নূর মুবারক-এর অংশ হতে। আর লওহে মাহফূয যেহেতু সৃষ্টিরাজির মধ্যে একটি সৃষ্টি সেহেতু তারমধ্যে সংরক্ষিত নিয়ামত তথা ইলমেরও বণ্টনকারী হলেন নূরে  মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

অর্থাৎ আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার ইলমের একটা অংশ রাখা হয়েছে লওহে মাহফূযে যেই ইলম মাখলূক্বাত সম্পর্কিত এবং মাখলূক্বাতের জন্য বণ্টিত। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু মাখলুক্বাতের সর্বপ্রকার নিয়ামতের বণ্টনকারী সেহেতু তিনি মাখলুক্বাতের অবস্থা সম্পর্কিত ও তাদের জন্য বণ্টিত লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত সমস্ত ইলমেরও অধিকারী।

মূলকথা হলো, লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত ইলম যেরূপ আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা উনার ইলমের একটা অংশ একইভাবে সে ইলম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও ইলমের অংশ বিশেষ। সুবহানাল্লাহ!

মনে রাখতে হবে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিপূর্ণরূপে গইবের ইলম বণ্টনকারী। উনার মধ্যেমেই বান্দা ও উম্মত গইবের ইলম জেনেছে, বুঝেছে ও লাভ করেছে। সুবহানাল্লাহ! কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

عالم الغيب فلا يظهر على غيبه احدا الا من ارتضى من رسول

অর্থ: æআল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি আলিমুল গইব। তিনি উনার গইবের ইলম উনার মনোনীত রসূল আলাইহিমুস সালাম ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশ করেন না।” (সূরা জিন : আয়াত শরীফ-২৬, ২৭)

প্রতিভাত হলো, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই ইলমে গইবের অধিকারী। আর উনারা এই নিয়ামতের অধিকারী হয়েছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বণ্টনের ওসীলায়।

মুহম্মদ যুফার আলী

ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

সুওয়াল: কেউ কেউ বলে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলো না, আবার কেউ কেউ বলে, উনার ছায়া মুবারক ছিলো। কোনটি সঠিক?

জাওয়াব: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিল না। এটাই সঠিক।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিছ আল্লামা হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার æনাওয়াদিরুল উছূল” কিতাবে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, হযরত হাকীম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি æনাওয়াদিরুল উছূল” কিতাবে হযরত যাকওয়ান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন, æনিশ্চয়ই সূর্য ও চাঁদের আলোতেও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক দেখা যেত না।”

ইমামুল মুহাদ্দিছীন, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনার æখাছায়িছুল কুবরা” নামক কিতাবে উক্ত হাদীছ শরীফখানা উল্লেখ করে এ মতের সমর্থন করেন।

বাহ্রুল উলূম, শায়খুল মাশায়িখ, হযরতুল আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার æশিফাউছ ছুদূর” কিতাবে লিখেছেন, æনিশ্চয়ই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম উনার ছায়া মুবারক যমীনে পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন নূর। অতঃপর যখন তিনি সূর্য অথবা চাঁদের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার ছায়া মুবারক দৃষ্টিগোচর হতো না।”

বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার, হাফিযুল হাদীছ, আওলাদে রাসূল, হযরতুল আল্লামা ইমাম যুরকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার æশরহে মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া শরীফ” কিতাবে বর্ণনা করেছেন- æচাঁদ ও সূর্যের আলোতেও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক দৃষ্টিগোচর হতো না। কেননা তিনি নূর ছিলেন।”

ইমামুল আল্লাম, জালালু মিল্লাত ওয়াদ্ দীন, আল্লামা হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার æআলমু’জামুল লাবীব ফী খাছায়িছিল হাবীব” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিতাব-এর দ্বিতীয় বাবের চতুর্থ অধ্যায়ে লিখেছেন- æহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক যমীনে পড়তো না। চাঁদ ও সূর্যের আলোতেও উনার ছায়া মুবারক দেখা যেতনা।”

হযরতুল আল্লামা ইবনে সাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু সম্পূর্ণ নূর ছিলেন সেহেতু উনার ছায়া মুবারক ছিল না।

হযরত ইমাম রযীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, æঅবশ্যই হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর সমস্ত কিছুকে ছাড়িয়ে যেত।”

ইমামুল জালীল, মুহাদ্দিছুশ্ শাহীর, ফক্বীহুল আছার, আল্লামা ইমাম ক্বাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার æশিফা শরীফ” কিতাবে লিখেছেন- æহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দেহ মুবারক-এর ছায়া মুবারক সূর্য ও চাঁদের আলোতেও পড়তো না। কেননা তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নূর।”

বিখ্যাত বুযুর্গ, ওলীয়ে কামিল, হযরত ইমাম ইবনে হাজার মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি æআফদ্বালুল কুরা” কিতাবে উল্লেখ করেন, æনিশ্চয়ই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূর ছিলেন। নিশ্চয়ই তিনি যখন চাঁদ ও সূর্যের আলোতে হাঁটতেন তখন উনার ছায়া মুবারক প্রকাশ পেতো না।”

বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা শিহাবুদ্দীন খাফ্ফাজী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি æনাসীমুর রিয়াদ্ব” নামক কিতাবে লিখেন, æসাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াতের প্রমাণের মধ্যে এটাও একটি প্রমাণ যে, উনার শরীর মুবারকের ছায়া ছিলো না। যখন তিনি সূর্য ও চন্দ্রের আলোতে হাঁটতেন তখনও উনার ছায়া মুবারক পড়তো না। কেননা তিনি (আপাদমস্তক) নূর।”

কিতাবুল ওয়াফা-এর লিখক হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, æসাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক ছিলো না। উনার নূরের উজ্জ্বলতা সূর্য ও বাতির আলোর উপর প্রাধান্য লাভ করতো।”

ক্বাইয়ূমে আউয়াল, আফদ্বালুল আওলিয়া, শায়খ আহমদ ফারূক্বী সিরহিন্দী হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জগদ্বিখ্যাত কিতাব æমাকতুবাত শরীফ”-এর ৩য় জিলদ্ ১৫৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, æমহান আল্লাহ পাক উনার কি করে ছায়া পড়তে পারে? ছায়া তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তবে কি উনার কোন মিছাল রয়েছে? তবে কি তিনি কামালে লাতাফাত-এর অধিকারী নন? দেখুন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘কামালে লাতাফাত’-এর অধিকারী হওয়ার কারণে উনার দেহ মুবারক-এর ছায়া পড়তো না।”

হাদীছ শরীফ এবং অনুসরণীয় ইমাম, মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নির্ভরযোগ্য উল্লিখিত ক্বওল শরীফ-এর দ্বারা প্রতিভাত হলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরাণী দেহ মুবারক-এর ছায়া ছিল না।

মুসাম্মত শিলা আক্তার

সাভার, ঢাকা।

সুওয়াল: আমরা জানি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৪০ বৎসর বয়স মুবারক-এ নুবুওওয়াত লাভ করেছেন। কিন্তু আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় দেখলাম, তিনি নবী-রসূল হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু হতেই তিনি নবী ও রসুল। এ বিষয়ে দলীলভিত্তিক জাওয়াব জানতে ইচ্ছুক।

জাওয়াব: হাদীছে কুদছীতে ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-

كنت كنزا مخفيا فاحببت ان اعرف فخلقت الخلق لاعرف

অর্থ: æআমি গুপ্ত ভাণ্ডার ছিলাম। যখন আমার মুহব্বত হলো যে, আমি প্রকাশিত হই, তখনই আমি সৃষ্টি করলাম আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে।” (আল মাক্বাছিদুল হাসানা ৮৩৮, কাশফুল খিফা-২০১৩, তমীযুত্তীব-১০৪৫, আসরারুল মারফুয়া-৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ, আদ্দুরারুল মুন্তছিরা-৩৩০, আত্তাযকিরা ফি আহাদীছিল মুশতাহিরা)

অন্য হাদীছ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

اول ما خلق الله نورى وخلق كل شىء من نورى

অর্থ: æআল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকেই সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেছেন।” (নূরে মুহম্মদী, আল ইনসানুল কামিল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী)

হাদীছ শরীফ-এ আরো বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت اول النبين فى الخلق واخرهم فى البعث.

অর্থ: æহযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম নবী হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে।” (তাফসীরে বাগবী ৫/২৩২, দুররে মানছূর ৫/১৮৪, শিফা ১/৪৬৬, মানাহিলুচ্ছফা ৫/৩৬, কানযুল উম্মাল ৩১৯১৬, দাইলামী ৪৮৫০) মিরকাত ১১/৫৮)

আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اول شىء خلق الله القلم من نور واحد.

অর্থ: æহযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন একখানা নূর মুবারক (ইহাই নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে।” (ইবনে আবি হাতিম ১-৯, আহমদ ৫-২১৭১, আত্ তয়ালিস ৫৭৭, তিরমিযী ২-২৩, দাইলামী-২)

এ সম্পর্কে অন্য হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন প্রথম মানব, প্রথম নবী ও প্রথম রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে প্রেরণ করেন, তখন তিনি দুইশ থেকে তিনশত বছর যাবৎ দোয়া ও কান্নাকাটি করার পর বলেন-

يا رب اغفرلى بحق محمد صلى الله عليه وسلم قال الله تعالى يا ادم عليه السلام كيف عرفت محمدا صلى الله عليه وسلم قال لانك لما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك رفعت راسى فرايت على قوائم العرش مكتوبا لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم فعلمت انك لم تضف الى اسمك الا احب الخلق اليك قال الله تعالى صدقت يا ادم لولا محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم ما خلقتك.

অর্থ: æআয় আল্লাহ পাক! আপনার হাবীব হুযূর পাক্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওসীলায় আমার দোয়া কবুল করুন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, হে হযরত আদম আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনলেন? উত্তরে হযরত আদম আলাইহিস সালাম বলেন, আয় আল্লাহ পাক! আপনি যখন আমাকে কুদরতী হাত মুবারক-এ তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ মুবারক ফুঁকে দিলেন, তখন আমি মাথা উত্তোলন করে দেখলাম আপনার আরশে মুয়াল্লার স্তম্ভে লিখা রয়েছে-

لا اله الا الله محمد رسول الله صلى الله عليه وسلم

তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আপনার নাম মুবারক-এর সাথে যাঁর নাম মুবারক লিখা রয়েছে, তিনিই আপনার সবচেয়ে বেশি খাছ ও প্রিয় বান্দা হবেন। তাই আমি উনার ওসীলা দিয়ে আপনার নিকট দোয়া চেয়েছি।

তখন আল্লাহ পাক তিনি হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বলেন, æআপনি সত্যই বলেছেন। যদি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি না করতাম তবে আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” (আল্ মুস্তাদারক লিল হাকিম, আছ ছহীহাহ্, মুখতাছারুল মুস্তাদরাক, আত্ তাওয়াস্সুল, আদ্ দুররুল মানছূর, কানযুল উম্মাল)

عن ميسرة الفجر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نبيا وادم بين الروح والجسد.

অর্থ: æহযরত মাইসারাতুল ফজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, আমি তখনো নবী ছিলাম যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম রূহ ও শরীরে ছিলেন।” (তারীখে বুখারী, আহমদ, আলহাবী, ইত্তেহাফুচ্ছাদাত, তাযকিরাতুল মাউজুয়াত, কানযুল উম্মাল, দাইলামী, ত্ববরানী, আবু নঈম, মিশকাত, মিরকাত ১১/৫৮)

হাদীছ শরীফ-এ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

كنت نبيا وادم بين الـماء والطين

অর্থ: আমি তখনো নবী ছিলাম, যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি পানি ও মাটিতে ছিলেন। (মিশকাত, মিরকাত ১১/৫৮)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قلت يا رسول الله بابى انت وامى اخبرنى عن اول شىء خلق الله تعالى قبل الاشياء قال يا جابر ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك

অর্থ: æহযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হয়ে যাক, আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সবকিছুর পূর্বে আপনার নবী উনার নূর মুবারককে সৃষ্টি করেছেন।”

প্রখ্যাত ও মশহুর তাফসীরকারক আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মশহুর ও বিখ্যাত æতাফসীরে রুহুল বয়ানে” একখানা হাদীছ শরীফ উল্লেখ করেন-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه انه عليه الصلاة والسلام سال جبريل عليه السلام فقال يا جبريل كم عمرك من السنين فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لست اعلم غير ان فى الحجاب الرابع نجما يطلع فى كل سبعين الف سنة مرة رايته اثنين وسبعين الف مرة فقال يا جبريل عليه السلام وعزة ربى انا ذلك الكوكب.

অর্থ: æহযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন কথা প্রসঙ্গে হযরত জিবরায়ীল আলাইহিস সালাম উনার বয়স সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, জবাবে হযরত জিবরায়ীল আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি শুধু এতটুকু জানি যে, চতুর্থ আকাশে একটি নূরানী তারকা ৭০ হাজার বৎসর পরপর একবার উদয় হতো, আমি সে তারকাটি ৭২ হাজার বার উদয় হতে দেখেছি। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমিই সেই নূরানী তারকা।” অর্থাৎ ঐ তারকাটিই হলেন, নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।

উপরোক্ত হাদীছ শরীফ-এর আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন খাতামুন নাবিইয়ীন হুযুুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমগ্র কায়িনাত সৃষ্টির পূর্বে নবী ও রসূল হিসাবে সৃষ্টি হয়েছেন।

অর্থাৎ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব। আর তিনিই আল্লাহ পাক উনার সর্বপ্রথম সৃষ্টি।

তবে চল্লিশ বৎসর দুনিয়াবী বয়স মুবারক-এ আনুষ্ঠানিকভাবে নুবুওওয়াত ও রিসালত প্রকাশ করা হয়েছে বা তিনি যে আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব সেটা আনুষ্ঠানিকভাবে কুল কায়িনাতকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

 

মুহম্মদ মুঈনুল ইসলাম

মানিকনগর, ঢাকা

 

সুওয়াল: কেউ কেউ বলে থাকে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিন্দিগী মুবারক দু’ভাগে বিভক্ত। ১. ব্যক্তিগত যিন্দিগী, ২. নুবুওওয়াতী যিন্দিগী। তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানাবেন।

জাওয়াব: আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে তিনি ইরশাদ করেন-

وما محمد الا رسول

অর্থ: æহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক উনার রসূল ব্যতীত কিছু নন।” (সূরা আলে ইমরান: আয়াত শরীফ ১৪৪)

তিনি আরো ইরশাদ করেন-

وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى

অর্থ: æহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওহী ব্যতীত নিজের থেকে কোন কথা বলেননি।” (সূরা নজম: আয়াত শরীফ ৩, ৪)

স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

الا وانا حبيب الله

অর্থ: সাবধান হয়ে যাও, আমি হলাম আল্লাহ পাক উনার হাবীব।” (তিরমিযী, দারিমী, মিশকাত)

অর্থাৎ আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আল্লাহ পাক উনার নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন। আর তিনি সম্পূর্ণরূপে ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

কাজেই যিনি নবী, রসূল ও হাবীব হিসেবে সৃষ্টি হয়েছেন এবং উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাহলে উনার সম্পর্কে একথা কি করে বলা যেতে পারে যে, উনার ব্যক্তিগত যিন্দিগী রয়েছে? নাঊযুবিল্লাহ!

প্রকৃতপক্ষে উনার সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই নুবুওওয়াতী, রিসালতী ও হাবীবী যিন্দিগী মুবারক। সুবহানাল্লাহ!

কোন নবী কিংবা রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী রয়েছে এ প্রকারের প্রশ্ন করা ও আক্বীদা পোষণ করা উভয়টাই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

কারণ, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের স্বপ্নও ওহীর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তার মানে উনারা ঘুমের মধ্যেও নবী-রসূল হিসেবেই থাকেন ব্যক্তি হিসেবে নয়। আর সজাগ অবস্থায় অর্থাৎ চলা-ফেরা, উঠা-বসা, খাওয়া-দাওয়া, আলাপ-আলোচনা, ওয়ায-নছীহত ইত্যাদি সর্বাবস্থায় তো অবশ্যই উনারা নবী ও রসূল হিসেবে অবস্থান করেন। তাই সর্বাবস্থায়ই উনাদের প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে। এমনকি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিছানা মুবারক-এ থাকা অবস্থায়ও উনার প্রতি ওহী নাযিল হয়েছে।

তাহলে এটা কি করে বলা যেতে পারে যে, নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী রয়েছে?

আরো উল্লেখ্য, যদি বলা হয় কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনার ব্যক্তিগত যিন্দিগী রয়েছে, তাহলে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি কখন নবী হিসেবে থাকেন আর কখন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে থাকেন? অর্থাৎ তিনি কত সময় ব্যাপী নবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আর কত সময়ব্যাপী ব্যক্তি হিসেবে ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করেন? তা কস্মিনকালেও প্রমাণ করা সম্ভব নয়।

কারণ, আমরা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণ পাই যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের প্রতি চব্বিশ ঘন্টাই ওহী নাযিল হয়েছে। এমনকি স্বপ্নেও উনাদের প্রতি ওহী নাযিল হতো ও হয়েছে। যার কারণে নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের স্বপ্নও ওহীর অন্তর্ভুক্ত। এর বহু প্রমাণ রয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

قال يبنى انى ارى فى المنام انى اذبحك

অর্থ: æহযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে আমার ছেলে (হযরত ঈসমাঈল আলাইহিস সালাম!) নিশ্চয়ই আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে যবেহ (কুরাবানী) করছি।” (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১০২)

অতঃপর হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম উনার ছেলে হযরত ঈসমাইল আলাইহিস সালাম উনাকে মিনা বাজারে শোয়ায়ে কুরবানী করার উদ্দেশ্যে গলা মুবারক-এ ছুরি চালাচ্ছিলেন। তখন আল্লাহ পাক পুনরায় নাযিল করলেন-

قد صدقت الرؤيا.

অর্থ: নিশ্চয়ই আপনি আপনার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছেন।” (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১০৫)

অতএব, প্রমাণিত হলো যে, কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের ব্যক্তিগত যিন্দিগী বলতে কোন যিন্দিগীই ছিলনা। উনাদের সম্পূর্ণ যিন্দিগী মুবারকই ছিলো নুবুওওয়াতী ও রিসালতী যিন্দিগী মুবারক। সুতরাং ব্যক্তিগত যিন্দিগী ছিলো বলে মত পোষণ করা ও বিশ্বাস করা উভয়টাই কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

মুহম্মদ সামছুল হুদা

কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

সুওয়াল: খারিজী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত একটি অখ্যাত মাসিক পত্রিকায় লিখেছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার রেহেম শরীফ থেকে আমাদের ন্যায় স্বাভাবিকভাবে দুনিয়াতে তাশরীফ এনেছেন।

উক্ত পত্রিকার বক্তব্য কতটুকু সঠিক তা জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: না, উক্ত পত্রিকার উত্তর মোটেও শুদ্ধ হয়নি। তা সম্পূর্ণরূপে ভুল, মনগড়া, দলীলবিহীন ও অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ উনাদের গ্রহণযোগ্য ফতওয়ার খিলাফ হয়েছে এবং শান এর খিলাফ হওয়ার কারণে কাট্টা কুফরী হয়েছে।

মূলত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাধারণ মানুষের ন্যায় মায়ের রেহেম শরীফ থেকে পৃথিবীতে তাশরীফ আনেননি। শুধু তাই নয় নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কেউই সাধারণ মানুষের মতো ভূমিষ্ট হননি। কারণ হলো, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে আল্লাহ পাক খাছ বা বিশেষভাবে মনোনীত করেই সৃষ্টি করেছেন।

এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

الله يجتبى اليه من يشاء

অর্থ: æমহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে চান উনাকে খাছভাবে মনোনিত করেন। অর্থাৎ নবী-রসূলরূপে মনোনীত করেন।” (সূরা শূরা: আয়াত শরীফ ১৩)

উল্লেখ্য, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে খাছভাবে মনোনীত এবং মহান আল্লাহ পাক উনার বার্তা বা ওহীর ধারক ও বাহক সেহেতু আল্লাহ পাক উনাদের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন। অর্থাৎ উনাদের বিষয়গুলো আর অন্য সব মানুষের বিষয়গুলো একরকম নয়। উনাদের চলা-ফেরা, আচার-ব্যবহার, কথা-বার্তা, আহার-নিদ্রা ইত্যাদি সবকিছুই অন্য মানুষ হতে ব্যতিক্রম। আর ব্যতিক্রম হবেইনা বা কেন, যেহেতু উনারা সার্বিক ও পরিপূর্ণরূপে ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।

কাজেই, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যমীনে আগমন করেছেন। উনাদের যমীনে আগমন আর অন্যান্য মানুষের যমীনে আগমনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। অন্যান্য মানুষ সাধারণত স্বাভাবিক পথেই ভূমিষ্ট বা জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনারা কেউই স্বাভাবিক পথে যমীনে আগমন করেননি। বরং বিশেষ পথে যমীনে আগমন করেন।

যেমন এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রয়েছে-

كل مولود غير الانبياء يولد من الفرج وكل الانبياء غير نبينا مولود من فوق الفرج وتحت السرة.

অর্থ: নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনারা ব্যতীত সমস্ত মানুষই স্বাভাবিক পথেই আগমন করেন। আর সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা স্বাভাবিক পথের উপর ও নাভি মুবারক-এর নিচ থেকে বিলাদত শরীফ লাভ করেন। (উমদাতুন নুকুল ফী কাইফিয়াতে ওয়ালাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

যেখানে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যমীনে আগমনের বিষয়টি সাধারণ মানুষের মত নয় সেখানে যিনি নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টি তো আরো ঊর্ধ্বের আরো স্বতন্ত্র। তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই উনার যমীনে আগমন বা তাশরীফ নেয়া সম্পর্কে কিতাবে যে নির্ভরযোগ্য মতটি বর্ণিত রয়েছে তাহলো-

واما نبينا صلى الله عليه وسلم فمولود من الخاصرة اليسرى تحت الضلوع.

অর্থ: আমাদের নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিতা আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম-উনার বাম পার্শ্বের পাঁজর মুবারক-এর নিচ থেকে বিলাদত শরীফ লাভ করেন। (উমদাতুন নুকুল ফী কাইফিয়াতে ওয়ালাদাতির রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

প্রতিভাত হলো, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্যান্য মানুষের মতো বিলাদত শরীফ লাভ করেননি বা যমীনে তাশরীফ আনেননি। বরং আল্লাহ পাক উনাকে কুদরতিভাবে উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার বাম পাঁজর মুবারক-এর নিচ দিয়ে যমীনে প্রেরণ করেন। সুবহানাল্লাহ!

আর এ বিষয়টি আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামই অন্য মানুষের মতো স্বাভাবিক পথে যমীনে আগমন করেননি। বরং উনারা প্রত্যেকেই কুদরতিভাবে কুদরতি পদ্ধতিতে যমীনে আগমন করেন বা তাশরীফ নেন।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ