মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান
ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম
সুওয়াল:ঃ চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারি /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুখতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব”…।
এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?
জাওয়াব: আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জাওয়াব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সুতরাং মুয়ায্যিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গুমরাহী বৈ কিছুই নয়।
রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খ-নসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-
(ধারাবাহিক)
রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত “র্দুরুল মুখতার” কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা-
উল্লেখ্য, রেযাখানীরা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে র্দুরুল মুখতার কিতাবের যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে তা নিম্নে হুবহু উল্লেখ করা হলো।
যেমন রেযাখানীরা তাদের দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে যে, র্দুরুল মুখতার প্রণেতা এ প্রসঙ্গে লিখেছেন যে,
(ويجيب) وجوبا قال الحلوانى ندبا والواجب الاجابة بالقدم (من سمع الاذان) ولو جنبا.
অর্থ: যে আযান শুনবে তার জন্য আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে নাপাকী অবস্থায় থাকে। ইমাম হালওয়ানী বলেন, আযানের জবাব দেয়া মুস্তাহাব। আযানের জাওয়াব জামায়াতে উপস্থিত হওয়াও ওয়াজিব।
এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা আযানে মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে দুররুল মুখ্তার কিতাবের যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের শুরুতেই উল্লেখ আছে,
(ويجيب) وجوبا…..من سمع الاذان ولو جنبا.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনবে…..তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।”
দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীদের জন্য আফসুস। কারণ তারা হানাফী মাযহাবের পরিচয় দিয়ে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতটি গ্রহণ না করে, ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উপর ইমাম হালওয়ানীকে প্রাধান্য দিয়ে শাফিয়ী মাযহাবের মতটিকে গ্রহণ করে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলেছে।
যেমন “তানযীমুল আশতাত্”-এর ২য় খণ্ডের ২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
حنفیہ کے نزدیک …اجابة المؤذن واجبة على السامعين بدليل حديث ابى سعيد الخدرى رضى الله تعالى انه عليه الصلواة والسلام قال اذا سمعتم النداء فقولوا مثل ما يقول المؤذن…اس قسم کی احادیث میں جو صیغئہ امر ہے اس سے صراحۃ جوب ثابت ہے. الا ترى انه يجب عليهم قطع القرأة وترك الكلام والسلام ورده وترك كل عمل غير الاجابة فهذا كله امارة الوجوب.
অর্থঃ “আমাদের হানাফী মাযহাবের নিকট আযান শ্রোতাদের সকলের জন্যই মুয়ায্যিনের আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া যে ওয়াজিব এ ব্যাপারে দলীল হচ্ছে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীছ শরীফ যে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়ায্যিন যা বলে তোমরাও তাই বল।” এই বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে যে, قولوا শব্দটি امر (আমর)- এর ছিগাহ্ যা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। কেননা তুমি কি দেখ না! অর্থাৎ তুমি জেনে রাখ, প্রত্যেক আযান শ্রোতাদের জন্য ওয়াজিব হলো আযান চলাকালীন অবস্থায় যদি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাহলে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বন্ধ করবে, কথাবার্তা বন্ধ করবে, অপর কাউকে সালাম দিবে না, সালামের জাওয়াব দিবে না। এমনকি আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ব্যতীত কোন কাজই করবে না। সুতরাং উপরোক্ত প্রত্যেকটি কাজ থেকে বিরত থাকাই হলো ওয়াজিবের নিদর্শন। অর্থাৎ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব; বিধায় আযান চলাকালীন অবস্থায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বন্ধ করা, সালাম-কালাম বন্ধ করা, সালামের জাওয়াব না দেয়া। এমনকি আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ব্যতীত সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকাও ওয়াজিব।”
পরিশেষে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে র্দুরুল মুখতার কিতাবের যে ইবারত খানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের পরবর্তী ইবারতেই উল্লেখ আছে যে, জাহের রেওয়ায়েত মোতাবেক মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই ওয়াজিব।
যেমন, “দুররুল মুখতার” কিতাবে উল্লেখ আছে,
واما عندنا ويجيب بلسانه مطلقا والظاهر وجوبها باللسان لظاهر الامر فى حديث اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل مايقول كما بسط فى البحر واقوه المصنف وقواه فى النهر ناقلا عن المحيط وغيره بانه على الاول لايرد السلام ولايسلم ولايقرأ بل يقطعها ويجيب ولا يشتغل يغير الاجابة.
অর্থঃ- “আমাদের হানাফী মাযহাব মতে (مطلقا) সাধারণভাবে আযান শ্রবণকারী সকলেই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দিবে। আর জাহের রেওয়ায়েত মোতাবেক মৌখিক বা শাব্দিকভাবে শ্রবণকারী সকলের জন্যই ওয়াজিব। কেননা হাদীছ শরীফ-এ নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্টভাবে আদেশ করেছেন, “যখন তোমরা মুয়ায্যিনকে যেরূপ বলতে শুন, তখন তোমরাও তদ্রুপ বল।”
যেমন “বাহরুর রায়িক” কিতাবে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে এবং মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি এটাকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন যে, “মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া আযান শ্রবণকারী সকলের জন্যই ওয়াজিব।” আর “নাহরুল ফায়েক” কিতাবে “মুহীত” এবং অন্যান্য কিতাব থেকে বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া সকলের জন্যই ওয়াজিব। এটাই শক্তিশালী মত। তবে প্রথম মতে অর্থাৎ মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া যেহেতু সকলের জন্যই ওয়াজিব, সেহেতু আযান অবস্থায় সালামের জবাব দিবে না, অন্য কাউকে সালাম দিবে না, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা যাবেনা। বরং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বন্ধ করে আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজই করা যাবে না।”
অতএব, প্রমাণিত হলো- রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের জবাব মৌখিক দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গোমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। কারণ রেযাখানীরা আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে দুররুল মুখতার কিতাবের যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের শুরুতেই উল্লেখ আছে,
ويجيب وجوبا……….من سمع الاذان ولو جنبا….. بان يقول بلسانه.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনবে…..তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।” (চলবে)
খন্দকার সেলিম আহমদ
পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল।
সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায়, এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দিয়েছে।
তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”
এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়ইনি, বরং ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।
এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।
(ধারাবাহিক)
যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি।”
এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত, যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর বর্তমান তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”
দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত বক্তব্যের শেষের অংশে তারা বলেছে, “তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীসও বর্ণিত নেই। ….”
এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, তাদের এ বক্তব্যে এটাই প্রমানিত হয় যে তারা হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করেছে। অথচ “হাদীছ শরীফ-এ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের অনেক প্রমাণ রয়েছে।” যা আমরা দলীলসহ প্রমাণ করে দিয়েছি।
দ্বিতীয়তঃ ক্বিয়াম সম্পর্কেও অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে।
যেমন ক্বিয়াম القيام শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে-
قیام کرنا.کھڑا ھونا অর্থাৎ ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো। (কামূস আল মুহীত, তাজুল উরুস, লিসানুল আরব, মিছবাহুল লুগাত, আল মুনজিদ)
আর ক্বিয়াম শব্দের ইস্তেলাহী বা পরিভাষিক অর্থ হচ্ছে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি “সালাম’ পাঠকালে তা’যীমার্থে ও মুহব্বতে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো । এছাড়াও মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনে আলিম-উলামা, পীর-মাশায়িখ, উস্তাদ, পিতা-মাতা, দ্বীনি নেতৃস্থানীয় সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সুন্নত। শুধু তাই নয় স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বিয়াম করার জন্য সরাসরি নির্দেশও দিয়েছেন।
যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى سعيدن الخدرى رضى الله تعالى عنه ان اهل قريظة لما نزلوا على حكم سعد ارسل اليه صلى الله عليه وسلم فجاء على حمار اقمر فقال النبى صلى الله عليه وسلم قوموا الى سيدكم او الى خيركم فجاء حتى قعد الى رسول الله صلى الله عليه وسلم حدث محمد بن بشار حدثنا محمد بن جعفر عن شعبة بهذا الحديث قال فلما كان قريبا من المسجد قال للانصار قوموا الى سيدكم.
অর্থ: হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। যখন কুরাইযাবাসী হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে ফায়ছালাকারী হিসেবে মেনে বেরিয়ে আসলো। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি একটি সাদা রংয়ের গাধায় চড়ে আসলেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- “তোমরা তোমাদের সরদার অথবা সম্মানিত ব্যক্তির সম্মানে দাঁড়িয়ে যাও। অতঃপর তিনি এসে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট বসে পড়লেন।
মুহম্মদ ইবনে বাশ্শার ও মুহম্মদ ইবনে জা’ফর রহমতুল্লাহি আলাইহিমা হযরত শুবা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, যখন হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদের নিকটবর্তী হলেন তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোমরা তোমাদের সরদারের সম্মানে ক্বিয়াম কর বা দাঁড়িয়ে যাও।” (আবূ দাঊদ শরীফ, বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ)
উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় তাজুল মুহাদ্দিছীন, বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার আল্লামা হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যাগ্রন্থ “শরহুন নববী লিল মুসলিম” কিতাবের ২য় খ-ের ৯৫ পৃষ্ঠায় লিখেন,
قلت القيام للقادم من اهل الفضل مستحب وقد جاء فيه احاديث ولم يصح فى النهى عنه شىء صريح.
অর্থ: আমি বলছি যে, সম্মানিত বা মর্যাদাবান ব্যক্তির আগমনে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া মুস্তাহাব-সুন্নত। এ ব্যাপারে বহু হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। কিন্তু নাজায়িয হওয়ার পক্ষে স্পষ্ট কোন বর্ণনা ছহীহভাবে প্রমাণিত নেই।
পাক ভারত উপমহাদেশে হাদীছ শরীফ-এর প্রচার-প্রসারকারী রঈসুল মুহাদ্দিছীন আল্লামা হযরত শাহ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিশকাত শরীফ-এর বিখ্যাত ব্যাখ্যা গ্রন্থ “আশয়াতুল লুময়াত” এ লিখেন-
اجماع کردہ اند جماہیر عماءباین حدیث بر اکرام اہل فضل از علم یا صلاح یا شرف-نووی گفتہ کہ ایں قیام مر اہل وقت قدوم ایشاں مستحب است واحادیث دریں باب ورود یافتہ ودر نہی ازاں صریحا چیز صحیح نہ شدہ از قنیہ نقل کردہ کہ مکروہ نیست قیام جالس از برائے کسے کہ در امدہ است بروئے جہت تعظیم.
অর্থ: এ হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে জমহুর উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম ইজমা বা ঐক্যমত পোষণ করেন যে, ইলম, মর্যাদা ও যোগ্যতার অধিকারী হওয়ার কারণে তাঁদের সম্মানে ক্বিয়াম করা সুন্নত হওয়ার কথাই হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সম্মানিত ব্যক্তিদের আগমনে তাঁদের প্রতি তা’যীমার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো মুস্তাহাব-সুন্নত। যেহেতু এর স্বপক্ষে বহু হাদীছ শরীফ রয়েছে। বিপক্ষে স্পষ্টত কোন হাদীছ শরীফ বর্ণিত নেই।
‘কুনিয়া’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে, “কোন আগন্তুকের সম্মানে বসে থাকা ব্যক্তির ক্বিয়াম করা বা দাঁড়িয়ে যাওয়া মাকরূহ নয়।”
সুতরাং কারো মুহব্বতে, তা’যীম বা সম্মানার্থে ক্বিয়াম করা বা দাঁড়ানো সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম।
উল্লেখ্য, মীলাদ শরীফ-এ যে ক্বিয়াম করা হয় তা মুহব্বত ও তা’যীমার্থেই করা হয়। সুতরাং মীলাদ শরীফ-এর ক্বিয়ামও এ অর্থে সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম সম্পর্কিত হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়দের বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও দলীলবিহীন বলে প্রমাণিত হলো। কারণ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে সরাসরি অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। যা দলীলসহ ছাবিত করা হলো।
মুহম্মদ ইব্রাহীম জুনাইদ, চাক্তাই, চট্টগ্রাম
সুওয়াল: “মাসিক মদীনা সেপ্টেম্বর/২০০৮ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “পীর একটি ফারসি শব্দ। ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং আমাদের এই উপমহাদেশের বাইরে আর কোথাও এই শব্দের প্রচলন নেই। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও এই শব্দের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। ….”
এখন আমার সুওয়াল হলো- “পীর শব্দের অস্তিত্ব সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও এই পীর শব্দের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না? দয়া করে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: পীর শব্দের অস্তিত্ব সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল হয়েছে। কারণ پیر (পীর) শব্দটি যদিও ফার্সী শব্দ। কিন্তু আরবীতে অর্থাৎ কুরআন শরীফ-এ, হাদীছ শরীফ-এ شيخ (শায়খ) বা مرشد (মুর্শিদ) বলে। আর پیر (পীর), شيخ (শায়খ), مرشد (মুর্শিদ) ইত্যাদি শব্দের সঠিক অর্থ হলো, হক্কানী-রব্বানী আলিম, আল্লাহওয়ালা, কামিল ব্যক্তি। পীর ছাহেব বা শায়খ তথা কথিত নামধারী লোকদের মত নয়। আর پیر (পীর(, شيخ (শায়খ), مرشد (মুর্শিদ) ইত্যাদি শব্দের অস্তিত্ব সরাসরি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
যেমন- কুরআন শরীফ-এ কামিল پیر (পীর), কামিল شيخ, কামিল مرشد (মুর্শিদ)-এর গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مرشدا.
অর্থ: “আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে তার জন্য আপনি কোন ওলী- মুর্শিদ বা কামিল পীর পাবেন না।” (সূরা কাহাফ-১৭)
অর্থাৎ যারা কামিল (پیر) পীর, কামিল (شيخ) শায়খ বা কামিল (مرشد) মুর্শিদ-এর নিকট বাইয়াত হয় না তারা পথভ্রষ্ট। কারণ তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান।
অনুরূপভাবে (پیر) পীর শব্দের অস্তিত্ব হাদীছ শরীফ-এও রয়েছে।
যেমন- হাদীছ শরীফ-এ কামিল (پیر) (পীর), কামিল (شيخ) (শায়খ) বা কামিল (مرشد) (মুর্শিদ)-এর গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
الشيخ لقوم كالنبى فى امته.
অর্থ: “শায়খ (شيخ) তাঁর ক্বওমের মধ্যে তদ্রুপ, যেরূপ নবী আলাইহিস্ সালাম উনার উম্মতের মধ্যে।” (দায়লামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ)
অর্থাৎ নবী আলাইহিমুস্ সালাম-এর দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়, সেরূপ কামিল پیر (পীর), কামিল شيخ (শায়খ) বা কামিল مرشد (মুর্শিদ) দ্বারাও মুরীদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়।
তাছাড়া “ (پیر) পীর শব্দের অস্তিত্ব কুরআন শরীফ-এ, হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে বিধায় ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের কিতাবেও কামিল পীর, কামিল শায়খ, বা কামিল মুর্শিদ-এর গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।
শুধু তাই নয়, এ যাবত পৃথিবীতে যত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম আগমণ করেছেন, উনাদের প্রত্যেকেই কোন নাকোন একজন কামিল پیر (পীর) ছাহেবের নিকট বাইয়াত হয়েছেন, ফয়েজ হাছিল করেছেন এবং উনাদের অনেকেই উনাদের স্ব-স্ব কিতাবে কামিল پیر (পীর) ছাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাকে ফরয বলেছেন।
যেমন, গাউছুল আ’যম, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, ইমামুল আইম্মাহ, হযরত বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব “সিররুল আসরারে” লিখেন,
ولذالك طلب اهل التلقين لحياة القلوب فرض.
অর্থ: “ক্বলব জিন্দা করার জন্য অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য “আহলে তালক্বীন” তালাশ করা বা কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয। অনুরূপ “ফতহুর রব্বানী”তেও উল্লেখ আছে।
তদ্রুপ হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশ্ব সমাদৃত কিতাব “ক্বিমিয়ায়ে সাআদাত” কিতাবে, কাইয়্যূমুয্যামান হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “মাকতুবাত শরীফ-এ” আওলাদে রসুল, আশিক্বে নবী, হযরত আহমদ কবীর রেফাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ” কিতাবে উল্লেখ করেন যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য বা ইলমে তাছাউফ অর্জন করার জন্য একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয। অনুরূপ “তাফসীরে রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী ও কবীরে” উল্লেখ আছে।
মূলতঃ কামিল মুর্শিদ বা কামিল پیر (পীর) ছাহেব হলেন, অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ বেলায়েত হাছিল করে মহান আল্লাহ পাক-এর খাছ নৈকট্য লাভ করার এক বিশেষ ওয়াসীলা বা মাধ্যম। আর তাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক-এ ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا اتقوالله وابتغوا اليه الوسيلة.
অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো এবং আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য লাভ করার জন্য ওসীলা তালাশ (গ্রহণ) করো।” (সূরা মায়িদা-৩৫)
এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে বা ব্যাখ্যায় “তাফসীরে রুহুল বয়ানে” উল্লেখ আছে যে,
الوصول لايحصل الا بالوسيلة وهى العلماء الحقيقة ومشائخ الطريقة.
অর্থঃ ওয়াসীলা ব্যতীত আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য লাভ করা যায় না। আর উক্ত ওয়াসীলা হচ্ছেন, হাক্বীক্বত ও তরীক্বতপন্থী উলামা এবং মাশায়িখগণ অর্থাৎ কামিল মুর্শিদগণ।
কাজেই কোন ব্যক্তি যদি কোন হক্কানী پیر (পীর) ছাহেব বা শায়খ-এর নিকট বাইয়াত (মুরীদ) হয়, তাহলে সে তার পীর ছাহেবের কথা মতো চলবে। আর যেহেতু কামিল پیر (পীর) ছাহেব আল্লাহ পাক-এর ওলী বা বন্ধু সেহেতু তিনি তাঁর ইলহাম বা নির্দেশ ছাড়া কোন কাজ করেন না। তাই কোন ব্যক্তি যদি পীর ছাহেব-এর কথা মতো কাজ করে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ পাক-এর মত এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথের উপর কায়িম থাকবে। আর যদি কোন ব্যক্তি পীর ছাহেবের কাছে বাইয়াত না হয়, তাহলে সে অবশ্যই নফসের তাবেদারী করবে। অর্থাৎ নফসের ওয়াস্ওয়াসা অনুযায়ী কাজ করবে কেননা তার মধ্যে যিকির জারি নেই।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ومن يعش عن ذكر الرحمن نقيض له شيطانا فهو له قرين. وانهم ليسدونهم عن السبيل ويحسبون انهم مهتدون.
অর্থঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর যিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্য একজন শয়তান নিয়োগ করে দেই অর্থাৎ তার বদ আমলের কারণে তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সে তার সঙ্গী হয়। শয়তান তাদেরকে সৎপথে বাধা দান করে, আর তারা মনে করে তারা সৎপথে রয়েছে।” (সূরা যুখরূফ-৩৬, ৩৭)
এ আয়াত শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে,
الشيطان جاثم على قلب ابن ادم فاذا ذكر الله خنس واذا غفل وسوس.
অর্থঃ “শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবের উপর বসে ওয়াস্ওয়াসা দেয়। যখন সে যিকির করে তখন শয়তান পালিয়ে যায়। আর যখন সে যিকির থেকে গাফিল হয়, তখন শয়তান তাকে ওযাস্ওয়াসা দিয়ে থাকে। (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ پیر (পীর) ছাহেবের কাছে বাইয়াত হয়ে তার তর্জ-তরীকা মোতাবেক ক্বলবি যিকির আযকার না করলে তখন সে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা অনুযায়ী আমল করে, শয়তানকে পথ প্রদর্শক বা পীর হিসেবে গ্রহন করে নেয়। সুতরাং যার পীর নেই তার পীর বা পথপ্রদর্শক শয়তান হয়ে যায়।
যেমন- কিতাবে উল্লেখ আছে-
من ليس له شيخ فشيخه شيطان
অর্থ: “যার شيخ (শায়খ) বা پیر (পীর ছাহেব) বা মুর্শিদ নেই, তার شيخ (শায়খ) বা پیر (পীর) বা মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান।” (তাফসীরে রুহুল বয়ান ৫ম খ-, পৃষ্ঠা ২৬৪; মসনবী শরীফ, ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নুর, তাছাউফ তত্ত্ব)
কাজেই প্রত্যেকের উচিত একজন হক্কানী-রব্বানী আলিম, আল্লাহওয়ালা, কামিল پیر (পীর) ছাহেব বা শায়খের হাতে বাইয়াত হয়ে শয়তানের ওয়াস্ওয়াসা থেকে বেঁচে ঈমান-আমল হিফাযত করা।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, پیر (পীর) শব্দের অস্তিত্ব সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল। কারণ پیر (পীর) শব্দের অস্তিত্ব কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে। আর ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং আমাদের এই উপমহাদেশের বাইরে সারা বিশ্বেও এই শব্দের অর্থাৎ কামিল পীর پیر (পীর), কামিল شيخ (শায়খ) বা কামিল (مرشد) মুর্শিদের প্রচলন রয়েছে বিধায় ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের নিজ নিজ কিতাবেও কামিল পীর پیر (পীর), কামিল شيخ (শায়খ) বা কামিল مرشد (মুর্শিদ)-এর গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। যা উপরে দলীল আদিল্লাহ্সহ আলোচনা পেশ করা হয়েছে। প্রয়োজনে পরবর্তিতে বিস্তারিত দলীল আদিল্লাহসহ পেশ করা হবে। (ইন্শাআল্লাহ্)
মুসাম্মত সানজিদা আক্তার
সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত
মুহম্মদপুর, ঢাকা।
সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।
জিজ্ঞাসাঃ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ, এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত, তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই।
উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-
…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?
কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।
জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামাত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।
তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-
ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব (৪)
প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-
(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠ পোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?
আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবি সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তাঁরাই আলিম বা নায়িবে নবী।
অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।
হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-
২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।
অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে থাকে। অথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্কানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরযে আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।
কামিল শায়খ বা মুর্শিদ-এর
নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয
[বিঃ দ্রঃ- তাছাউফের আ’মালী বিষয়সমূহ হাছিল করা যেহেতু একজন কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত, সেহেতু এখানে সংক্ষিপ্তভাবে কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়ার আহ্কাম ও কামিল পীরের পরিচয় বর্ণনা করা হলো]
স্মরণযোগ্য যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইল্মে তাছাউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ পাক-এর যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুজুরী ক্বল্ব অর্জন করতঃ অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করতে হলে, অবশ্যই একজন কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। কারণ কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুজুরী হাছিল করা বা বেলায়েতে আম হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তাই একজন কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
আর তাই এ যাবৎ পৃথিবীতে যত ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ আগমন করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই কোন না কোন একজন পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হয়েছেন এবং তাঁদের অনেকেই তাঁদের স্ব স্ব কিতাবে পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাকে ফরয বলেছেন। যেমন- গাউসুল আ’যম, মাহ্বুবে সোবহানী, কুতুবে রব্বানী, ইমামুল আইম্মাহ হযরত বড় পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিতাব “সিররুল আসরারে” লিখেন,
ولذالك طلب اهل التلقين لحياة القلوب فرض
অর্থ: “ক্বল্ব জিন্দা করার জন্য অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য “আহলে তালক্বীন” তালাশ করা বা কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয। অনুরূপ ফাতহুর রব্বানীতেও উল্লেখ আছে।”
তদ্রুপ হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ব সমাদৃত কিতাব ক্বিমিায়ে সাআদাতে; কাইউমুয্যামান হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মাকতুবাত শরীফ-এ; আওলাদে রসূল, আশিক্বে নবী হযরত আহ্মদ কবীর রেফাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ কিতাবে উল্লেখ করেন যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য বা ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার জন্য একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয। অনুরূপ তাফসীরে রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী ও কবীরে উল্লেখ আছে।
মূলতঃ কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেব হলেন, অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ বেলায়েত হাছিল করে মহান আল্লাহ্ পাক-এর খাছ নৈকট্য লাভ করার এক বিশেষ ওয়াসীলাহ্ বা মাধ্যম। আর তাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
يايها الذين امنوا اتقو الله وابتغوا اليه الوسيلة.
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাককে ভয় করো এবং আল্লাহ্ পাক-এর নৈকট্য লাভ করার জন্য ওয়াসীলা তালাশ (গ্রহণ) করো।” (সূরা মায়িদা-৩৫)
এ আয়াত শরীফ-এর তাফসীরে বা ব্যাখ্যায় “তাফ্সীরে রুহুল বয়ানে” উল্লেখ আছে যে,
الوصل لايحصل الا بالوسيلة وهى العلماء الحقيقة ومشائخ الطريقة.
অর্থ: “ওয়াসীলা ব্যতীত আল্লাহ পাক-এর নৈকট্য লাভ করা যায়না। আর উক্ত ওয়াসীলা হচ্ছেন, হাক্বীক্বত ও তরীক্বতপন্থী আলিম বা মাশায়িখগণ অর্থাৎ কামিল মুর্শিদগণ।”
উপরোক্ত বিস্তারিত ও অকাট্য আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুজুরী ক্বল্ব অর্জন তথা কমপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করার জন্য জরুরত আন্দাজ ইল্মে তাছাউফ অর্জন করা যেরূপ ফরয তদ্রুপ একজন হক্কানী ও কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হওয়াও ফরয। (চলবে)
নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক
ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।
সুওয়াল: হানাফী মাযহাবে –
(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।
(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।
(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।
(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।
(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।
(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।
(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।
(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।
(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।
(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।
কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।
অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনার প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে:
(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।
এর জাওয়াব হলো: আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফ-এর হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে উনার প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।
অতএব, হানাফী মাযহাবে “ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে” এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।
উল্লেখ্য, যে সকল হাদীছ শরীফ-এ আট তাকবীর ও নয় তাকবীরের উল্লেখ রয়েছে সে হাদীছ শরীফগুলোও হানাফী মাযহাবের দলীল। অর্র্থাৎ আট তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের দলীল তার বর্ণনা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নয় তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের স্বপক্ষে দলীল হতে পারে এর ব্যাখ্যায় ‘ফতহুল ক্বদীর শরহে হিদায়াহ্’ কিতাবে বর্ণিত আছে-
المراد بالخمس تكبيرة الافتتاح والركوع وثلاث زوائد وبالاربع بتكبيرة الركوع .
অর্থ: প্রথম রাকয়াতে পাঁচ তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীর আর ক্বিরায়াতের পূর্বে যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর । দ্বিতীয় রাকয়াতে চার তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: ক্বিরায়াতের পর যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর এবং চতুর্থ তাকবীর হচ্ছে রুকুর তাকবীর।
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
‘মুছান্নাফ-ইবনে আবী শায়বা’ কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-
حدثنا غندر وابن مهدى عن شعبة عن منصور عن ابراهيم عن الاسود ومسروق انهما يكبران فى العيد تسع تكبيرات.
অর্থঃ আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত গিনদার রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইবনু মাহদী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শু’বাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত মানছুর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আসওয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। নিশ্চয়ই তাঁরা দু’জন দু’ ঈদের নামাযে নয়বার করে তাকবীর বলতেন।
حدثنا يحيى بن سعيد عن اشعث عن محمد بن سيرين عن انس رضى الله تعالى عنه انه كان يكبر فى العيد تسعا.
অর্থঃ হযরত ইমাম আবু বকর রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন হযরত ইয়াহ্ইয়া বিন সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আশয়াছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত মুহম্মদ বিন সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে। নিশ্চয়ই তিনি ঈদের নামাযে নয় তাকবীর বলতেন।
حدثنا اسحاق الازرق عن الا عمش عن ابراهيم ان اصحاب عبد الله كانوا يكبرون فى العيد تسع تكبيرات.
অর্থ: হযরত ইমাম আবূ বকর ইবনু আবী শাইবাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইসহাক আল আযরাক রহমতুল্লাহি হযরত আ’মাশ রহমতুল্লাহি থেকে, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সঙ্গী সাথীগণ প্রত্যেকেই ঈদের নামাযে দু’রাকায়াতে নয় তাকবীর বলতেন।
حدثنا الثقفى عن خالد عن ابن قلابة قال التكبير فى العيدين تسع تسع.
অর্থ: হযরত ইমাম আবূ বকর ইবন আবী শাইবাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ছাক্বফী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত খালিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইবনু ক্বলাবা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। তিনি বলেন, দু’ঈদের নামাযে তাকবীর হবে নয় নয় বার করে।
حدثنا شريك عن جابر عن ابن جعفر انه كان يفتى بقول عبد الله فى التكبير فى العيدين.
অর্থ: হযরত ইমাম আবূ বকর ইবনে আবী শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত শুরাইক রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জাবির রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইবনু জা’ফর রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। নিশ্চয়ই তিনি (হযরত ইবনু জা’ফর রহমতুল্লাহি আলাইহি) হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ক্বওল বা বাণীর অনুসরণেই ফতওয়া দিতেন যে, দু’ ঈদের তাকবীর হবে নয় নয় বার করে।
حدثنا اسحاق الازرق عن هشام عن الحسن ومحمد انهما كانا يكبران تسع تكبيرات.
অর্থ: হযরত ইমাম আবূ বকর ইবনু আবী শাইবাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন: আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইসহাক আল্ আযরাক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উভয়ের থেকে। নিশ্চয়ই তাঁরা উভয়ে (হযরত হাসান রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি) দু’ ঈদের নামায নয় তাকবীরসহ আদায় করতেন।
حدثنا اسحاق بن منصور قلنا ابو لدنية عن الشيبانى عن الشعبى والمسيب قالا الصلوة يوم العيدين تسع تكبيرات خمس فى الاولى واربع فى الاخرة ليس بين القراءتين تكبيرة.
অর্থঃ হযরহ ইমাম আবূ বকর ইবনু আবী শাইবাহ্ রহমতুল্লাহি বলেন: আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত ইসহাক বিন মানছূর রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ লাদুন্নিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত শাইবানী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইমাম শা’বী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত মুসাইয়িব রহমতুল্লাহি আলাইহি দু’জনের থেকে। তাঁরা দু’জন ইমাম বলতেন, দু’ ঈদের নামাযে নয়টি করে তাকবীর। প্রথম রাকায়াতে পাঁচটি এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে চারটি। দু’ক্বিরায়াত (তথা সূরা ফাতিহা ও মিলিত সূরা)-এর মাঝখানে কোন তাকবীর ছিল না।
মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন,
৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা
এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪
সুওয়াল: কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা?
আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)
এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদিল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।
জাওয়াব: হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।
কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই, তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।
নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফ-এ এবং বহু হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।
মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।
যারা নবী ও ওলীগণের ওসীলা গ্রহণকে অস্বীকার করে থাকে এরা দু’ শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণী হচ্ছে, যারা ওসীলাকে একচ্ছত্রভাবে অস্বীকার করে থাকে।
আর কেউ কেউ রয়েছে যারা কেবল বিছালপ্রাপ্ত বুযুর্গগণের ওসীলাকে অস্বীকার করে। তবে জীবিত বুযূর্গগণের ওসীলাকে সমর্থন করে।
এবং এ উভয় শ্রেণী ওসীলা গ্রহণের উপর অর্থাৎ ওসীলার বিরুদ্ধে যেসব প্রশ্ন উপস্থাপন করে দলীল ও যুক্তি প্রদান করে থাকে সেসব প্রশ্নের খ-নমূলক জাওয়াব পেশ করা হলো।
৪. ওসীলা অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন: ছহীহ বুখারী শরীফ কিতাবুল ইস্তিস্্কা-এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দুর্ভিক্ষের সময় আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন এবং এভাবে আরজ করতেন-
انا كنا نتوسل اليك بنبينا فنسقينا و انا نتوسل اليك بعم نبينا فاسقنا قال فيسقون.
অর্থ: হে বারে ইলাহী! আমরা আপনার কাছে আমাদের নবী নূরে মুজাস্্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতাম তখন বৃষ্টি বর্ষণ করা হতো। আর এখন উনার চাচা’র ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করছি- আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করুন। অতঃপর বৃষ্টি আসতো।
অর্থাৎ, বিছালপ্রাপ্ত বুযূর্গগণের ওসীলা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। জীবিতগণের ওসীলা গ্রহণ করা জায়িয। দেখুন, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছাল শরীফ-এর পর হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ওসীলা গ্রহণ করেছেন। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা ছেড়ে দিয়েছেন।
পূর্ব প্রকাশিতের পর
এর জাওয়াবে আরো বলতে হয় যে, কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নূরে মুজাস্্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বেকার উম্মতগণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকের ওসীলা নিয়ে দুয়া-প্রার্থনা করতো। যেমন ইরশাদ হয়েছে-
وكانوا من قبل يستفتحون.
অর্থাৎ- আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শুভাগমনের পূর্বে আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খ্রিস্টানরা উনার ওসীলায় যুদ্ধসমূহে বিজয় লাভের দুয়া করতো। (সূরা বাক্বারা- ৮৯)
কুরআন শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে যে, হযরত মূসা আলাইহিস্্ সালাম-এর পরবর্তীকালে উনার না’লাইন (সেন্ডেল) মুবারক ও টুপি মুবারকের ওসীলায় বিজয় অর্জিত হতো।
যেমন, ইরশাদ হয়েছে-
وبقية مما ترك ال موسى و ال هارون تحمله الملئكة.
অর্থাৎ- আল্লাহ পাক বণী ইসরাইলকে একটি সিন্দুক দিয়েছিলেন যার মধ্যে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম-এর সে-েল মুবারক, হযরত হারূন আলাইহিস্ সালাম-এর পাগড়ী মুবারক এবং অন্যান্য বরকতপূর্ণ জিনিসপত্র ছিল যেটা বণী ইসরাইলীগণ যুদ্ধাভিযানে সামনে রাখতো, যার বরকতে তারা শত্রুদের উপর বিজয় লাভ করতো। (সূরা বাক্বারা-২৪৮)
হযরত মূসা আলাইহিস্্ সালাম নিজ বিছাল শরীফ-এর পর এই উম্মতের অর্থাৎ মুসলমানদের জন্য সাহায্য করেছেন যে, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযকে পাঁচ ওয়াক্ত করিয়ে দিয়েছেন। বলুন, এটা বিছাল শরীফ প্রাপ্ত বুযুর্গগণের ওসীলা কি না? তা সত্বেও যখন নূরে মুজাস্্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর পূর্বে তাঁর নাম মুবারকের ওসীলায় দুয়াসমূহ কবুল হতো তবে কি এখন তার নাম মুবারকের বরকত বা প্রভাব পরিবর্তন হয়ে গেছে? (নাউযুবিল্লাহ)
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মুবারক উক্তি মূলতঃ এটাই প্রমাণ করছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় উনার নায়িব বা ওয়ারিছ অর্থাৎ ওলীগণের ওসীলাও কবুলযোগ্য।
হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ওসীলা সেটাই প্রমাণ করেছে। কেননা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওয়ারিছ বা ওলী ছিলেন।
তাছাড়া আরো প্রমাণ করছে যে, যার সম্পর্ক আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হবে তাঁর ওসীলা গ্রহণ করাও শরীয়তসম্মত এবং তা আল্লাহ পাক-এর কাছে গৃহীত। কেননা হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-
انا نتوسل اليك بعم نبينا.
অর্থাৎ- আমরা আমাদের নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচা’র ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করছি।
এ হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ইমাম কুস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি শরহে বুখারী গ্রন্থে বলেন-
اى بوسيلة الرحم التى بينه وبين النبى صلى الله عليه وسلم .
অর্থাৎ- হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ওসীলায় এ জন্য দুয়া করেছেন যে, উনার সাথে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বংশীয় নিকটতম সম্পর্ক ছিল।
হযরত শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদীছ শরীফ থেকে ওলীগণের ওসীলা প্রমাণ করেছেন। যেমন তিনি শরহে হিসনে হাসীন কিতাবে ‘আদাবুদ্ দুআ’ ও ‘ওসীলায়ে আওলিয়া’-এর বর্ণনায় বলেন,
القصۂ استسقاء عمر ابن الخطاب بعباس ابن عبد المطلب از یں باب است.
অর্থাৎ- হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করা, এটা ওসীলায়ে আওলিয়া-এর অন্তর্ভুক্ত। উক্ত ‘হিসনে হাসীন’-এর ব্যাখ্যা সম্বলিত ‘আল হিরযুল ওয়াসিলীন’ কিতাবে হযরত আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
هو من المندوبات ففى صحيح البخارى فى الاستسقاء حديث عمر انا كنا نتوسل اليك بنبينا صلى الله عليه وسلم انا نتوسل اليك بعم نبينا فاسقنا فيسقون.
অর্থাৎ- দুয়ার মধ্যে হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ এবং ওলীগণের ওসীলা গ্রহণ করা যে ‘মুস্তাহাব’ বুখারী শরীফ-এর বর্ণনা দ্বারা তা প্রমাণিত।
অতএব, বুখারী শরীফ-এ বর্ণিত উল্লিখিত হাদীছ শরীফ দ্বারা ওসীলা গ্রহণই প্রমাণিত হলো। উক্ত হাদীছ শরীফকে ওসীলার বিপক্ষে দলীল পেশ করা ভুল ও গোমরাহী।