মুহম্মদ মিজানুর রহমান
বাবুরহাট, চাঁদপুর
সুওয়াল: একটা পরিবারে এক ছেলে ও দুই মেয়ে, মা ও বাবা। বাবার মৃত্যুর পর উনার জমি-জায়গা থেকে ছেলে-মেয়ে ও মা কে কতটুকু পাবে? শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: সাধারণত বাবা মারা গেলে যদি তার আহলিয়া থাকে, তার ছেলে-মেয়ে থাকে, যে লোকটা মারা গেল তার আহলিয়া আছে, তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে তাহলে সন্তান থাকলে মা অর্থাৎ আহলিয়া পাবে আট ভাগের এক ভাগ। আর বাকিটা পাবে ছেলে-মেয়েরা। তারা হচ্ছে আছাবা। এখন বাকী সম্পত্তি চার ভাগ করে তার মধ্য থেকে দুই ভাগ এক ছেলে পাবে। আর দুই মেয়ে এক ভাগ এক ভাগ করে দুই ভাগ পাবে। অর্থাৎ ছেলে পাবে মেয়েদের দ্বিগুণ। এখন দুই মেয়ে যা পাবে, এক ছেলে তা পাবে। আর মা অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির আহলিয়া পাবে আট ভাগের এক ভাগ। এটা হচ্ছে ফারায়েজের নিয়ম অনুযায়ী। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন জাসসাস, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে তাবারী, আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, বাহ্রুর রায়েক, হেদায়া, আইনুল হেদায়া, ফতহুল ক্বাদীর, সিরাজী ইত্যাদি)
মুহম্মদ শাফায়াত হুসাইন
দিনাজপুর
সুওয়াল: মশা কারো রক্ত খাওয়া অবস্থায় যদি মেরে ফেলা হয় আর সেই রক্ত শরীরে লেগে যায়, এমতাবস্থায় রক্তটা কি ঐ ব্যক্তির, না মশার বলে বিবেচিত হবে এবং ওই রক্ত কি পাক, না নাপাক?
জাওয়াব: এটা নাপাকের হুকুম হবে না। এটা মশারই রক্ত। মশার শরীরে তো রক্ত থাকে না। মশা অন্যের রক্ত চুষে নেয়। মশা যদি মরে গিয়ে রক্তটা কাপড়ে বা শরীরে লাগে তাতে নাপাক হয় না। রক্ত টাটকা হতে পারে, আরেকজন মানুষেরও হতে পারে, কোন পশুর থেকেও নিয়ে আসতে পারে, তবে মশা যে পরিমাণ রক্ত চুষে নেয়, মশা মারা যাওয়ার কারণে তা কাপড়ে বা শরীরে লাগলে, নাপাকের হুকুম দেয়া হয় না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, তরীক্বুল ইসলাম ইত্যাদি)
মুহম্মদ আবুল কাশেম
নেত্রকোনা
সুওয়াল: কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় নিয়মে তালাক দেয় (মুখে তালাক উচ্চারণ না করে লিখিতভাবে স্বাক্ষর বা সিগনেচারের মাধ্যমে) তাহলে এর ফায়সালা কি হবে ?
জাওয়াব: কেউ যদি তার আহলিয়াকে নিজের থেকে তালাক দেয় তাহলে সেটা তালাক হয়ে যাবে। আর যদি জোর করে ভয় দেখায়ে খালি সিগনেচার নেয় তাহলে সেটা তালাক হবে না। অর্থাৎ সে নিজের থেকে স্বেচ্ছায় যদি লিখিত তালাকনামার মধ্যে সিগনেচার করে দেয় তাহলে এটা তালাক হয়ে যাবে। অন্যথায় জোর করে সিগনেচার নিলে তালাক হবে না। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে মাযহারী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, আইনুল হেদায়া, দুররুল মুখতার, বাহরুর রায়েক, হেদায়া, শরহে বেকায়া, কানযুদ দাক্বায়েক্ব, নেহায়া, এনায়া, রদ্দুল মুহতার, ফাতাওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ইত্যাদি)
মুহম্মদ সারোয়ার হুসাইন, বরিশাল
সুওয়াল: জনৈক বক্তা বলেছে, কাফিরদের ইন্তিকালের সময় তাদের রূহ বড় ইস্তিঞ্জার রাস্তা দিয়ে বের হয়। এই কথা কতটুকু সঠিক? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: এটা সত্য নয়। একেকজনের মৃত্যু একেকভাবে হয় অবস্থা অনুযায়ী। রোগের কারণে হয়, কারো মুখ দিয়ে, কারো চোখ দিয়ে, কারো নাক দিয়ে রূহ বের হয়ে থাকে। যার কারণে অনেক সময় চোখ খোলা থাকে, নাকটা প্রসারিত হয়ে যায়, মুখটা হা হয়ে যায়। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, আহকামে মাইয়্যেত ইত্যাদি)
মুহম্মদ আরিফ হুসাইন
নূরানীবাদ
সুওয়াল: ত্বরীক্বা অনুযায়ী ফজর বা’দ দুরূদ শরীফ কেউ যদি ফজরের নামাযের পরে না পড়তে পারে কিংবা ইশা বা’দ দুরূদ শরীফ যদি ইশা’র নামাযের পর না পড়তে পারে তাহলে করণীয় কি?
জাওয়াব: যদি ফজরের পরে না পড়তে পারে, তাহলে পরে পড়ে নিবে, আর ইশারটা ইশার পরে না পড়তে পারলে রাতে পড়ে নিবে। ২৪ ঘন্টায় ২০০ বার পড়তে হবে। বাদ দিতে পারবে না। ফজরেরটা ফজরের পরে পড়তে পারলে ভালো। না পড়তে পারলে পরে পড়ে নিবে। (আল ইহসান শরীফ, ইরশাদে সুলত্বানিন নাছীর)
মুহম্মদ ফজলে রাব্বী
কক্সবাজার
সুওয়াল: নামাযের মধ্যে পাস-আনফাসের খেয়াল আসলে করণীয় কি?
জাওয়াব: পাস-আনফাস যিকিরতো এমনেই চলবে। নামাযের মধ্যে পাস-আনফাস যিকিরের খেয়াল করা যাবে না। পাস-আনফাস যিকির যদি চলে আপছে-আপ, চলুক। নামাযে খেয়াল করতে হবে মহান আল্লাহ পাক উনাকে। উনাকে হাযির-নাযির জানতে হবে। আর যদি যিকির আপছে-আপ এসে যায় সেটা আলাদা। ইচ্ছাকৃত যেনো না আসে। পাস আনফাস যিকির চলা শুরু হয়ে গেলে এটা চলতে থাকবে। এরপর যদি আপছে-আপ যিকিরের খেয়াল আসে, তখন আবার মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে রুজু হতে হবে। উনাকে হাযির-নাযির দেখে, অথবা জেনে নামায পড়তে হবে। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, মেশকাত শরীফ, মেরকাত শরীফ ইত্যাদি)
মুহম্মদ আব্দুল করীম, নওগাঁ
সুওয়াল: মৃত্যুর ৪০ দিন পর চল্লিশা যেটা বলা হয়, দাওয়াত দিয়ে অনেক মানুষকে খাওয়ানো হয়। এটা কি জায়িয আছে?
জাওয়াব: চল্লিশা, বিশা, ত্রিশা, তেসরা, চতুর্থা যে কোন দিন খাওয়ানো যেতে পারে। খাওয়ানো কোন শর্ত না। আর খাওয়ালে গুনাহ হবে তাও না। এটা রসম রেওয়াজও না। এটা সাধারণত বলা হয়, চল্লিশ দিন পরে একটা পরিবর্তন হয় সেই হিসেবে এটা খাওয়ানো যেতে পারে। কোন অসুবিধা নাই। এটা সাধারণত তিনদিন পরেও করতে পারে। কারণ তিনদিন শোক পালন করে। এরপর চতুর্থদিন সম্পত্তি বণ্টন করতে হয়। এখন চতুর্থদিন মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে পারে, চতুর্থদিন মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ায়ে সম্পত্তি বণ্টন করার বিষয়টা ফায়ছালা করতে পারে। এমনিও খাওয়াতে পারে। মৃত ব্যক্তির জন্য যদি নেক কাজে খরচ করে, পবিত্র মীলাদ শরীফ মাহফিল করে, ওয়াজ মাহফিল করে, মানুষকে মেহমানদারী করে, তার জন্য ছওয়াব রেসানী করে, এটা জায়েয আছে। কোন অসুবিধা নাই। চল্লিশ দিন নির্দিষ্ট না, কম-বেশীও করতে পারে, চল্লিশ দিনেও করতে পারে। ( ফতওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া, গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত ‘ঈসালে ছওয়াব’)
মুহম্মদ ছালেহ আহমদ
কুমিল্লা
সুওয়াল: মাযারে মানত করা জায়েয আছে কি-না? মাযারে ধূপ দেয়া যাবে কি না? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: মাযারে মানত করবে কি হিসেবে, মানত তো মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য করতে হবে। মাযারের উছীলা দিয়ে সেটা করতে পারবে। আর ধূপ দেয়া যাবে, সুঘ্রাণ দেয়া যাবে। (ফতওয়ায়ে আযীযী)
মুহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম
লাকসাম, চাঁদপুর
সুওয়াল: ক্বলবী যিকির করা ফরয। এ সম্পর্কে দলীল জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: ক্বলবী যিকির করার তো অনেক দলীল রয়ে গেছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوْبُ
অর্থ: “সাবধান! জেনে রাখো, মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরের দ্বারা দিল ইতমিনান হয় অর্থাৎ দিল ইছলাহ হয়।” (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা রা’দ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَـلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّـبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهٗ فُـرُطًا
অর্থ: ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করো না যার ক্বল্ব্ আমার যিকির থেকে গাফিল রয়েছে। ক্বল্ব্ যিকির থেকে গাফেল থাকার কারণে সে তার নফসের অনুসরণ করে এবং তার কাজগুলি ত্রুটিযুক্ত বা সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ হয়ে থাকে। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা কাহ্ফ্ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অর্থাৎ কেউ অনুসরণীয় হতে হলে তার ক্বলব জারি করতেই হবে। এটা ফরযে আইন। ক্বলব জারি করা ছাড়া কারো কামিয়াবী নাই।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ يَّـعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُـقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَـهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ وَإِنَّـهُمْ لَيَصُدُّوْنَـهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ وَيَحْسَبُـوْنَ أَنَّـهُمْ مُهْتَدُوْنَ
অর্থ: যে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল থাকে, তার জন্য একটা শয়তান মুকাররার (নির্দিষ্ট) হয়ে যায়, সে তার বন্ধু হয়ে যায়। ঐ শয়তান তাকে নেক কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে আর সে মনে করে যে, সে হেদায়েতপ্রাপ্ত। (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ: সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬)
প্রতিভাত হচ্ছে যে, ক্বলবী যিকির করা ফরয। এটা মৌখিক যিকির না, বরং উক্ত যিকির হচ্ছে ক্বলবী যিকির।
অনুরূপ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلشَّيْطَانُ جَاثِمٌ عَلٰى قَـلْبِ اِبْنِ اٰدَمَ فَإِذَا ذَكَرَ اللهَ خَنَسَ وَإِذا غَفَلَ وَسْوَسَ
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শয়তান মানুষের ক্বলবের মধ্যে বসে, যিকির করলে সে পালিয়ে যায় আর গাফিল হলে সে ওয়াসওয়াসা দেয়। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
কাজেই, শয়তান যাকে ওয়াসওয়াসা দিবে সেতো গুমরাহ হয়ে যাবে, সেতো শয়তানের অনুসারী হয়ে যাবে। যার কারণে ক্বলবী যিকির করা ফরযে আঈনের অন্তর্ভুক্ত। এটা ইতোপূর্বে আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকার মধ্যেও গেছে। (গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত ‘অযীফা শরীফ’- পবিত্র ক্বদরিয়া ত্বরীক্বা, পবিত্র চীশতিয়া ত্বরীক্বা, পবিত্র নক্বশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া ত্বরীক্বা, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহ্কামুল কুরআন, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মুসনাদে বাজ্জার, মুস্তাদ্রাকে হাকেম ইত্যাদি)
মুহম্মদ জহীরুল ইসলাম, সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: জামে মসজিদে নিয়োজিত ইমাম সাহেব যেখানে দাঁড়িয়ে নামায পড়ান সেখানে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় জামায়াত আদায় করা যাবে কি? যেই মসজিদে নির্ধারিত ইমাম সাহেব আছেন সেই মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত করতে ইকামত দিতে হবে কি-না?
জাওয়াব: যেখানে নিয়োজিত ইমাম সাহেব নামায পড়েন ঐখানে না পড়ে সরে দাঁড়িয়ে পড়তে হবে। যেখানে ইমাম-মুয়াযযিন নির্দিষ্ট, জামে মসজিদ সেখানে দ্বিতীয় জামায়াত করতে হলে যেখানে ইমাম সাহেব নামায পড়েছেন সেখানে না পড়ে অন্য স্থানে পড়তে হবে। আর ইক্বামতও দিতে হবে না।
আর যেখানে ইমাম-মুয়াযযিন নির্দিষ্ট নাই সেখানে ঐ জায়গায়ও পড়তে পারবে অথার্ৎ ইমাম সাহেবের স্থানেও পড়তে পারবে আবার ইক্বামতও দিতে হবে। (গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত ‘মি’রাজুল মু’মিনীন, ফতওয়ায়ে শামী, আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ, আল ফিকহুল মুইয়াস্সার আলা মাযাহিবিল ইমামিল আ’যম আবী হানীফাহ আন নু’মান, আল ফিকহুল হানাফিয়্যু ফী ছাহিবিল জাদীদ ইত্যাদি)
মুহম্মদ শুয়াইব আহমদ, রাজবাড়ি
সুওয়াল: ঝড় বৃষ্টির কারণে মসজিদে যেতে না পারলে আহাল-আহলিয়া বা স্বামী-স্ত্রী কি একসাথে জামা’য়াতে নামায আদায় করতে পারবে? এবং কিভাবে আদায় করবে?
জাওয়াব: আহাল-আহলিয়া বা স্বামী-স্ত্রী একসাথে জামায়াতে আদায় করতে পারবে। তবে শর্ত হচ্ছে, একসাথে জামায়াতে নামায যদি পড়ে তাহলে পুরুষ বা আহাল যেখানে দাঁড়াবে তার থেকে তার আহলিয়া এত পিছনে দাঁড়াবে যেনো সিজদার সময় আহলিয়ার মাথাটা আহালের পা বরাবর না হয়, কমপক্ষে এক বিঘত পিছনে থাকে। সামনে একজন অর্থাৎ আহাল দাঁড়াবে, আর সরাসরি পিছনে আহলিয়া দাঁড়াবে, দাঁড়ালে আহলিয়া সিজদা দিলে আহালের পা যেনো স্পর্শ না করে। আর যদি সিজদার সময় আহলিয়ার মাথা আহালের পা বরাবর হয়ে যায় এবং পা স্পর্শ করে তাহলে নামায ফাসেদ হয়ে যাবে। (গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত ‘মি’রাজুল মু’মিনীন, আলমগীরী, শামী, বাহরুর রায়িক্ব ইত্যাদি)
মুহম্মদ আলাউদ্দীন, ইসলামপুর, চাঁদপুর
সুওয়াল: মহিলারা কোন্ কুফরী আমল করলে মুরতাদ হয়ে যায় এবং তালাক হয়ে যায়?
জাওয়াব: পুরুষ করুক আর মহিলারা করুক কুফরী করলে জুদা হয়ে যাবে, বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যাবে। এটা যে কোন কুফরী কাজ করলেই হবে। শুধু তাই নয়, মুরতাদও হয়ে যাবে। তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে, আমল নষ্ট হয়ে যাবে, হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে, এবং ওয়ারিশ সত্ত্বও বাতিল হয়ে যাবে।
কাজেই ঈমানদার বা মুসলমান থাকতে হলে সমস্ত কুফরী থেকে খালিছ তওবা ইস্তিগ্ফার করতে হবে। অতঃপর পুনরায় বিবাহ দোহরাতে হবে। কুফরী করার কারণে আহাল-আহলিয়ার মাঝে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কিন্তু তালাক হয় না। তালাক হওয়ার জন্য তালাক দেয়া শর্ত রয়েছে। (যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৫৫তম সংখ্যা, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, মসনদে শাফিয়ী, মসনদে বাজ্জার, মুস্তাদরাকে হাকিম, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, ফাতাওয়ায়ে ছিদ্দীক্বিয়া ইত্যাদি)
মুহম্মদ ফদ্বলে রাব্বী, খাগড়াছড়ি
সুওয়াল: কেউ একজন একা নামায পড়তেছেন তখন অন্য একজন এসে জামাআতের উদ্দেশ্যে তার সাথে শামিল হলে নামায হবে কি?
জাওয়াব: যদি একই নামায হয় আর যদি পুরুষ ইকতিদা করে তাহলে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। অথার্ৎ একই নামায হতে হবে এবং ফরয নামায হতে হবে তখন নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। পুরুষের ইমামতির নিয়ত শর্ত না। পুরুষের পিছনে যদি মহিলা ইক্তিদা করে তখন নিয়ত করা শর্ত। (গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত ‘মি’রাজুল মু’মিনীন, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, হেদায়া, আইনুল হেদায়া ইত্যাদি)
মুহম্মদ বাহাউল ইসলাম, ঢাকা।
সুওয়াল: কোন ব্যক্তির ঘুমের কারণে ফজরের নামাযের সময় চলে যায়। সূর্য উঠার পর নামায পড়তে চাইলে কাযা নামায পড়বে, নাকি কাযা ছাড়া পড়বে? সঠিক জাওয়াব জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: কাযা নামাযই পড়তে হবে। ওয়াক্ত চলে গেলে তো কাযা পড়তে হবে, আদা পড়ার সুযোগ থাকবে না। ওয়াক্ত বা সময় মতো পড়লে সেটা আদা হয়। আর ওয়াক্ত যদি পার হয়ে যায় তখন নামায পড়লে সেটা কাযা। যে কোন ওয়াক্তেই হোক। যদি কেউ কোন কারণে ওয়াক্তের মধ্যে না পড়তে পারে, পরের ওয়াক্ত এসে যায় তাহলে কাযা পড়তে হবে। এখন কেউ বলতে পারে, সূর্য উঠার পরে একটা কামিল ওয়াক্ত থাকে যোহরের ওয়াক্ত হওয়ার আগে। তারপরও কি কাযাই পড়তে হবে? হঁ্যা তারপরও কাযা পড়তে হবে। তবে ফজরের কাযা নামায সূর্য ঢলার আগে পড়লে সুন্নত সহ-ই পড়তে হবে। আর সূর্য ঢলে গেলে এরপর আর সুন্নত পড়তে হবে না। শুধু ফরয পড়বে। (যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১১৭তম সংখ্যা, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, হেদায়া, আইনুল হেদায়া, আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবাআহ, তরীকুল ইসলাম ইত্যাদি)
মুহম্মদ মুজাহিদুর রহমান, খুলনা
সুওয়াল: একজন বিবাহিত মহিলা প্রায় দুই মাস যাবত মাজুরতা জনিত সমস্যায় ভুগছে। ওষুধ খাচ্ছে কমেনি এখনও। নামাযরত অবস্থায় এমন সমস্যা হচ্ছে। এমতাবস্থায় সে কিভাবে ইবাদত বন্দেগী করবে? জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: উক্ত মহিলার নিশ্চয় মাজুরতার সময় জানা আছে, যে সময়টা প্রতি মাসে সর্বোচ্চ দশ দিন ধরবে এরপর সে নামায-কালাম সবই ঠিক মতো আদায় করবে। যদি সবসময় ঝরে তাহলে এমন কিছু পরিধান করে নিবে যাতে না ঝরে। নামাযের আগে অযু করে তারপর নামায পড়বে। প্রত্যেক ওয়াক্তে অযু করে নামায পড়তে হবে। এখন মাজুরতা যদি মাঝে মাঝে হয় তাহলেতো আর সমস্যা নাই। কিন্তু যদি একাধারা রক্ত ক্ষরণ হতে থাকে, না থামে তাহলে ওয়াক্তের আগে অযু করে পট্টি বেঁধে নামায পড়বে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ওয়াক্তের শুরুতে অযু করে তারপরে নামায পড়তে হবে। আর মাজুরতার নিশ্চয়ই একটা সময় আছে, ঐ সময় মতো মাজুরতা থাকবে। তারপরে আবার স্বাভাবিক নামায-কালাম পড়বে। (যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১১৭তম সংখ্যা, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবাআহ ইত্যাদি)
আহমদ সুমাইয়া, কিশোরগঞ্জ
সুওয়াল: একজন মহিলার দু’জন সন্তানই ছোট। একজন দুগ্ধপায়ী শিশু। এমতাবস্থায় আবার সে প্রায় দেড় মাসের হামেলা বা অন্তসত্ত্বা। এবারে সন্তান হওয়ার বিষয়টিকে সে কষ্টের কারণ মনে করছে। এখন সন্তান না হওয়ার জন্য কোন ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করা যাবে কি- না? করলে গুণাহ হবে কি- না?
জাওয়াব: যদি শরঈ ওজর থাকে আর শরীয়ত সম্মত কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করে তবে গুনাহ হবে না। তবে শরীয়ত উনার খেলাফ কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করলে অবশ্যই গুনাহ হবে। দুই জন সন্তান বা চার জন সন্তানও যদি থাকে, আর একজন দুগ্ধপায়ী সন্তান যদি থাকে তারপরও যদি সন্তান সম্ভবা হয় তাহলে অন্য কিছু করাটা শরীয়ত সম্মত হবে না। যার নছীবে সন্তান আছে, তার সন্তান হবে। আর যাদের নছীবে সন্তান নাই তারাতো সন্তান পায় না। এখন সন্তান না হওয়ার জন্য শরঈ কোন ব্যবস্থা নেয়া জায়েয আছে। কিন্তু সন্তান ধারণ করার পর নষ্ট করা কুফরী হবে। গোনাহ হবে মানে কুফরীই হবে। মানুষ সাধারণ মাসয়ালাগুলো জানে না। যে বিষয়গুলি শরীয়ত সম্মত সেটার খিলাফ করলে গুনাহ হবে। এটা স্বাভাবিক বিষয় না। এখন কারো নছীবে সন্তান থাকে, কারো থাকে না। যার নাই কোশেশ করেও সে পায় না। এখন যাকে সৃষ্টি করা হয়ে গেছে তাদের তো আসতেই হবে। রূহতো একবারে সৃষ্টি হয়ে গেছে। মানুষতো এই বিষয়টা বুঝে না। সমস্ত রূহ একবারে সৃষ্টি হয়েছে। এখন সেই রূহগুলি ধাপে ধাপে আসতেছে। যার নছীবে যে আছে সে ছাড়া অন্য কেউ আসতে পারবে না। কারো বেশি থাকলে বেশি, কারো কম থাকলে কম। আবার কারো নাই। এইজন্য বলা হয় যে, সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো মানুষ। দুনিয়ার যত নিয়ামত আছে সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো মানুষ। মানুষের দ্বারা অনেক কিছু করা যায় আবার মানুষের অভাবে অনেক কিছু করা যায় না।
এখন যাদের নছীবে আল-আওলাদ আছে, তারা পায়। যাদের নছীবে নাই তারা পাবে কোথা থেকে? কাজেই সন্তান নষ্ট করা হচ্ছে কবীরা গুনাহ, কুফরী গুনাহ। মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন যে, সন্তানদেরকে হত্যা করো না। এখন সেটা কিসের জন্য সে করবে, খাওয়ার জন্য, পরার জন্য? খাওয়া-পরার সমস্যা মনে করে যদি করে তাহলে এটা কুফরী হবে। আর কেউ যদি সন্তান আসার আগেই সাধারণভাবে অন্য কোন ব্যবস্থা করে সেটা নষ্ট করে তা হবে মাকরূহ তাহরীমী। আর যদি খাওয়া-পরার চিন্তা করে করে তবে তা কুফরী হবে। শরীয়তে সব ফায়ছালা দেওয়া আছে। আসলে এখন মানুষের মধ্যে দ্বীনদারী নাই, যিকির- ফিকির নাই, তাই যা হওয়ার তাই হচ্ছে। নাঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে আহমদী, যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৪০তম সংখ্যা, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে মা’রেফুল কুরআন, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, তাফসীরে যাদুল মাসীর, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে নিশাপুরী, তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে মুনিরী, তাফসীরে আবি হাতিম, তাফসীরে শায়েখ যাদাহ্, তাফসীরে কাসেমী, তাকমীলুল ঈমান ইত্যাদি)
মুহম্মদ সাজেদুর রহমান, গাইবান্ধা
সুওয়াল: নাজাসাতে গলীজা ও নাজাসাতে খফীফা কি কি?
জাওয়াব: গলীজাহ হচ্ছে পুরা নাপাক। যা এক দেরেম শরাই লাগলে নাপাক হয়। আর খফীফাহ এক চতুর্থাংশের বেশি লাগলে নাপাক হয়। যেমন গলীজাহ হলো ইস্তিঞ্জা বা রক্ত। গরুর মল হলো নাজাসাতে গলীজাহ। গরুর ছোট ইস্তিঞ্জা হলো খফীফাহ।
নাজাসাত হচ্ছে দুই প্রকার:
প্রথম প্রকার হলো নাজাসাতে গলীজা: যা শরীরে বা কাপড়ে লাগলে তা যদি এক দেরহাম পরিমান (দেরেম শরাই) হয় তাহলে তা ধোয়া ওয়াজিব। বেশী হলে ফরজ। তাহলো: মানুষের ইস্তেঞ্জা ছোট ও বড়, রক্ত, মনি, শরাব আর সর্বপ্রকার হারাম গোস্তসম্পন্ন অর্থাৎ যে পশুর গোস্ত খাওয়া হারাম সে সমস্ত পশুর মল ও মুত্র। হালাল গোস্ত সম্পন্ন পশুর মল, ঘোড়ার মল, হাঁস, মুরগা ও শতর মুরগের মল নাজাসাতে গলীজা।
আর দ্বিতীয় প্রকার হলো নাজাসাতে খফীফা: যা শরীর বা কাপড়ের মধ্যে এক চতুর্থাংশ বা তার চেয়ে বেশী লাগলে ধোয়া ওয়াজিব। তা হলো সর্বপ্রকার হালাল গোস্ত সম্পন্ন পশুর মুত্র ও উচ্ছিষ্ট, ঘোড়ার মুত্র, হারাম গোস্ত সম্পন্ন পাখীর মল। আর হাঁস, মোরগ ব্যতিত সমস্ত পাখির মল পাক। যেমন কবতুর, চড়–ই, ঘুঘু, বক, শালিক ইত্যাদি। (যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ৪০তম সংখ্যা, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবাআহ, তরীক্বুল ইসলাম ইত্যাদি)
আহমদ মালিহা, রাজশাহী
সুওয়াল: সন্তান সিজারে জন্মগ্রহণ করলে দুই বা আড়াই বছরের মধ্যে পুনরায় সন্তান গ্রহণে মায়ের সমস্যা হওয়ার কথা ডাক্তাররা বলে থাকে। এ বিষয়ে শরয়ী সমাধান প্রার্থনা করছি।
জাওয়াব: ডাক্তারাতো কত কিছু বলে। এটা যার যার অবস্থা অনুযায়ী। যদি নছীবে সন্তান থাকে তাহলে সন্তান হবে, না থাকলে হবে না। এখন দুই, আড়াই বছরের মধ্যে হলে এই সমস্যা হবে, না হয় হবে না। তাদের এ বক্তব্য শুদ্ধ নয়। কারো সমস্যা হতে পারে, আবার কারো না-ও হতে পারে। যেমন তারা বলে যে, তিনটা সিজার করলে এরপরে সমস্যা হয়। কিন্তু অনেকের দেখা যায় পাঁচটা, সাতটা সিজার হয়। এটা হলো শারীরিক (চামড়ার) অবস্থা অনুযায়ী। (তাফসীরে আহমদী, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরে মাআরেফুল কুরআন ইত্যাদি)
মুহম্মদ জাকির হুসাইন
আমান বাড়িয়া
সুওয়াল: দস্তরখানায় খাবার পড়লে তা তুলে খাওয়া পবিত্র সুন্নত মুবারক। এখন দস্তরখানায় পড়ে যাওয়া খাবারটি কি পড়ার সাথে সথে তুলে খেতে হবে, নাকি খাবার শেষে তুলে খেলেও হবে? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: খাবার যখন পড়বে তখনই খাবে। আর যদি তখন না দেখে তবে পরে যখন দেখবে তখন খাবে। এটা সাথে সাথে তুলে খাওয়াই ভালো আর যদি মনে করে সে পরে খাবে তাও খেতে পারে কোন অসুবিধা নেই। তবে দস্তরখানা থেকে তুলে খাওয়াটা হচ্ছে খাছ সুন্নত মুবারক। (গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত ‘উসওয়াতুন হাসানাহ’, শামায়েলে তিরমিযী, আনীসুল আরওয়াহ, জামউল ওসায়িল,আল ইহসান শরীফ ইত্যাদি)
মুহম্মদ মনজুরুল করীম, ঢাকা
সুওয়াল: মানুষ কি জিন দিয়ে কবিরাজি করতে পারে? এবং তারা জিন দিয়ে মানুষের ভবিষ্যৎ বলে থাকে। এটা কতটুকু সত্য? জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: জিন দিয়ে কবিরাজী করা ঠিক না। জিনরা ভবিষ্যৎ বলে থাকে বা ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারে এটাও মিথ্যা কথা। জিনরা ভবিষ্যৎ জানে না। জিন দিয়ে কবিরাজি করা ঠিক না। এখন অসুখ-বিসুখ হলে শরীয়ত সম্মত চিকিৎসা আছে। শরীয়তসম্মত চিকিৎসা করুক। শরীয়ত সম্মত যে তদবীর আছে সেগুলি করতে পারে। জিনেরা ভবিষ্যৎ বলবে কোথা থেকে, নিজের ভবিষ্যতই তো তারা জানে না। আরেক জনের ভবিষ্যৎ বলবে কোথা থেকে। এটা মিথ্যা কথা। এরা তো মূর্খ, এরা আসমান থেকে কথা চুরি করতো আগে। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আলোচনা করতেন, সেখান থেকে শুনে চুরি করতো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন তাশরীফ মুবারক আনলেন তখন এটা বন্ধ হয়ে গেছে। এরা মানুষের নামে হাজারো মিথ্যা বলে। যেমন একটা লোক অনেক বছর আগে আমাদের দরবার শরীফে আসলো। সে বললো, তার এলাকায় কবিরাজ জিন হাজির করেছে। যখন ইশার নামাযের সময় হয়েছে তখন জিন বলতেছে, আযানের সময় হয়ে গেছে এখন সে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ গিয়ে নামায পড়বে। তার এ বক্তব্যে সে যে চরম মিথ্যাবাদী সেটা প্রমাণিত হয়েছে। কেননা আমাদের ইশা’র নামাযের সময় আর বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফের ইশার নামাযের সময় তো এক না। প্রায় ৩ ঘণ্টারও বেশী সময় পার্থক্য। আসলে এরা মানুষকে নানাভাবে মিথ্যা ধোকা দিয়ে বিভ্রান্ত করে। নাঊযুবিল্লাহ! (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে মাযহারী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী ইত্যাদি)
মুহম্মদ তোফাজ্জল হুসাইন
বরগুনা
সুওয়াল: জাহান্নামীদের ভাষা কি হবে? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: জাহান্নামীদেরও ভাষা হবে আরবী ভাষা। সবার ভাষা আরবী হবে। পরকালে সুওয়াল-জাওয়াব যা কিছু আছে সব আরবীতে হবে। মোটকথা, পরকালের ভাষা হচ্ছে আরবী। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, তাফসীরে মাযহারী, মুস্তাদরাক লিল হাকিম, মু’জামুল কবীর লিত তবারানী, শুআবুল ঈমান, মু’জামুল আওসাত্ব ইত্যাদি)
মুহম্মদ লোকমান
শরীয়তপুর
সুওয়াল: আল হিকমাহ লাইভ উনার মাধ্যমে পবিত্র জুমুআহ শরীফ উনার নামায আদায় করা যাবে কি-না?
জাওয়াব: না। আল হিকমাহ থেকে শুনে শুনে নামায আদায় করা যাবে না। ইক্তিদা ছহীহ হবে না। নামায পড়লে জায়েয হবে না। ইক্তিদার শর্ত রয়েছে। শর্ত অনুযায়ী ইক্তিদা যদি ছহীহ না হয়, তাহলে নামায ছহীহ হবে না। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, দুররুল মুখতার, আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবাআহ, তরীক্বুল ইসলাম ইত্যাদি)
মুহম্মদ ইউসুফ
শরীয়তপুর
সুওয়াল: শরীয়ত সম্মত পোশাক পরিধান করে ব্যায়ামের উদ্দেশ্যে খেলাধূলা করা কি হারাম? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: খোলাধূলা সবটাই হারাম যে উদ্দেশ্য করুক। ব্যায়ামের তো আরো তর্জ-তরীকা রয়েছে। খেলাধূলা হারাম। খেলাধূলা হচ্ছে কাফিরদের অনুসরণ করা, কাফিরদের গোলাম হওয়া। তা সম্পূর্ণ হারাম। (মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে প্রকাশিত খেলাধুলা সম্পর্কে ফতওয়া ১৫৫তম সংখ্যা, তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, মুস্তাদরাকে হাকিম, তিরমিযী, আবূ দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ্, কানযুল উম্মাল, বাইহাক্বী, নছবুর রায়াহ্, আল ফিক্বহু আলা মাযাহিবিল আরবাআ, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া ইত্যাদি)
মুহম্মদ উমর ফারূক, কুড়িগ্রাম
সুওয়াল: কবরে লাশ পঁচে গেলে দুনিয়াবী দৃষ্টিতে জান্নাতী কিংবা জাহান্নামী সাব্যস্ত করা যায় কি-না? সাধারণভাবে আমরা দেখি ৯৯% লাশ পঁচে মাটির সাথে মিলিয়ে যায়। তবে যে ব্যক্তি ঈমানদার হবে তার ক্ষেত্রে কি এরূপ হবে?
জাওয়াব: কবরে লাশ পঁচে যাওয়ার সাথে জান্নাতী বা জাহান্নামী হওয়ার কোন সম্পর্ক নাই। এটাতো আলাদা বিষয়। শাসক নওশেরওঁয়া তার লাশ তোলা হয়েছিল প্রায় দেড়শত বছর পরে। দেখা গেছে যে, তার লাশটা ঠিকই আছে। যারা ইনসাফগার হয়, তাদের লাশ মাটিতে পঁচে না। আবার খালিছ হাফিজে কুরআন, খালিছ আলিম, ওলীআল্লাহ হন উনাদের লাশ মাটিতে পঁচে না, নষ্ট হয় না। এ রকম বহু আছে। লাশ মাটিতে খেয়ে ফেললে সে জাহান্নামী হবে আর না খেলে জান্নাতী হবে, এ ধরণের কোন বক্তব্য-ই সঠিক নয়। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, নূরুল ক্বুবূর ফী শরহিছ ছুদূর, আহকামে মাইয়্যিত ইত্যাদি)
মুহম্মদ সাজ্জাদুর রহমান
নওগাঁ
সুওয়াল: আহাল তার আহলিয়াকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে অর্থাৎ মায়ের ঘরের মা, মেয়ের ঘরের মেয়ে এরূপ ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এখন কি তালাক হবে? দয়া করে জানাবেন।
জাওয়াব: না। এ রকম বললে তালাক হবে না। এভাবে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা ঠিক না। এটাতে তালাক হবে না। কিন্তু গুনাহ হবে। এ থেকে খালিছ তওবা-ইস্তিগ্ফার করতে হবে। (যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৮তম সংখ্যা, ফতওয়ায়ে আমীনিয়া)
মুহম্মদ মিসবাহ উদ্দীন
শ্রীমঙ্গল
সুওয়াল: পবিত্র হাদীছ শরীফ প্রথম কে সংকলন করেছেন, কত হিজরীতে এবং উক্ত কিতাবের নাম কি? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: হাদীছ শরীফ সংকলন তো হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকে শুরু হয়েছে। হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সবচেয়ে বেশি হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন তিনিই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম সংকলন শরু করেন, হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি সহ হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা করেছেন, উনাদের যারা ছাত্র-ছাত্রী উনারাই সংকলন করেছেন।
এখন কিতাব হিসেবে বললে হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুয়াত্তা শরীফ বলা হয়। এছাড়া এ রকম অনেকে করেছেন ছোট ছোট রেসালা। এটা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানা থেকেই হয়েছে, পরে প্রকাশ করা হয়েছে। সংকলন তো তখন থেকেই অথার্ৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানা মুবারক থেকেই শুরু হয়েছে। সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনুমতি মুবারক দিয়েছেন সংকলন করার জন্য। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সেটা করেছেন।
যেমন হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, আমার মনে থাকতো না, তিনি সারা রাত মুখস্থ করতেন। তারপর একবার বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার মনে থাকে না তখন তিনি বললেন, আপনার চাদরটা খুলে ধরুন, তিনি খুলে ধরলেন, তাতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরুছ ছহ্হাহ মুবারক বা ফু মুবারক দিয়ে বললেন, এটা শরীরে, বুকে মিশান। তিনি লাগালেন বা মিশালেন। এরপর থেকে তিনি যা শুনতেন তা ভুলতেন না। তা উনার মুখস্থ থাকতো। সুবহানাল্লাহ! (আসমাউর রেজাল, উছূলে হাদীছ, তাদরীবুর রাবী, সীরাতে ছাহাবা ইত্যাদি)
মুহম্মদ গউছ আলী
সুনামগঞ্জ
সুওয়াল: শিষ দেয়া ও হাততালি দেয়া হারাম। কিন্তু অনেকে আছেন যারা হাতের আঙ্গুল ফোটায়। এটা কতটুকু জায়িয? জানতে ইচ্ছুক।
জাওয়াব: শিষ দেয়া, হাততালি দেয়া আর আঙ্গুল ফোটানো তো এক না। অনর্থক আঙ্গুল ফোটানো হচ্ছে মাকরূহ। কিন্তু আঙ্গুল যদি ব্যথা করে, ব্যথাটা দূর করার জন্য ফোটাতে পারে। সেক্ষেত্রে মাকরূহ হবে না। কিন্তু অনর্থক আঙ্গুল ফোটানো মাকরূহ। আর শিষ দেয়া, হাততালি দেয়া হারাম। এটা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নিষেধ আছে। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি)
মুহম্মদ মশিউর রহমান
চট্টগ্রাম
সুওয়াল: একজন ব্যক্তি তার আহলিয়ার সাথে মাছ রান্না করা নিয়ে রাগারাগি করে। এক পর্যায়ে আহলিয়া বলে যে, আপনার মাছ আপনি খান, আমি খাবো না, যদি খাই তাহলে আমার উপর তা হারাম হবে। পরবর্তীতে দুইজনের রাগ মিটে গেলে উনারা সেই মাছ খান। তখন আহাল তার আহলিয়াকে বলেন যে, আপনি যে কথা বলেছেন, এটার জন্য ইস্তিগফার করলেই হয়ে যাবে। এখন এই কথাটি কি শরীয়তসম্মত হয়েছে? এবং ওই ব্যক্তির আহলিয়ার উপর কি কোন কাফফারা আবশ্যক হবে? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: যদি আমভাবে বলে তাহলে কাফফারা আবশ্যক হবে না। শুধুমাত্র তওবা-ইস্তিগ্ফার করতে হবে। আর যদি কসম করে কোন কথা বলে তাহলে সেজন্য কাফফারা দিতে হবে। (তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি)
মুহম্মদ আযীমুর রহমান
সিলেট
সুওয়াল: আযান দেয়ার সময় কুকুরকে আওয়াজ করতে দেখা যায়। অনেকে বলে, কুকুর শয়তানকে দেখতে পায়, সে আযান শুনে পলায়ন করছে। সেজন্য কুকুর আওয়াজ করে। এ কথাটি কতটুকু সঠিক?
জাওয়াব: হঁ্যা ঠিকই আছে। আযানের সময় কুকুর আওয়াজ করে, সে শয়তানকে পালাতে দেখে, তখন কুকুর আওয়াজ করে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
মুহম্মদ রওশন আলী
সিরাজগঞ্জ
সুওয়াল: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাওয়া-দাওয়া মুবারক করার জন্য সময় নির্দিষ্ট ছিলো কি না?
জাওয়াব: নির্দিষ্ট ছিল। সাধারণভাবে সকালে, বা’দ ফজর, তারপরে যুহরের সময়, আবার অনেক সময় বিকেলে, আবার আছরের পরে খেজুর-খুরমা হালকা পাতলা খাবার খেতেন, আবার ইশার সময়, আবার অনেক সময় সকাল দশটা এগারটার সময় কিছু খেতেন। এখন আমাদের যে খাওয়ার সময় সেটা সুন্নত মুতাবেকই আছে। সকালে, যুহরে এবং রাতে। আবার মধ্যে যেমন দশটা, এগারটার দিকে খেতেন। আবার কখনো আছর এবং মাগরিবের পরেও খেয়েছেন। এই সময়গুলোতে খাওয়াটা ফরযে আইন নয়। বরং সুন্নাত। (শামায়েলে তিরমিযী, সীরাতুন্নবী, আখলাকুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইত্যাদি)
মুহম্মদ সুরুজ মিয়া
কিশোরগঞ্জ
সুওয়াল: পবিত্র কুরবানীর ২য় ও ৩য় দিন রাতের বেলা কুরবানী করার হুকুম কি?
জাওয়াব: দ্বিতীয় দিন কুরবানী করা জায়িয আছে। প্রথম দিন নামাযের পর থেকে ২৪ ঘণ্টা করা যাবে। দ্বিতীয় দিনও ২৪ ঘণ্টা করা যাবে, তৃতীয় দিন মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত কুরবানী করা জায়িয। আমভাবে রাতে কুরবানী করা মাকরূহ বলা হয়। আসলে রাতে বাতির অভাব থাকলে পশু জবাই করলে রগগুলি কাটলো কি-না, সেটা দেখতে অসুবিধার কারণে মাকরূহ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এখনতো দেখা যায়। কাজেই, যেখানে পশু জবাই করা হবে সেখানে বাতির ব্যবস্থা থাকলে, অন্ধকার না হলে কোন অসুবিধা নাই অথার্ৎ মাকরূহ হবে না। ১০ তারিখ সকাল থেকে অথার্ৎ ঈদের নামাযের পর থেকে শুরু করে ১০তারিখ, ১১তারিখ, ১২তারিখ মাগরিবের আগ পর্যন্ত কুরবানী করা জায়িয আছে। রাতে কুরবানী করার ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নাই। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, ই’লাউস সুনান, ফতওয়ায়ে শামী ইত্যাদি)
মুহম্মদ ইমতিয়াজ হুসাইন
নূরপুর।
সুওয়াল: রাতের বেলা কেউ যদি গরমে জামা খুলে ফেলে তাহলে এটা কি সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার খেলাফ হবে?
জাওয়াব: যদি জামা খুলে তাহলে গায়ে একটা চাদর বা একটা কিছু দিয়ে রাখুক। কাপড় খুলে একদম পুরা খালি গায়ে থাকাটা সুন্নত মুবারক উনার খিলাফ। পাতলা কাপড় জড়িয়ে রাখতে পারে। বেশি গরম হলে পাতলা ভিজা কাপড় গায়ে জড়িয়ে রাখতে পারে। (কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি)
মুহম্মদ আমান উল্লাহ
নাটোর
সুওয়াল: ঋণদাতা এবং ঋণ গ্রহীতা উভয়েই যদি ঋণের বিষয়ে ভুলে যায় এবং ভুলে যাবার কারণে ঋণ দাতা কখনো দাবি না করে তাহলে কি কিয়ামতের দিন ঋণ দাতা তার ঋণ পরিশোধের দাবি জানাতে পারবে?
জাওয়াব: যদি পাওনা থাকে তাহলে দাবি করতে পারে। এখন যে ঋণ গ্রহীতা তার তো স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত যে, ঋণদাতা সে ভুলে গেছে। যে ঋণ গ্রহণ করলো তার তো এটা মনে রাখা উচিত, নোট রাখা উচিত, শোধ করে দেয়া উচিত। ঋণদাতা সে দাবি করতে পারে। সে যদি ছেড়ে দেয় সেটা আলাদা কথা। কিন্তু সে দাবি করতে পারে, সেতো পাওনা আছে। (কুরতুবী, তাফসীরে আহকামুল কুরআন, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি)
মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন
চাঁদপুর
সুওয়াল: ইশরাক, চাশ্ত্, আওওয়াবীন এই নামাযগুলো কি সুন্নত, নাকি নফল নিয়তে পড়তে হয়? আর এই নামায গুলোর বাংলায় কিভাবে নিয়ত করতে হয়? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: ইশরাক, চাশ্ত্, আওওয়াবীন নামায আসলেই সুন্নত। এটা সুন্নতের নিয়তে পড়লে ফযীলতটা বেশি পাবে। আর নফলের নিয়তে পড়লে তো সেই ফযীলতটা পাবে না। এখন সাধারণতঃ সুন্নত নামাযগুলি দুই রাকাআত করে পড়ার নিয়ম। শুধু যাওয়ালের নামায এক নিয়তে চার রাকাআত নামায পড়তে হয় সূর্য ঢলার পরে যোহরের আগে। আর ইশরাকের নামায দুই দুই রাকাআত করে চার রাকাআতই পড়া খাছ সুন্নত। চাশতের (ছলাতুদ্ব দ্বুহা) নামায চার রাকাআত থেকে বার রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়। আওওয়াবীন নামাযও দুই রাকাআত করে ছয় রাকাআত। আর তাহাজ্জুদ নামায হচ্ছে দুই রাকাআত করে বার রাকাআত সর্বোচ্চ। তবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাধারণতঃ চার থেকে ছয় রাকাআত বেশি পড়েছেন। বারো রাকাআত পর্যন্ত পড়া যায়।
এই সবগুলির নিয়ত এভাবে করতে হবে, “আমি অমুক ওয়াক্তের নামায- ইশরাক, চাশত, আওওয়াবীন ইত্যাদির দুই রাকাআত নামায ক্বিবলামুখি হয়ে আদায় করতেছি।”এ রকম সোজা নিয়ত করলেও পারে- যেমন ইশরাকের দুই রাকাআত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখি হয়ে আদায় করতেছি। চাশতের দুই রাকাআত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখি হয়ে আদায় করতেছি। বা আওওয়াবীন-এর দুই রাকাআত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখি হয়ে আদায় করতেছি। বা তাহাজ্জুদ-এর দুই রাকাআত সুন্নত নামায ক্বিবলামুখি হয়ে আদায় করতেছি। একইভাবে যাওয়ালের চার রাকাত সুন্নাত নামায ক্বিবলামুখি হয়ে আদায় করিতেছি। বাংলাতে লম্বা নিয়তের প্রয়োজন নাই। এগুলি সুন্নতের নিয়তে পড়লে ফযীলতটা বেশি পাবে। আর নফলের নিয়তে পড়লে এই ফযীলতটা পাবে না। অনুরূপ মানুষ, যখন খাদ্য সুন্নত মুবারক হিসেবে খাবে তখন ফযীলতটা পুরা পাবে। সুবহানাল্লাহ! (গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত মি’রাজুল মু’মিনীন, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, বাহরুর রায়িক, হিদায়া, শরহে হিদায়া, আইনুল হিদায়া, হাদিয়াতুল মুছল্লীন, মি’রাজুল মু’মিনীন, নামায শিক্ষা ইত্যাদি)
মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, বগুড়া।
সুওয়াল: পরিহিত পোশাক পাক তবে পোশাকের সাথে সংশ্লিষ্ট জিনিসটা নাপাক। যেমন কোর্তা বা সেলোয়ার পাক, কিন্তু তার পকেটে থাকা শুকনো বস্তুটি নাপাক। অথবা পকেটে এমন কোনো জিনিস (যেমন কোনো কাগজ বা হাত রুমাল ইত্যাদি) থাকে যেটা নাপাক, তাহলে ঐ পোশাকে কি নামায আদায় করা শুদ্ধ হবে?
জাওয়াব: শুকনা জিনিস যদি থাকে পকেটে তাহলে নামায শুদ্ধ হবে। তবে এগুলি আসলে না রাখাটাই উত্তম। নাপাক জিনিসের বদ তাছীর থাকে। সব পাক ছাফ আছে কিন্তু পকেটে নাপাক বস্তু রাখলো নামায হয়ে যাবে। এটা নামাযের একটা খুছূছিয়ত হুযুরির ক্ষতি হতে পারে। এটা তাকওয়ার খিলাফ। পকেটে কোন জিনিস রাখলো যা নাপাক তা যদি শুকনা থাকে, কাপড়ে নাপাকি না লাগে, তবে নামায হয়ে যাবে। কিন্তু এটা তাক্বওয়ার খিলাফ হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে শামী)
মুহম্মদ নাজমুল ইসলাম, গাইবান্ধা
সুওয়াল: তরল বস্তুর স্বভাব হলো ছড়িয়ে পড়া। কারো পরিহিত কাপড়ের কিছু অংশ ভেজা যেটা এক দিরহাম বা তার থেকে বেশি পরিমাণ। এমতাবস্থায়, যদি ওই ভেজা অংশে এক দিরহাম পরিমাণের কম কোনো তরল নাপাক লাগে, তাহলে কি নাপাকটা পুরো ভেজা অংশে ছড়িয়ে যাবে? ওই পোশাকে কি নামায আদায় অশুদ্ধ হবে? জানালে উপকৃত হতাম।
জাওয়াব: না, নামায শুদ্ধ হবে না। তরল নাপাকটা ছড়িয়ে যাবে ভিজা জায়গার মধ্যে। এ ধরনের ভেজা কাপড় পরে নামায শুদ্ধ হবে না। উক্ত কাপড় পাল্টিয়ে নামায পড়তে হবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ফতওয়ায়ে শামী)
মুহম্মদ আওলাদ হুসাইন
পলাশ, নূরানীবাদ
সুওয়াল: আহলিয়ার সাথে নিরিবিলি অবস্থান করলে গোসল ফরজ হয়। প্রচন্ড ঠাণ্ডা বা শীতের কারণে গোসলের পরিবর্তে ওযূ করে কি নামায পড়া যাবে?
জাওয়াব: গোসলের পরিবর্তে ওযূ করে নামায পড়া জায়িয হবে না। গোসল করে পড়তে হবে। যদি প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বা শীত পরে তাহলে পানি গরম করে গোছল করুক। আর যদি অসুস্থ থাকে, মাজুর হয় তাহলে তো সেটা আলাদা। সেক্ষেত্রে তায়াম্মুম করতে হবে, ওযূ করবে কেন। তায়াম্মুম করে নামায পড়তে হবে। যদি স্বাভাবিক থাকে এবং গোসলের প্রয়োজন হয় তাহলে গোসল করে নামায পড়তে হবে। আর যদি অসুস্থ হয় ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল করলে রোগ বা অসুস্থতা বেড়ে যায়, মারা যাওয়ার সম্ভাবনা আছে, নানান ক্ষতির সম্ভাবনা আছে তখন তায়াম্মুম করে নামায পড়তে হবে। অর্থাৎ গোসলের জন্য তায়াম্মুম করবে আর ওযূর জন্য ওযূ করে তারপর নামায পড়বে। (তাফসীরে কুরতুবী, রহুল মায়ানী, মাযহারী, বুখারী, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, মেশকাত, মেরকাত,আলমগীরী, শামী)
মুহম্মদ মুশারফ হুসাইন, সিঙ্গাপুর
সুওয়াল: একটা লতীফার যিকির জারী হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩০ দিন যিকির করার জন্য বলা হয়। কিন্তু আমরা শুনেছি, হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৮ দিনে তরীক্বার সমস্ত সবক্ব ও যিকির শেষ করেছেন। এটা কিভাবে সম্ভব হয়েছে।
জাওয়াব: এটা অবশ্যই সম্ভব। তবে একদিনেও শেষ হতে পারে। সাধারণভাবে বা স্বাভাবিকভাবে প্রত্যেক লতিফার জন্য ৩০ দিন ১ ঘণ্টা করে যিকির করতে বলা হয়। অনেকের বছরও লাগে, সবার হালতো এক সমান না। এটা আমভাবে বলা হয় ৩০দিন। হযরত কারামত আলী জৈনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৮দিনে শেষ করেছেন। খুব ভালো। একদিনেও শেষ করতে পারে, যদি একদিনে হয়ে যায়, হয়ে যেতে পারে। অসুবিধার কি আছে। অনেকের ৩০দিনে হয় না। অনেকের বেশি সময় লাগে, এক মাস, ছয় মাস, বছরও লাগে। অনেকের আরো বেশী লেগে থাকে। এটা সালিক ও সালিকার অবস্থা অনুযায়ী, নিছবত, কুরবত, ইছলাহ অনুযায়ী। (গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত মি’রাজুল মু’মিনীন, আলমগীরী)
মুহম্মদ নাছীরুদ্দীন
হবিগঞ্জ
সুওয়াল: তিন সময়ে নামায পড়ার জন্য নিষিদ্ধ। কোন কোন সময় এবং তা কতক্ষন করে?
জাওয়াব: সূর্য উঠার সময়, সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়, আর সূর্য মধ্য আকাশে যখন থাকে। এটা সাধারণভাবে সূর্য উঠার সময় ২৩ মিনিট, সূর্যাস্তের সময় ২৩ মিনিট আর সূর্য মধ্য আকাশে থাকা অবস্থায় ১ ঘণ্টা অর্থাৎ সূর্য পূর্ণ ঢলার পূর্বে ১ ঘণ্টা নামায পড়া নিষিদ্ধ। (গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ হতে প্রকাশিত মি’রাজুল মু’মিনীন, হাশিয়ায়ে তাহতাবী, ফতহুল ক্বাদীর, শামী ইত্যাদি।)
মুহম্মদ রবীউল ইসলাম
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
সুওয়াল: আহাল-আহলিয়া দু’জনই ভালো। আহাল ইন্তিকাল করার পরে আহলিয়া যদি কোনো খারাপ কাজ করে, তাহলে কি আহালের কবরে আযাব হবে?
জাওয়াব: ইন্তিকালের পরে আহলিয়ার উপর আহালের কোন দায়িত্ব থাকে না। আহালের ইন্তিকালের পরে আহলিয়ার আমলের জন্য আহালকে জাওয়াবদীহি করতে হবে না। এখন যদি আহলিয়া পাপ কাজ করে তাহলে সেটা তার আমলনামায় যাবে। নেক কাজ করলে, নেক কাজ জারী থাকলে সে ছওয়াবটাও সেই পাবে। তবে আহাল যে নেক আমল আহলিয়াকে শিক্ষা দিয়েছে সেই নেক আমলের ছওয়াব আহাল পাবে। কাজেই আহালের ইন্তিকালের পর আহলিয়ার খারাপ কাজের জন্য আহালের কবরে আযাব হবে না।
উল্লেখ্য আহাল যদি আহলিয়াকে হারাম কোনো বিষয়ে তা’লীম বা শিক্ষা দিয়ে থাকে তা আহলিয়া করলে তাহলে অবশ্যই আহালের গুনাহ হবে। (তাফসীরে কুরতুবী, আহকামুল কুরআন, রূহুল মাআনী, রূহুল বয়ান, দুররে মানছূর, তাহতাবী ইত্যাদি)
মুহম্মদ রুবেল ইসলাম, ঢাকা
সুওয়াল: বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং নামক একটা পেশা চালু হয়েছে, যেখানে ইহুদি নাছারাদের দেশগুলোর লোকদের কাজ নিজের ঘরে বসে করে দেওয়া হচ্ছে এবং এর থেকে অনেক টাকা উপার্জন করা হচ্ছে। যেমন তাদের বিভিন্ন ধরণের ফেসবুকে বিভিন্ন প্রোডাক্ট বিক্রি করে দেওয়া, তাদের ভিডিও ভাইরাল করে দেওয়া, তাদের শপিংমলের বিভিন্ন ধরণের পোশাক-আশাক বিক্রি করে দেওয়া, তাদের বিভিন্ন জামা-কাপড়ের ডিজাইন করে দেওয়া, এগুলো ভাইরাল করে দেওয়া। এবং বাংলাদেশের বেশিরভাগ যুবক ঘরে বসে কম্পিউটারের মাধ্যমে এই কাজগুলো করছে। এই কাজগুলো কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
জাওয়াব: প্রথমতঃ জাওয়াব হলো এ কাজগুলো করা জায়েয নেই। কাট্টা হারাম। যে কাজগুলি করে তা শরীয়তসম্মত কি-না, সেটা দেখতে হবে। এখন এটা তো বলতে গেলে অনেক লম্বা কথা। তাদের যে মালগুলি বিক্রি করে, সে মালগুলি কি শরীয়তসম্মত, না শরীয়তের খিলাফ, সেটা দেখতে হবে। তাদের ব্যবসায়িক পণ্য নানা রকম আছে, হারাম পণ্য রয়েছে, আবার তাদের পোশাকগুলিও কুফরী শিরেকী মিশ্রিত, সেগুলি বিক্রি করলে গুনাহ হবে। আর যেগুলি ভাইরাল করে সেটাও দেখতে হবে। সেগুলি যদি শরীয়ত সম্মত না হয় সেগুলি ভাইরাল করা যাবে না।
মানুষের এখন দ্বীনদারী, ঈমানদারী নষ্ট হয়ে গেছে। তারা কাফির মুশরিকেরটা খুব প্রচার করে। নাউযুবিল্লাহ! কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিষয়টা প্রচার করেনা, উনার সুন্নত মুবারক প্রচার করে না। নাঊযুবিল্লাহ! সামান্য পয়সা পায় সেজন্য তারা কাফিরদের ছানা-ছিফত করে সারাদিন। নাঊযুবিল্লাহ! এটা পবিত্র হাদীছ শরীফে রয়েছে-
إِذَا مُدِحَ الْفَاسِقُ غَضِبَ الرَّبُّ، وَاهْتَـزَّ لَهُ الْعَرْشُ
‘যখন কোন ফাসিকের প্রশংসা করা হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি এত অসন্তুষ্ট হন যে আরশে আযীম থর থর করে কাঁপতে থাকেন, গযবে আরশে আযীম ধ্বংস হয়ে যায় কি-না।’ (মিশকাতুল মাছাবীহ)
কাফির মুশরিকরা এ সকল মুসলমানকে গোলাম বানিয়ে নিয়েছে। এরা কাফিরের ছানা-ছিফত করে, কাফিরের মাল বিক্রি করে, কাফিরের জিনিস প্রচার- প্রসার করে এবং সেটা বিক্রি করে সামান্য পয়সার জন্য। কাফিরদের গোলামি করা তো জায়েয নাই। এই বিষয় সম্পর্কে অনেকেই ফিকির করে না। এখন মুসলমানদের তো অনেক কিছু আছে যা মুসলমান করতে পারে। ফতওয়া হচ্ছে, কাফেরের কোনো বিষয়ে সহযোগিতা করা জায়েয নেই। কারণ পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে, “নেকী ও পরহেযগারীতে সাহায্য করো আর পাপে ও শত্রুতাতে সাহায্য করো না।” কাফেরদের এ সমস্ত কাজগুলি করলে কাফেরদেরকে সাহায্য করা হয় যা কাট্টা হারাম। অতএব সাবধান থাকতে হবে। মুসলমানদেরকে যদি বলা হয়, সুন্নত মুবারক প্রচার করো। তারা তা না করে কাফেরের ছানা-ছিফত করে তাদের মাল বিক্রি করে ২৪ ঘণ্টা, প্রসংশা করে। নাঊযুবিল্লাহ! মানুষ হিদায়েত বুঝে না। আসলে হেদায়েত পাওয়া কঠিন বিষয়। আর হিদায়েত পেয়ে ইস্তিক্বামত থাকা আরো কঠিন। (তাফসীরে আহমদী, তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে ইবনে কাসীর, তাফসীরে মা’রেফুল কুরআন, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ১তাফসীরে যাদুল মাসির, তাফসীরে রুহুল বয়ান, তাফসীরে নিশাপুরী, তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে বাগবী, তাফসীরে মুনিরী, তাফসীরে ইবনে তাফসীরে আবি হাতিম, তাফসীরে শায়েখ যাদাহ্, তাফসীরে কাসেমী, বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ্, দারেমী, মিশকাত, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, মিরকাত, ফতওয়ায়ে আলমগীরী ইত্যাদি)