খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদরাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
যেমন, মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “সমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ দেখা যায়, তা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহর খিলাফ, যা কোন দিন ভালো কাজ হতে পারে না।” …
এখন আমাদের সুওয়াল হলো, সমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ শরীফ দেখা যায়, সে সম্পর্কে তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: সমাজে বহুল প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতঃপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খণ্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।
এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার ‘মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ’ সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।
(ধারাবাহিক)
যেমন, উল্লিখিত বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “সমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ দেখা যায় তা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহর খিলাফ, যা কোন দিন ভালো কাজ হতে পারে না।” ….নাউযুবিল্লাহ…..!
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, কুরআন শরীফ-এর কোন আয়াত শরীফ-এ ‘সমাজে বহুল প্রচলিত মীলাদ শরীফকে কুরআন শরীফ-এর খিলাফ বলা হয়েছে এবং হাদীছ শরীফ-এর কোন হাদীছ শরীফ-এ ‘সমাজে বহুল প্রচলিত মীলাদ শরীফকে সুন্নাহ বা হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ বলা হয়েছে, তা হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর ইবারতসহ দলীল উল্লেখ করেনি। সুতরাং তাদের দলীলবিহীন, ইবারতবিহীন, মনগড়া ও মিথ্যা বক্তব্য মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নিম্নে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস এবং বুযুর্গদের আমল দ্বারা প্রমাণিত বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো-
স্মরণীয় যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ-এর মূল উদ্দেশ্য হলো সংক্ষেপে আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নার ছানা-ছিফত ও বিলাদত শরীফ সম্পর্কে আলোচনা করা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা।
এক কথায় মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ বলতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত, তা’রীফ, প্রশংসা, উনার মু’জিযা বর্ণনা, বিলাদত শরীফ-এর আলোচনা, না’ত, শে’র, কাছীদা শরীফ পাঠ ও উনার প্রতি ছলাত ও সালাম প্রেরণ করা ইত্যাদি পাঠ করা হয়।
যেমন- মীলাদ শরীফ-এর প্রথমেই কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা হয়।
অতঃপর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত পাঠ করা হয়। কারণ ছলাত পাঠ করা আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদেরই নির্দেশ।
তাছাড়া আমরা যেভাবে মজলিস করে মীলাদ শরীফ-এর মাহফিল করে থাকি তা খোদ আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের থেকেও ‘মীলাদ শরীফ-এর প্রমান রয়েছে। শুধু তাই নয়, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা স্বয়ং নিজেরাই “মীলাদ শরীফ”-এর তাকীদ করেছেন ও ফযীলত বর্ণনা করেছেন।
এছাড়াও হযরত ইমাম-মুজতাহিদীন, ছলফে ছালিহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকেও ‘মীলাদ শরীফ’ এর প্রমাণ রয়েছে-
যেমন, এ প্রসঙ্গে বিশ্ব সমাদৃত ও সুপ্রসিদ্ধ ‘ওয়াসিল ফী শরহি শামায়িল’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-
وقال سلطان العارفين الامام جلال الدين السيوطى قدس الله سره ونور ضريحه فى كتابه المسمى بالوسائل فى شرح الشمائل ما من بيت او مسجد اومحلة قرئ فيه مولد النبى صلى الله عليه وسلم الا حفت الملائكة ذلك البيت اوالمسجد اوالمحلة وصلت الملائكة على أهل ذلك المكان وعمهم الله تعالى بالرحمة والرضوان وأما المطوقون بالنور يعنى جبرائيل وميكائيل واسرافيل وعزرائيل عليهم السلام فانهم يصلون على من كان سببا لقرائة مولد النبى صلى الله عليه وسلم.
অথ: “সুলত্বনুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “ওসায়িল ফী শরহি শামায়িল” নামক কিতাবে বলেন, যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয়, তাহলে সে ঘরে অবশ্যই আল্লাহ পাক-উনার ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর উনারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বার সজ্জিত প্রধান চার ফেরেশ্তা, অর্থাৎ হযরত জিব্রাঈল, হযরত মীকাঈল, হযরত ইসরাফিল ও হযরত আযরাঈল আলাইহিমুস সালাম মীলাদ শরীফ পাঠকারীর উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন।” সুবহানাল্লাহ!
قال معروف الكرخى قدس الله سره من هيا طعاما لاجل قراءة مولد النبى صلى الله عليه وسلم وجمع اخوانا واوقد سراجا ولبس جديدا وتبخر وتعطر تعظيما لمولد النبى صلى الله عليه وسلم حشره الله يوم القيامة مع الفرقة الاولى من النبين وكان فى اعلى عليين.
অর্থ: “হযরত ইমাম মা’রুফ কারখী কাদ্দাসাল্লাহু সিররাহু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ পাঠের কারণে খাদ্য প্রস্তুত করবে এবং নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ-এর সম্মানার্থে মুসলমান ভাইদেরকে একত্রিত করবে, প্রদীপ বা বাতি জ্বালাবে, নতুন পোশাক পরিধান করবে, (সুগন্ধির উদ্দেশ্যে) ধূপ জ্বালাবে আতর-গোলাপ মাখবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ পাক তার হাশর-নশর করবেন নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের প্রথম দলের সাথে এবং সে সুউচ্চ ইল্লীনে অবস্থান করবে।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ পাক উনি স্বয়ং নিজেই কুরআন শরীফ-এ উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা ছিফত করেছেন। আর আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি হাদীছ শরীফ-এ স্বয়ং নিজেই নিজের ছানা ছিফত করেছেন। শুধুমাত্র এতটুকুই নয় বরং স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি নিজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের দ্বারা করিয়েছেন এবং ইজমা, ক্বিয়াসে তথা ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহতেও এর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।
আর মীলাদ শরীফ-এর আলোচ্য বিষয়ই হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত করা। তাহলে কি করে একথা বলা যেতে পারে যে, সমাজে বহুল প্রচলিত যে মীলাদ দেখা যায়, তা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহর খিলাফ যা কোন দিন ভালো কাজ হতে পারে না।”
প্রকৃতপক্ষে তাদের এ বক্তব্য দ্বারা তারা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসকেই অস্বীকার করেছে। যার ফলে তারা ঈমান ও ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে গেছে। কারণ, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত শুধুমাত্র তাওহীদের উপর ঈমান আনলেও ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোন ব্যক্তির পক্ষে ঈমানদার হওয়া সম্ভব নয় বা কোন ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারবে না। (চলবে)
মুহম্মদ হুসাইন
নরসিংদী
সুওয়াল: মাসিক মদীনা নভেম্বর-২০০৯ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়-
প্রশ্ন: মুসলমানগণ যে টুপি মাথায় পরেন তার আকৃতি সম্পর্কে যেমন গোল হওয়া চাই, না কিসতির মত লম্বা হওয়া চাই স্পষ্ট হাদীছ শরীফ আছে কিনা? হাদীছ শরীফ-এর নাম উল্লেখ করে জানাবেন আশা করি।
উত্তর: টুপি পরা সুন্নত। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম টুপি পরেছেন এবং পাগড়ী পরার সময় পাগড়ীর নিচে টুপি পরতে তাগিদ দিয়েছেন। টুপি এবং পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে তাই সুন্নত বলে স্বীকৃত যা সমকালীন নির্ভরযোগ্য ওলামা-মাশায়িখগণের মধ্যে সাধারণভাবে প্রচলিত। হাদীছ শরীফ-এ (শামায়িলে-তিরমিযী) বলা হয়েছে, হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথার টুপি ছিল চেপ্টা, যা মাথার সাথে লেগে থাকতো। সেই টুপির অনুকরণে ছাহাবীগণ এবং পরবর্তী যুগের ওলামা-মাশায়িখগণ কাপড়ের দ্বারা নির্মিত টুপি তৈরি করেছেন। কারো টুপি গোল ছিল, কারো টুপি কিসতি আকৃতির ছিল, কারো টুপি পাঁচ কল্লি বা তিন কল্লির ছিল। এইসব ধরনের টুপি যেহেতু ওলামা-মাশায়িখগণের মধ্যে প্রচলিত ছিল এবং এ যুগেও রয়েছে। সুতরাং এসব ধরনের টুপিই সুন্নত অনুযায়ী মনে করে পরা যেতে পারে। অনুসরণযোগ্য ওলামাগণের পছন্দনীয় পোশাকাদি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা অভিপ্রেত নয়।
মাসিক মদীনা পত্রিকার উক্ত প্রশ্নের উত্তরে যে বিষয়গুলো আমার কাছে আপত্তিকর মনে হয়, তাহলো-
১. আল্লাহ পাক-উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে টুপি ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে কোন সুন্নতের বর্ণনা নেই।
২. টুপি ও পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদেরকে বাদ দিয়ে সমকালীন আলিমদেরকে অনুসরণ করতে হবে।
৩. শামায়িলে তিরমিযী-এর বরাতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে মিথ্যারোপ করা হয়েছে।
৪. হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ‘কুম্মাতুন (كمة) ও বুতহুন” (بطح) শব্দের মনগড়া অর্থ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
৫. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও কিসতি, পাঁচ কল্লি, তিন কল্লি টুপি পরিধান করেছেন।
৬. সমকালীন আলিমগণের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী আমল জারি থাকলেও সেটাই অনুসরণ করতে হবে। বিরোধিতা করা যাবেনা।
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয়ের শরীয়তসম্মত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: মাসিক মদীনায় প্রদত্ত টুপি সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তরের প্রেক্ষিতে আপনার পঞ্চম সুওয়াল হচ্ছে-
৫. হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও কিসতি, পাঁচ কল্লি, তিন কল্লি টুপি পরিধান করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
এর জবাবে প্রথমত: বলতে হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক টুপি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য ভুল, দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা।
শুধু তাই নয় তার উক্ত বক্তব্য সরাসরি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কখনো কিসতি, পাঁচ কল্লি, তিন কল্লি টুপি পরিধান করেননি।
দ্বিতীয়ত: মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন সাহেব যদি সত্যবাদীই হয়ে থাকে তবে পরবর্তী সংখ্যায় প্রমাণ পেশ করুক কোন কিতাবের কত পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও কিসতি, পাঁচ কল্লি, তিন কল্লি টুপি পরিধান করেছেন। কিন্তু মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন ছাহেবের পক্ষে তা কস্মিনকালেও সম্ভব হবে না।
সুতরাং আবারো প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক টুপি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
নিম্নে কিসতি, পাঁচ কল্লি, তিন কল্লি টুপি-এর দলীলভিত্তিক বর্ণনা তুলে ধরা হলো। আর এতেই প্রমাণিত হবে যে, কিসতি, পাঁচ কল্লি, তিন কল্লি টুপি কাফির, বেদ্বীন ও হিন্দু মারওয়ারীদের খাছ টুপি।
পাঁচ কল্লি টুপি
হাদীছ শরীফ-এর কোথায়ও উল্লেখ নেই যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম তথা খাইরুল কুরুনের কেউ পাঁচ কল্লি টুপি পরিধান করেছেন। মূলত খাইরুল কুরুনে পাঁচ কল্লি টুপির কোন অস্তিত্বই ছিল না।
উল্লেখ্য, পাঁচ কল্লি টুপির উৎপত্তিকারক হচ্ছে- আকাবিরে দেওবন্দ। মূলত তাদের মাধ্যমেই পাঁচ কল্লি টুপির রেওয়াজ চালু হয়। যা দেওবন্দের মুহাদ্দিছ মাওলানা আছগর হোসাইন দেহলভী ছাহেব তার “গুলজারে সুন্নত” কিতাবে উল্লেখ করেছে।
অতএব, সুষ্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, পাঁচ কল্লি টুপি নতুন উদ্ভূত আমল, যাকে শরীয়তে বিদয়াত বলা হয়।
তাছাড়া যেখানে হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত রয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি ব্যবহার করেছেন, সেখানে উক্ত আমল বা সুন্নতের খিলাফ পাঁচ কল্লি টুপির আবিস্কার ও আমল কি করে শরীয়তসম্মত হতে পারে?
বস্তুত নতুন উদ্ভূত পাঁচ কল্লি টুপি ব্যবহার করার কারণে মানুষ খাছ সুন্নতের আমল থেকে মাহরূম হবে নিঃসন্দেহে। তাই হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما احدث قوم بدعة الارفع مثلها من السنة فتمسك بسنة خير من احداث بدعة
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যখনই কোন ক্বওম বা সম্প্রদায় একটি বিদয়াতের উদ্ভব ঘটায়েছে, তখনই একটি সুন্নত লোপ পেয়েছে। সুতরাং একটি সুন্নত অনুসরণ করা (যদিও ওটা ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতর হয়) একটি বিদয়াত উদ্ভব করা হতে উত্তম। (যদিও সেটা বিদয়াতে হাছানা হয়)। (আহমদ শরীফ)
মূলকথা হলো- পাঁচ কল্লি টুপির প্রমাণ যেহেতু হাদীছ শরীফ-এ নেই, আর খাইরুল কুরুনের কারো আমলের দ্বারাও তা প্রমাণিত নেই এবং নতুন করে পাঁচ কল্লি টুপির আবিষ্কার ‘চার টুকরা বিশিষ্ট গোল টুপি’ সম্পর্কিত হাদীছ শরীফ-এর মুখালিফ, সেহেতু পাঁচ কল্লি টুপি পরিধান বা ব্যবহার করা বিদয়াত।
তাছাড়া পাঁচ কল্লি টুপি পাঁচ কোন বিশিষ্ট হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই মাথা থেকে চোখা বা উঁচু হয়ে থাকে, উপর দিক থেকে মাথার সাথে লেগে থাকে না। এক্ষেত্রে পাঁচ কল্লি টুপি মাথা হতে উচু হয়ে থাকার কারণে বুরনুস টুপির অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, যা পরিধান করা এবং পরিধান করে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী।
যেমন ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবে উল্লেখ আছে-
تكره الصلوة مع البرنس
অর্থাৎ বুরনুসসহ নামায আদায় করা মাকরূহ তাহরীম।
সুতরাং সকলেরই উচিত নতুন উদ্ভূত পাঁচ কল্লি টুপি পরিহার করে হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত চার টুকরা বিশিষ্ট গোল খাছ সুন্নতী টুপি পরিধান করা। তাতে যেরূপ একটি সুন্নত আদায় করার কারণে একশত শহীদের ছাওয়াব পাওয়া যাবে, তদ্রƒপ বিদয়াতের ন্যায় গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ রেযামন্দী হাছিল করা সম্ভব হবে।
কাজেই, ‘হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাও কিসতি, পাঁচ কল্লি, তিন কল্লি টুপি পরিধান করেছেন’ মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল, দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা। পাশাপাশি এটাও প্রমাণিত হলো যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক টুপি সম্পর্কিত মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীনের উক্ত বক্তব্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সুস্পষ্ট মিথ্যারোপের শামিল। যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
(বিঃ দ্রঃ চার টুকুরা বিশিষ্ট সাদা ও গোল টুপিই হচ্ছে খাছ সুন্নতী টুপি। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর ৫৩, ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭, ৫৮, ৫৯তম সংখ্যাগুলো পাঠ করলে টুপি সম্পর্কিত প্রশ্নোল্লিখিত বিষয়সহ যাবতীয় বিষয়ে সুস্পষ্ট দলীলভিত্তিক ফায়সালা পেয়ে যাবেন।)
মুহম্মদ রফিকুল ইসলাম
সদর, মোমেনশাহী
সুওয়াল: এ বছর ছদ্কাতুল্ ফিতর কত?
জাওয়াব: আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছদকাতুল ফিতরের পরিমাণ সম্পর্কে ইরশাদ করেন-
عن عبد الله بن ثعلبة او ثعلبة بن عبد الله بن ابى صعير عن ابيه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صاع من بر ا و قمح عن كل اثنين صغير او كبير حر او عبد ذكر او انثى
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে সা’লাবা অথবা সা’লাবা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবু সুআইর উনার পিতা হতে বর্ণনা করেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ইরশাদ করেন, এক সা’ গম বা আটা দু’ব্যক্তির পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে- ছোট হোক বা বড় হোক, আযাদ হোক বা গোলাম হোক এবং পুরুষ হোক বা মহিলা হোক। (আবূ দাউদ শরীফ, মিশকাত শরীফ)
আমাদের হানাফী মাযহাব মুতাবিক অর্ধ সা’ বলতে ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বুঝানো হয়েছে, যা গ্রাম হিসাবে ১৬৫৭ গ্রাম (প্রায়) হয়।
কাজেই, যাদের উপর ছদকাতুল ফিতর ওয়াজিব অর্থাৎ ঈদের দিন ছুব্হে ছাদিকের সময় যাদের নিকট নেছাব পরিমাণ (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য যা বর্তমানে ৭৫৮ টাকা তোলা হিসেবে ৩৯,৭৯৫ টাকা) সম্পদ থাকে, তাদের প্রত্যেককেই উল্লিখিত ১ সের সাড়ে ১২ ছটাক বা ১৬৭৫ গ্রাম আটা বা তার মূল্য দান করতে হবে।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় আটার দাম বিভিন্ন রকম। কাজেই যাদের উপর ছদ্কাতুল ফিতর ওয়াজিব, তাদেরকে বর্তমান মূল্য হিসাবে একসের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৭৫ গ্রাম আটার মূল্য হিসাবে দিতে হবে।
এ বছর ঢাকা শহরে ২৬.০০ টাকা কেজি হিসাবে এক সের সাড়ে বার ছটাক বা ১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য- ৪৪ টাকা (প্রায়)
যেমন, ১ কেজি বা ১০০০ গ্রাম আটার মূল্য ২৬.০০ টাকা।
প্রতি গ্রাম আটার মূল্য ২৬.০০/১০০০= ০.০২৬ টাকা
১৬৫৭ গ্রাম আটার মূল্য ১৬৫৭/০.০২৬=৪৩.০৮২ টাকা বা ৪৪ টাকা (প্রায়)।
এর কম দেয়া যাবে না। তবে ইচ্ছা করলে বেশী দিতে পারবে।
মুহম্মদ হুমায়ূন কবীর, বরিশাল
সুওয়াল: ঈদের নামায কখন পড়া সুন্নত? জানতে বাসনা রাখি।
জাওয়াব: সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে (অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত শেষ হবার পর থেকে অথবা সূর্য উদয়ের শুরু থেকে ঘড়ির মিনিট অনুযায়ী ২৩ মিনিট পর) ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যাহওয়াতুল কুবরা বা যাওয়াল অথবা শরয়ী অর্ধদিন বা দ্বিপ্রহর অর্থাৎ সূর্যের এস্তাওয়া (বরাবর হওয়া) আরম্ভ হবার পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামাযের ওয়াক্ত থাকে।
ফজরের ওয়াক্ত শেষ হবার পর ২৩ মিনিট পর্যন্ত মাকরূহ্ ওয়াক্ত এবং এর পর ঈদের নামাযের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবার ১ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত ঈদের নামযের ওয়াক্ত থাকে। সূর্য পূর্ণভাবে উদিত হবার পর থেকে অর্থাৎ মাকরূহ্ ওয়াক্ত যা ঘড়ির হিসাব অনুযায়ী ২৩ মিনিট অতিক্রম হবার পূর্বে ঈদের নামায আদায় করলে নামায হবে না এবং যোহরের নামাজের ওয়াক্ত হবার পূর্বের ১ ঘণ্টা যা মাকরূহ্ ওয়াক্ত নামে পরিচিত অর্থাৎ যাহওয়াতুল কোবরা বা সূর্যের এস্তাওয়া (বরাবর হওয়া) আরম্ভ হবার পর ঈদের নামায আদায় করলে তা আদায় হবে না।
ঈদের নামায কোন সময় আদায় করলে তা সুন্নত হবে সে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “ঈদের দিন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের নামায পড়ে হুজরা শরীফে যেয়ে সকাল সকাল গোসল করতেন এবং ঈদুল ফিতর-এর দিন বেজোড় সংখ্যক (৩, ৫,৭) খোরমা, খেজুর খেয়ে ঈদগাহে যেতেন। আর ঈদুল আযহার সময় কিছু না খেয়ে সরাসরি ঈদগাহে যেতেন এবং ঈদের নামাযের ওয়াক্ত হবার সাথে সাথে ঈদের নামায আদায় করতেন এবং তারপর খুৎবা দিতেন ও নছীহত করতেন।
“হযরত আবুল হোয়ায়রেস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে হাযাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নাজরানের গভর্নর থাকা অবস্থায় চিঠি দিয়ে আদেশ করেছেন, ঈদুল আযহার নামায খুব সকাল সকাল পড়বে এবং ঈদুল ফিতর-এর নামায ঈদুল আযহার চেয়ে অল্প একটু দেরিতে পড়বে এবং নামাযের পরে মানুষকে নছীহত করবে।”
কাজেই, ঈদের নামায সকাল সকাল পড়া সুন্নত। ঈদের নামাযের সম্মানার্থে এবং ঈদের নামায যাতে আদায় দেরী না হয়, সেজন্য ঈদের দিন ইশরাকসহ অন্যান্য নামায পড়া নিষিদ্ধ।
মুসাম্মত রহিমা খাতুন, পুরানবাজার, চাঁদপুর।
সুওয়াল: মহিলারা ঈদের নামায পড়তে পারবে কিনা?
জাওয়াব: মহিলাদের জন্য ঈদ ও জুমুয়ার নামায নেই। কারণ, ঈদ ও জুমুয়ার নামাযের জন্য জামায়াত শর্ত। হানাফী মাযহাব মতে, ইমাম ব্যতীত কমপক্ষে তিনজন মুছল্লী থাকতে হবে। অন্যথায় ঈদ ও জুমুয়া আদায় হবে না।
আর ফতওয়া হচ্ছে, মহিলাদের জন্য ঈদ হোক, জুমুয়া হোক, পাঞ্জেগানা হোক, তারাবীহ্ হোক কোন নামাযেই জামায়াতে আদায় করার জন্য মসজিদ ও ঈদগাহে যাওয়া জায়িয নেই। তা আম ফতওয়া মতে মাকরূহ আর খাছ ফতওয়া মতে কুফরী।
অতএব, মহিলারা ঈদের নামাযে গেলে কঠিন গুনাহে গুনাহ্গার হবে। (এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে আল বাইয়্যিনাতের ১১তম সংখ্যা পাঠ করুন, সেখানে প্রায় ৬৫টি দলীল পেশ করা হয়েছে।) (দলীলসমূহঃ উমদাতুল কারী শরহে বুখারী, দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়া, খুলাছাতুল ফতওয়া, ফতুহুল ক্বদীর, আলমগীরী)
মুসাম্মত মমতাজ বেগম, চান্দিনা কুমিল্লা।
সুওয়াল: কেউ কেউ বলে, রমযানের কাযা রোযা এবং শাওওয়াল মাসের নফল রোযা শাওওয়াল মাসে একই দিনে একত্রে উভয় রোযার নিয়তে রাখলে, একই সঙ্গে উভয় রোযা আদায় হয়ে যাবে এবং একই সাথে উভয় রোযার ছওয়াব পাবে।
তাদের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক?
জাওয়াব: যারা বলে, ছুটে যাওয়া রমযানে কাযা রোযা এবং শাওওয়ালের নফল রোযা একই সঙ্গে আদায় করলে আদায় হবে এবং ছওয়াবও পাবে তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, ভূল ও দলীলবিহীন।
সঠিক ফতওয়া হলো, রমযানের কাযা রোযা এবং শাওওয়ালের নফল রোযা একই দিনে একত্রে নিয়ত করে রাখলে কস্মিনকালেও উভয় রোযা আদায় হবে না এবং একইসঙ্গে উভয় রোযার ছাওয়াবও পাবেনা।
বরং শুধুমাত্র রমযানের কাযা রোযা আদায় হবে। শাওওয়ালের নফল রোযা আদায় হবে না। কেননা রমযান মাসের ছুটে যাওয়া ফরয রোযার কাযা আদায় করা ফরয। আর শাওওয়াল মাসের রোযা হলো নফল।
এটাই মূল ফতওয়া। এর বিপরীত মত পোষণ করা গোমরাহী।
মুহম্মদ আতিকুর রহমান
সদর, চাঁদপুর
সুওয়াল: ঈদের রাতের ফযীলত কি?
জাওয়াব: বছরে পাঁচ রাতে দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। তার মধ্যে দু’ঈদের দু’রাত। এ রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত-বন্দেগী, তাস্বীহ্ পাঠ, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, দরূদ শরীফ ও যিকির-আয্কার করে রাত অতিবাহিত করা অতি উত্তম। দিলের নেক মকসুদসমূহ আল্লাহ পাক-উনার নিকট জানালে আল্লাহ পাক তা কবুল করবেন।
হাদীছ শরীফ-এ আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আয্হার রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদতে মশগুল থাকবে, যেদিন অন্য সমস্ত দিল মরবে, সেদিন তার দিল মরবে না।” এর অর্থ হলো- ক্বিয়ামতের দিন অন্যান্য দিল পেরেশানীতে থাকলেও দু’ঈদের রাতে জাগরণকারী ব্যক্তির দিল শান্তিতে থাকবে। (তিবরাণী শরীফ)
মুহম্মদ উমর ফারুক
বাউফল, পটুয়াখালী
সুওয়াল: ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ কি? জানালে কৃতার্থ হবো।
জাওয়াব: ঈদের দিনের সুন্নত হলো- (১) খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠা, (২) গোসল করা, (৩) মিস্ওয়াক করা, (৪) সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, (৫) আতর ব্যবহার করা, (৬) নামাযের পূর্বে সদকাতুল ফিৎরা আদায় করা, (৭) ঈদুল ফিত্র নামাযের পূর্বে কিছু মিষ্টান্ন খাওয়া (৮) তিন, পাঁচ বা বেজোড় সংখ্যক খেজুর বা খুরমা খাওয়া, (৯) মহল্লার (এলাকার) মসজিদে গিয়ে ফজরের নামায পড়া, (১০) ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, (১১) এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, (১২) সকাল সকাল ঈদের নামায পড়ার জন্য যাওয়া, (১৩) ঈদের নামায, ঈদগাহে গিয়ে পড়া। সম্ভব না হলে মহল্লার (এলাকার) মসজিদে গিয়ে ঈদের নামায পড়া, (১৪) আস্তে আস্তে নিম্নলিখিত দোয়া পড়তে পড়তে ঈদগাহে যাওয়া
الله اكبر الله اكبر
لا اله الا الله والله اكبر
الله اكبر ولله الحمد
(১৫) শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে খুশি প্রকাশ করা ইত্যাদি ঈদের সুন্নত। (আলমগীরী, নূরুল ইজা ও অন্যান্য ফিক্বাহের কিতাব)
মুহম্মদ আব্দুল্লাহ্
লাখাই, হবিগঞ্জ।
সুওয়াল: ঈদের নামাযের পূর্বে কোন নফল ইবাদত বা কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা যাবে কি?
জাওয়াব: ঈদের নামাযের পূর্বে পুরুষ, মহিলা প্রত্যেকের জন্য নফল নামায আদায়, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ইত্যাদি মাকরূহ। (মারাকিউল ফালাহ, তাহতাবী, তাতারখানিয়া)
মুহম্মদ আশিকুল্লাহ
কাউখালী, পিরোজপুর।
সুওয়াল: ঈদের নামাযের খুৎবার পরে মুসাফাহা করা কি?
জাওয়াব: ঈদের নামাযের খুৎবার পর মুছাফাহা করা জায়িয। (মুছাওওয়া/শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী