মুহম্মদ আব্দুল মান্নান
পলাশ, নরসিংদী
সুওয়াল: মাসিক মদীনা পত্রিকা জুন/২০১১ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে লিখেছে যে, “কা’বা শরীফ এবং মসজিদে নববী শরীফ এর নকশা বা ছবিযুক্ত জায়নামাযে দাড়ালে কা’বা শরীফ এবং মসজিদে নববী শরীফ-এর অবমাননা হবে না কারণ তা নকশা বা ছবি ব্যতিত কিছুই না, এমনকি মুল কা’বা শরীফ-এর ছাদের উপরে উঠলে বা দাড়ালেও নাকি কা’বা শরীফ-এর অবমাননা হবে না।”
এখন আমার সুওয়াল হলো- মাসিক মদীনা পত্রিকার উক্ত বক্তব্য কতটুকু কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস সম্মত। দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা দুটি বিষয় স্পষ্ট হলো। যথা- ১. “কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া জায়িয। কারণ তা নকশা বা ছবি। আর নকশা বা ছবির উপর দাঁড়ালে বা পা দিয়ে মাড়ালে অবমাননা হয় না।
২. সরাসরি কা’বা শরীফ-এর ছাদে উঠলে বা দাঁড়ালেও কা’বা শরীফ-এর অবমাননা হয় না।
তার প্রথম বক্তব্যের প্রথম অংশের জাওয়াবে বলতে হয় যে, “কা’বা শরীফ এবং মসজিদে নববী শরীফ-এর নকশা বা ছবিতে পা দিয়ে মাড়ালে অবমাননা হবে না তার এ বক্তব্যের দলীল কোথায়?
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
هاتوا برهانكم ان كنتم صدقين
অর্থ: “তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাক, তবে দলীল পেশ কর” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ ১১১)
কাজেই মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনকে তার উক্ত বক্তব্যের স্বপক্ষে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস থেকে দলীল পেশ করতে হবে। যেহেতু সে তার এ বক্তব্যের স্বপক্ষে কোন দলীল পেশ করেনি বা করতে পারেনি তাই তার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য।
মাসিক মাদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সাহেব তার প্রথম বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে বলেছে, “আর নকশা বা ছবির উপর দাঁড়ালে বা পা দিয়ে মাড়ালে অবমাননা হয় না।”
তার প্রথম বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশের জাওয়াবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সাহেবের বক্তব্য মুতাবিক “কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ-এর নকশা বা ছবিতে পা দিয়ে মাড়ালে যদি অবমাননা না হয়, তাহলে মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সাহেবের মতে কুরআন শরীফ-এর নকশা বা ছবির উপর দাঁড়ালে বা পা দিয়ে মাড়ালেও কুরআন শরীফ-এর অবমাননা হবে না। নাউযুবিল্লাহ! কারণ তা কুরআন শরীফ-এর নকশা বা ছবি। নাউযুবিল্লাহ্
এখন মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সাহেব কি কুরআন শরীফ-এর নকশা বা ছবির উপর দাঁড়ানোকে বা কুরআন শরীফ-এর নকশা বা ছবির উপর পা দিয়ে মাড়ানোকে জায়িয ফতওয়া দিবে? কারণ তা তো কুরআন শরীফ-এর নকশা বা ছবি।
সুতরাং প্রমানিত হলে যে, কুরআন শরীফ-এর সম্মানের কারনে বা কুরআন শরীফ-এর তা’যীম তাকরীমের কারনে যদি কুরআন শরীফ-এর নকশা বা ছবির উপর দাঁড়ালে বা কুরআন শরীফ-এর নকশা বা ছবির উপর পা দিয়ে মাড়ালে যদি কুরআন শরীফ-এর অবমাননা হয়। তাহলে “কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ-এর নকশা বা ছবিতেও পা দিয়ে মাড়ালে অবশ্যই তা অবমাননা হবে। কারণ “কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ-এর নকশা বা ছবিও কুরআন শরীফ-এর নকশা বা ছবির মতোই সম্মানিত। কাজেই নকশা বা ছবি বলে এগুলোকে হেয়প্রতিপন্ন করলে সে কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হবে।
মূলত ইসলামী শরীয়তের দলীলভিত্তিক ফায়সালা হলো কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ-এর নকশা বা ছবিতে পা দিয়ে মাড়ালে অবশ্যই অবমাননা হবে। কেননা কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফকে যেভাবে সম্মান প্রদর্শন করা, তা’যীম-তাকরীম করা সকল মুসলমানদের জন্য ফরয। ঠিক একইভাবে কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ-এর নকশা বা ছবিকেও সম্মান প্রদর্শন করা, তা’যীম-তাকরীম করা সকল মুসলমানদের জন্য ফরয।
কারণ পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ এবং বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ হচ্ছে, আল্লাহ পাক-উনার শেয়ার বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্যই ফরয এবং অশেষ কল্যাণের কারণও বটে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
ومن يعظم شعائر الله فانها من تقوى القلوب
অর্থ: “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-উনার নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, নিশ্চয়ই তা তার জন্য অন্তরের তাক্বওয়া বা পবিত্রতারই নিদর্শন।” (সূরা হজ্জ-৩২)
আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র আরো ইরশাদ করেন-
ومن يعظم حرمت الله فهو خير له عند ربه
অর্থ: “আল্লাহ পাক তিনি যে সকল বস্তুকে সম্মানিত করেছেন, তাকে যে ব্যক্তি সম্মান করলো, এটা তার জন্য আল্লাহ পাক উনার নিকট কল্যাণ বা ভালাইয়ের কারণ হবে।” (সূরা হজ্জ: আয়াত শরীফ ৩০)
উক্ত আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে “তাফসীরে মাযহারী” কিতাব-এর ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৩৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
الحرمات هاهنا البلد الحرام والبيت الحرام والشهر الحرام
অর্থ: এখানে হুরুমাতিল্লাহ-এর অর্থ সম্মানিত শহর এবং সম্মানিত গৃহ এবং সম্মানিত মাস অর্থাৎ মক্কা শরীফ, কা’বা শরীফ এবং ওই সকল মাস যেগুলোতে যুদ্ধবিগ্রহ নিষিদ্ধ।
উপরোক্ত আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সকলের জন্যই ফরয। আর সেগুলোর অবমাননা করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। চাই তা নকশা বা ছবি হোক অথবা মুল কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ হোক উভয়ের একই হুকুম। অর্থাৎ নকশা বা ছবিও সম্মানিত।
কাজেই, “পবিত্র কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ” যেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু উক্ত নিদর্শনসমূহকে বা উক্ত নিদর্শনসমূহের নকশা বা ছবিকে পায়ের নিচে রাখা বা সেগুলোকে পদদলিত করা আল্লাহ পাক-উনার নিদর্শনসমূহকে অবমাননা করার শামিল। যা শুধু আদবের খিলাফই নয় বরং স্থান ও ক্ষেত্র বিশেষে নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
يايها الذين امنوا لا تحلوا شعائر الله
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনসমূহের অবমাননা করো না।” (সূরা মায়িদা-২)
দ্বিতীয়তঃ মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সাহেব বলেছে, “সরাসরি কা’বা শরীফ-এর ছাদে উঠলে বা দাঁড়ালেও কা’বা শরীফ-এর অবমাননা হয় না।”
তার দ্বিতীয় বক্তব্যের জাওয়াবে বলতে হয় যে, মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সাহেব যে বলেছে, “সরাসরি কা’বা শরীফ-এর ছাদে উঠলে বা দাঁড়ালেও কা’বা শরীফ-এর অবমাননা হয় না।” তার এ বক্তব্যের দলীল কোথায়?
সুতরাং মাহিউদ্দীন সাহেবের দলীলবিহীন বক্তব্য মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়।
কারণ, কা’বা শরীফ-এর ছাদের উপরে উঠলে, দাঁড়ালে বা নামায পড়লে পবিত্র কা’বা শরীফ-এর অবমাননা হয় ও বেয়াদবী হয়। তাই আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং হাদীছ শরীফ-এ পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছাদে নামায পড়তে সরাসরি নিষেধ করেছেন।
যেমন, “ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর ৫৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنهما قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يصلى فى سبع مواطن فى المزبلة والمجزرة والمقبرة وقارعة الطريق والحمام ومعاطن الابل وفوق الكعبة.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি সাত জায়গায় নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। যথা: ১. আবর্জনা ফেলার স্থানে ২. যবেহখানায়, ৩. কবর স্থানে, ৪. রাস্তার মধ্যে, ৫. গোসলখানায়, ৬. উটের আস্তাবলে এবং ৭. কা’বা শরীফ-এর উপরে অর্থাৎ কা’বা শরীফ বা বাইতুল্লাহ শরীফ-এর ছাদে।
“ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর ৫৪ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ আছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنهما عن عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال سبع مواطن لا تجوز فيها الصلوة ظاهر بيت الله والمقبرة والمزبلة والمجزرة والحمام وعطن الابل ومحجة الطريق.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে, তিনি হযরত উমর বিন খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “সাত জায়গায় নামায পড়া জায়িয নেই। যথা;- ১. বাইতুল্লাহ শরীফ বা কা’বা শরীফ-এর ছাদে, ২. কবর স্থানে, ৩. আবর্জনা ফেলার স্থানে, ৪. যবেহখানায়, ৫. গোসলখানায়, ৬. উটের আস্তাবলে ৭. রাস্তার মধ্যে ।
“তিরমিযী শরীফ”-এর প্রথম খণ্ডের ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنهما ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى ان يصلى فى سبعة مواطن فى المزبلة والمجزرة والمقبرة وقارعة الطريق وفى الحمام ومعاطن الابل وفوق ظهر بيت.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি সাত জায়গায় নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। যথা- ১.আবর্জনা ফেলার স্থানে ২. যবেহখানায়, ৩. কবর স্থানে, ৪. রাস্তার মধ্যে, ৫. গোসলখানায়, ৬. উটের আস্তাবলে এবং ৭. বাইতুল্লাহ শরীফ-এর ছাদে।”
“মিশকাত শরীফ”-এর ৭১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
عن حضرت ابن عمر رضى الله تعالى عنهما قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم ان يصلى فى سبعة مواطن فى المزبلة والمجزرة والمقبرة وقارعة الطريق وفى الحمام ومعاطن الابل وفوق ظهر بيت الله. (رواه الترمذى وابن ماجه)
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাত জায়গায় নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। ১.আবর্জনা ফেলার স্থানে ২. যবেহখানায়, ৩. কবর স্থানে, ৪. রাস্তার মধ্যে, ৫. গোসলখানায়, ৬. উটের আস্তাবলে এবং ৭. বাইতুল্লাহ শরীফ-এর ছাদে। (তিরমিযী শরীফ ও ইবনু মাযাহ্্ শরীফ)
উল্লিখিত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় “ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর ৫৪ পৃষ্ঠার ৯ নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,
لا يجوز فيها اى بلا كراهة
অর্থ: কারাহাত ছাড়াই বাইতুল্লাহ শরীফ বা কা’বা শরীফ এর ছাদে নামায পড়া জায়িয নেই।
“ইবনে মাজাহ শরীফ”-এর ৫৪ পৃষ্ঠার ১০নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-
اذ نفس الارتفاء الى سطح الكعبة مكروه لاستعلائه عليه المنافى للادب.
অর্থ: কোন ব্যক্তি যদি কা’বা শরীফের ছাদে উঠে (নামায পড়ে) তাহলে তা মাকরূহ্্ তাহ্্রীমী হবে। কেননা কা’বা শরীফের সুউচ্চ মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে আদব রক্ষার্থে কা’বা শরীফের ছাদে উঠতে, নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
“মিরকাত শরীফ”-এর ২য় খণ্ডের ২১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اذ نفس الارتفاء الى سطح الكعبة مكروه لاستعلائه عليه المنافى للادب.
অর্থ: কোন ব্যক্তি যদি কা’বা শরীফের ছাদে উঠে (নামায পড়ে) তাহলে তা মাকরূহ্্ তাহ্্রীমী হবে। কেননা কা’বা শরীফের সুউচ্চ মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে আদব রক্ষার্থে কা’বা শরীফের ছাদে উঠতে, নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।
তাছাড়া পবিত্র কা’বা শরীফ-এর তা’যীম-এর কারণে কা’বা শরীফ-এর দিকে মুখ পিঠ করে ইস্তিঞ্জা করা, পেশাব-পায়খানা করা নিষেধ। শুধু তাই নয় পবিত্র কা’বা শরীফ-এর তা’যীম-এর কারণে কা’বা শরীফ-এর দিকে পা দেয়াও নিষেধ।
যেমন, “ফতওয়ায়ে আলমগীরী”- কিতাবের ৫ম খণ্ডের ৩১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
ويكره مد الرجلين الى الكعبة فى النوم وغيره عمدا
অর্থ: ঘুমে এবং ঘুম ব্যতীত অন্যান্য সময় ইচ্ছাকৃত ভাবে কা’বা শরীফের দিকে পা প্রসারিত করা বা কা’বা শরীফের দিকে পা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ।
“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৯ম খণ্ডের ২৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اورخواب و غیرہ کی حالت مین عمدا قبلہ کی طرف پائوں پھیلانا مکروہ ہی.
অর্থ: ঘুমে এবং ঘুম ব্যতীত অন্যান্য সময় ইচ্ছাকৃতভাবে কা’বা শরীফের দিকে পা দেয়া মাকরূহ তাহরীমী ।
সুতরাং পবিত্র কা’বা শরীফ-এর তা’যীম-এর কারণে কা’বা শরীফ-এর দিকে পা দেয়া যদি নিষেধ হয়, তাহলে পবিত্র কা’বা শরীফ-এর নকশা বা ছবিকে পা দিয়ে মাড়ানো জায়িয হয় কি করে?
এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وتكره الصلاة على سطح الكعبة لما فيه من ترك التعظيم
অর্থ: “কা’বা শরীফের ছাদের উপর নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়লে কা’বা শরীফের অবমাননা হয়।”
“জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ্্” কিতাবের ১৪৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
انه يكره لما فيه من ترك التعظيم وقد ورد النهى عنه
অর্থ: “কা’বা শরীফের ছাদের উপর নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়লে কা’বা শরীফের অবমাননা হয়। আর কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়ার ব্যাপারে নিষেধ বাণী বর্ণিত রয়েছে।”
“আল-লুবাব লিল-মায়দানী ” কিতাবে উল্লেখ আছে-
انه يكره لما فيه من ترك التعظيم و لورود النهى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “কা’বা শরীফের ছাদের উপর নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়লে কা’বা শরীফের অবমাননা হয়। আর কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়ার ব্যাপারে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নিষেধ বাণী বর্ণিত রয়েছে।”
“হিদায়া” কিতাবের ১ম খণ্ডের ১৬৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
انه يكره لما فيه من ترك التعظيم وقد ورد النهى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “কা’বা শরীফের ছাদের উপর নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়লে কা’বা শরীফের অবমাননা হয়। আর কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়ার ব্যাপারে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নিষেধ বাণী বর্ণিত রয়েছে।”
“দিরায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে-
انه يكره وقد ورد النهى عن النبى صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “কা’বা শরীফের ছাদের উপর নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়ার ব্যাপারে নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নিষেধ বাণী বর্ণিত রয়েছে।”
“মাআরিফে মাদানিয়া” কিতাবের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৮১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
بیت اللہ کی چھت پر احترام کعبہ کے خلاف ھونے کی وجہ سے ھے
অর্থ: “কা’বা শরীফের অবমাননা হওয়ার কারণে কা’বা শরীফের ছাদে নামায পড়া নিষেধ।
“মা’রিফুস সুনান” কিতাব-এর ৩য় খণ্ডের ৩৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وفوق ظهر بيت الله ذكر علمائنا الحنفية وجهه بأن فيه ترك التعظيم وسوء الأدب
অর্থ: বাইতুল্লাহ শরীফ বা কা’বা শরীফ-এর ছাদে নামায পড়া নিষেধ সম্পর্কে আমাদের হানাফী মাযহাবের উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা তার কারণ উল্লেখ করে বলেন যে, বাইতুল্লাহ শরীফ বা কা’বা শরীফ-এর ছাদে নামায পড়লে কা’বা শরীফ-এর অবমাননা হয় এবং বেয়াদবী হয় তাই কা’বা শরীফ-এর ছাদে নামায পড়া নিষেধ।
আর “বেয়াদব আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত।” যেমন, কিতাবে আছে-
بے ادب محروم گشت از لطف رب
অর্থ: “বেয়াদব আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত। আর “বেয়াদব আল্লাহ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে আল্লাহ পাক উনার আযাব-গযবে পতিত হবে।”
কিতাবে আরো উল্লেখ আছে, বিনা জরুরতে সাধারণ মসজিদের ছাদে উঠাও মাকরূহ।
যেমন “ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবের ৫ম খণ্ডের ৩২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
الصعود علي سطح كل مسجد مكروه
অর্থ: সাধারণত: সকল মসজিদ-এর ছাদে উঠা মাকরূহ তাহরীমী।
“ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া” কিতাবের ৯ম খণ্ডের ৩০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اور ہر مسجد کی چھت پر چڑھنا مکروہ ہی
অর্থ: সকল মসজিদ-এর ছাদে উঠা মাকরূহ্ তাহরীমী।
“মা’রিফুস সুনান” কিতাব-এর ৩য় খণ্ডের ৩৮৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
كراهة الصعود على سطح المسجد
অর্থ: সাধারণত: সকল মসজিদ-এর ছাদে উঠা মাকরূহ তাহ্্রীমী।
উল্লেখ্য, মসজিদের ছাদে উঠা মাকরূহ হওয়ার কারণ হচ্ছে তাতে মসজিদের তা’যীম ক্ষুণœ হয়। যদি সাধারণ মসজিদের ছাদে উঠলেই মসজিদের তা’যীম নষ্ট হয় তাহলে কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ-এর ছবি পা দিয়ে মাড়ালে কি এগুলোর তা’যীম নষ্ট হবে না? অবশ্যই হবে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যেমন, ছবি তোলা হারাম। এরপরেও যদি কোন ব্যক্তি তার পিতার ছবি তোলে, সেই ছবি যদি তৃতীয় কোন ব্যক্তি পা দিয়ে মাড়ায় তাহলে যার পিতার ছবি মাড়ানো হলো সে ব্যক্তি কি সেটা সম্মানজনক হিসেবে মেনে নিবে? কখনই সেটা সম্মাজনক হিসেবে গ্রহণ করবে না। বরং যার পিতার ছবি সে ঐ ব্যক্তির উপর গোস্বা করবে, যে তার পিতার ছবিকে মাড়িয়েছে। কারণ তার পিতার ছবিকে পা দিয়ে মাড়ানোর কারণে তার পিতাকে ইহানতই করা হয়েছে। ইজ্জত, সম্মান করা হয়নি।
উল্লেখ্য, কারো পিতার ছবি যদি পা দিয়ে মাড়ানোর কারণে ইহানত হয় তাহলে পবিত্র কা’বা শরীফ, মদীনা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ যা আল্লাহ পাক উনার শেয়ার, সেসবের ছবিকে পা দিয়ে মাড়ালে কি পবিত্র কা’বা শরীফ, মদীনা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ইহানত হবে না? অবশ্যই হবে।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
الكفر ملة واحدة
অর্থ: “সমস্ত কাফিররা, বিধর্মীরা মিলে এক দল।”
ক্রুসেডের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইহুদী-খ্রিস্টানরা মরিয়া হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের উপর একের পর এক হিংসাত্মক, মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক আঘাত হেনে চলেছে। তারা সম্মিলিত চক্রান্ত বা কূটকৌশলের মাধ্যমে মুসলমানদের পবিত্র ও সম্মানিত স্থান-পবিত্র কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফ সংলগ্ন মসজিদে নববী শরীফ এবং বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ছবি সম্বলিত অধিকাংশ জায়নামায তৈরি করে মুসলমানদের সম্মানিত জিনিসগুলোকে মুসলমানদের পায়ের নিচে ঠেলে দিয়ে মুসলমানদের দ্বারাই ইসলামের অবমাননা করিয়ে নিচ্ছে। মূলতঃ মুসলমানদের ঈমান হরণ করে নিচ্ছে।
উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে সাব্যস্ত হলো যে, সাধারণভাবে পবিত্র কা’বা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও আদবের খিলাফ। আর খাছভাবে হারাম ও নাজায়িয। আর মসজিদে নববী শরীফ-এর ছবি যদি রওযা শরীফসহ হয়, তবে তাতে নামায পড়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। কারণ এগুলো আল্লাহ পাক উনার শেয়ার বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর এগুলোকে তা’যীম-তাকরীম করা সকলের উপরই অপরিহার্য কর্তব্য। তাছাড়া আমভাবে সকলের মতেই মসজিদের ছবিযুক্ত বা নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সুন্নতের খিলাফ বা মাকরূহ এবং হুযূরী বিনষ্ট হওয়ার কারণ। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত।
পরিশেষে বলতে হয়ে যে, “জাতীয় পতাকার কাছে পা রাখলে যদি অবমাননার মামলা হয়, তবে আল্লাহ পাক উনার শিয়ার বা নিদর্শন কা’বা শরীফ, রওযা শরীফসহ মসজিদে নববী শরীফ, বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ছবি সম্বলিত জায়নামাযে পা রাখলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে কত মারাত্মক অবমাননাকর কাজ বলে গণ্য হতে পারে এবং তার জন্য কত কঠিন শাস্তি নির্ধারিত হতে পারে?”
০৯.০১.২০০৮ ঈসায়ী তারিখে দৈনিক আল ইহসান পত্রিকায় প্রকাশ অস্ট্রেলিয়ায় হপম্যান কাপ টুর্নামেন্ট একটি ম্যাচ দেখার সময় কুখ্যাত সানিয়া মির্জার পা ভারতের জাতীয় পতাকার সামনে থাকায় এবং সে ছবি টিভিতে দেখে ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজকুমার দুবে নামে একজন আইনজীবী সানিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। ভারতীয় আইনজীবী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছে, “সানিয়া এমন বেখেয়ালীভাবে ম্যাচটি দেখছিলেন যে তার পা কোথায় সে বোধ তখন তার ছিল না। তিনি কি ভুলে গেছেন ভারতীয়দের কাছে তিন রং (জাতীয় পতাকা) এর মূল্য কতটুকু। তার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।”
সুতরাং বেখেয়ালীভাবে পা পতাকার কাছে গেলেই যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা উঠে, তাহলে ইচ্ছাকৃতভাবে কা’বা শরীফ-এর ছবি বা নকশা খচিত জায়নামাযে যদি কেউ পা রাখে, তাহলে কা’বা শরীফ বা বায়তুল্লাহ শরীফ-এর কত বড় জঘন্য অবমাননাকারী বলে গণ্য হবে এবং আল্লাহ পাক তাকে কত কঠোর শাস্তি দিবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)
তাই ভারতীয় জাতীয় পতাকার অবমাননার কথিত এই ঘটনা থেকে মুসলমানদের অনেক নছীহতের অবকাশ রয়েছে। ইসলাম ও ইসলামের শিয়ারের অবমাননাকারীদের চিহ্নিত করার বিষয় রয়েছে।
আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন আল্লাহ পাক উনার হাবীব ও আখিরী রসূল। উনাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ পাক তিনি কিছুই সৃষ্টি করতেন না। আর এটা ইজমা হয়ে গেছে যে, রওযা শরীফে যেখানে আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রয়েছেন, সেখানে উনার অজুদ মুবারকের সাথে যে মাটি মুবারক স্পর্শ করে আছে তার মর্যাদা আল্লাহ পাক উনার আরশে পাক-এর চেয়েও বেশি। সেখানে সে মহা সম্মানিত রওযা শরীফ-এর ছবি যদি কেউ জায়নামাযে রাখে বা রওযা শরীফ-এর ছবি সম্বলিত জায়নামায ব্যবহার করে, তাতে পা রাখে (নাঊযুবিল্লাহ) তাহলে সে কত নিকৃষ্ট ও নাফরমান ও বেয়াদব হিসেবে গণ্য হবে। কত বড় জাহান্নামী সে হবে? কত কঠিন তার শাস্তি হবে? (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)
অতএব, মাসিক মদীনার সম্পাদক ও তার সমজাতীয়দের ক্বিয়াসও ভুল এবং বাতিল প্রমাণিত হলো। কেননা, পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফসহ ইত্যাদি মসজিদসমূহের ছবিযুক্ত জায়নামাযের উপর নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী, হারাম ও ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী।
আর মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায যে কারণে পড়তে নিষেধ করা হয় তা প্রাণীর ছবি হিসেবে নয়। বরং পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এর তা’যীম বা সম্মানার্থে।
কারণ পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ হচ্ছে- আল্লাহ পাক উনার শেয়ার বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং অশেষ কল্যাণের কারণও বটে। যার বর্ণনা অত্র সুওয়ালের শুরুতেই করা হয়েছে।
অতএব, মাসিক মদীনা এবং তার সমজাতীয় অখ্যাত মাসিক পত্রিকার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে মাসিক মদীনার সম্পাদক এবং সমজাতীয় মৌলভীরা বেয়াদব ও জাহিল হওয়ার কারণে এ ধরনের বক্তব্য পেশ করতে পেরেছে। কাজেই এ ধরনের জাহিল ও বেয়াদবের জিহালতপূর্ণ ও বেয়াদবিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকা প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
সুতরাং বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববী শরীফ-এর নকশা বা ছবিবিশিষ্ট জায়নামাযে নামায পড়া, বসা, পা রাখা ক্ষেত্রবিশেষে মাকরূহ তাহরীমী, হারাম ও কুফরী।
এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ২০, ৪৭, ৫৭, ৮১, ৮৯ ১১৪ ও ১৮৮তম সংখ্যা পড়–ন। সেখানে মাসিক মদীনা ও হাটহাজারীর মৌলভীদের মাসিক পত্রিকার জিহালতপূর্ণ ও বেয়াদবীমূলক বক্তব্যকে খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।
এবার তৃতীয়বারের মত মাসিক মদীনা পত্রিকার জিহালতপূর্ণ ও বেয়াদবীমূলক বক্তব্যকে খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হলো।
দলীলসমূহ:(১) তাফসীরে মাযহারী, (২) তিরমিযী শরীফ, (৩) ইবনে মাযাহ শরীফ (৫) মাবসূত (৬) মিশকাত শরীফ (৭) মিরকাত শরীফ (৮) মা’রিফুস সুনান ৯) কুদুরী (১০) হিদায়া শরীফ (১১) মুগনী (১২) মাদুনা (১৩) কাহাস্তানী (১৪) মুফীদ (১৫) ফতহুল কাদীর (১৬) কিফায়া (১৭) ঈনায়া (১৮) আলমগীরী (১৯) ফতওয়ায়ে হিন্দিয়া (২০) দুররুল মুখতার (২১) রদ্দুল মুহতার (২২) শামী (২৩) আল লুবাব লিল মাইদানী (২৪) মাআরিফে মাদানিয়া (২৫) দিরায়া (২৬) জাওহারাতুন নাইয়্যারাহ।
মুহম্মদ বেলাল হুসাইন, বাংলা বাজার, ঢাকা
মুহম্মদ হাবীবুর রহমান, কাকরাইল, ঢাকা
মুহম্মদ আরিফুর রহমান, মগবাজার, ঢাকা
মুহম্মদ ছাবের আলী, বাইতুল মোকাররম, ঢাকা
মুহম্মদ জুনাইদ, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম
সুওয়াল: আমরা জানি, শরীয়তে ছবি তোলা হারাম ও কবীরা গুনাহ এবং বেপর্দা হওয়াও হারাম ও কবীরা গুনাহ। কিন্তু বর্তমানে পুরুষ ও মহিলাকে হজ্জের ফরযটি পালন করতে হলে বিশেষ করে ছবি ও বেপর্দা এ দু’টি হারাম ও কবীরা গুনাহর সম্মুখীন হতে হয়। এমতাবস্থায় হজ্জ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের কি হুকুম? দলীল-আদিল্লাহ সহকারে বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: হজ্জ করা প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
اتموا الحج والعمرة لله
অর্থ: “আল্লাহ পাক উনার জন্যেই তোমরা হজ্জ ও উমরাহ আদায় কর বা পূর্ণ কর।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ ১৯৬)
এ আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক তিনি বান্দাকে শুধুমাত্র আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরাহ করার জন্য আদেশ করেছেন। আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে যেমন- আনন্দ ভ্রমণ, ভিক্ষাবৃত্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য, সুনাম-সুক্ষাতি, রিয়া বা লৌকিকতা এক কথায় গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরাহ করতে নিষেধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ياتى على الناس زمان يحج الاغنياء للنزاهة و اوسطهم للتجارة وفقرائهم للمسئلة وعلمائهم للسمعة والرياء
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মানুষের উপর এমন একটা যামানা বা সময় আসবে সেসময় ধনী ব্যক্তিরা হজ্জ করবে আনন্দ ভ্রমনের জন্য, মধ্যবৃত্ত ব্যক্তিরা হজ্জ করবে ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে, দরিদ্ররা হজ্জ করবে ভিক্ষার উদ্দেশ্যে এবং আলিম নামধারীরা হজ্জ করবে সুনাম অর্জন ও রিয়া বা লৌকিকতার উদ্দেশ্যে।”
আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ করেন-
ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا
অর্থ: “আল্লাহ পাক উনার জন্যেই মানুষের প্রতি হজ্জ করা ফরয- যার পথের সামর্থ ও নিরাপত্তা রয়েছে।” (সূরা আল ইমরান: আয়াত শরীফ ৯৭)
অর্থাৎ, যার পথের সামর্থ ও নিরাপত্তা নেই তার প্রতি হজ্জ ফরয নয়। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت ابى امامة رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من لم يمنعه من الحج حاجة ظاهرة او سلطان جابر او مرض حابس
অর্থাৎ: “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, কোন ব্যক্তির হজ্জ ফরয হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধকারী বিষয় হচ্ছে, প্রকাশ্য বাধা অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর অসুখ।” (মাছাবীহুস সুন্নাহ, দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)।
অর্থাৎ, কোন ব্যক্তির হজ্জ করার ক্ষেত্রে শরয়ী প্রকাশ্য কোন বাধা থাকলে অথবা অত্যাচারী শাসকের কারণে জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকলে অথবা কঠিন অসুস্থতা থাকলে তার উপর হজ্জ ফরয হওয়া সত্ত্বেও তা সাকিত বা রহিত হয়ে যাবে।
উল্লিখিত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, “প্রত্যেক স্বাধীন, বালেগ, সুস্থ, দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন মুসলমানের যদি সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় থাকে, যানবাহনের সুষ্ঠ ব্যবস্থা থাকে এবং জান,মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা থাকে, তবে তার প্রতি জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। মহিলাদের জন্য স্বামী অথবা কোন সৎচরিত্রবান মাহরাম সঙ্গে থাকতে হবে।”
প্রতিভাত হলো, গোলাম, নাবালেগ, অসুস্থ, অন্ধ ও অমুসলমানের উপর হজ্জ ফরয নয়। আবার যাদের সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় নেই, যানবাহনের সুষ্ঠ ব্যবস্থা নেই, তাদের উপরও হজ্জ ফরয নয়। একইভাবে যাদের হজ্জের পথে প্রাণ নাশের আশংকা রয়েছে,মাল ছিনতাইয়ের ভয় রয়েছে, ঈমান ও আমল নষ্ট হওয়ার অর্থাৎ কোন কুফরী ও হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদের উপরও হজ্জ ফরয নয়। আর মহিলাদের যদি স্বামী অথবা কোন সৎচরিত্রবান মাহরাম না থাকে তবে তাদের উপর হজ্জ ফরয হবে না।
শরীয়ত যার উপর হজ্জ ফরয করেনি তারপরও যদি সে হজ্জ করে আর তা করতে গিয়ে হজ্জের শর্ত বা ফরয লঙ্ঘন করে তাহলে সে কবীরা গুণাহে গুণাহগার হবে।
যেমন কোন ব্যক্তির সাংসারিক প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় নেই অথচ হজ্জ করতে গেল। এদিকে পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের কষ্টের জন্য সে ব্যক্তির কবীরা গুণাহ হবে।
আবার যে ব্যক্তির প্রাণ নাশের আশঙ্কা রয়েছে এটা জানা সত্বেও সে যদি হজ্জে রওয়ানা করে এবং পথে তাকে হত্যা করা হয়, এজন্য সে আত্মহত্যার গুণাহে গুণাহগার হবে।
আবার যে ব্যক্তির মাল ছিনতাইয়ের ভয় রয়েছে এটা জানা সত্বেও সে যদি হজ্জে রওয়ানা করে এবং তার মাল ছিনতাই হয়ে যায়। এজন্য সেই উক্ত অপরাধের জন্য দায়ী হবে।
একইভাবে যাদের ঈমান ও আমল নষ্ট হওয়ার অর্থাৎ কোন কুফরী ও হারাম কাজ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এটা জানা সত্বেও তারা যদি হজ্জে রওয়ানা করে এবং তাদের দ্বারা কুফরী ও হারাম কাজ সংঘটিত হয় তাহলে এজন্য তাদের কুফরী ও কবীরা গুণাহ হবে।
অনুরূপ মহিলাদের সাথে স্বামী কিংবা কোন সৎচরিত্রবান মাহরাম পুরুষ সঙ্গে না নিয়ে তারা যদি হজ্জে রওয়ানা করে এবং পথে কোন অশালীন কাজ সংঘটিত হয়। এজন্য তারাই কঠিন গুণাহে গুণাহগার হবে।
তাই হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য উল্লিখিত সকল প্রকার কবীরা ও কুফরী গুণাহ থেকে বেঁচে থাকা শর্ত করা হয়েছে। এ মর্মে আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক-এ ইরশাদ করে জানিয়ে দিয়েছেন-
فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال فى الحج وما تفعلوا من خير يعلمه الله وتزودوا فان خير الزاد التقوى واتقون ياولى الالباب.
অর্থ: “যে ব্যক্তির প্রতি হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালনের ক্ষেত্রে নির্জন অবস্থান ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমুলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। আর তোমরা যে নেক কাজ কর তা আল্লাহ পাক জানেন। তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ ১৯৭)
উল্লেখ্য, ছবি তোলা এবং পর্দা তরক করা আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রকাশ্য নাফরমানী।
এ সম্পর্কে বহু হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে, তারমধ্যে জরুরত আন্দাজ কতিপয় হাদীছ শরীফ এখানে উল্লেখ করা হলো-
قال حدثنا حضرت الاعمش رضى الله تعالى عنه عن حضرت مسلم رضى الله تعالى عنه قال كنا مع حضرت مسروق رضى الله تعالى عنه فى دار حضرت يسار بن نمير رضى الله تعالى عنه فراى فى صفته تماثيل فقال سمعت حضرت عبد الله رضى الله تعالى عنه قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذابا عند الله المصورون.
অর্থ: “হযরত আ’মাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি হযরত মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে হযরত ইয়াসার ইবনে নুমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার নিকট শুনেছি, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)
عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ২০১)
عن حضرت ام المؤمنين عائشة عليها السلام حدثته ان النبى صلى الله عليه وسلم لم يكن يترك فى بيته شيئا فيه تصاليب الا نقضه.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘরে প্রাণীর ছবি বা ছবিযুক্ত সকল জিনিস (থাকলে) ধ্বংস করে ফেলতেন।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮০, মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩৮৫)
عن حضرت ابى زرعة رضى الله تعالى عنه قال دخلت مع حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه دار بالمدينة فراها فيها تصاوير وهى تبنى فقال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول يقول الله عز وجل ومن اظلم ممن ذهب يخلق خلقا كخلقى فليخلقوا ذرة او ليخلقوا حبة او ليخلقوا شعيرة.
অর্থ: হযরত আবু যুরয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে মদীনা শরীফ-এর একটি ঘরে প্রবেশ করলাম, অতঃপর তিনি ঘরের উপরে এক ছবি অংকনকারীকে ছবি অঙ্কন করতে দেখতে পেলেন এবং বললেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি ইরশাদ করেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বাধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক উনার সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছূরত সৃষ্টি করে। তাকে বলা হবে একটি শস্যদানা অথবা একটি পিপিলিকা অথবা একটি যবের দানা সৃষ্টি করোতো দেখি। কিন্তু সে সেটা করতে পারবে না। (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ ৮৮০)
عن حضرت ابى حجيفة رضى الله تعالى عنه عن ابيه ان النبى صلى الله عليه وسلم نهى عن ثمن الدم وثمن الكلب وكسب البغى ولعن اكل الربى وموكله والواشمة والمستوشمة والمصور.
অর্থ: হযরত আবু হুজায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন। “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রক্তের দাম, ও কুকুরের দাম নিতে এবং ব্যাভিচারকারীনীর উপার্জন নিষেধ করেছেন, এবং তিনি লা’নত বা অভিসম্পাত করেছেন ওইসব লোকদের উপর যে ঘুষ খায়, যে ঘুষ দেয়, যে অংগে উলকি আঁকে এবং যে আঁকায়, আর যে ছবি অংকন করে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ৮৮১)
عن حضرت ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة عذابا المصورون.
অর্থ: হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। “নিশ্চয় ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আজাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০১)
عن حضرت سعيد رضى الله تعالى عنه قال جاء رجل الى حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه فقال انى رجل اصور هذه الصور فافتنى فيها فقال له ادن منى فدنا منه ثم قال ادن منى فدنا حتى وضع يده على راسه وقال انبئك بما سمعت من رسول الله صلى الله عليه وسلم وسمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول كل مصور فى النار يجعل له بكل صورة صورها نفسا فيعذبه فى جهنم وقال ان كنت لا بد فاعلا فاصنع الشجر وما لا نفس له.
অর্থ: হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর ছবি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। তিনি উনার নিকটবর্তী হলেন। পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। তিনি আরো নিকটবর্তী হলেন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার মাথায় হাত মুবারক রেখে বললেন, আমি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক প্রাণীর ছবি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে। আর মহান আল্লাহ্ পাক তিনি প্রত্যেকটি ছবিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই ছবিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” অত:পর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তোমার যদি ছবি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০২)
عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم امر عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه زمن الفتح وهو بالبطحاء ان ياتى الكعبة فيمحو كل صورة فيها فلم يدخلها النبى صلى الله عليه وسلم حتى محيت كل صورة فيها.
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হুকুম করলেন- তিনি যেন পাথর দিয়ে ক্বাবা ঘরের সমস্ত মূর্তি বা চিত্রগুলি ধ্বংস করে দেন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কা’বা ঘরের মূর্তি বা চিত্রগুলো ধ্বংস না করা পর্যন্ত কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন না। (আবু দাঊদ শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২১৯)
عن حضرت عيسى بن حميد رحمة الله عليه قال سال حضرت عقبة رحمة الله حضرت الحسن رضى الله تعالى عنه قال ان فى مسجدنا ساحة فيها تصاوير قال انحروها.
অর্থ: হযরত ঈসা ইবনে হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ওকবা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমাদের মসজিদে প্রাণীর ছবিযুক্ত একখানা কাপড় রয়েছে, এ ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা কি? তখন হযরত হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, তুমি (মসজিদ থেকে) ওটা সরিয়ে ফেল। (মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা ২য় জিঃ পৃষ্ঠা ৪৬)
عن حضرت اسامة رضى الله تعالى عنه قال دخلت مع النبى صلى الله عليه وسلم الكعبة فرايت فى البيت صورة فامرنى فاتيته بدلو من الماء فجعل يضرب تلك الصورة ويقول قاتل الله قوما يصورون ما لا يخلقون.
অর্থ: হযরত উসামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে পবিত্র ক্বাবা ঘরে প্রবেশ করলাম। আমি ক্বাবা ঘরের ভিতরে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলাম। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হুকুমে আমি পাত্রে করে পানি নিয়ে আসলাম। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ ছবিগুলিতে পানি নিক্ষেপ করলেন এবং বললেন, “আল্লাহ্ পাক তিনি ঐ গোত্রের সাথে জ্বিহাদ ঘোষণা করেছেন, যে গোত্র এরূপ প্রাণীর ছূরত তৈরী করে। যা সে তৈরী করতে অক্ষম অর্থাৎ জীবন দিতে পারেনা।” (মুছান্নেফ ইবনে আবী শায়বা ৮ম জিঃ পৃঃ২৯৬, তাহাবী ২য় জিঃ পৃঃ৩৬৩)
অনুরূপ অসংখ্য অগণিত হাদীছ শরীফ রয়েছে, যার মাধ্যমে প্রাণীর ছবি তোলা, আঁকা রাখা ইত্যাদিকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম উনাদের পক্ষ থেকে যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ তাই শরীয়তে হারাম হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। আর এ কারণেই অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণ উনারা উনাদের কিতাবে প্রাণীর ছবি তোলাকে হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ফখরুল মুহাদ্দিছীন, আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ বুখারী শরীফের শরাহ “উমদাতুল ক্বারী”-এর ২২ খণ্ড ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেন-
صورة الحيوان حرام اشد التحريم وهو من الكبائر وسواء صنعه لما يمتهن او بغيره فحرام بكل حال.
অর্থ: “প্রাণীর ছবি তৈরী করা শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ। সম্মানের জন্য তৈরী করুক অথবা অন্য কারণে, সবটার একই হুকুম। অর্থাৎ প্রত্যেক অবস্থাতেই তা হারাম।
অনুরূপভাবে পর্দা তরক করা যে স্বয়ং খালিক্ব মালিক রব আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রকাশ্য নাফরমানীর অন্তর্ভুক্ত এ সম্পর্কে বহু আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফ ইরশাদ হয়েছে। সেসব আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ থেকে কতিপয় এখানে উল্লেখ করা হলো-
قل للمؤمنين يغضوا من ابصارهم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤمنت يغضضن من ابصارهن ويحفظن فروجهن ولا يبدين زينتهن.
অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মু’মিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তিনি তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মু’মিনা নারীদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর-৩০,৩১)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا حضرت على رضى الله تعالى عنه لا تتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থ: “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! দৃষ্টিকে অনুসরণ করবেননা। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ্ লেখা হয়ে থাকে। (আহমদ, তিরমিযী শরীফ, আবু দাঊদ শরীফ, দারিমী, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت حسن رحمة الله عليه مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থ: “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌছেছে, যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ পাক উনার লা’নত।” (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক উনার কালাম পাক এবং আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন।
গবেষণা করে দেখা গেছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা সে প্রতি দু’সেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশ’টি এবং এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরা গুনাহ্ লিখা হয়। এ হিসাব একজন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে। আর যদি কোন জনসমাবেশে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরষ্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহর পরিমাণ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
ধরা যাক, কোন জনসমাবেশের সময় ৩ ঘণ্টা আর পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ১০০+ ১০০= ২০০ জন। এখন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করার কারণে এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরা গুনাহ হয় তাহলে একশজন পুরুষ ও একশজন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে ৩৬ লক্ষ এবং তিন ঘণ্টায় হবে ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ।
অথচ একজন মানুষ যদি একশ বছর হায়াত পায়। আল্লাহ পাক না করুন সে যদি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত (ফরয হওয়া সত্ত্বেও) কিছুই না করে তারপরও ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ হবে না। যেমন, একশ বছরে অর্থাৎ জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয। তা না করার কারণে ১টা কবীরা গুনাহ। যাকাত একশ বছরে একশটা ফরয। তা না দেয়ার কারণে ১০০টা কবীরা গুনাহ। রোযা ২৯ বা ৩০ টা। হিসাবের সুবিধার্থে যদি ৩০টা ধরে নেয়া হয় তা না রাখার কারণে একশ বছরে ৩,০০০ কবীরা গুনাহ। এরপর নামায দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ৫টা, এক ওয়াক্ত ওয়াজিব ১টা, সুন্নতে মুয়াক্কাদা- ফজরের ফরযের পূর্বে ১টা, যুহরের ফরযের আগে-পরে ২টা, মাগরিবের ফরযের পর ১টা, ইশার ফরযের পর ১টা মোট ৫টা। তা আদায় না করার কারণে সবমিলে দৈনিক ১১টা কবীরা গুনাহ। বছরে ত্রিশ তারাবীহ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা)। তা আদায় না করার কারণে ৩০টা এবং দু’ঈদ (ওয়াজিব) তা আদায় না করার কারণে ২টা। মোট ৩২টা কবীরা গুনাহ। এক বছরে নামায- ৪,০৪৭০০, যাকাত- ১০০, রোযা- ৩০০০, হজ্জ- ১টা, সর্বমোট ৪,০৭৮০১টা।
অর্থাৎ একশ বছর কোন ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত না করলে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হলো মাত্র ৪ লাখ ৭ হাজার আটশ’ একটা।
আর একজন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি কোন জনসমাবেশে যোগ দেয় যে জনসমাবেশে পুরুষ বা মহিলার সংখ্যা কমপক্ষে একশ’ জন এবং সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করে তাহলে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণে তার কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে আঠারো লক্ষ। আর লোক সংখ্যা বেশি হলে এবং বেশি সময় অবস্থান করলে কত লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহ হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে পর্দার কত গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
কাজেই যারা হজ্জ করতে গিয়ে বেপর্দা হয়, তারা দৈনিক যে কত কোটি কোটি কবীরা গুনাহ করে থাকে তা আল্লাহ পাক তিনিই বেহ্তর জানেন।”
এটা তো শুধু চোখের গুণাহর কথা বলা হলো। তদ্রূপ প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العينان زناهما النظر والاذنان زناهما الاستماع واللسان زناها الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذبه.
অর্থ: “হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, কানযুল উম্মাল)
অর্থাৎ যারা বেপর্দা হয়ে থাকে হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক তারা সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা অবৈধ কাজ তথা ব্যভিচারে মশগুল বা লিপ্ত।
স্মরণীয় যে, হজ্জ করা যেমন আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ তদ্রুপ পর্দা করা এবং ছবি তোলা থেকে বিরত থাকাও আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ।
একটা আদেশ অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই। এ মর্মে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
افتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض فما جزاء من يفعل ذلك منكم الا خزى فى الحيوة الدنيا ويوم القيامة يردون الى اشد العذاب وما الله بغافل عما تعملون.
অর্থ: “তোমরা কিতাবের কিছু হুকুম মানবে আর কিছু হুকুম অমান্য করবে (তা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়)। যে ব্যক্তি এরূপ করবে তার পরিণাম হচ্ছে, সে পার্থিব জীবনে লাঞ্চিত হবে এবং পরকালে কঠিন আযাবে নিক্ষিপ্ত হবে। আর আল্লাহ পাক তোমাদের আমল সম্পর্কে বেখবর নন।” (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ ৮৫)
কাজেই, ছবি ও পর্দার আদেশ তরক করে যারা হজ্জ করবে তাদের সে হজ্জ কস্মিনকালেও আদায় হবে না। এটাই শরীয়ত তথা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর সঠিক ফতওয়া। যা প্রকাশ করেন “হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদ আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি।”
তিনি বলেন, পর্দাহীনতা ও ছবির প্রচলন এটা মুসলমানের ঈমান-আমল নষ্ট করার ক্ষেত্রে ইহুদী-নাছারাদের একটা বড় ষড়যন্ত্র। ইহুদী-নাছারা তথা তাবৎ কাফির ও মুশরিকরা সদা তৎপর, মুসলমানদেরকে তাদের ঈমান-আক্বীদা, আমল-আখলাক্ব বিধ্বংসী কর্মকা-ে মশগুল করে দিয়ে জাহান্নামী বানানো।
কাফির মুশরিকদের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক-এ ঘোষণা করে দেন যাতে মুসলমানরা সাবধান, সতর্ক হতে পারে। যেমন আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
ود كثير من اهل الكتاب لو يردونكم من بعد ايمانكم كفارا حسدا من عند انفسهم
অর্থ: আহলে কিতাব তথা ইহুদী-নাছারাদের অধিকাংশই তাদের হিংসাবশত এই কামনা (ষড়যন্ত্র) করে যে, ঈমান আনার পর তোমাদেরকে কাফির বানানোর জন্য। (সূরা বাক্বারা: আয়াত শরীফ ১০৯)
মুসলমানদের ঈমান-আমল নষ্ট করে মুসলমানদেরকে জাহান্নামী বানানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে কাফির-মুশরিকরা মুসলমান নামধারী মুনাফিক উলামায়ে ছূ ও গোমরাহ শাসকদের মাধ্যমে ছবি ও বেপর্দার প্রচলন ঘটিয়েছে। এমনকি মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগীগুলো যাতে বরবাদ হয় সেক্ষেত্রেও তারা তাদের ষড়যন্ত্রগুলো কাজে লাগিয়ে থাকে। বিশেষ করে ছবি ও বেপর্দা এ বিষয় দু’টি এমন বিষয় যে বিষয় দু’টি মুসলমানদেরকে জাহান্নামী করার জন্য যথেষ্ট। নাঊযুবিল্লাহ! কারণ হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, বেহেশতের দরজায় লেখা রয়েছে-
الديوث لا يدخل الجنة
অর্থ: দাইয়ূছ অর্থাৎ যে পুরুষ কিংবা মহিলা নিজে পর্দা করে না এবং তার অধিনস্তদেরকে পর্দা করায় না সে বেহেশতে প্রবেশ করবে না। (মুসনাদে আহমদ)
একইভাবে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
كل مصور فى النار
অর্থ: প্রত্যেক ছবি তোলনেওয়ালা বা তোলানেওয়ালা জাহান্নামী। (মুসলিম শরীফ)
এখন মুসলমান নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি যত ইবাদত-বন্দেগী বা আমলই করুক তাকে যদি দাইয়ূছ ও মুছাওয়ির অর্থাৎ ছবি তুলনেওয়ালা বা তোলানেওয়ালা বানানো যায় তাহলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেল। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ইবলীস শয়তান যেভাবে সফল একইভাবে ইবলীসের দোসর তাবৎ কাফির-মুশরিকরাও সফল। নাঊযুবিল্লাহ!
তাই মুসলমানকে জাহান্নামী করার জন্য কাফির-মুশরিকরা উল্লেখযোগ্য হাতিয়ার হিসেবে ছবি ও বেপর্দা এ বিষয় দু’টিকে বেছে নিয়েছে আর মুসলমানরা তাদের সেই ষড়যন্ত্রের জালে পা দিয়ে জাহান্নামের দিকে ধাবিত হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ!
এখন কেউ বলতে পারে, ছবি ও বেপর্দার কারণে তাহলে কি হজ্জ করা বন্ধ থাকবে? এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, হ্যাঁ, হজ্জ ফরয হলে তো অবশ্যই করতে হবে। সেজন্য যে দেশে হজ্জের জন্য ছবি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সে দেশের সরকারকে বলতে হবে, তিনি যেন ছবি ব্যতীত হজ্জে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এবং বিশেষ করে সউদী সরকারকে বলতে হবে, তিনি যেন ছবি ব্যতীত এবং মহিলাদের পর্দার সহিত হজ্জ করার সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে দেন। আর মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফে স্থাপিত সি সি ক্যামেরা ও টিভি সরিয়ে ফেলেন। কারণ এসব হজ্জ পালন করার ক্ষেত্রে সর্বোপরি হজ্জে মাবরূর (মক্ববুল) হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়।
যদি দেশের সরকার এবং সউদী সরকার ছবির ব্যবস্থা তুলে না নেন এবং পর্দার সাথে হজ্জ করার সুষ্ঠু ব্যবস্থা না করেন তাহলে তারা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত সুলতানে জায়ির বা অত্যাচারী শাসক হিসেবে গণ্য হবেন। আর তাদের আমলটা হবে হাদীছ শরীফ অনুযায়ী হাজতে যাহিরা বা হজ্জের নিষেধকারী প্রকাশ্য বাধা যা বর্তমান থাকলে হজ্জের ফরয সাকিত বা রহিত হয়ে যায়। যেরূপ মহিলাদের হজ্জ ফরয হওয়ার সমস্ত শর্ত থাকার পরও শুধুমাত্র স্বামী কিংবা সৎচরিত্রবান কোন মাহরাম পুরুষ না থাকার কারণে তাদের উপর হজ্জের ফরয সাকিত বা রহিত হয়ে যায়।
প্রতিভাত হলো যে, শুধু টাকা-পয়সা থাকলেই হজ্জ ফরয হয় না। বরং হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য যেমন যাতায়াতের সামর্থ থাকা শর্ত তেমনি শর্ত হচ্ছে জান-মাল, ইজ্জত, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তার।
এখন কেউ যদি সত্যিই আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্যেই হজ্জ করতে চায় তাহলে তাকে উল্লিখিত শর্ত মুতাবিক হজ্জ করতে হবে। আর যদি কেউ গইরুল্লাহ’র উদ্দেশ্যে বা আলহাজ্জ ও হাজী খিতাব লাভের উদ্দেশ্যে হজ্জ করতে চায় তবে তার মাসয়ালা আলাদা।
উল্লেখ্য, হজ্জের জন্য যখন ছবি তুলতে বাধ্য হতে হয় এবং ছবি তোলার কারণে মহিলাদের পর্দা তরক হয় এছাড়া সউদী ওহাবী সরকারের মদদে মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ হজ্জের স্থানসমূহে শত শত সিসি টিভি ও ক্যামেরা স্থাপন করে কোটি কোটি ছবি তোলা হয় এবং পর্দার প্রতিকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে পুরুষ-মহিলা উভয়ের পর্দা নষ্ট করা হয় তখন এ অবস্থায় কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর নির্দেশ মুতাবিক মুসলমানদের জন্য কি করণীয় তা ছহীহ মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-
من را منكم منكرا فليغيره بيده فان لم يستطع فبلسانه فان لم يستطع فبقلبه وذلك اضعف الايمان. وفى رواية ليس وراء ذلك من الايمان حبة خردل.
অর্থ: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় বা হারাম কাজ সংঘটিত হতে দেখে সে যেনো তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে না পারে তাহলে সে যেনো যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে তাহলে যেনো অন্তরে তা ঘৃণা করে উক্ত অন্যায় বা হারাম কাজ থেকে দূরে সরে থাকে। আর এটা সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।” অন্য বর্ণনায় এসেছে, এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণ অংশও অবশিষ্ট থাকে না।”
অর্থাৎ প্রথমতঃ হাতে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা হাতে বাধা দিবে না। দ্বিতীয়তঃ মুখে বাধা দেয়ার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যারা মুখে বাধা দিবে না। তৃতীয়তঃ অন্তরে খারাপ জেনে যারা দূরে সরেও থাকবে না। তাদের মূলত ঈমান নেই। অথচ হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য ঈমান থাকা বা ঈমানদার হওয়া প্রথম ও পূর্ব শর্ত।
উপরন্তু ছবি ও বেপর্দার মতো কঠিন হারাম ও কবীরা গুনাহর মধ্যে ডুবে গিয়ে যারা হজ্জ পালনের ইচ্ছা করবে তাদের সে হজ্জ কবুল হওয়া তো দূরের কথা সে হজ্জই তাদের জন্য লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে। কেননা ছহীহ হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত রয়েছে, যে বেপর্দা হয় সে লা’নতগ্রস্ত, দাইয়ূছ ও জাহান্নামী। একইভাবে যে ছবি তোলে সেও জাহান্নামী ও গযবপ্রাপ্ত।
তাই হজ্জ ও উমরাহ করার পর যেখানে আমল আরো ভাল হওয়ার কথা সেখানে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত। নাঊযুবিল্লাহ। এর মানে হলো- শরীয়তের হুকুম মুতাবিক হজ্জ ও উমরাহ পালিত হয়নি।
অতএব, শরীয়তের হুকুম মুতাবিক হজ্জ ও উমরাহ করার জন্য যামানার মহানতম ইমাম ও মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী উনার অনবদ্য তাজদীদ সউদী সরকারসহ প্রত্যেক সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া এবং তা মানতে বাধ্য করা।
উল্লেখ্য, শরীয়তের কোথাও এরূপ কোন বাধ্য বাধকতা নেই যে, শরীয়তের এক হুকুম অমান্য করে আরেক হুকুম মান্য করতে হবে। বরং ‘রাহনুমায়ে হুজ্জাজ’ কিতাবে উল্লেখ আছে-
لا يليق بالحكمة ايجاب فرض على وجه يفوته فرض اخر.
অর্থাৎ: “এটা হিকমত ও শরীয়তবিরোধী যে, এক ফরয আদায় করতে গিয়ে অপর ফরয বাদ দেয়া।”
আরো উল্লেখ্য, কেউ কেউ বলে কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
الضرورة تبيح المحظورات.
অর্থাৎ “প্রয়োজনে হারাম বিষয়ও মুবাহ হয়ে যায়।”
অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হলো হজ্জের জন্য ছবি তুললে কোন গুনাহ হবে না, কারণ তা প্রয়োজনবশত বা মা’যূরের কারণে তোলা হয়।
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য বা যুক্তি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এটা কখনই মা’যূরের পর্যায়ে পড়ে না। কেননা হজ্জ করার জন্য সরকার বা অন্য কারো পক্ষ থেকে কাউকে বাধ্য করা হয়নি। তাছাড়া ঈমান-আমলের নিরাপত্তা না থাকার কারণে হজ্জই যেখানে ফরয নয় সেখানে সে কি করে মা’যূর হলো। এখন কোন মহিলা যদি বলে যে, আমার সম্পদ রয়েছে কিন্তু মাহরাম নেই এক্ষেত্রে আমি মা’যূর তাই মাহরাম ছাড়াই হজ্জ করবো; তার এটা গ্রহণযোগ্য বা শরীয়ত সম্মত হবে কি? কস্মিনকালেও না। কারণ মাহরাম না থাকলে হজ্জই ফরয হয় না। আর হজ্জই যদি ফরয না হয় তবে সে মা’যূর হলো কিভাবে?
বরং সরকারের পক্ষ থেকে হজ্জের ক্ষেত্রে ছবি তোলাকে আবশ্যক করাটাই মূলত হজ্জ ফরয না হওয়ার একটি অন্যতম কারণ। কেননা শরীয়তের দৃষ্টিতে যারা নেক কাজে বাধা দেয় এবং হারাম কাজ করতে বাধ্য করে তারা যালিমের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
ومن اظلم ممن منع مساجد الله ان يذكر فيها اسمه وسعى فى خرابها.
অর্থ: “ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় যালিম কে? যে মসজিদে আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক-এর যিকির করতে বাধা দেয় এবং তা বিনষ্ট করার কোশেশ করে।” অর্থাৎ যারা নেক কাজে বাধা দেয় এবং হারাম কাজ করতে বাধ্য করে তারা সবচেয়ে বড় যালিম। (সূরা বাক্বারা-১১৪)
আর পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে একটি শর্ত হলো- যালিম বাদশা কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত না হওয়া।
আর বর্তমানে হজ্জের জন্য ছবি তোলাকে আবশ্যক করা বা ছবি তুলতে বাধ্য করাটাই হচ্ছে যালিম বাদশার পক্ষ থেকে হজ্জ করার ক্ষেত্রে বাধা স্বরূপ। তাই এক্ষেত্রে সম্পদ থাকার পরও তার উপর হজ্জ ফরয হবে না।
মূল কথা হলো: হজ্জ ইসলামের একটি অন্যতম বুনিয়াদী ও ফযীলতপূর্ণ ফরয ইবাদত। যা অস্বীকার করা কাট্টা কুফরী। তবে হজ্জ অবশ্যই শর্ত সাপেক্ষে ফরয। বিশেষ করে হজ্জ করতে গিয়ে যদি হারাম-নাজায়িয বা শরীয়তবিরোধী কাজে মশগুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে সম্পদ থাকার পরও তার উপর হজ্জ ফরয থাকে না। কেননা হজ্জ ফরয হওয়ার জন্য সম্পদ থাকার পাশাপাশি ঈমান-আমলের নিরাপত্তা থাকাও শর্ত।
কাজেই “ছবি তুলে, বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা যাবে না বা ঈমান-আমলের নিরাপত্তা না থাকলে হজ্জ ফরয হবে না” একথা বলার অর্থ কখনোই হজ্জকে অস্বীকার করা নয়।
যেমন কেউ যদি বলে যে, “সম্পদ না থাকলে হজ্জ ফরয হবে না।” তার এ কথা কি হজ্জ অস্বীকার করার শামিল হবে? কখনই নয়।
তা যদি না হয় তাহলে “ঈমান-আমলের নিরাপত্তা না থাকলে হজ্জ ফরয হবে না” এ কথা বললে হজ্জকে অস্বীকার করা হবে কেন? প্রশ্নই উঠেনা।
অতএব, হজ্জের ব্যাপারে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের সঠিক আক্বীদা বা বক্তব্য হলো- হজ্জ ইসলামের একটি অন্যতম বুনিয়াদী ও ফরয আমল। যা শর্ত সাপেক্ষে ফরয হয়ে থাকে। হজ্জ ফরয হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম শর্ত হলো ঈমান-আমলের নিরাপত্তা বা নিশ্চয়তা থাকা। বর্তমানে হজ্জ করতে গেলে যেহেতু ঈমান-আমলের নিরাপত্তা থাকে না অর্থাৎ ছবি তোলা ও বেপর্দা হওয়ার মত হাজারো হারাম-নাজায়িয কাজে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মশগুল হতে হয় তাই সম্পদ থাকলেও হজ্জ ফরয হবে না। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ফায়ছালা।
দলীলসমূহ: ১. তাফসীরে আহকামুল কুরআন জাসসাস, ২. কুরতুবী, ৩. রূহুল মায়ানী, ৪. রূহুল বয়ান, ৫. খাযিন, ৬. বাগবী, ৭. তাবারী, ৮. কবীর, ৯. ইবনে কাছীর, ১০. মাযহারী, ১১. দুররে মানছূর, ১২. জালালাইন, ১৩. কামালাইন, ১৪. মায়ালীমুত তানযীল, ১৫. বুখারী, ১৬. মুসলিম, ১৭. আবূ দাউদ, ১৮. মুসনাদে আহমদ, ১৯. তিরমিযী, ২০. নাসায়ী, ২১. ইবনে মাজাহ, ২২. মাছাবীহুস সুন্নাহ, ২৩. দারিমী, ২৪. বায়হাক্বী, ২৫. মিশকাত, ২৬. মিরকাত, ২৭. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, ২৮. কানযুল উম্মাল, ২৯. তহাবী, ৩০. ফতহুল বারী, ৩১. উমদাতুল ক্বারী, ৩২. ইরশাদুস সারী, ৩৩. তাইসীরুল বারী, ৩৪. ফাইদ্বুল বারী, ৩৫. শরহুন নববী, ৩৬. ফতহুল মুলহিম, ৩৭. আল মুফহিম, ৩৮. ইকমালুল ইকামল, ৩৯. মায়ালিমুস সুনান, ৪০. বযলুল মাযহূদ, ৪১. আউনুল মা’বূদ, ৪২. ফতহুল ওয়াদূদ, ৪৩. আরীদ্বাতুল আহওয়াযী, ৪৪. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৪৫. দরসে তিরমিযী, ৪৬. উরফুশ শাযী, ৪৭. মায়ারিফুস সুনান, ৪৮. মিরআতুল মানাযীহ, ৪৯. আশআতুল লুময়াত, ৫০. লুময়াত, ৫১. তা’লীকুছ ছবীহ, ৫২. মুযাহিরে হক্ব, ৫৩. শরহুস সুন্নাহ, ৫৪. ফতওয়ায়ে আলমগীরী, ৫৫. শামী, ৫৬. দুররুল মুখতার, ৫৭. রদ্দুল মুহতার, ৫৮. আইনুল হিদায়া, ৫৯. ফতহুল ক্বাদীর, ৬০. শরহে বিক্বায়াহ, ৬১. ফাযায়িলে হজ্জ, ৬২. আহকামে হজ্জ ও যিয়ারত, ৬৩. হজ্জ ও যিয়ারত, ৬৪. রাহনুমায়ে হজ্জ, ৬৫. আহকামে হজ্জ, ৬৬. মিশকাতুল আনওয়ার, ৬৭. মক্কা ও মদীনার পথে ইত্যাদি।
মুছাম্মত উম্মে কুলছূম উলিপুর, কুড়িগ্রাম।
সুওয়াল: ইহরাম অবস্থায় নাকি মেয়েদের চেহারা বা মুখম-লে কাপড় লাগানো যায়না। কাপড় লাগলে বা স্পর্শ করলে দম ওয়াজিব হয়। তাহলে কি মেয়েরা চেহারা না ঢেকে খুলে রাখবে? অর্থাৎ ইহরাম অবস্থায় কি মেয়েদের জন্য পর্দা করার দরকার নেই। জাওয়াব: ‘ইহরাম অবস্থায় মেয়েদের চেহারা বা মুখম-লে কাপড় স্পর্শ করা বা লাগানো যাবেনা, এ কথা সত্য।’ তবে এক্ষেত্রে মাসয়ালা হলো, যদি একদিন বা এক রাত্রি মুখম-লে কাপড় স্পর্শ করে তাহলে তাদের উপর দম অর্থাৎ একটি কুরবানী ওয়াজিব হবে। আর যদি এক দিন বা এক রাত্রির কম সময় কাপড় স্পর্শ করে তাহলে এক ফিৎরা পরিমাণ ছদকা করা ওয়াজিব হবে।
এর অর্থ এটা নয় যে মেয়েরা ইহরাম অবস্থায় মুখমন্ডল খোলা রেখে বে-পর্দা হবে। মেয়েদের সর্বাবস্থায় বেগানা পুরুষদের সামনে মুখম-ল খোলা রাখা হারাম যা কবীরা গুণাহের অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, ইহরাম অবস্থায় মেয়েদের করণীয় হচ্ছে তারা মুখম-লের উপর এমনভাবে কাপড় ঝুলিয়ে রাখবে যাতে কাপড় মুখম-লে স্পর্শ না করে। অর্থাৎ নেট বা জালি জাতীয় কোন কিছুর সাহায্যে নেকাব মুখম-ল থেকে কিছুটা দূরে ঝুলিয়ে রাখবে।
স্মরণ রাখতে হবে যে, কোন অবস্থাতেই পর্দার খিলাফ করা যাবেনা। কারণ মেয়েদের জন্য পর্দা রক্ষা করা করা হচ্ছে স্বতন্ত্র একটি ফরয। যা ফরযে আইন; এবং তা দায়িমী ফরযের অন্তর্ভুক্ত। যেমনিভাবে পুরুষের জন্য স্বতন্ত্র ও দায়িমী ফরয হচ্ছে হালাল কামাই করা।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت عبد الله رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم طلب كسب الحلال فريضة بعد الفريضة
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “পুরুষের জন্য অন্যান্য ফরযের পর ফরয হচ্ছে হালাল কামাই করা।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
وللنساء الحجاب
“আর মেয়েদের জন্য ফরয হচ্ছে পর্দা করা।”
অর্থাৎ কালিমা, নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতের পর পুরুষের জন্য ফরয হলো হালাল কামাই করা আর মেয়েদের জন্য ফরয পর্দা করা। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাতের ন্যায় এ দু’টি ফরয পালনের ক্ষেত্রেও কুরআন-সুন্নাহ্র কঠোর নির্দেশ আরোপিত হয়েছে।
যেমন, হালাল রুজির ব্যাপারে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে, এক দিরহাম বা এক পয়সা হারাম খেলে চল্লিশ দিন ইবাদত কবুল হয়না এবং আরো বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يدخل الجنة لحم نبت من السحت وكل لحم نبت من السحت كانت النار اولى به.
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, ওই গোশতের টুকরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না যা হারাম খাদ্যের দ্বারা তৈরী হয়েছে। শরীরের যে গোশতের টুকরা হারাম খাদ্যের দ্বারা তৈরি হয়েছে তার জন্য জাহান্নামের আগুনই যথেষ্ট। অর্থাৎ যে ব্যক্তি হারাম রুজি ভক্ষণ করে সে জাহান্নামী।” (আহমদ, দারিমী, বাইহাক্বী, মিশকাত)
আর পর্দার ব্যাপারে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت الحسن رحمة الله عليه مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والـمنظور اليه.
অর্থ: “হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌঁছেছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে দেখে এবং যে দেখায় উভয়ের প্রতি আল্লাহ পাক-উনার লা’নত।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
আরো বর্ণিত হয়েছে যে-
عن حضرت بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا على لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاخرة.
অর্থ: “হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! দৃষ্টিকে অনুসরণ করবেন না। প্রথম দৃষ্টি যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।” অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুনাহ লেখা হয়ে থাকে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত) পর্দা সম্পর্কে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
وقرن فى بيوتكن ولا تبرجن تبرج الجاهلية الاولى.
অর্থ: “তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান করো। এবং জাহিলিয়াত যুগের নারীদের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বাইরে ঘোরাফেরা করো না।” (সূরা আহযাব-৩৩) তিনি আরো ইরশাদ করেন-
وقل للمؤمنات يغضضن من ابصارهن.
অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ঈমানদার মহিলাদেরকে বলুন, তারা যেনো তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে।” (সূরা নূর-৩১)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المرأة عورة فاذا خرجت استشرفها الشيطان.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মেয়েরা পর্দার অধীন থাকবে। কেননা তারা যখন কোথাও বের হয় তখন শয়তান উঁকি-ঝুঁকি দিতে থাকে পাপ কাজ সংঘটিত করানোর জন্য।” (তিরমিযী, মিশকাত)
মূলত: একজন মেয়ে যখন উপযুক্ত তথা বালেগা হয় তখন হতে তার উপর ব্যক্তিগতভাবে পর্দা করা ফরয। এ ফরয পালনে যাতে কোন প্রকার গাফলতি কিংবা ত্রুটি না হয় এজন্য মেয়ের অভিভাবকগণকেও শরীয়ত কঠোর নির্দেশবাণী আরোপ করেছে।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
الديوث لا يدخل الجنة
অর্থ: “দাইয়ূছ’ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা। ‘দাইয়ূছ’ ওই ব্যক্তি যে তার অধীনস্থ মেয়েদের পর্দা করায়না।” ( দাইলামী, কানযুল উম্মাল)
আরো ইরশাদ হয়েছে-
قال حضرت عبد الله رضى الله تعالى عنه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ثلاث لا يدخلون الجنة ولا ينظر الله اليهم يوم القيامة العاق لوالديه والمرأة المترجلة المتشبهة بالرجال والديوث.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, তিন প্রকার লোক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এবং আল্লাহ পাক তিনি ক্বিয়ামতের দিন তাদের প্রতি (রহমতের) দৃষ্টি দিবেন না। (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, (২) পুরুষের ছূরত ধারণকারিনী মহিলা, (৩) দাইয়ূছ।” (মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল ২য় জিঃ ১৩৪ পৃষ্ঠা, নাসায়ী শরীফ কিতাবুয্ যাকাত বাব নং ৬৯)
উল্লেখ্য, মেয়েদের জন্য পর্দা এমন গুরুত্বপূর্ণ ফরয যে, তা কেবল জীবিতাবস্থায়ই করতে হবে তা নয় বরং তাদের ইন্তিকালের পরও পর্দা করা ফরয। অর্থাৎ মৃত্যুর পরও যেন কোন বেগানা পুরুষ না দেখে।
স্মরণযোগ্য যে, অন্যান্য ফরযের মত পর্দাও একটি ফরয এবং তার হুকুম-আহ্কামও আলাদাভাবে বর্ণিত রয়েছে। কাজেই শরীয়ত এ বিধান আরোপ করেনি যে, একটি ফরয পালন করার জন্য অন্য একটি ফরয পরিত্যাগ করতে হবে।
বরং শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে এটাই যে, প্রতিটি ফরয-ওয়াজিব যথাযথভাবে আদায় করা। একটার জন্য আরেকটা ছেড়ে দেয়া জায়িয নেই।
অতএব, পর্দা শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত একটি ফরয। কোন মহিলার জন্য ইহরাম অবস্থায় হোক আর ইহরাম ব্যতীত অন্য অবস্থায়ই হোক পর্দা তরক্ব করা হারাম ও কবীরা গুনাহ।
যে মেয়ে ইহরাম অবস্থায় মুখম-ল খোলা রাখবে সে ফরয তরক্ব করার কারণে ফাসিক হিসেবে সাব্যস্ত হবে। অথচ আল্লাহ্ পাক তিনি কুরআন শরীফে হজ্জ আদায়ের ক্ষেত্রেও অশ্লীল-অশালীন ও ফাসিকী বা নাফরমানী ইত্যাদি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা ফাসিকী বা নিষিদ্ধ কাজ করে তাদের প্রকৃতপক্ষে হজ্জে মাবরুর নছীব হবে না।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال فى الحج وما تفعلوا من خير يعلمه الله وتزودوا فان خير الزاد التقوى واتقون ياولى الالباب.
অর্থ: “যে ব্যক্তি হজ্জের মাসসমূহে হজ্জ করার নিয়ত করে সে যেনো হজ্জের মধ্যে নির্জন অবস্থান ও তার সংশ্লিষ্ট কোন
কাজ না করে এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমূলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। আর তোমরা যে নেক কাজ করো আল্লাহ পাক তা জানেন এবং তোমরা পাথেয় সংগ্রহ করো। নিশ্চয়ই উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি। আর একমাত্র আমাকেই ভয় করো হে জ্ঞানীগণ।” (সূরা বাক্বারা-১৯৭) উল্লেখ্য, ‘হজ্জে মাবরুর’ অর্থ কবুল হজ্জ। এর ব্যাখায় বলা হয়েছে-
هو ما لا يخالطه الاثم ولا سمعة ولا رياء
অর্থ: “যে হজ্জের মধ্যে কোন প্রকার পাপের সংমিশ্রণ ঘটবেনা, (বেপর্দা, বেহায়া-বেশরা কাজ করবেনা অর্থাৎ কুফর, শিরক, বিদ্য়াত, হারাম, ফিসক, ফুজুরী, অশ্লীল-অশালীন কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, ঝগড়া-ঝাটি, মারামারি, কাটাকাটি হেরেম শরীফ-এ নিষিদ্ধ কার্যসমূহ করবেনা কোন ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরক্ব করবেনা।) লোককে শোনানোর উদ্দেশ্যে থাকবেনা এবং রিয়া বা লোক প্রদর্শনের জন্য করা হবেনা।”
এ সমস্ত প্রকার দোষত্রুটি হতে মুক্ত হজ্জকেই হজ্জে মাবরুর বলা হয়। আর বে-পর্দা হওয়া সাধারণ বা ছগীরা গুনাহ নয়। বরং তা শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। আর হারাম ও কবীরা গুনাহ করে হজ্জ সম্পাদন করা হলে তা কস্মিনকালেও হজ্জে মাবরুর হবে না।
অতএব, এ বিষয়ে সকল পুরুষ ও মেয়েদের পরহেয থাকতে হবে। {দলীলসমূহ ঃ (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মায়ানী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তাবারী, (৮) কবীর, (৯) মাযহারী, (১০) দুররে মনছুর, (১১) বুখারী, (১২) মুসলিম, (১৩) আবূ দাউদ, (১৪) কানযুল উম্মাল, (১৫) মিশকাত, (১৬) মিরকাত, (১৭) আশয়াতুল লুময়াত, (১৮) লুময়াত, (১৯) ত্বীবী, (২০) তা’লিকুছ ছবীহ, (২১) মুযাহিরে হক্ব, (২২) আলমগীরী, (২৩) শামী, (২৪) দুররুল মুখতার, (২৫) রদ্দুল মুহতার, (২৬) আইনুল হিদায়া, (২৭) ফতহুল ক্বাদীর, (২৮) শরহে বিক্বায়া, (২৯) ফাযায়েলে হজ্জ, (৩০) আহ্কামে হজ্ব ও যিয়ারত, (৩১) হজ্ব ও যিয়ারত, (৩২) আহকামে হজ্জ, (৩৩) মক্কা ও মদীনার পথে ইত্যাদি।
মুহম্মদ শাহীনূর রহমান সভাপতি, ছাত্র আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত রামপুরা শাখা, ঢাকা।
সুওয়াল: হজ্জ পালনের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলার আমলের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? জাওয়াব: হ্যাঁ, পুরুষ ও মহিলার আমলের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। তন্মধ্যে জরুরী কিছু পার্থক্য বর্ণনা করা হলো। (১) হজ্জে পুরুষেরা মাথা খোলা রাখবে মহিলারা মাথা ঢেকে রাখবে। (২) পুরুষেরা তালবিয়া পাঠ করবে উচ্চস্বরে আর মহিলারা তালবিয়া পাঠ করবে নিম্নস্বরে। (৩) পুরুষেরা তাওয়াফের সময় রমল করবে মহিলারা রমল করবেনা। (৪) ইজতেবা পুরুষেরা করবে মহিলাদের করতে হয়না। (৫) সাঈ করার সময় পুরুষেরা মাইলাইনে আখজারাইনের মধ্যস্থানে দৌড়াবে মহিলারা দৌড়াবেনা। (৬) পুরুষেরা মাথা কামাবে মহিলারা শুধু মাথার চুল এক অঙ্গুলি বা এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটবে। (৭) বিদেশী পুরুষ হাজী সাহেবদের জন্য তাওয়াফে বিদা করা ওয়াজিব। বিদেশী মহিলা হাজীদের জন্যও ওয়াজিব। তবে প্রাকৃতিক কারণে মহিলারা অসুস্থ হয়ে পড়লে এ ওয়াজিব তাদের জন্য সাকিত হয়ে যায়। (৮) পুরুষদের জন্য সেলাই করা কাপড় পরিধান নিষিদ্ধ মহিলারা সেলাই করা কাপড় পরিধান করতে পারবে।
মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন হিরু শান্তিবাগ, ঢাকা।
সুওয়াল: হজ্জ আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে যে আলাদা আলাদা দোয়া-দরূদ ও তাছাবীহ পড়ার নিয়ম রয়েছে তা প্রায় অনেক হাজী সাহেবদের পক্ষেই আদায় করা সম্ভব হয়না। তার কারণ হচ্ছে- (১) স্মরণ শক্তির অভাব, (২) সময়ের স্বল্পতা ও (৩) অধিক ব্যস্ততা ইত্যাদি।
এক্ষেত্রে তাদের জন্য এমন কোন আমল আছে কি যা হাজী সাহেবরা সহজে আদায় করতে পারবে? জাওয়াব: হ্যাঁ, যে সমস্ত হাজী সাহেবরা হজ্জের বিস্তারিত দোয়া-দরূদ ও তাসবীহ ইত্যাদি পাঠ করতে অপারগ তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ আমল হচ্ছে তারা প্রতি কদমে, প্রতি মাকামে ও প্রতি স্থানে শুধু দুরূদ শরীফ পাঠ করবে। আর দুরূদ শরীফ-এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ দুরূদ শরীফ হলো-
صلى الله عليه وسلم
উচ্চারণ: “ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”।
আর যদি কোন হাজী ছাহেবদের পক্ষে সম্ভব হয় তাহলে উক্ত দুরূদ শরীফ পাঠ করার ফাঁকে ফাঁকে যা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার খাছ দোয়া, তা পাঠ করতে পারে। দোয়াটি হচ্ছে-
لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شىء قدير
উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকালাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।”