সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৯০তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম।

 সুওয়াল: চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারি /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

 জাওয়াব: আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জাওয়াব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে, সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং মুয়ায্যিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা সম্পূর্ণই জিহালতী ও গুমরাহী।

রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানীদের বক্তব্য খণ্ডন

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা পরিশেষে বলেছে, “উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, আযানের মৌখিক জাওয়াব হানাফীদের মধ্যে যদিও কেউ কেউ ওয়াজিব বলেছেন …।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য মিথ্যা ও দলীলবিহীন হয়েছে। কারণ আযানের জাওয়াব দেয়া যে ওয়াজিব এটা হানাফীদের কেউ কেউ বলেননি। বরং হানাফী মাযহাবের ইমাম,  ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, উনারা সকলেই আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়াকে ওয়াজিব বলেছেন।

দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা বলেছে, “তবে অধিকাংশ হানাফী ফক্বীহ ও ইমামগণ আযানের মৌখিক জাওয়াবকে মুস্তাহাব বলেন…।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্যও মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কার এটা যে অধিকাংশ হানাফী ফক্বীহ ও ইমামগণের অভিমত, এধরনের কোন বক্তব্য, কোন বর্ণনা, কোন ইবারত উল্লেখ করতে পারেনি। সুতরাং রেযাখানীদের দলীলবিহীন বক্তব্য মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়।

তাছাড়া যেখানে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম, হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়াকে ওয়াজিব বলেছেন। সেক্ষেত্রে অন্যান্য ইমামগণের মুস্তাহাব অভিমত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

যেমন, “উমদাতুল ক্বারী” কিতাবের ৫ম খণ্ডের ১২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

ينبغى لمن سمع الاذان ان يقول كما يقول المؤذن حتى يفرغ من اذانه وهو مذهب اهل الظاهر ايضا وقال الثورى وابو حنيفة وابو يوسف ومحمد واحمد فى الاصح.

অর্থ: “যে ব্যক্তি মুয়ায্যিনের আযান শুনবে তার জন্য মুয়ায্যিনের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দেয়া উচিত অর্থাৎ ওয়াজিব। এমনকি মুয়ায্যিন যতক্ষণ পর্যন্ত তার আযান থেকে ফারেগ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আযান শ্রোতা মুয়ায্যিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দিবে এটা আযান শ্রোতার উপর ওয়াজিব। আর এটাই আহলে জাহিরের মত। অনুরূপ ইমামে আযম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং আহমদ রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর الاصح বা অধিক ছহীহ মতে আযান শ্রোতাদের জন্য মুয়ায্যিনের আযানের অনুরূপ মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।

সুতরাং যাঁরা হানাফী মাযহাবের মূল যেমন আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাই আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়াকে ওয়াজিব বলেছেন। এখন উনাদের উপরে অধিকাংশ হানাফী ফক্বীহ আর কারা থাকলেন তা রেযাখানীরা সুস্পষ্ট করে উল্লেখ করেনি।

তৃতীয়তঃ রেযাখানীরা অধিকাংশ বলে শুধুমাত্র ইমাম হালওয়ানীর কথাই উল্লেখ করেছেন।

অথচ আমরা প্রমাণ করেছি যে, ইমাম হালওয়ানীর ব্যক্তিগত অভিমত গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ইমাম হালওয়ানী, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতটি গ্রহণ করেছেন। কেননা-

وندبا عند الشافعى

শাফিয়ী মাযহাবে আযানের জাওয়াব দেয়া নুদব বা মুস্তাহাব।

সুতরাং হানাফী নাম দিয়ে শাফিয়ী মাযহাবের ফতওয়া দিলে তা কখনোই হানাফী মাযহাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

চতুর্থতঃ আমরা এটাও প্রমাণ করেছি যে, ইমাম হালওয়ানীর ব্যক্তিগত মতের উপর ফতওয়া নয়। বরং ফতওয়া হলো আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতের উপর।

যেমন, “মুয়াত্তা ইমাম মালিক” কিতাবের ২৩ পৃষ্ঠার ৪নম্বর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

قوله فقولوا مثل ما يقول اى وجوبا عند ابى حنيفة

অর্থাৎ “আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে বলেছেন, যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়ায্যিন যেরূপ বলে তোমরাও অনুরূপ বল।” অর্থাৎ এই হাদীছ শরীফের ভিত্তিতে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।

উল্লিখিত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথাই সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হলো যে, যাঁরা হানাফী মাযহাবের মূল যেমন আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাই আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়াকে ওয়াজিব বলেছেন। সুতরাং আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এর উপরই ফতওয়া। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমী। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খণ্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমী।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত, যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”

দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত বক্তব্যের শেষের অংশে তারা বলেছে, “তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীসও বর্ণিত নেই।…”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, তাদের এ বক্তব্যে এটাই প্রমানিত হয় যে, তারা “হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করেছে।” অথচ “হাদীছ শরীফে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের অনেক প্রমাণ রয়েছে।” যা আমরা দলীলসহ প্রমাণ করে দিয়েছি।

দ্বিতীয়তঃ ক্বিয়াম সম্পর্কেও অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। শুধু তাই নয় স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ক্বিয়াম করেছেন এবং ক্বিয়াম করার জন্য সরাসরি নির্দেশও দিয়েছেন।

যেমন ক্বিয়াম القيام শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে-قیام کرنا.کھڑا ہونا অর্থাৎ ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। (কামূস আল মুহীত, তাজুল উরুস, লিসানুল আরব, মিছবাহুল লুগাত, আল মুনজিদ)

আর ক্বিয়াম শব্দের ইস্তিলাহী বা পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ‘সালাম’ পাঠকালে ত’যীমার্থে ও মুহব্বতে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো ।

এছাড়াও মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে আলিম-উলামা, পীর-মাশয়িখ, উস্তাদ, পিতা-মাতা, দ্বীনি নেতৃস্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সুন্নত। এমনকি বিধর্মীদের কোন নেতা বা সর্দার যদি ইসলাম গ্রহণের জন্য আসে তবে তাঁর আগমনে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়াও সুন্নত।

তাই ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব “ফতওয়ায়ে আলমগীরী”- কিতাবের ৫ম খণ্ডের ৩৪৮ পৃষ্ঠায় ফতওয়া দেয়া হয়েছে-

اذا دخل ذمى على مسلم فقام له طمعا فى اسلامه فلا باس.

অর্থ: “যখন কোন (বিধর্মী) জিম্মি কোন মুসলমানের নিকট আসে, তখন তাকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই।”

মূল কথা হলো, উপরোল্লিখিত ক্ষেত্রে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে খাছ সুন্নত।

তাছাড়া শ্রদ্ধেয় বা সম্মানিত ব্যক্তিদের আলোচনা শুনে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো মুস্তাহাব। যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লামা হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রস্থ ‘তাফসীরে রুহুল বয়ান’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন-

وقد اجتمع عند الامام تقى الدين السبكى رحمة الله عليه جمع كثير من علماء عصره فانشد منشد قول الصرصرى رحمة الله عليه فى مدحه عليه فعند ذالك قام الامام السبكى وجميع من بالـمجلس فحصل انم عظيم بذالك المجلس وكفى ذالك فى الاقتداء.

অর্থ: হযরত ইমাম তাকীউদ্দিীন সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবারে একবার সে যামানার অধিকাংশ আলিম-উলামা উপস্থিত ছিলেন। তন্মধ্য হতে একজন হযরত ছারছীরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লেখা না’ত শরীফের দুটি লাইন পাঠ করলেন। (তা শুনে) হযরত ইমাম সুবুকী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্বিয়াম করলেন বা দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাঁর সাথে সাথে উপস্থিত সকল উলামায়ে কিরামও ক্বিয়াম করলেন বা দাঁড়িয়ে গেলেন। যার ফলে মাহফিলটি এক বিশাল প্রশান্তিতে আচ্ছাদিত হয়ে যায়। আর অনুকরণের জন্য বা মুহব্বতের ক্বিয়াম মুস্তাহাব-সুন্নত প্রমাণিত হওয়ার জন্য এ ঘটনাটিই যথেষ্ট।”

সুতরাং প্রমানিত হলো যে, শ্রদ্ধেয় ও সম্মানিত ব্যক্তিদের আলোচনা শুনে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব। মীলাদ শরীফে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর  পবিত্র বিলাদত শরীফের আলোচনা শুনেই মুলত ক্বিয়াম করা হয়।

অতএব, মীলাদ শরীফে যে ক্বিয়াম করা হয় তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ বা আগমণের সুসংবাদ শ্রবণ করত এবং উনার প্রতি সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে তা’যীমার্থে করা হয়। কাজেই মীলাদ শরীফের ক্বিয়াম খাছ সুন্নত ও মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নম্বর জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসা: ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবি সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ  পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তাঁরাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-

২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে থাকে। অথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্কানী মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরযে আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

গত কয়েক সংখ্যার আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইল্মে তাছাউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ পাক-এর যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুযূরী ক্বল্ব অর্জন করতঃ অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে ছোগরা হাছিল করতে হলে, অবশ্যই একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। কারণ মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী হাছিল করা বা বেলায়েতে ছোগরা হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তাই একজন কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।

কামিল মুর্শিদ বা শায়খের আলামত

কামিল পীর বা হক্কানী ওলী আল্লাহ্গণের আরেকটি বিশেষ আলামত হচ্ছে এই যে, তাঁরা হাদিয়া গ্রহণ করার সময় হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই করবেন। উল্লেখ্য যে, হাদিয়া দেয়া যেরূপ সুন্নত তদ্রুপ গ্রহণ করাও সুন্নত, তবে হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই করা ফরয।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন-

يايها الناس كلوا مما فى الارض حلالا طيبا

অর্থ: “হে মানুষেরা যমীনে যা হালাল খাদ্য রয়েছে, তা ভক্ষণ কর।” (সূরা বাক্বারা-১৬৮)

আর এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن عبد الله رضى الله تعالى عنه  قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم طلب كسب الحلال فريضة بعض الفريضة.

অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “(পুরুষের জন্য) অন্যান্য ফরযের পর হালাল কামাই করাও একটি ফরয।” (বায়হাকী, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يدخل الجنة لحم نبت من السحت كل لحم نبت من السحت كانت النار اولى به.

অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “গোশ্তের ঐ টুকরা যা হারাম রিযিক দ্বারা তৈরি, তা জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। কেননা প্রত্যেক ঐ গোশ্তের টুকরা; যা হারাম রিযিক দ্বারা তৈরি হয়েছে, তার জন্য জাহান্নামই উপযুক্ত।” (আহ্মদ, বায়হাক্বী, মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)

কাজেই যিনি হক্কানী পীর বা ওলী আল্লাহ তিনি যাচাই-বাছাই করে হাদিয়া গ্রহণ করবেন। যারা হাদিয়া গ্রহণ করার সময় যাচাই-বাছাই করবেনা বা হালাল-হারামের কথা জিজ্ঞাসা করবেনা তারা কামিল বা হক্কানী পীর নয় বরং তারা দুনিয়াদার বা নাহক্ব পীর।

এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, গাউছুল আ’যম, মাহ্বুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর আব্দুল কাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর দরবার শরীফে একবার বাগদাদের এক খলীফা ইউসুফ বিন মনছুর, তার এক মন্ত্রীর দ্বারা কিছু স্বর্ণ-মুদ্রা হাদিয়া স্বরূপ পেশ করলে হযরত বড় পীর সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, তোমার হাদিয়া গ্রহণ করা যাবেনা, কারণ তোমার এ স্বর্ণমুদ্রা হালাল নয় বরং হারাম। এরপরও মন্ত্রী বারবার পিড়াপীড়ি করতে লাগলো, তখন হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত স্বর্ণমুদ্রাগুলো হাতে নিয়ে চাপ দিলেন সাথে সাথে তার থেকে রক্ত বের হতে লাগলো। মন্ত্রী এ অবস্থা দেখে খলীফাক সংবাদ দিলে খলীফা এসে দেখলো সত্যিই স্বর্ণমুদ্রা থেকে রক্ত ঝরছে। বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তখন বললেন, হে খলীফা, তুমি জুলুম করে তা উপার্জন করেছ বিধায় এর থেকে রক্ত ঝরছে। কারণ প্রত্যেক জিনিস তার মূলের দিকেই প্রত্যাবর্তন করে। কাজেই তোমার এ হাদিয়া গ্রহণ করা যাবেনা। তখন খলীফা হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট ক্ষমা চাইলেন ও খাছ তওবা করলেন। (খোলাছাতুল ক্বাদেরী)

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, যিনি হক্কানী বা কামিল মুর্শিদ বা শায়খ তিনি অবশ্যই হাদিয়া গ্রহণ করার সময় হালাল-হারাম যাচাই-বাছাই করবেন। আর যে ব্যক্তি যাচাই-বাছাই করে হাদিয়া গ্রহণ করবেনা, সে কখনই হক্কানী বা কামিল পীর নয়।

এরপর হক্কানী ওলী আল্লাহগণের আলামত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আরজ করলেন ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা আপনার বিদায়ের পর কিরূপ লোকের ছোহ্বত ইখতিয়ার করবো? অর্থাৎ কোন্ ব্যক্তি হাক্বীক্বী আল্লাহওয়ালা বা কামিল পীর? জবাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

من ذكركم الله رؤيته ومن زاد فى علم كم منطقه ومن ذكركم بالاخرة اعماله.

অর্থ: “যাঁকে দেখলে আল্লাহ পাক-এর কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা শুনলে দ্বীনি ইল্ম বৃদ্ধি পায়, যাঁর আমল দেখলে পরকালের কথা স্মরণ হয়।” (সে ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আল্লাহ্ ওয়ালা বা কামিল পীর।)

এছাড়াও কামিল পীর বা শায়খের আরো বহু আলামত রয়েছে এখানে অতি জরুরী বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। কেননা কামিল পীর বা হক্কানী ওলী আল্লাহ্ হতে হলে উল্লিখিত আলামতগুলো অবশ্যই থাকতে হবে। যাদের মধ্যে উল্লিখিত আলামতগুলো নেই তারা কামিল বা হক্কানী পীর ও মুর্শীদ নয়। যদিও তাদেরকে সারা বিশ্বের মানুষ চিনে, যদিও তাদের লক্ষ-কোটি মুরীদান থাকে। বরং এরূপ পীর সাহেব পরিত্যাগ করে উল্লিখিত গুণ সম্পন্ন একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত হওয়া ওয়াজিব।

কেননা তাছাউফের কিতাবে উল্লেখ করা হয়, তিন কারণে মুর্শিদ বা শায়খ ছেড়ে দেয়া জায়িয ও স্থান বিশেষে ওয়াজিব। যেমন- (১) মুর্শিদ বা শায়খ মারা গেলে মুরীদ যদি পূর্ণতায় না পৌঁছে থাকে, তবে অন্য মুর্শিদ বা শায়খ গ্রহণ করতে হবে। (২) মুর্শিদ বা শায়খ যদি দূরদেশে থাকেন, সেখানে যদি কোন রকম যোগাযোগই রক্ষা করা সম্ভব না হয়। (৩) হক্ব মুর্শিদ বা শায়খ ধরার পর যদি দেখে মুর্শিদ বা শায়খ শরীয়তের খেলাফ কাজ করেন, তবে উক্ত মুর্শিদকে ছেড়ে অন্য হক্ব মুর্শিদ বা শায়খ ধরা ওয়াজিব। (ক্বওলুল জামীল, জাদুত্ তাক্বওয়া, তাছাউফ তত্ত্ব)

চতুর্থ কারণ হিসেবে কেউ কেউ উল্লেখ করেছেন যে, মুরীদ এরূপ মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত হয়েছে, যার মাধ্যমে মুরীদের রূহানী তরক্কী হচ্ছেনা বা আমলের পরিবর্তন হচ্ছেনা, তখন উক্ত মুর্শিদ বা শায়খ ছেড়ে এমন মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত হতে হবে, যাঁর দ্বারা রূহানী তরক্কী সম্ভব।

অতএব, উপরোল্লিখিত আলোচনা দ্বারা এটা সাব্যস্ত হলো যে, যিনি শায়খ বা মুর্শিদ বা হাদী হবেন, তাঁকে বিশেষভাবে ইল্মে তাছাউফ ও ইল্মে ফিক্বাহ্র অধিকারী হতে হবে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের উপর পরিপূর্ণভাবে কায়েম থাকতে হবে। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নতের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ এবং মোস্তাহাব পর্যন্ত তাঁকে আমল করতে হবে। অপরদিকে যাবতীয় হারাম কাজ এমনকি মাকরূহ্ কাজ থেকেও তাঁকে বিরত থাকতে হবে। এর বিপরীত যারা করবে তারা অবশ্যই নাহক্ব বা বাতিল। তাদের পীর ও মুর্শীদ হওয়ার কোনই যোগ্যতা নেই। আর তাদের নিকট বাইয়াত হওয়াও জায়িয নেই।

সুতরাং ইল্মে তাসাউফের ইল্মী ও আমলী বিষয়াদি এবং কামেল  শায়খ ও পীরের আলামত সম্পর্কিত এতক্ষণের আলোচনা শেষে এই সাব্যস্ত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকসহ সকলের জন্যই ইল্মে তাছাউফ হাছিল করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী বা ইখলাছ অর্জন তথা অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে ছোগরা হাছিল করার জন্য একজন হক্কানী ও কামিল মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয-ওয়াজিব। অপরদিকে “ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করা ব্যতীত কেবল চিন্তা দ্বারা ও প্রচলিত তাবলীগ করার মাধ্যমেই ইখলাছ হাছিল করা, অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বল্বের সহিত নামায আদায় করা কখনো সম্ভব নয়। এরজন্যে ক্বাল্বী যিকিরের কোনই প্রয়োজন নেই বরং বিভিন্ন প্রকার দোয়া-দরূদ ও তাসবীহ্-তাহলীলের মাধ্যমেই তা অর্জিত হয়” এরূপ কুরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী, মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিমূলক ও কল্পনা প্রসূত আক্বিদা থেকে প্রচলিত তাবলীগ জামাতসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই তওবা করাও ফরয-ওয়াজিব।

মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন,

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়াল: কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দোয়া করা জায়িয কিনা?

আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দোয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দোয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদিল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াব: হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দোয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দোয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি উনাদের অজুদ মুবারক, উনাদের নাম মুবারক ও উনাদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দোয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই, তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামাতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফে এবং বহু হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।

যারা নবী ও ওলীগণের ওসীলা গ্রহণকে অস্বীকার করে থাকে এরা দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণী হচ্ছে, যারা ওসীলাকে একচ্ছত্রভাবে অস্বীকার করে থাকে।

আর কেউ কেউ রয়েছে যারা কেবল বিছালপ্রাপ্ত বুযুর্গগণের ওসীলাকে অস্বীকার করে। তবে জীবিত বুর্যুগগণের ওসীলাকে সমর্থন করে।

এবং এ উভয় শ্রেণী ওসীলা গ্রহণের উপর অর্থাৎ ওসীলার বিরুদ্ধে যেসব প্রশ্ন উপস্থাপন করে দলীল ও যুক্তি প্রদান করে থাকে সেসব প্রশ্নের খণ্ডনমূলক জাওয়াব পেশ করা হলো।

৯. ওসীলা অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন:

হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম হযরত লূত আলাইহিস্ সালাম-এর গোত্রের জন্য দোয়া করার ইচ্ছা করেছিলেন। তখন উনাকে বলা হয়েছিল-

يا ابراهيم اعرض عن هذا انه قد جاء امر ربك وانهم ايتهم عذاب غير مردود.

অর্থ: হে হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম! আপনি এ (দোয়া) থেকে বিরত থাকুন। আপনার রব তায়ালা’র হুকুম এসে গেছে। ফলে তাদের উপর সে আযাব আসবেই। যা কখনো রদ বা প্রতিহত হবার নয়। (সূরা হুদ-৭৬)

দেখুন, নবী ও রসূল আলাইহিস্ সালাম-এর দোয়া কবুল হয়নি। (নাউজুবিল্লাহ)

এর জাওয়াব হলো: হযরত ইব্রাহীম আলাইহিচ্ছালাম-এর দোয়া নির্ঘাত কবুলযোগ্য। সেহেতু তিনি দোয়া করলে আজাব আসতে পারবে না। তাই আল্লাহ পাক উনার দোয়া করা নিষেধ করে দিলেন। যেন তিনি দোয়া না করেন আর নাফরমানদের প্রতি আযাব আসতে বাঁধা সৃষ্টি না হয়। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিচ্ছালাম এর দোয়া কুবল না হলে দোয়া বন্ধ করা প্রশ্নই উঠে না।

অতএব একথা বিশ্বাস করতে হবে প্রত্যেক নবী ও রসূল আলাইহিচ্ছালামগণের দোয়া নির্ঘাত কবুলযোগ্য। এছাড়া হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ প্রত্যেকেই ওহীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উনারা যা বলেন, যা করেন, সবকিছু ওহী মারফতই বলে ও করে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এর একাধিক স্থানে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,-

نوحى اليهم

অর্থাৎ, আমি উনাদের প্রতি অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রতি ওহী করি।

কাজেই, হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস্ সালাম হযরত লূত আলাইহিস্ সালাম-এর ক্বওমের জন্য যে দোয়া করেছেন তা যেমন ওহীর অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং পরে দোয়া করা বন্ধ করেছেন সেটাও ছিল ওহীর অন্তর্ভুক্ত।

ফলে, একথা বলার আদৌ সুযোগ নেই যে, কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম-এর কোন দোয়া বা কোন বিষয় কবুল হয়নি।

 মুহম্মদ নাজমুল হুদা

মানিকখালী, কিশোরগঞ্জ

 সুওয়াল: মাসিক মদীনা এপ্রিল/২০০৯ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়

প্রশ্ন: চুলে কালো রংয়ের কলপ ব্যবহার করে বয়স গোপন করা অথবা আকৃতি পরিবর্তন করা শরীয়তে জায়িয কিনা?

উত্তর: সাদা চুলে মেহেদি বা জাফরানের খেযাব লাগানোর হুকুম আছে। কালো খেযাব ব্যবহার করা মাকরূহ। (দুররুল মুখ্তার) তবে জেহাদের ময়দানে বা স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য পাকা চুল কালো করার অনুমতি আছে।

এখন আমার সুওয়াল হলো- সত্যিই যদি মুজাহিদের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা জায়িয হয়, তাহলে বাজারে প্রচলিত কালো খেযাবও কি মুজাহিদের জন্য ব্যবহার করা জায়িয হবে? আর স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য পাকা চুল কালো করার জন্য বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহার করা যাবে কি? সঠিক জাওয়াব জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: না, কালো খেযাব যা বাজারে প্রচলিত তা জিহাদের ময়দানে মুজাহিদের জন্য বা স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্যও ব্যবহার করা জায়িয হবে না। কারণ, বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহার করলে মাথার চুলে ও দাড়িতে নখপলিশের ন্যায় একটি আবরণ বা প্রলেপ পড়ে, যার ফলে মাথার চুল ও দাড়িতে পানি পৌঁছেনা এবং এ কারনে ওযু ও ফরয গোসল হবে না। আর ওযু ও ফরয গোসল না হলে তার নামায শুদ্ধ হবে না। কারণ নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য পূবশর্ত হলো, শরীর পাক হওয়া। আর শরীর পাক করতে হলে ফরয গোসলে সমস্ত শরীর ধৌত করতে হবে। এমনকি মাথার চুল ও দাড়িতে পানি পৌঁছাতে হবে যেন একটি চুলও শুকনা না থাকে।

শরীর পাক থাকলে নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য ওযু করা ফরয। আর ওযুতে মাথার চুল মাসেহ করা ফরয এবং দাড়িতে পানি প্রবাহিত করাও ফরয।

যেমন ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবের ১ম খণ্ডের ৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

والخضاب اذا تجسد ويبس يمنع تمام الوضو والغسل

অর্থ: “খেযাব যখন শরীরে (চুলে, দাড়ি ইত্যাদিতে) জমে বা লেগে যাবে এবং শুকিয়ে যাবে তখন ওযু ও গোসল শুদ্ধ হবে না।”

শুধু তাই নয় এমনকি বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহারকারী ব্যক্তি মারা গেলে তার জানাযার নামাযও শুদ্ধ হবে না। কারণ তাকে গোসল দেয়ার সময় তার দাড়িতে ও চুলে পানি না পৌঁছানোর কারণে সে পবিত্র হবে না।

সুতরাং তাকে পবিত্র করতে হলে তার দাড়ি ও চুল মু-ন করে গোসল করাতে হবে। এরপর তার জানাযা দিতে হবে। অন্যথায় সে কস্মিনকালেও পবিত্র হবে না এবং তার জানাযা নামায পড়ানোও জায়িয হবে ন।

 শরীয়তের ফায়সালা হলো, জিহাদের ময়দানে একমাত্র মুজাহিদের জন্য কালো খেযাব ব্যবহার জায়িয; তবে তাও শর্ত সাপেক্ষে। আর বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহার করা মুজাহিদের জন্য হারাম ও নাজায়িয। যা উপরে আলোচনা করা হয়েছে।

স্মর্তব্য, কালো খেযাব দুধরনের হয়ে থাকে-

প্রথমতঃ যেটা ব্যবহার করলে আবরণ বা প্রলেপ পড়ে না কিন্তু কালো হয়। আর এ ধরনের কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করাও শরীয়তে মাকরূহ তাহরীমী বলা হয়েছে।

যেমন, হাদীছ শরীফের কিতাব “আবূ দাউদ ও “নাসাঈ শরীফে” উল্লেখ আছে-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الزمان قوم يخضبون بالسواد كحواصل الحمام لايجدون رائحة الجنة.

অর্থ: “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখিরী যামানায় এমন কিছু লোক বের হবে যারা কবুতরের পালকের ন্যায় কালো খেযাব ব্যবহার করবে তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।

হাদীছ শরীফের কিতাব ‘তিবরানী শরীফে’ ইরশাদ হয়েছে-

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من خضب بالسواد سود الله وجهه يوم القيامة

অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি কালো খেযাব ব্যবহার করবে, আল্লাহ পাক ক্বিয়ামতের দিন তার চেহারাকে কালো করে দিবেন।”

‘মুসলিম শরীফের’ ২য় খণ্ডের ১৯৯ পৃষ্ঠার হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

ويحرم خضابه بالسواد على الاصح وقيل يكره كراهة تنزيه والمختار التحريم لقوله صلى الله عليه وسلم واجتنبوا السواد.

অর্থ: অধিক ছহীহ বা বিশুদ্ধ মতে কালো খেযাব ব্যবহার করা হারাম। কেউ কেউ বলেছেন, মাকরূহ তানযীহ। তবে গ্রহণযোগ্য মত হলো, কালো খেযাব ব্যবহার করা মাকরূহ তাহরীমী। কারণ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা কালো রং (খেযাব) বর্জন করো।’

কালো খেযাব সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘শরহে শামায়িলে তিরমিযীতে” উল্লেখ করেন-

ذهب اكثر العلماء الى كراهة الخضاب بالسواد ورجح الثورى الى انها كراهة تحريم.

অর্থ: “অধিকাংশ আলিমগনের মতে কালো খেযাব ব্যবহার করা মাকরূহ। হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে মাকরূহ তাহরীমী।”

মিশকাত শরীফের শরাহ, ‘আশয়াতুল লুময়াতে’ উল্লেখ আছে-

خضاب بحناء باتفاق جائزاست ومختار در سواد حرمت است.

অর্থ: “মেহেদেী বা মেন্দী দ্বারা খেযাব দেয়া সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয। আর গ্রহণযোগ্য মতে, কালো খেযাব ব্যবহার করা হারাম।”

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো চুল বা দাড়িতে কালো রংয়ের খেযাব ব্যবহার করা আমাদের হানাফী মাযহাবে আম ফতওয়া মুতাবিক মাকরূহ তাহরীমী আর খাছ ফতওয়া হারাম।

মুজাহিদের কালো খেযাব ব্যবহারের শর্ত:

তবে প্রলেপ পড়ে না এ ধরনের কালো খেযাব যুদ্ধক্ষেত্রে একমাত্র মুজাহিদের জন্য ব্যবহার করা জায়িয হলেও এক্ষেত্রে কিছু শর্ত-শারায়িত রয়েছে। যেমন, যুদ্ধক্ষেত্রে পাকা চুল ও দাড়িওয়ালা মুজাহিদ এ শর্তে কালো খেযাব ব্যবহার করবে যে, শত্রপক্ষ যেন মুজাহিদের কালো চুল ও দাড়ি দেখে ভয় পায়। অর্থাৎ শত্রুকে ভীতি প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে মুজাহিদরা কালো খেযাব ব্যবহার করবে। এ উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য যে কোন উদ্দেশ্যে কালো খেযাব ব্যবহার করা মাকরূহ তাহরীমী।

অথচ মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব কোন শর্ত-শারায়িতই উল্লেখ করেনি।

দ্বিতীয়তঃ আমাদের দেশে বা বিদেশে যে সমস্ত খেযাব পাওয়া যায় তার প্রত্যেকটি ব্যবহারেই প্রলেপ পড়ে। প্রলেপ পড়েনা এমন কোন খেযাব এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি বা বিশ্বে কোথাও পাওয়া যায় না।

অতএব, বর্তমানে বাজারে যে সব কালো বা অন্য কোন রংয়ের খেযাব পাওয়া যায় তা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।

আরো উল্লেখ্য যে, যুদ্ধক্ষেত্রে একমাত্র মুজাহিদের জন্য যে কালো খেযাব ব্যবহার করা জায়িয সেটা হচ্ছে, কাতম মিশ্রিত মেহেদী বা মেন্দীর খেযাব; যাতে কাতমের পরিমাণ বেশি হবে, ফলে তা কালো রং ধারণ করবে, কিন্তু প্রলেপ পড়বে না। আর এ ধরণের কালো খেযাব বাজারে প্রচলিত নেই। কেননা, বর্তমান বাজারে যে সমস্তকালো খেযাব পাওয়া যায়, তার সাথে কাতম মিশ্রিত মেহেদী বা মেন্দীর খেযাবের কোন সম্পর্ক নেই। সুতরাং বাজারে প্রচলিত কালো খেযাবও মুজাহিদের জন্য ব্যবহার করা হারাম ও নাজয়িয।

আর স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহার করাও নাজায়িয ও হারাম। কারন হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

لا طاعة لمخلوق فى معصية الخالق

অর্থ: আল্লাহ পাক-এর নাফরমানী করে মাখলূক্বাতের আনুগত্যতা করা জায়িয নেই।”

কাজেই উপরোক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য শরীয়তের খিলাফ কাজ করা যাবে না। সুতরাং স্ত্রীর মনোরঞ্জণের জন্য পাকা চুল কালো করার জন্য কালো খেযাব বা বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহার করা নাজায়িয ও হারাম।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই সাব্যস্ত হলো যে, জিহাদের ময়দানে মুজাহিদের জন্য বা স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্যও বাজারে প্রচলিত কালো খেযাব ব্যবহার করতে পারবে না। যা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে বলেই প্রমাণিত হল।

(বিঃ দ্রঃ এ সম্পর্কে আরো জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১৯, ৩২, ৪২, ৬০, ৬৬, ৬৭, ৭৫, ৯৫ ও ১০০তম সংখ্যাগুলো পড়ুন। সেখানে মাসিক মদীনা, মাসিক পৃথিবী ও মাসিক রাহমানী পয়গামের ভুল বক্তব্য খণ্ডন করে সঠিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

দলীলসমূহ: {দলীলসমূহঃ- (১) মুসলিম (২) তিরমিযী, (৩) আবূ দাউদ, (৪) নাসাঈ, (৫) ইবনে মাজাহ, (৬) তিবরানী, (৭) মিশকাত, (৮) উমদাতুল ক্বারী (৯) জামউল ওসায়িল, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুমুয়াত, (১২) লুময়াত (১৩) শরহে শামায়িলে তিরমিযী, (১৪) যখীরা, (১৫) ওয়াজীয, (১৬) সিরাজুল ওয়াহ্হাজ, (১৭) দুররুল মুখতার (১৮) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (১৯) ফতওয়ায়ে শামী, (২০) ফতওয়ায়ে হিন্দীয়া, (২১) ইমদাদুল ফতওয়া (২২) কিফায়াতুল মুফতী ইত্যাদি।]

মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান

এন গঞ্জ, ঢাকা।

সুওয়াল: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসাতে তথা জঙ্গি তৈরিকারী মাদ্রাসাগুলোতে যাকাত-ফিতরা দিলে তা আদায় হবে কি?

 জাওয়াব: ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসাতে তথা জঙ্গি তৈরিকারী মাদ্রাসাগুলোতে যাকাত ও ফিতরা দিলে তা আদায় হবে না। যাকাত ও ফিতরা দেয়ার উত্তম স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’।

দান-ছদক্বা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

ولكن البر من امن بالله واليوم الاخر والملئكة والكتب والنبين واتى المال على حبه ذوى القربى واليتمى والمسكين وابن السبيل والسائلين وفى الرقاب واقام الصلوة واتى الزكوة والموفون بعهدهم اذا عهدوا والصبرين فى الباساء والضراء وحين الباس اولئك الذين صدقوا واولئك هم المتقون.

অর্থ: “বরং প্রকৃত নেক কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহ পাক-এর উপর, ফেরেশ্তাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের উপর। আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মুহব্বতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসের জন্য। আর নামায কায়িম করবে, যাকাত দান করবে, কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করবে, অভাবে রোগে-শোকে এবং যুদ্ধের সময় ধৈর্য্যধারণকারী হয়ে থাকবে। এরাই হলো সত্যাশ্রয়ী, আর এরাই পরহিযগার।” (সূরা বাক্বারা-১৭৭)

যাকাত ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদের মধ্যে অন্যতম বুনিয়াদ। যা ফরয। কাজেই যাকাত দেয়ার সাথে সাথে তা কাকে বা কোথায় দিতে হবে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কুরআন শরীফে সবস্থানে আল্লাহ পাক আগে ‘ঈমান’ আনার কথা বলেছেন পরে ‘আমলের’ কথা বলেছেন।

এক খোদা তায়ালাকে প্রায় সবাই মানে কিন্তু হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে না মানার কারণেই অর্থাৎ আক্বীদার পার্থক্যের কারণেই পৃথিবীতে মুসলমান ব্যতীত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ইত্যাদি হাজারো বিধর্মী তথা কাফিরের দল রয়েছে। কুরআন শরীফের ভাষায় তারা সবাই জাহান্নামী যদি তওবা-ইস্তিগফার করে ঈমান না আনে।

স্মরণীয় যে, শুধু কাফির সম্প্রদায়ই নয়, মুসলমান নামধারী অনেক মাওলানা, শাইখুল হাদীছ, মুফতী, মুফাসসির, খতীব তথা অনেক ইসলামী দলও রয়েছে যাদের মূলতঃ আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে আক্বীদা খারাপ রয়েছে। কাজেই তারা মুসলমান নামধারী হলেও তারা মুসলমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। তারা ইসলামী দল নামধারী হলেও আসলে তারা ইসলামী দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।

উল্লেখ্য, ইসলামে মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ হারাম। ইসলামের নামে ব্যবসা করা হারাম। ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক দল করা হারাম। ইসলামের নামে নির্বাচন করা হারাম। ইসলামের নামে ভোট চাওয়া হারাম।

আরো উল্লেখ্য, বর্তমানে অধিকাংশ মাদ্রাসাগুলোই হচ্ছে জামাতী, ওহাবী, খারিজী মতাদর্শের তথা জঙ্গি তৈরির সুতিকাগার। ইসলামের দোহাই দিয়ে, ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক স্বার্থ ও প্রতিপত্তি হাছিলের প্রকল্প। ইসলামের নামে নির্বাচন করার ও ভোটের রাজনীতি করার পাঠশালা- যা ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম।

কাজেই, যাকাত-ফিতরা কোথায় দেয়া হচ্ছে তা দেখে দিতে হবে। জামাতী, খারিজী, ওহাবী ও জঙ্গি-মৌলবাদী তথা ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসাতে যাকাত-ফিতরা দিলে তা কস্মিনকালেও আদায় হবে না।

জামাতী, ওহাবী তথা জঙ্গিদের মাদ্রাসায় যাকাত-ফিতরা দিলে তাতে বদ আক্বীদা ও বদ আমলের প্রচারে সহায়তা করা হবে। জঙ্গি-জামাতী ও ধর্মব্যবসায়ী তৈরিতে সাহায্য করা হবে। তাতে লক্ষ-কোটি কবীরাহ গুনাহে গুনাহগার হতে হবে।

মূলতঃ ধর্মব্যবসায়ীদের মাদ্রাসায় যাকাত-ফিতরা না দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ। আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ তথা সন্তুষ্টির কারণ।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে নির্দেশ করেন-

تعاونوا  على البر والتقوى ولا تعاونوا على الاثم والعدوان واتقوا الله ان الله شديد العقاب.

অর্থ: ‘তোমরা নেককাজে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো। বদকাজে পরস্পর পরস্পরকে সাহায্য করো না। আর এ বিষয়ে আল্লাহ পাককে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তিদাতা’ (সূরা মায়িদা-২)

আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

 عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة سيئة كان عليها وزرها و وزر من عمل بها من بعده.

অর্থ: “হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে কেউ একটা বদ কাজের সূচনা করলো যতজন তাতে শরীক হলো তাদের সবার গুনাহ যে বদকাজের সূচনা করেছে তার উপর গিয়ে পড়বে।” (মুসলিম, মিশকাত)

পত্রিকার রিপোর্টে পাওয়া যায়, জামাতী-খারিজীরা তাদের নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসায় সংগৃহীত যাকাত, ফিতরা, কুরবানীর চামড়ার মাধ্যমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা আয় করে। যা মূলতঃ তাদের বদ আক্বীদা ও বদ আমল তথা ধর্মব্যবসার কাজেই ব্যয়িত হয়।

আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যাকাতের একটি রশির জন্যও জিহাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই, যাকাতের একটি রশির মতই একটি পয়সাও যাতে ভুল উদ্দেশ্যে ও ভুল পথে পরিচালিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

এ কারণে বর্তমান হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ, যামানার মুজতাহিদ ও ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস্ সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, মুজাদ্দিদে আ’যম, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী বলেছেন, বর্তমানে হক্ব মত-পথ ও সুন্নতী আমলের একমাত্র ও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো, ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’।

কাজেই, যাকাত-ফিতরা বা কুরবানীর চামড়া দিয়ে যারা ছদকায়ে জারীয়ার ছওয়াব হাছিল করতে চায় তাঁদের জন্য একমাত্র ও প্রকৃত স্থান হলো ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ’ রাজারবাগ, ঢাকা।

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ