সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৮৮তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম

 সুওয়াল: চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারি /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

 জাওয়াব:ঃ আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহনযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জাওয়াব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং মুয়ায্যিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গুমরাহী।

রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খন্ডসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানীদের বক্তব্য খণ্ডন

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা আযানের জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে, তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল উল্লেখ করে বলেছে, “আল্লামা ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি দুররুল মুখতার গ্রন্থে লিখেছেন …. মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব …”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, রেযাখানীদের উক্ত বক্তব্য সম্পুর্ণ জিহালতপূর্ণ ও প্রতারণামূলক হয়েছে। কারণ রেযাখানীরা আযানের জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে; তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে একজনের লিখিত কিতাবকে অন্যজনের নামে চালিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে চরমভাবে ধোঁকা দিয়েছে।

অথচ “দুরুল মুখতার” কিতাবটি আল্লামা হযরত ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত কিতাব নয়। বরং “দুররুল মুখতার” কিতাবটি লিখেছেন হযরত মুহম্মদ বিন আলী দামেশ্কী হানাফী হাছকাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি। আর আল্লামা হযরত ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত কিতাবের নাম হলো “রদ্দুল মুহতার”। সুতরাং যারা কোনটি কার কিতাব এটাই জানে না তারা আবার ফতওয়া দেয়।

দ্বিতীয়ঃ রেযাখানীরা বলেছে, “সুতরাং ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর গবেষণা মতে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব। তিনি ইমাম হালওয়ানির অভিমতকে প্রাধান্য দেন।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, হযরত ইমাম ইবনে আবদেীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ব্যক্তিগত মতের উপর ফতওয়া নয়। বরং ফতওয়া হলো আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতের উপর।

যেমন, “মুয়াত্তা ইমাম মালিক” কিতাবের ২৩ পৃষ্ঠায় ৪ নম্বর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

قوله فقولوا مثل ما يقول اى وجوبا عند ابى حنيفة وندبا عند الشافعى.

অর্থ: “আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন, “যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়ায্যিন যেরূপ বলে তোমরাও অনুরূপ বল।” অর্থাৎ এই হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর শাফিয়ী মাযহাবে মুস্তাহাব।

তৃতীয়তঃ হযরত ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহব বলে ইমাম হালওয়ানীর মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আর ইমাম হালওয়ানীর উক্ত বক্তব্য যে গ্রহণযোগ্য নয় তা হযরত ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার “রদ্দুল মুহ্তার” কিতাবেও উল্লেখ করেছেন।

যেমন, “রদ্দুল মুহতার” কিতাবের ১ম খন্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-

قال فى النهر: وقوله بوجوب الاجابة بالقدم مشكل, لأنه يلزم عليه وجوب الأداء فى أول الوقت وفى المسجد اذلا معنى لايجاب الذهاب دون الصلاة.

অর্থ: “নাহরুল ফায়িক” কিতাবে উল্লেখ আছে, নিশ্চয়ই হালওয়ানীর বক্তব্য الاجابة بالقدم (আল ইজাবাতু বিল কুদুম) অর্থাৎ জামাতে নামায আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিতির মাধ্যমে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এটা মুশকিল। কেননা জামায়াতে নামায আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিতির (গমনের) মাধ্যমে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব হলে প্রথম ওয়াক্তেই মসজিদে উপস্থিতির মাধ্যমে ওয়াজিব আদায় করা তার উপর লাযিম হয়ে যায়। আর আযানের পূর্ব থেকেই মসজিদে উপস্থিত থাকলে নামায ব্যতীত, আযানের জাওয়াব দেয়ার জন্য মসজিদে গমন করা নির্থক। (কেননা সে তো আযানের পূর্ব থেকেই মসজিদে উপস্থিত) (হাশিয়ায়ে রদ্দুল মুহ্তার ১ম খ-, পৃষ্ঠা ৩৯৬)

এছাড়াও হালওয়ানীর উক্ত বক্তব্য যে গ্রহণযোগ্য নয় তা ‘বাহরুর রায়িক’ কিতাবেও উল্লেখ আছে-

যেমন, “বাহ্রুর রায়িক” কিতাবের ১ম খণ্ডের ২৫৯ পৃষ্ঠার হাশিয়ায়ে উল্লেখ আছে-

واعلم ان قول الحلوانى بوجوب الاجابة بالقدم مشكل لانه يلزم عليه وجوب الاداء فى أول الوقت وفى المسجد اذلا معنى لايجاب الذهاب دون الصلاة.

অর্থ: “জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই হালওয়ানীর বক্তব্য আল ইজাবাতু বিল কুদুম এর মাধ্যমে অর্থাৎ জামায়াতে নামায আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিতির মাধ্যমে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এটা মুশকিল। কেননা জামায়াতে নামায আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিতির মাধ্যমে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব হলে প্রথম ওয়াক্তেই মসজিদে উপস্থিতির (গমনের) মাধ্যমে ওয়াজিব আদায় করা তার উপর লাযিম হয়ে যায়। আর আযানের পূর্ব থেকেই মসজিদে উপস্থিত থাকলে নামায ব্যতীত আযানের জাওয়াব দেয়ার জন্য মসজিদে গমন করা যে ওয়াজিব তা নিরর্থক হয়ে যায়।

অতএব, হালওয়ানীর উক্ত বক্তব্য থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, হালওয়ানী যেহেতু আযানের জাওয়াবে قدم বা উপস্থিত হওয়াকেই ওয়াজিব বলেছে, সেহেতু হালওয়ানীর উক্ত বক্তব্যে আযানের জাওয়াবে প্রথম ওয়াক্তেই মসজিদে উপস্থিত হওয়া বা মসজিদে গমন করা ওয়াজিব। যা কখনই সম্ভব নয়।

দ্বিতীয়তঃ হালওয়ানীর উক্ত বক্তব্যে এটাও প্রমাণিত হলো যে, আযানের পূর্ব থেকেই জামায়াতে নামায আদায় করার জন্য মসজিদে উপস্থিত থাকলে নামায ব্যতীত আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব তার উপর বর্তায় না। কেননা সে তো قدم বা উপস্থিত হয়েই আছে। যা সম্পূর্ণই হাদীছ শরীফ-এর খিলাফ হওয়ায় মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

সুতরাং আযানের জাওয়াবে قدم বা উপস্থিত হওয়া ওয়াজিব হালওয়ানীর উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও অশুদ্ধ বলেই প্রমানিত হলো। কারণ হাদীছ শরীফে আযানের জাওয়াবে قدم বা উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হয়নি। বরং হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে قولوا শব্দটি উল্লেখ আছে।

যেমন, হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول

অর্থ: “যখন তোমরা মুয়ায্যিনের আযান শুনবে তখন মুয়ায্যিন যা বলে তোমরাও তাই বল।” এই বর্ণিত হাদীছ শরীফের মধ্যে قولوا শব্দটি امر (আমর) এর ছিগাহ, যা দ্বারা সুষ্পষ্টভাবেই ওয়াজিব প্রমাণিত হয়।

যেমন, এ প্রসঙ্গে “মুয়াত্তা ইমাম মুহম্মদ” কিতাবের ৮৫ পৃষ্ঠার ৪নম্বর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে-

قوله فقولوا استبدل به على وجوب اجابة المؤذن حكاه الطحاوى عن قوم من السلف وبه قال الحنيفة.

অর্থ: হাদীছ শরীফের ইবারতে উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করা হয়েছে যে, মৌখিকভাবে মুয়ায্যিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। এটা ইমাম ত্বহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ছলফে-ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের এক জামায়াত থেকেও বর্ণনা করেছেন। আর হাদীছ শরীফের ইবারতে উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে দলীল গ্রহণ করে হানাফীগণ বলেন, মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।

অতএব, হযরত ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে ইমাম হালওয়ানীর মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। আর ইমাম হালওয়ানীর উক্ত বক্তব্য যে গ্রহণযোগ্য নয় তা হযরত ইমাম ইবনে আবেদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি তার “রদ্দুল মুহতার” কিতাবেও উল্লেখ করেছেন। যা কিতাবের পৃষ্ঠা নম্বরসহ উল্লেখ করা হলো। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জাওয়াব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমী। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খন্ড করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খন্ড করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমী।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত, যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”

দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত বক্তব্যের শেষের অংশে তারা বলেছে, “তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীসও বর্ণিত নেই।…”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, তাদের এ বক্তব্যে এটাই প্রমানিত হয় যে, তারা “হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করেছে।” অথচ “হাদীছ শরীফে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের অনেক প্রমাণ রয়েছে।” যা আমরা দলীলসহ প্রমাণ করে দিয়েছি।

দ্বিতীয়তঃ ক্বিয়াম সম্পর্কেও অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। শুধু তাই নয় স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ক্বিয়াম করেছেন এবং ক্বিয়াম করার জন্য সরাসরি নির্দেশও দিয়েছেন।

যেমন ক্বিয়াম القيام শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে-قیام کرنا.کھڑا ہونا অর্থাৎ ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। (কামূস আল মুহীত, তাজুল উরুস, লিসানুল আরব, মিছবাহুল লুগাত, আল মুনজিদ)

আর ক্বিয়াম শব্দের ইস্তেলাহী বা পারিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ‘সালাম’ পাঠকালে ত’যীমার্থে ও মুহব্বতে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো ।

এছাড়াও মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে আলিম-উলামা, পীর-মাশয়িখ, উস্তাদ, পিতা-মাতা, দ্বীনি নেতৃস্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সুন্নত।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن عائشة رضى الله تعالى عنها قدم زيد بن الحارثة المدينة ورسول الله صلى الله عليه وسلم فى بيتى فاتاه فقرع الباب فقام اليه رسول الله صلى الله عليه وسلم عريانا يجر ثوبه والله ما رايته عريانا قبله ولا بعده فاعتنقه وقبله.

অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফে আগমন করলেন, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরেই অবস্থান করছিলেন। হযরত যায়িদ ইবনে হারিছা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমার ঘরে কড়া নাড়লে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ শরীর মুবারকের কাপড় (চাদর) মুবারক গুছগাছ করে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং তাঁর সাথে মুয়ানাকা করলেন ও বুছা দিলেন। হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, আমি এর পূর্বে ও পরে কখনো উনাকে এরূপ করতে দেখিনি।” (তিরমিযী শরীফ)

হাদীছ শরীফ-এ আরো উল্লেখ আছে-

عن عائشة رضى الله تعالى عنها انها قالت ما رايت احدا كان اشبه سمتا وهديا ودلا وقال الحسن حديثا وكلاما ولم يذكر الحسن السمت والهدى والدل برسول الله صلى الله عليه وسلم من فاطمة كرم الله وجهها كانت اذا دخلت عليه قام اليها فاخذ بيدها وقبلها واجلسها فى مجلسه وكان اذا دخل عليها قامت اليه فاخذت بيده فقبلته واجلسته فى مجلسها.

অর্থ: “হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর চেয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে শারীরিক গঠন বা সৌন্দর্যে অন্য কাউকে এত সামঞ্জস্যপুর্ণ দেখিনি। হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি শুধুমাত্র কথাবার্তায় সামঞ্জস্যতার কথাই বলেছেন। কিন্তু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে শারীরিক গঠন বা আকৃতি-প্রকৃতিতে সামঞ্জস্যতার কথা বলেননি। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা যখন আসতেন, তখন তিনি তাঁর মুহব্বতে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তাঁর হাত ধরে চুমু খেয়ে নিজ আসনে বসাতেন। অনুরূপ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর ঘরে আসতেন তখন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার প্রতি তা’যীম প্রকাশার্থে দাঁড়িয়ে যেতেন। উনার হাত ধরে, চুমু খেয়ে নিজ আসনে বসাতেন।” (আবূ দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)

উল্লিখিত হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে দু’প্রকার ক্বিয়ামের প্রমাণ পাওয়া গেল। ১. ক্বিয়ামে হুব্বী, ২. ক্বিয়ামে তা’যীমী অর্থাৎ সম্মান প্রকাশার্থে ক্বিয়াম করা। অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনি হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের জন্যে যে ক্বিয়াম করেছেন তা হচ্ছে ক্বিয়ামে হুব্বী।

আর হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ, উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্যে যে ক্বিয়াম করেছেন তা হচ্ছে ক্বিয়ামে তা’যীমী। সুতরাং উভয়টাই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নম্বর জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসা: ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খন্ডমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবি সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদ-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ  পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তাঁরাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-

২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদ-এর নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে থাকে। অথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্কানী মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরযে আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।

গত কয়েক সংখ্যার আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইলমে তাছাউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ পাক-এর যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুযূরী ক্বল্ব অর্জন করতঃ অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করতে হলে, অবশ্যই একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। কারণ মুর্শিদ বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুযূরী হাছিল করা বা বেলায়েতে আম হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তাই একজন কামিল পীর বা মুর্শিদ-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।

কামিল মুর্শিদ বা শায়খ-এর আলামত

পূর্ব প্রকাশিতের পর

উপরোল্লিখিত হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় ইমামে রব্বানী, মাহ্বুবে সুবহানী, কাইয়ুমে আউয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব “মকতুবাত শরীফে” উল্লেখ করেন-

العلماء ورثة الانبياء. علمیکہ از انبیاء علیھم الصلوات والتسلیمات باقی ماندہ است دونوع است علم احکام وعلم اسرار وورث کسی ھست کہ اورا ھردونوع علم سھم بود انکہ اورا ازیک نوع نصیب بود نہ از نوع دیگر کہ أن منافی وراثت است. چہ وراثت را از جمیع انواع ترک مورث نصیب است نہ ازبعض وأنکہ اورا از معین نصیب است داخل غرما است کہ نصیب او بجنس حق او تعلق گرفتہ است.

অর্থ: “আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ” এ হাদীছ শরীফে বর্ণিত আলিম তারাই, যাঁরা নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের রেখে যাওয়া ইল্মে আহ্কাম (ইল্মে ফিক্বাহ্) ও ইল্মে আসরার (ইল্মে তাছাউফ) উভয় প্রকার ইল্মের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইল্মের অধিকারী, সে ব্যক্তি নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রকৃত ওয়ারিছ নন। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে অংশীদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয় গরীমের অন্তর্ভুক্ত।”

হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিশকাত শরীফের বিখ্যাত শরাহ্ “মিরকাত শরীফে” উল্লেখ করেন যে, মালিকী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-

من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.

অর্থ: “যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইল্মে তাছাউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো না, সে যিন্দিক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, সে মুহাক্কিক তথা হক্কানী আলিম।”

অর্থাৎ যে ইল্মে ফিক্বাহ্ শিখলো, কিন্তু ইল্মে তাছাউফ শিখলোনা, সে হচ্ছে ফাসিক। আর যে বলে আমি মা’রিফাত করি বা ইল্মে তাছাউফ করি কিন্তু শরীয়ত বা ফিক্বাহ্ স্বীকার করেনা, সে হচ্ছে যিন্দিক। আর যিনি উভয়টাই শিক্ষা করলেন, তিনি হচ্ছেন মুহাক্কিক অর্থাৎ হাক্বীক্বী আলিম। হক্কানী বা প্রকৃত আলিম সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

من ارباب العلم قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء قال الطمع.

অর্থ: “(আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কা’ব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইল্মের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করে। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইল্মকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)

বিশিষ্ট তাবিয়ী, আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন-

انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والوارع والكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.

অর্থ: “ফক্বীহ্ বা আলিম হলো ঐ ব্যক্তি, যে দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুনাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিযগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন।”

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, যাঁর মধ্যে খোদাভীতি রয়েছে এবং অর্জিত ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই আলিম। কাজেই যাঁরা আল্লাহ পাক-এর ভয়ে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে না এবং অর্জিত ইল্ম অনুযায়ী আমল করে না, তারা আলিম নয়। যেমন বর্তমানে অনেকেই আলিম নাম দিয়ে ছবি তোলে, হরতাল, লংমার্চের নামে বেদ্বীনদেরকে অনুসরণ করে, ইসলামের নামে হারাম গণতন্ত্র চর্চা করে এবং নিজ স্বার্থ টিকিয়ে রাখার জন্য হক্বের বিরোধিতা করে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা আলিম নয়। কাজেই তাদেরকে আলিম বলা যায়না। (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:  হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লিখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

এর জাওয়াব হলো: আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফ-এর হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে উনার প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ থেকেই দলীল রয়েছে।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

وقد كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم مؤذن واحد فكان اذا جلس على المنبر اذن على باب المسجد فاذا انزل رسول الله صلى الله عليه وسلم اقامة الصلاة ثم كان ابو بكر رضى الله تعالى عنه و عمر رضى الله تعالى عنه ذالك حتى اذا كان عثمان رضى الله تعالى عنه وكثر الناس زاد مؤذن اخر فامر بالتاذين الاولى على داره التى تسمى زوراء فاذا جلس على المنبر اذن مؤذن الثانى بين يدى المنبر.

অর্থ: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় একটিমাত্র আযান প্রচলিত ছিল, যা তিনি মিম্বরে বসার পর দরজায় দেয়া হতো। অতঃপর যখন তিনি মিম্বর হতে নামাযের জন্য দাঁড়াতেন তখন নামাযের জন্য ইক্বামত দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্যন্ত একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খিলাফতে আসীন হবার পর জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে দ্বিতীয় আরেকটি আযান বর্তমানে প্রথম আযান বৃদ্ধি করেন। অতঃপর প্রথম আযানটি “যাওরা” নামক স্থানে দেয়ার হুকুম দেন। আর দ্বিতীয় আযানটি মিম্বরে বসার পর মিম্বরের সম্মুখে দেয়ার আদেশ দেন। (তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ১৪জিঃ পৃঃ৯৮)

اى اذا اذن المؤذن بين يدى الامام وهو على االمنبر فى يوم الجمعة للصلاة فاتركوا البيع واسعوا لتسمعوا موعظة الامام فى خطبته.

অর্থ: যখন জুমুয়ার দিন নামাযের জন্য ইমাম মিম্বরে বসার পর মুয়াজ্জিন তার সম্মুখে আযান দিবে, তখন তোমরা বেচা-কিনা বন্ধ করে দাও, এবং ইমামের খুৎবা শুনার জন্য ধাবমান হও। (তাফসীরে মুরাগী জিঃ১০ পৃঃ১০৩)

ور دوسری اذان خطبہ کے وقت منبر کے سامنے ھوتی ہے. اور تیسری اذان یھی منارہ والی ھے

অর্থ: ছানী আযান খুৎবার পূর্বে মিম্বরের সম্মুখে হবে। আর তৃতীয় আযান যা মিনারার উপর দেয়া হতো (তৃতীয় এজন্য বলা হয়, কারণ ইক্বামতকেও আযান বলা হয়) মূলতঃ সেটাই প্রথম আযান। (তাফসীরে মাযহারী ১৩জিঃ পৃঃ২৮১)

نودی سے مراد قران میں وہ اذان ہے جو نزول آیت کے وقت تھی یعنی جو امام کے سامنے ہو تی ہے کیونکہ اس سے پھلی اذان بعد کو حضرت عثمان کے عہد میں صحابہ کے اجماع سے مقرر ہوا ہے.

অর্থ: কুরআন শরীফে “নুদিয়া” দ্বারা ঐ আযানকেই বুঝান হয়েছে, যে আযান আয়াত শরীফ নাযিল হবার সময় ছিল অর্থাৎ বর্তমানে যে আযান ইমামের সামনে দেয়া হয়। কেননা ওটার পূর্বে যে আযানটি দেয়া হয় সেটা হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইজমার দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়। (তাফসীরে উছমানী ২৮ পারা, ৭১৮পৃঃ)

(اذا نودى) اس سے خطیب اور منبر کے سامنے کی اذان جمعہ مراد ہے کیونکہ اس سے پھلے کی اذان آنحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کے زمانہ میں رائج نہیں ہوئی تھی. وہ تو  حضرت عثمان رضی اللہ عنہ کے دور خلافت میں جب لوگ زیادہ ہو گئے اور کارویار اور مشاغل بڑھ گئے. تو صحابہ کے مشورہ سے پھلے اذان کا اضافہ کیا گیا جو مقام “زوراء” پر  چرہ کر کہا جاتی. اور چونکہ سب صحابہ کا اس پر اجماع ہو گیا پس وہ خلفاء راشد کی سنت ہے.

অর্থ: (ইযা নুদিয়া) এটা দ্বারা জুমুয়ার দিন খতীব ও মিম্বরের সামনে যে আযান দেয়া হয় তাই উদ্দেশ্য। কেননা বর্তমানের প্রথম আযান হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় প্রচলিত ছিল না। সেটা হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকালে লোকসংখ্যার আধিক্য ও কাজ-কর্মের ব্যস্ততার কারণে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের পরামর্শক্রমে বৃদ্ধি করা হয় এবং সেটা ‘যাওরা’ নামক স্থানে দেয়া হতো। যেহেতু এটার উপর ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সুতরাং এটা সুন্নতে খুলাফায়ে রাশিদীন অর্থাৎ হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সুন্নত। (তাফসীরে কামালাইন জিঃ ৪ পৃঃ ৭৭)

والظاهر انه كان لمطلق الاعلام لخصوص الانصات نعم لما زيد الاذان الاول كان الذى يدى الخطيب للانصات.

অর্থ: প্রকাশ থাকে যে, নিশ্চয় (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কার) আযান সাধারণতঃ মানুষদেরকে নামায ও খুৎবার সংবাদ জানানোর জন্যই দেওয়া হতো (তাই সেটা মসজিদের বাইরে দেয়া হতো যাতে সকলে নামায ও খুৎবায় অংশগ্রহণ করতে পারে) যখন ওটার পূর্বে আরো একটি আযান বৃদ্ধি করা হলো তখন খতীবের সামনের আযানটি মূলতঃ মসজিদে উপস্থিত লোকদের চুপ হবার উদ্দেশ্যে দেয়া হয় (তাই ছানী আযান মসজিদের ভিতরেই দেয়া হয়) (ফতহুল বারী শরহে বুখারী জিঃ২ পৃঃ৩৯৩, ই’লাউস সুনান জিঃ৮ পৃঃ৬৯)

ان الاذان فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم وصاحبيه واحدا كان خارج المسجد فاذا كثر الناس زاد عثمان رضى الله عنه اذانا اخر على الزورا خارج المسجد ايمتنع الناس عن البيع والشراء. والظاهر ان الاذان الثانى هو الاول انتقل الى داخل المسجد.

অর্থ: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকাল পর্যন্ত একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। আর সম্ভবত ওটা মসজিদের বাইরে দেয়া হতো। অতঃপর হযরত উছমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মসজিদের বাইরে ‘যাওরা’ নামক স্থানে আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন। যাতে করে মানুষ আযান শুনে বেচা-কেনা বন্ধ করে (নামাযে অংশগ্রহণ করতে পারে)। প্রকাশ থাকে যে, ছানী আযান যা মূলে প্রথম আযান ছিল ওটা (মসজিদের বাইর হতে) স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের ভিতরে নিয়ে আসা হয়। (ফয়জুল বারী শরহে বুখারী জিঃ২ পৃঃ৩৩৫)

فان جلس على المنبر اذن بين يدى الامام. طحاوی فرماتے ہیں کہ جو اذان منبر کے سامنے کے دیجاتی ہے وہ مراد ہے.

অর্থ: অতঃপর যখন ইমাম মিম্বরে বসবে তখন ইমামের সামনে আযান দেবে। ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি -এর ব্যাখ্যায় বলেন, এটা দ্বারা মিম্বরের সামনের আযানকেই বুঝানো হয়েছে। (মা’দানুল হাকায়িক জিঃ১ পৃঃ১৭৪)

واذا صعد الامام المنبر وجلس ويؤذنون ثانيا بين يدى الخطيب.

অর্থ: ইমাম যখন মিম্বরে উঠে বসবেন তখন মুয়াজ্জিন তার সামনে আযান দেবে। (কাজেই ইমামের  সম্মুখে আযান দেয়ার অর্থ হলো মসজিদের ভিতরে আযান দেয়া) হিদায়া জিঃ১ পৃঃ১৫৪, রদ্দুল মুহতার জিঃ১ পৃঃ৭৭০, আইনী শরহে হিদায়া জিঃ১ পৃঃ১০১৪, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ পৃঃ১১৮। واذا جلس على المنبر اذن ثانيا بين يديه اى المنبر. অর্থ: যখন ইমাম মিম্বরে বসবে তখন তার সামনে অর্থাৎ মিম্বরের সম্মুখে ছানী আযান দেবে। (শরহে বিকায়া জিঃ১ পৃঃ১৭৪, শরহে নিকায়া পৃঃ২৯৭, শরহে সিকায়া জিঃ১ পৃঃ২৮৩, ফতওয়ায়ে শরীয়ত পৃঃ৮৪, ইসলামী ফিকাহ জিঃ১ পৃঃ১২৯)

اذا جلس الامام على المنبر اذن بين يديه واقيم بعد تمام الخطبة بذلك جرى التوارث.

অর্থ: ইমাম মিম্বরে বসার পর তার সামনে মিম্বরের নিকট আযান দেবে এবং খুৎবা শেষে ইক্বামত দেবে। এ নিয়ম পূর্ব হতেই প্রচলিত। (আলমগীরী ১ম জিঃ ৭৭পৃঃ, আইনুল হিদায়া জিঃ১ পৃঃ ৬৫৮)

অতএব, উপরোল্লিখিত বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য হাদীছ শরীফ ও তার শরাহগ্রন্থ তাফসীর, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বর্ণনার আলোকে প্রমাণিত ও সাব্যস্ত হয়েছে যে, জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সম্মুখে ইমামের খুৎবার পূর্বে দিতে হবে। এটা সুন্নতে ছাহাবা। এবং এর উপরই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এটাকে অমান্য বা অস্বীকার করা কুফরী।

মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন,

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়াল: কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা?

আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদিল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই, তারা কাদিয়ানী অথবা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফে এবং বহু হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।

যারা নবী ও ওলীগণের ওসীলা গ্রহণকে অস্বীকার করে থাকে এরা দু’শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণী হচ্ছে, যারা ওসীলাকে একচ্ছত্রভাবে অস্বীকার করে থাকে।

আর কেউ কেউ রয়েছে যারা কেবল বিছালপ্রাপ্ত বুযুর্গগণের ওসীলাকে অস্বীকার করে। তবে জীবিত বুর্যুগগণের ওসীলাকে সমর্থন করে।

এবং এ উভয় শ্রেণী ওসীলা গ্রহণের উপর অর্থাৎ ওসীলার বিরুদ্ধে যেসব প্রশ্ন উপস্থাপন করে দলীল ও যুক্তি প্রদান করে থাকে সেসব প্রশ্নের খন্ডমূলক জাওয়াব পেশ করা হলো।

৭. ওসীলা অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন:

আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

يايها الذين امنوا اتقوا الله وابتغوا اليه الوسيلة وجاهدوا فى سبيله لعلكم تفلحون.

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো এবং তাঁর সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য ওসীলা তালাশ করো। আর তাঁর পথে জিহাদ করো, অবশ্যই তোমরা সফলতা (বেহেশত) লাভ করবে।” (সূরা মায়িদা-৩৫)

অর্থাৎ অত্র আয়াতে কারীমার মধ্যে ‘ওসীলা’ দ্বারা আমলসমূহের ‘ওসীলাকে’ বুঝানো হয়েছে। বুযুর্গগণের ওসীলা নয়। কেননা, যে বুযুর্গদের ওসীলা গ্রহণ করছে তারা তো নিজেরা আমলসমূহ করতেন।

এর জাওয়াবে প্রথমত বলতে হয় যে-

আমলসমূহতো اتقوا الله এর মধ্যে এসে গেছে। যদি ওসীলা দ্বারা আমলসমূহকে বুঝায় তাহলে আয়াতে কারীমাতেও একটা বিষয়ের পুনঃ উল্লেখ হবে। অতএব, এখানে ওসীলা দ্বারা বুযুর্গগণের ওসীলাকেই বুঝানো হয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, যদি আমলের ওসীলাকে বুঝায় তাহলে মুসলমানদের শিশু সন্তান, পাগল মুসলমান এবং ঐ নব মুসলিম যারা মুসলমান হওয়া মাত্রই ইন্তিকাল করেছে এদের কাছে তো আমলসমূহ নেই তাহলে এরা কার ওসীলা গ্রহণ করবে?

তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, যদি আমলসমূহের ওসীলাকে বুঝায় তাহলে শয়তান ইবলীসের তো অসংখ্য আমল ছিল। এসব আমল তার জন্য ওসীলা হলো না কেন?

চতুর্থতঃ বলতে হয় যে, যদি ওসীলা দ্বারা আমলসমূহকেই বুঝায় তাহলে আমলসমূহও নবী ও ওলীর ওসীলায় অর্জিত হয়। এমনকি নবী ও ওলীর ওসীলা ব্যতীত আমলসমূহ কবুলযোগ্য হয় না। কাজেই ওসীলারও ওসীলা  হলেন নবী ও ওলীগণ।

মূলতঃ আমাদের আমলসমূহ হচ্ছে বুযুর্গগণের অনুসরণ। রমী অর্থাৎ হজ্জে পাথর নিক্ষেপ করা আল্লাহ পাক-এর নবী হযরত ইসমাঈল যবীহুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর অনুকরণ। সাফা-মারওয়া-এর মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানো হযরত হাজেরা আলাইহাস্ সালাম-এর অনুসরণ। কুরবানী করা আল্লাহ পাক-এর নবী হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম-এর অনুসরণ। তাওয়াফ করাকালীন বাহু হেলিয়ে চলা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণ। এমনিভাবে রোযা, নামায, হজ্জ, যাকাত প্রতিটি  ইবাদতই কারো অনুসরণ।

হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, বেহেশ্ত শূন্য থেকে যাবে। তখন তা পূর্ণ করার জন্য একদল বান্দাকে সৃষ্টি করা হবে। বলুন, ঐ সব বান্দা কোন আমলসমূহ করেছে?

মূল কথা হলো, আমল ছাড়া বেহেশ্ত অর্জিত হবে। কিন্তু ওসীলা ছাড়া বেহেশ্ত কখনই অর্জিত হবে না।

৮.ওসীলা অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন:

কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে, যখন হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম নিজ পুত্র কিনআন-এর জন্য সুপারিশ করেছিলেন তখন উনাকে বলা হয়েছিল-

يا نوح انه ليس من اهلك انه عمل غير صالح

অর্থ: “হে হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম! নিশ্চয়ই সে (কিনআন) আপনার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয়।” তার আমলসমূহ মন্দ।” (সূরা হূদ-৪৬)

অর্থাৎ আমল খারাপ হওয়া অবস্থায় নবী কিংবা ওলীর ওসীলা গৃহীত হয় না।

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর ছেলে কিনআন-এর আমল মন্দ ছিল অর্থাৎ তার আমলে কুফরী ছিল শুধু। তাই নয় সে নবীর ওসীলার অস্বীকারকারীও ছিল এবং তুফান আসলে সে হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর আশ্রয়ে আসেনি। হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম বলেছিলেন-

يا بنى اركب معنا ولا تكن مع الكافرين.

অর্থ: “হে বৎস! আমাদের সাথে সওয়ার হয়ে যাও। কাফিরদের সাথে থেকো না।” (সূরা হুদ-৪২)

সে জবাব দিয়েছিল-

قال ساوى الى جبل يعصمنى من الماء

অর্থ: “আমি পাহাড়ের আশ্রয় নিব। তা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে।” (সূরা হূদ-৪৩)

অর্থাৎ- এক নম্বর হলো: কিনআন কুফরী আমল করার কারণে কাফিরে পরিণত হয়েছিল।

দুই নম্বর হলো: সে নবীর ওসীলার অস্বীকারকারী ছিল।

তিন নম্বর হলো: সে নবীর আশ্রয় বা ওসীলা গ্রহণ করেনি। যার ফলশ্রুতিতে ঈমানহারা হয়ে কুফরী অবস্থায় প্লাবণে ডুবে মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।

অতএব, যে বা যারা নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের ওসীলাকে অস্বীকার করে থাকে তারা কিনআন-এর উক্ত ঘটনা থেকে উপদেশ গ্রহণ করতে পারে। যদি কিনআন আল্লাহ পাক-এর নবী ও রসূল হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম-এর ওসীলা গ্রহণ করতো তাহলে সে ঈমানও হারাতো না এবং পানিতেও ডুবতো না।

প্রতিভাত হলো, উক্ত আয়াতে কারীমা ওসীলারই প্রমাণ বহন করে। (চলবে)

মুহম্মদ হুসাইন, নরসিংদী

সুওয়াল: মাসিক মদীনা এপ্রিল/২০০৯ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে এবং হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা এপ্রিল/২০০৯ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “কা’বা শরীফ, রওজা শরীফ-এর চিত্র অঙ্কিত জায়নামাযের উপর দাঁড়ালে, কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফ-এর অবমাননা হওয়ার কারণ নেই। সরাসরি কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফ-এর ভিতরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ায় যখন দোষ নেই, তখন তার চিত্রের উপর নামায পড়ায় দোষের অবকাশ কোথায়?”

আর মাসিক মদীনায় বলা হয়েছে, “কা’বা শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নমাযে নামায আদায় করা হারাম বলার কোন যুক্তি নাই।”

এখন আমার সুওয়াল হলো- আপনারা মাসিক আল বাইয়্যনাত-এ বলেছেন, মসজিদে নববী বা রওযা শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া হারাম ও নাজায়িয। আর আমভাবে কা’বা শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী এবং খাছভাবে হারাম ও নাজায়িয। অতঃপর আমভাবে নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সুন্নতের খেলাফ বা মাকরূহ এবং হুযূরী বিনষ্ট হওয়ার কারণ।

অথচ মাসিক মদীনা এবং হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা বলেছে জায়িয। কোনটি গ্রহণযোগ্য? দয়া করে দলীলসহ গ্রহণযোগ্য মতটি জানিয়ে প্রশান্তি দান করবেন।

জাওয়াব: মসজিদে নববী ও রওযা শরীফ ও কা’বা শরীফ-এর ছবিযুক্ত এবং নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সম্পর্কে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এ যা বলা হয়েছে তাই গ্রহণযোগ্য, সঠিক ও দলীলভিত্তিক।

কারণ পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ এবং বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ হচ্ছে, আল্লাহ পাক-এর শেয়ার বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রত্যেকের জন্যই ফরয এবং অশেষ কল্যাণের কারণও বটে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন-

ومن يعظم شعائر الله فانها من تقوى القلوب

অর্থ: “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে, নিশ্চয়ই তা তার জন্য অন্তরের তাক্বওয়া বা পবিত্রতারই নিদর্শন।” (সূরা হজ্জ-৩২)

আল্লাহ পাক অন্যত্র আরো বলেন-

ومن يعظم حرمت الله فهو خير له عند ربه

অর্থ: “আল্লাহ পাক যে সকল বস্তুকে সম্মানিত করেছেন, তাকে যে ব্যক্তি সম্মান করলো, এটা তার জন্য আল্লাহ পাক-এর নিকট কল্যাণ বা ভালাইয়ের কারণ হবে।” (সূরা হজ্জ-৩০)

উপরোক্ত আয়াত শরীফসমূহ দ্বারা এটাই ছাবিত হলো যে, মহান আল্লাহ পাক-এর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা সকলের জন্যই ফরয। আর সেগুলোর অবমাননা করা সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয।

কাজেই, “পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ” যেহেতু মহান আল্লাহ পাক-এর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু উক্ত নিদর্শনসমূহকে পায়ের নিচে রাখা বা সেগুলোকে পদদলিত করা আল্লাহ পাক-এর নিদর্শনসমূহকে অবমাননা করার শামিল। যা শুধু আদবের খেলাফই নয় বরং স্থান ও ক্ষেত্র বিশেষে নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। তাই মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

يايها الذين امنوا لا تحلوا شعائر الله

অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক-এর নিদর্শনসমূহের অবমাননা করো না।” (সূরা মায়িদা-২)

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে যেমন, ছবি তোলা হারাম। এরপরেও যদি কোন ব্যক্তি তার পিতার ছবি তোলে, সেই ছবি যদি তৃতীয় কোন ব্যক্তি পা দিয়ে মাড়ায় তাহলে যার পিতার ছবি মাড়ানো হলো সে ব্যক্তি কি সেটা সম্মানজনক হিসেবে মেনে নিবে? কখনই সেটা সম্মাজনক হিসেবে গ্রহণ করবে না। বরং যার পিতার ছবি সে ঐ ব্যক্তির উপর গোস্বা করবে, যে তার পিতার ছবিকে মাড়িয়েছে। কারণ তার পিতার ছবিকে পা দিয়ে মাড়ানোর কারণে তার পিতাকে ইহানতই করা হয়েছে। ইজ্জত, সম্মান করা হয়নি।

উল্লেখ্য, কারো পিতার ছবি যদি পা দিয়ে মাড়ানোর  কারণে ইহানত হয় তাহলে পবিত্র কা’বা শরীফ, মদীনা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ যা আল্লাহ পাক-এর শেয়ার, সেসবের ছবিকে পা দিয়ে মাড়ালে কি পবিত্র কা’বা শরীফ, মদীনা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ইহানত হবে না? অবশ্যই হবে।

হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

الكفر ملة واحدة

অর্থ: “সমস্ত কাফিররা, বিধর্মীরা মিলে এক দল।”

ক্রুসেডের যুদ্ধে পরাজিতের পর তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ইহুদী-খ্রিস্টানরা মরিয়া হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের উপর একের পর এক হিংসাত্মক, মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক আঘাত হেনে চলেছে। তারা সম্মিলিত চক্রান্ত বা কূটকৌশলের মাধ্যমে মুসলমানদের পবিত্র ও সম্মানিত স্থান-পবিত্র কা’বা শরীফ ও রওজা শরীফ সংলগ্ন মসজিদে নববী শরীফ এবং বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ছবি সম্বলিত অধিকাংশ জায়নামায তৈরি করে মুসলমানদের সম্মানিত জিনিসগুলোকে মুসলমানদের পায়ের নিচে ঠেলে দিয়ে মুসলমানদের দ্বারাই ইসলামের অবমাননা করিয়ে নিচ্ছে। মূলতঃ মুসলমানদের ঈমান হরণ করে নিচ্ছে।

উপরোক্ত আলোচনা সাপেক্ষে সাব্যস্ত হলো যে, সাধারণভাবে পবিত্র কা’বা শরীফ ও বাইতুল মুকাদ্দাসের ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী ও আদবের খিলাফ। আর খাছভাবে হারাম ও নাজায়িয। আর মসজিদে নববীর ছবি যদি রওযা শরীফসহ হয়, তবে তাতে নাময পড়া সম্পূর্ণই হারাম ও নাজায়িয। কারণ এগুলো আল্লাহ পাক-এর শেয়ার বা নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর এগুলোকে তা’যীম-তাকরীম করা সকলের উপরই অপরিহার্য কর্তব্য। তাছাড়া আমভাবে সকলের মতেই মসজিদের ছবিযুক্ত বা নকশা খচিত জায়নামাযে নামায পড়া সুন্নতের খিলাফ বা মাকরূহ এবং হুযূরী বিনষ্ট হওয়ার কারণ। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসসম্মত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য মত।

হাটহাজারী মৌলভীদের ক্বিয়াস খন্ড

দ্বিতীয়তঃ হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা বলেছে, সরাসরি কা’বা শরীফ ও রওযা শরীফ-এর ভিতরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ায় যখন দোষ নেই ….।

এর জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা তাদের জিহালত বা অজ্ঞতার কারণেই পবিত্র কা’বা শরীফ-এর সঙ্গে পবিত্র রওযা শরীফকে মিলিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। অথচ পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ভিতরে যেভাবে নামায পড়া হয়, পবিত্র রওযা শরীফ-এর ভিতরে সেভাবে নামায পড়া হয় না।

দ্বিতীয়তঃ পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ভিতরে নামায পড়া আর পবিত্র রওযা শরীফ-এর উপর নামায পড়া কখনোই এক কথা নয়। কারণ পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ভিতরে নামায পড়া নিষেধ নেই। কিন্তু কবরের উপর নামায পড়া নিষেধ। সুতরাং কবরের উপর নামায পড়া নিষেধ হলে পবিত্র রওযা শরীফ-এর উপর নামায পড়া জায়িয হবে কি? কখনোই নয়।

তৃতীয়তঃ পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ভিতরে দাঁড়াতে নিষেধ নেই। কিন্তু সরাসরি কবরের উপর দাঁড়ানো নিষেধ মাইয়্যিতের তা’যীমের কারণে। সুতরাং মাইয়্যিতের তা’যীমের কারণে নামায পড়া দূরের কথা যদি কবরের উপর দাঁড়ানোই নিষেধ হয়, তাহলে পবিত্র রওযা শরীফ-এর উপর দাঁড়ানো জায়িয হবে কি? কখনোই পবিত্র রওযা শরীফ-এর উপর দাঁড়ানো জায়িয হবে না। কারণ পবিত্র রওযা শরীফ-এ আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন।

চতুর্থতঃ পবিত্র কা’বা শরীফ-এর তা’যীম-এর কারণে কা’বা শরীফ-এর দিকে মুখ পিঠ করে ইস্তিঞ্জা করা, পেশাব-পায়খানা করা নিষেধ। শুধু তাই নয় পবিত্র কা’বা শরীফ-এর তা’যীম-এর কারণে কা’বা শরীফ-এর দিকে পা দেয়াও নিষেধ। সুতরাং পবিত্র কা’বা শরীফ-এর তা’যীম-এর কারণে কা’বা শরীফ-এর দিকে পা দেয়া যদি নিষেধ হয়, তাহলে পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছবি সম্বলিত জায়নামায হওয়ায় দেয়ালসহ পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছাদের উপর নামায পড়া জায়িয হয় কি করে?

পঞ্চমতঃ হাটহাজারীর মৌলভীরা পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছাদের উপর নামায পড়ার প্রসঙ্গটি কূটকৌশলে বাদ দিয়ে কা’বা শরীফ-এর ভিতরে নামায পড়ার প্রসঙ্গটি এনে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। অথচ কা’বা শরীফ-এর ভিতরে নামায পড়তে নিষেধ করেনি। বরং পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছাদের উপর নামায পড়া নিষেধ। আর পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নামায হওয়ায় দেয়ালসহ ছাদের উপরেই নামায পড়া হয়। যা সম্পূর্ণই নিষেধ তথা মাকরূহে তাহরীমী। শুধু তাই নয় পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নামায হওয়ায় দেয়ালসহ ছাদের উপরেই পা দিয়ে মাড়ানো হয়, পদদলিত করা হয় যা সম্পূর্ণই ইহানত হওয়ায় কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

ষষ্ঠতঃ হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা বলেছে, সরাসরি কা’বা শরীফ-এর … ভিতরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ায় যখন দোষ নেই, তখন তার চিত্রের উপর নামায পড়ায় দোষের অবকাশ কোথায়?

এর জবাবে বলতে হয় যে, হাটহাজারী মৌলভীদের দেয়া উদাহরণ অনুযায়ী কেবল মসজিদের ভিতরের অর্থাৎ মেঝের নকশা বিশিষ্ট জায়নামাজের উপর নামায পড়া জায়িয হতে পারতো। কিন্তু মসজিদের মেঝে আর পুরো মসজিদ কখনই এক কথা নয়। সুতরাং পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফসহ ইত্যাদি মসজিদের ভিতরে নামায পড়া আর উল্লিখিত মসজিদসমূহের ছবিযুক্ত জায়নামাযের উপর নাময পড়া, বসা, পা রাখা সমান নয়। কারণ পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ভিতরে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়নি। কিন্তু পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছাদে নামায পড়া নিষেধ তথা মাকরূহ তাহরীমী বলা হয়েছে।

কেননা, পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ছাদে নামায পড়লে পবিত্র কা’বা শরীফ-এর তা’যীম বা সম্মান রক্ষা করা হয় না। বরং পবিত্র কা’বা শরীফ-এর ইহানতই করা হয়।

এ প্রসঙ্গে “ফতওয়ায়ে আলমগীরী” কিতাবের ১ম খন্ডের ১০৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وتكره الصلاة على سطح الكعبة لما فيه من ترك التعظيم

অর্থ: “কা’বা ঘরের ছাদের উপর নামায পড়া মাকরূহ তাহরীমী। কেননা কা’বা ঘরের ছাদে নামায পড়লে কা’বা ঘরের ইহানত করা হয়।”

আর “বেয়াদব আল্লাহ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত।” যেমন, কিতাবে আছে,

بے ادب محروم گشت از لطف رب

অর্থ: “বেয়াদব আল্লাহ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত। আর “বেয়াদব আল্লাহ পাক-এর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে আল্লাহ পাক-এর আযাব-গযবে পতিত হবে।”

কিতাবে আরো উল্লেখ আছে, বিনা জরুরতে সাধারণ মসজিদের ছাদে উঠাও মাকরূহ। আর ছবিযুক্ত হওয়ার কারণেই উক্ত মসজিদসমূহের দেয়ালে বা ছাদে পা রাখা হয় যা মাকরূহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং মসজিদের ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায পড়া মাকরূহ।

পরিশেষে বলতে হয়ে যে, “জাতীয় পতাকার কাছে পা রাখলে যদি অবমাননার মামলা হয়, তবে আল্লাহ পাক-এর শিয়ার কা’বা শরীফ, রওযা শরীফসহ মসজিদে নববী শরীফ, বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ-এর ছবি সম্বলিত জায়নামাযে পা রাখলে তা ইসলামের দৃষ্টিতে কত মারাত্মক অবমাননাকর কাজ বলে গণ্য হতে পারে এবং তার জন্য কত কঠিন শাস্তি নির্ধারিত হতে পারে?”

০৯.০১.২০০৮ ঈসায়ী তারিখে দৈনিক আল ইহসান পত্রিকায় প্রকাশ অস্ট্রেলিয়ায় হপম্যান কাপ টুর্নামেন্ট একটি ম্যাচ দেখার সময় কুখ্যাত সানিয়া মির্জার পা ভারতের জাতীয় পতাকার সামনে থাকায় এবং সে ছবি টিভিতে দেখে ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজকুমার দুবে নামে একজন আইনজীবী সানিয়ার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেয়। ভারতীয় আইনজীবী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেছে, “সানিয়া এমন বেখেয়ালীভাবে ম্যাচটি দেখছিলেন যে তার পা কোথায় সে বোধ তখন তার ছিল না। তিনি কি ভুলে গেছেন ভারতীয়দের কাছে তিন রং (জাতীয় পতাকা) এর মূল্য কতটুকু। তার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।”

সুতরাং বেখেয়ালীভাবে পা পতাকার কাছে গেলেই যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা উঠে, তাহলে ইচ্ছাকৃতভাবে কা’বা শরীফ-এর ছবি বা নকশা খচিত জায়নামাযে যদি কেউ পা রাখে, তাহলে কা’বা শরীফ বা বায়তুল্লাহ শরীফ-এর কত বড় জঘন্য অবমাননাকারী বলে গণ্য হবে এবং আল্লাহ পাক তাকে কত কঠোর শাস্তি দিবেন। (নাঊযুবিল্লাহি মিন যালিক)

তাই ভারতীয় জাতীয় পতাকার অবমাননার কথিত এই ঘটনা থেকে মুসলমানদের অনেক নছীহতের অবকাশ রয়েছে। ইসলাম ও ইসলামের শিয়ারের অবমাননাকারীদের চিহ্নিত করার বিষয় রয়েছে।

আর নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন আল্লাহ পাক-এর হাবীব ও আখিরী রসূল। উনাকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ পাক কিছুই সৃষ্টি করতেন না। আর এটা ইজমা হয়ে গেছে যে, রওযা শরীফে যেখানে আল্লাহ পাক-এর হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছে, সেখানে উনার অজুদ মুবারকের সাথে যে মাটি মুবারক স্পর্শ করে আছে তার মর্যাদা আল্লাহ পাক-এর আরশে পাক-এর চেয়েও বেশি। সেখানে সে মহা সম্মানিত রওযা শরীফ-এর ছবি যদি কেউ জায়নামাযে রাখে বা রওযা শরীফ-এর ছবি সম্বলিত জায়নামায ব্যবহার করে, তাতে পা রাখে (নাঊযুবিল্লাহ) তাহলে সে কত নিকৃষ্ট ও নাফরমান ও বেয়াদব হিসেবে গণ্য হবে। কত বড় জাহান্নামী সে হবে? কত কঠিন তার শাস্তি হবে? (নাঊযুবিল্লাহ মিন যালিক)

অতএব, হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবদের ক্বিয়াসও ভুল, বাতিল প্রমাণিত হলো। কেননা, পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফসহ ইত্যাদি মসজিদের ভিতরে নামায পড়া আর উল্লিখিত মসজিদসমূহের ছবিযুক্ত জায়নামাযের উপর নামায পড়া, বসা, পা রাখা সমান নয়। কারণ, উল্লিখিত মসজিদসমূহের ছবিযুক্ত জায়নামায হওয়ার কারণেই দেয়ালে বা ছাদেই পা রাখা, বসা ও নামায পড়া হয়। যা মাকরূহ তাহরীমী, হারাম ও ক্ষেত্র বিশেষে কুফরী।

হাটহাজারী মৌলভীদের দলীল খন্ডন:

হাটহাজারী মৌলভী ছাহেবরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে যেসকল কিতাবের নাম উল্লেখ করেছে, উক্ত কিতাবে তাদের উল্লিখিত পৃষ্ঠায় পবিত্র কা’বা শরীফ, মসজিদে নববী শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায আদায় করার কোন বর্ণনাই উল্লেখ নেই। সুতরাং প্রমাণিত হলো হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেবরা তাদের বক্তব্যের স্বপক্ষে দলীল হিসেবে কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

আর মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এর ছবিযুক্ত জায়নামাযে নামায যে কারণে পড়তে নিষেধ করা হয় তা প্রাণীর ছবি হিসেবে নয়। বরং পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এর তা’যীম বা সম্মানার্থে।

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ