সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৮৫তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্টগ্রাম।

 সুওয়াল:ঃ চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারি /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুখতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

 জাওয়াব: আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জাওয়াব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গুমরাহী বৈ কিছুই নয়।

রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খণ্ডনসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত “র্দুরুল মুখতার” কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা-

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা “আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে র্দুরুল মুখতার কিতাবের যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে তা নিম্নে হুবহু উল্লেখ করা হলো।

যেমন রেযাখানীরা তাদের দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছে যে, র্দুরুল মুখতার প্রণেতা এ প্রসঙ্গে লিখেছেন যে,

(ويجيب) وجوبا قال الحلوانى ندبا والواجب الاجابة بالقدم (من سمع الاذان) ولو جنبا.

অর্থাঃ যে আযান শুনবে তার জন্য আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে নাপাকী অবস্থায় থাকে। ইমাম হালওয়ানী বলেন, আযানের জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব। আযানের জবাবে জামায়াতে উপস্থিত হওয়াও ওয়াজিব।

এর জবাবে বলতে হয় যে, রেযাখানীরা আযানে মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলে দুররুল মুখ্তার কিতাবের যে ইবারতখানা উল্লেখ করেছে, উক্ত ইবারতের শুরুতেই উল্লেখ আছে,

(ويجيب)…..من سمع الاذان ولو جنبا.

অর্থঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনবে…..তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।”

দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা তাদের উল্লিখিত ইবারতের পরবর্তী ইবারতগুলো কারচুপি করে উল্লেখ করেনি। কারণ তাদের কারচুপি করা পরবর্তী ইবারতেই লিসান বা মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়ার কথা উল্লেখ আছে,

যেমন, “র্দুরুল মুখতার ফি শরহে তানবীরুল আবছার” কিতাবে উল্লেখ আছে,

ويجيب وجوبا……….من سمع الاذان ولو جنبا….. بان يقول بلسانه.

অর্থঃ “যে ব্যক্তি আযান শুনবে…..তাদের সকলের জন্যই মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব, যদিও সে জুনুব বা নাপাক অবস্থায় থাকে।”

তৃতীয়তঃ রেযাখানীরা তাদের উল্লিখিত ইবারতের প্রথম ইবারতটি বাদ দিয়ে দ্বিতীয় মতটি গ্রহণ করেছে। অথচ প্রথম ইবারতেই উল্লেখ আছে,

ويجيب وجوبا

মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।

চতুর্থতঃ রেযাখানীরা র্দুরুল মুখতার কিতাবের প্রথম এই ইবারত ويجيب وجوبا

অর্থাৎ মৌখিক বা শাব্দিকভাবে মুখে আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব। এটা গ্রহণ না করে ইমাম হালওয়ানীর মতটি গ্রহণ করেছে। অথচ ইমাম হালওয়ানীর মতের উপর ফতওয়া নয়। বরং ফতওয়া হলো আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতের উপর।

যেমন, “মুয়াত্তা ইমাম মালিক” কিতাবের ২৩ পৃষ্ঠায় ৪ নম্বর হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

قوله فقولوا مثل ما يقول اى وجوبا عند ابى حنيفة وندبا عند الشافعى.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন, যখন তোমরা আযান শুনবে, তখন মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও অনুরূপ বল।”

অর্থাৎ এই হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট মৌখিকভাবে আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব আর শাফিয়ী মাযহাবে মুস্তাহাব।

পঞ্চমতঃ রেযাখানীরা হালওয়ানীর বরাত দিয়ে বলেছে-

وقال الحلوانى ندبا.

ইমাম হালওয়ানী বলেন, আযানের জাওয়াব দেয়া নুদব বা মুস্তাহাব। অথচ ইমাম হালওয়ানীর উক্ত মতটি শাফিয়ী মাযহাবের মত কারণ-

وندبا عند الشافعى.

শাফিয়ী মাযহাবে আযানের জাওয়াব দেয়া নুদব বা মুস্তাহাব।

ষষ্ঠতঃ রেযাখানীদের জন্য আফ্সুস! কারণ তারা হানাফী মাযহাবের পরিচয় দিয়ে আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতটি গ্রহণ না করে, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উপর ইমাম হালওয়ানীকে প্রাধান্য দিয়ে শাফিয়ী মাযহাবের মতটিকে গ্রহণ করে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া মুস্তাহাব বলেছে।

অথচ আমাদের হানাফী মাযহাবে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। (চলবে)

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারি-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমী। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদ্রাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধতো হয়ইনি বরং সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খণ্ডন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ”-এর জাওয়াবকে খণ্ডন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরেও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমী।”

এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত, যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর বর্তমান তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”

দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত বক্তব্যের শেষের অংশে তারা বলেছে, “তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীসও বর্ণিত নেই।……….”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, তাদের এ বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা “হাদীছ শরীফকে অস্বীকার করেছে।” অথচ “হাদীছ শরীফে মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের অনেক প্রমাণ রয়েছে।”

যেমন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তাওয়াল্লুদ শরীফ বা মুবারক বিলাদত শরীফ আলোচনা করা সরাসরি হাদীছ শরীফেরই নির্দেশ আর তা শরীয়তসম্মত তো অবশ্যই, সাথে সাথে অফুরন্ত রহমত, বরকত ও সন্তুষ্টি লাভের কারণ ও খাছ সুন্নতে ছাহাবাও বটে।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,

عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع  النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لابنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.

অর্থঃ “হযরত আবু দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে হযরত আবু আমের আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি তাঁর সন্তানাদি এবং আত্মীয় স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফের ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি)।

এতদ্বশ্রবণে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাঁর রহমতের দরজা তোমার জন্য উন্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশ্তাগণ তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন  এবং যে কেউ তোমার মত এরূপ কাজ করবে, তোমার মত সেও নাযাত (ফযীলত) লাভ করবে।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী। পৃষ্ঠা ৩৫৫)

এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عباس رضى الله تعالى عنهما انه كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لقوم فيستبشرون ويحمدون الله ويصلون عليه صلى الله عليه وسلم فاذا جاء النبى صلى الله عليه وسلم قال حلت لكم شفاعتى.

অর্থঃ “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা তাঁর নিজগৃহে সমবেত ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর প্রশংসা তথা তাসবীহ্-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক-এর  হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর (ছলাত-সালাম) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন এবং (মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, حلت لكم شفاعتى অর্থাৎ তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।” (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান্ নাযীর, ছুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা ৩৫৫)

উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে সরাসরি অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে। (চলবে)

মুহম্মদ ইবরাহীম জুনাইদ, চাক্তাই, চট্টগ্রাম

সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা সেপ্টেম্বর/২০০৮ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “পীর একটি ফারসি শব্দ। ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং আমাদের এই উপমহাদেশের বাইরে আর কোথাও এই শব্দের প্রচলন নেই। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও এই শব্দের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। ….”

এখন আমার সুওয়াল হলো- “পীর শব্দের অস্তিত্ব সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও এই পীর শব্দের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না? দয়া করে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ পীর শব্দের অস্তিত্ব সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল হয়েছে। কারণ پیر (পীর) শব্দটি যদিও ফার্সী শব্দ। কিন্তু আরবীতে অর্থাৎ কুরআন শরীফ-এ, হাদীছ শরীফ-এ شيخ (শায়খ) বা مرشد (মুর্শিদ)  বলে। আর پیر (পীর), شيخ (শায়খ), مرشد (মুর্শিদ)  ইত্যাদি শব্দের সঠিক অর্থ হলো, হক্কানী-রব্বানী আলিম, আল্লাহওয়ালা, কামিল ব্যক্তি। পীর ছাহেব বা শায়খ যা তথা কথিত নামধারী লোকদের মত নয়। আর پیر (পীর(,  شيخ (শায়খ), مرشد (মুর্শিদ) ইত্যাদি শব্দের অস্তিত্ব সরাসরি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

যেমন- কুরআন শরীফে কামিল پیر (পীর), কামিল شيخ, কামিল مرشد (মুর্শিদ)-এর গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مرشدا.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে তার জন্য আপনি কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (مرشد) কামিল (پیر) পাবেন না।” (সূরা কাহাফ-১৭)

অর্থাৎ যারা কামিল (پیر) পীর, কামিল (شيخ) শায়খ বা কামিল (مرشد) মুর্শিদ-এর নিকট বাইয়াত হয় না তারা পথভ্রষ্ট। কারণ তখন তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান।

অনুরূপভাবে (پیر) পীর শব্দের অস্তিত্ব হাদীছ শরীফ-এও রয়েছে।

যেমন- হাদীছ শরীফ-এ কামিল (پیر) (পীর), কামিল (شيخ) (শায়খ) বা কামিল (مرشد) (মুর্শিদ)-এর গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

الشيخ لقوم كالنبى فى امته.

অর্থঃ “শায়খ (شيخ) তাঁর ক্বওমের মধ্যে তদ্রুপ, যেরূপ নবী আলাইহিস্ সালাম তাঁর উম্মতের মধ্যে।” (দায়লামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ)

অর্থাৎ নবী আলাইহিস্ সালাম-এর দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়, সেরূপ কামিল پیر (পীর), কামিল شيخ (শায়খ) বা কামিল مرشد (মুর্শিদ)  দ্বারাও মুরীদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়।

তাছাড়া “ (پیر) পীর শব্দের অস্তিত্ব কুরআন শরীফ-এ, হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে বিধায় ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের কিতাবেও কামিল পীর, কামিল শায়খ, বা কামিল মুর্শিদ-এর গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।

যেমন- সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, ইমামুল আলিম, শাইখুল কামিল, খতিমাতুল মুফাসসিরীন শায়খ হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে,

من ليس له شيخ فشيخه شيطان.

অর্থঃ “যার কোন شيخ (শায়খ) বা  پیر(পীর ছাহেব) বা  مرشد (মুর্শিদ) নেই, তার شيخ (শায়খ) বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান।” (তাফসীরে রুহুল বয়ান ৫ম খণ্ড পৃষ্ঠা ২৬৪, মসনবী শরীফ, ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)

অতএব, নবী আলাইহিস্ সালাম-এর উম্মত না হয়ে যেরূপ হিদায়েত লাভ করা যায় না, তদ্রুপ কামিল شيخ (শায়খ), কামিল مرشد (মুর্শিদ), কামিল  پیر(পীর) ছাহেব-এর নিকট বাইয়াত না হয়ে ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায় না। বরং শয়তানের ওয়াস্ওয়াসায়, প্রবঞ্চনায় পড়ে গুমরাহীতে নিপতিত হওয়াই স্বাভাবিক।

আর এ কারণেই জগত বিখ্যাত আলিম, আলিমকুল শিরোমনি, শ্রেষ্ঠতম মাযহাব, হানাফী মাযহাবের প্রতিষ্ঠাতা, ইমামুল আইম্মাহ, ইমামুল আকবর, ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

لو لا سنتان لهلك ابو نعمان.

অর্থঃ “(আমার জীবনে) যদি দু’টি বৎসর না হতো তবে আবু নোমান (আবু হানীফা) ধ্বংস হয়ে যেত।” (সাইফুল মুকাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া)

অর্থাৎ আমি ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যদি আমার শায়খ বা পীর ছাহেব ইমাম বাকির ও ইমাম জা’ফর ছাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত না হতাম, (ফায়েজ লাভ না করতাম) তবে (শয়তানী প্রবঞ্চনায়) ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, যে ব্যক্তি কোন কামিল پیر (পীর) ছাহেব-এর নিকট বাইয়াত না হবে এবং ফয়েয তাওয়াজ্জুহ লাভ না করবে তার পক্ষে শয়তানী প্রবঞ্চনা ও বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব নয়। কেননা কামিল پیر (পীর) ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ও ফায়েজ লাভ ব্যতীত ক্বলবে যিকির জারি করা অসম্ভব। আর ক্বলবে যিকির জারি করা ব্যতীত শয়তানী ওয়াস্ ওয়াসা থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। তাই পরিশুদ্ধতা লাভ করার জন্য বা ক্বলবে যিকির জারি করার জন্য অবশ্যই একজন কামিল پیر (পীর) ছাহেব বা কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হতে হবে এবং তাঁর নিকট হতে ফায়েজ লাভ করতে হবে।

আর তাই এ যাবৎ পৃথিবীতে যত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম আগমন করেছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই কোন না কোন একজন কামিল پیر (পীর) ছাহেব-এর নিকট বাইয়াত হয়েছেন, ফয়েজ হাছিল করেছেন এবং তাঁদের অনেকেই তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে কামিল پیر (পীর) ছাহেব-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাকে ফরয বলেছেন। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আঞ্জুমানে আল বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়ালঃ অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নম্বর জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসাঃ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যগণ হবে অশিক্ষিত ও মূর্খ এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মূর্খের মত তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়তসম্মত। ইসলাম পরিপন্থী কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াবঃ প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লিখিত

অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবি কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবি সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ  পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে তাঁরাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলীসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-

২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে থাকে। অথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্কানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরযে আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।

কামিল শায়খ বা মুর্শিদ-এর

নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয

[বিঃদ্রঃ- তাছাউফের আ’মালী বিষয়সমূহ হাছিল করা যেহেতু একজন কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত, সেহেতু এখানে সংক্ষিপ্তভাবে কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়ার আহ্কাম ও কামিল পীরের পরিচয় বর্ণনা করা হলো]

স্মরণযোগ্য যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইল্মে তাছাউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ পাক-এর যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুজুরী ক্বল্ব অর্জন করতঃ অন্ততপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করতে হলে, অবশ্যই একজন কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। কারণ কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুজুরী হাছিল করা বা বেলায়েতে আম হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। তাই একজন কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।

পূর্ব প্রকাশিতের পর

স্মর্তব্য যে, কালামুল্লাহ শরীফ-এ স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, যারা হক্কানী-রব্বানী শায়খ বা মুর্শিদ-এর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেনা তারা গুমরাহ বা পথভ্রষ্ট। কারণ তখন তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান। তাই সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বাইফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে,

من ليس له شيخ فشيخه شيطان.

অর্থঃ “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান।” (ক্বওলুল জামীল, নূরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)

আর শায়খ বা পীর ছাহেবের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-

الشيخ لقومه كالنبى فى امته

অর্থঃ “শায়খ (পীর ছাহেব) তাঁর ক্বওমের মধ্যে তদ্রুপ, যেরূপ নবী আলাইহিস্ সালাম তাঁর উম্মতের মধ্যে।” (দায়লামী, মাকতুবাত শরীফ)

অর্থাৎ নবী আলাইহিস্ সালাম-এর দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ্ লাভ হয়, সেরূপ শায়খ বা পীর ছাহেবের দ্বারাও মুরীদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ্ লাভ হয়।

অতএব, নবী আলাইহিস্ সালাম-এর উম্মত না হয়ে যেরূপ হিদায়েত লাভ করা যায়না, তদ্রুপ কামিল মুর্শিদ বা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত না হয়েও ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায়না। বরং শয়তানী প্রবঞ্চনায় পড়ে গুমরাহীতে নিপতিত হওয়াই স্বাভাবিক।

আর একারণেই জগদ্বিখ্যাত আলিম, আলিমকুল শিরোমনি, শ্রেষ্ঠতম মায্হাব হানাফী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা, ইমামুল আইম্মাহ, ইমামুল আকবর হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

لولا سنتان لهلك ابو نعمان.

অর্থঃ “(আমার জীবনে) যদি দু’টি বৎসর না হতো, তবে আবু নো’মান (আবু হানীফা) ধ্বংস হয়ে যেত।” (সাইফুল মুকাল্লিদীন, ফতওয়ায়ে ছিদ্দীকিয়া)

অর্থাৎ আমি আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি যদি আমার শায়খ বা পীর ছাহেব ইমাম বাকির ও ইমাম জাফর ছাদিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট বাইয়াত না হতাম, তবে (শয়তানী প্রবঞ্চনায়) ধ্বংস বা বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, যে ব্যক্তি কোন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত না হবে, তার পক্ষে শয়তানী প্রবঞ্চনা ও বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকা আদৌ সম্ভব নয়। কেননা পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত ক্বল্বে যিকির জারি করা অসম্ভব। আর ক্বল্বে যিকির জারি করা ব্যতীত শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকাও সম্ভব নয়। তাই পরিশুদ্ধতা লাভ করার জন্য বা ক্বল্বে যিকির জারি করার জন্য অবশ্যই একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হতে হবে। (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:  হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লিখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছেঃ-

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে “ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে” এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

উল্লেখ্য, যে সকল হাদীছ শরীফে আট তাকবীর ও নয় তাকবীরের উল্লেখ রয়েছে সে হাদীছ শরীফগুলোও হানাফী মাযহাবের দলীল। অর্র্থাৎ আট তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের দলীল তার বর্ণনা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নয় তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের স্বপক্ষে দলীল হতে পারে এর ব্যাখ্যায় ‘ফতহুল ক্বদীর শরহে হিদায়াহ্’ কিতাবে বর্ণিত আছে-

المراد بالخمس تكبيرة الافتتاح والركوع  وثلاث زوائد وبالاربع بتكبيرة الركوع .

অর্থঃ প্রথম রাকয়াতে পাঁচ তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীর আর ক্বিরায়াতের পূর্বে যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর। দ্বিতীয় রাকয়াতে চার তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: ক্বিরায়াতের পর যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর এবং চতুর্থ তাকবীর হচ্ছে রুকুর তাকবীর।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

তিরমিযী শরীফ-এ باب ما جاء فى التكبير فى العيدين অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-

روى عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه انه قال فى التكبير فى العيدين تسع تكبيرات فى الركعة الاولى خمسا قبل القراءة وفى الركعة الثانية يبدأ بالقراءة ثم يكبر اربعا مع تكبيرة الركوع وقد روى عن غير واحد من اصحاب النبى صلى الله عليه وسلم نحو هذا.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, দু’ঈদের নামাযে নয়টি করে তাকবীর রয়েছে। প্রথম রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পূর্বে  ও ক্বিরায়াতের পর রুকুর তাকবীরসহ পাঁচ তাকবীর। আর দ্বিতীয় রাকায়াত শুরু হবে ক্বিরায়াত পাঠের মাধ্যমে

***

। অতঃপর রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীর দিয়ে রুকু করতে হবে। হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একাধিক ছাহাবী থেকেও অনুরূপ বর্ণিত  আছে।

তিরমিযী শরীফে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ কিতাবে বর্ণিত রয়েছে-

روى عن ابن مسعود انه قال فى التكبير فى العيدين تسع تكبيرات فى الركعة الاولى خمسا قبل القراءة) احدها تكبيرة التحريمة والثلاث زوائد وخامسها تكبيرة الركوع وفيه ان تكبير الركوع ليس قبل القراءة (وفى الركعة الثانية يبدأ بالقراءة ثم يكبر اربعا مع تكبيرة الركوع) فصارت ست تكبيرات زوائد ثلاثا فى الركعة الاولى قبل القراءة وثلاثا فى الركعة الثانية بعد القراءة.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: দু’ঈদে নয়টি করে তাকবীর রয়েছে। প্রথম রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পূর্বে পাঁচ তাকবীর। তারমধ্যে প্রথম তাকবীর হলো তাকবীরে তাহরীমা, তিন তাকবীর অর্থাৎ দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ হলো তাকবীরুয্ যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর এবং পঞ্চম হলো রুকুর তাকবীর। হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, রুকুর তাকবীর ক্বিরায়াতের পূর্বে হবে না। আর দ্বিতীয় রাকায়াত শুরু হবে ক্বিরায়াত পাঠের মাধ্যমে। অতঃপর রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীর দিয়ে রুকু করতে হবে। ফলে, এখন দু’রাকায়াতে ছয় তাকবীর তাকবীরুয্ যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর হিসেবে পরিগণিত হলো। প্রথম রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পূর্বে তিন তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পর তিন তাকবীর।

‘আরিদ্বাতুল আহওয়াযী’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে-

وذكر قول عائشة رضى الله تعالى عنها وابو هريرة رضى الله تعالى عنه عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه يكبر فى الاولى خمسا وفى الثانية اربعا بعد القراءة.

অর্থঃ হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ও হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উভয়েই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ পাক-এর  হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের নামাযের প্রথম রাকায়াতে পাঁচ তাকবীর আর দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পর চার তাকবীর বলতেন।

‘আল মুছান্নাফ লিআবদির রয্যাক كتاب صلوة العيدين -এর باب التكبير فى الصلوة يوم عيد বর্ণিত আছে-

عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه فى الاولى خمس تكبيرات بتكبيرة الركعة وبتكبيرة اللاستفتاح، وفى الركعة الاخرى اربعة بتكبيرة الركعة.

অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। স্বয়ং তিনি ঈদের নামাযে প্রথম রাকায়াতে রুকুর তাকবীর ও তাকবীরে তহরীমাসহ পাঁচ তকবীর বলতেন। আর দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীর বলতেন।

উক্ত ‘আল মুছান্নাফ লি আবদির রয্যাক’ কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-

عن هشيم عن داؤد عن الشعبى قال: ارسل زياد الى مسروق أنا تشغلنا أشغال فكيف التكبير فى العيدين. قال تسع تكبيرات خمسا فى الاولى واربعا فى الا خرة ووال بين القراءتين.

অর্থঃ হযরত হাশীম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত শাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, হযরত যিয়াদ রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে হযরত মাসরূক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট পাঠালেন এ জন্য যে, দু’ঈদের নামাযের তাকবীর কিভাবে পড়তে হবে জানার জন্য। তখন আমরা খুব ব্যস্ত ছিলাম। তিনি বললেন, দু’ ঈদের নামাযে নয়বার করে তাকবীর। পাঁচবার প্রথম রাকায়াতে। আর চারবার দ্বিতীয় রাকায়াতে। আর তাকবীর প্রথম রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পূর্বে এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পরে।

‘মুছন্নাফ ইবনে আবী শায়বা’باب التكبير فى العيدين واختلافهم فيه অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-

حدثنا وكيع عن محل عن ابراهيم عن اسماعيل عن الشعبى عن عبد الله انه كان بكبر فى الفطر والاضحى تسعا تسعا. خمسا فى الاولى واربعا فى الاخرة ويوالى بين القراءتين.

অর্থঃ হযরত ইমাম আবু বকর ইবনু আবী শাইবাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেন হযরত ওয়াকী’ রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত মাহল্ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে তিনি হযরত ইসমাঈল রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত শা‘বী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে, তিনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ঈদুল্ ফির্ত ও ঈদুল্ আদ্ব্হার নামাযে নয় তাকবীর করে বলতেন। প্রথম রাকায়াতে পাঁচ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে চার তাকবীর। প্রথম রাকায়াতে তাকবীর ক্বিরায়াতের পূর্বে আর দ্বিতীয় রাকায়াতে তাকবীর ক্বিরায়াতের পরে বলতেন। (চলবে)

মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন,

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়াল: কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা?

আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদিল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াব: হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই, তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফে এবং বহু হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐকমত্য এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।

যারা নবী ও ওলীগণের ওসীলা গ্রহণকে অস্বীকার করে থাকে এরা দু’ শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণী হচ্ছে, যারা ওসীলাকে একচ্ছত্রভাবে অস্বীকার করে থাকে।

আর কেউ কেউ রয়েছে যারা কেবল বিছালপ্রাপ্ত বুযূর্গগণের ওসীলাকে অস্বীকার করে। তবে জীবিত বুযূর্গগণের ওসীলাকে সমর্থন করে।

এবং এ উভয় শ্রেণী ওসীলা গ্রহণের উপর অর্থাৎ ওসীলার বিরুদ্ধে যেসব প্রশ্ন উপস্থাপন করে দলীল ও যুক্তি প্রদান করে থাকে সেসব প্রশ্নের খণ্ডনমূলক জাওয়াব পেশ করা হলো।

৪. ওসীলা অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন: ছহীহ বুখারী শরীফ কিতাবুল ইস্তিস্্কা-এর মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, হযরত উমর ফারূক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দুর্ভিক্ষের সময় আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চাচা হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন এবং এভাবে আরজ করতেন-

انا كنا نتوسل اليك بنبينا فنسقينا و انا نتوسل اليك بعم نبينا فاسقنا قال فيسقون.

অর্থঃ হে বারে ইলাহী! আমরা আপনার কাছে আমাদের নবী নূরে মুজাস্্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতাম তখন বৃষ্টি বর্ষণ করা হতো। আর এখন তাঁর চাচা’র ওসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করছি- আপনি বৃষ্টি বর্ষণ করুন। অতঃপর বৃষ্টি আসতো।

অর্থাৎ, বিছালপ্রাপ্ত বুযূর্গগণের ওসীলা গ্রহণ করা নিষিদ্ধ। জীবিতগণের ওসীলা গ্রহণ করা জায়িয। দেখুন, হযরত উমর ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছাল শরীফ-এর পর হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ওসীলা গ্রহণ করেছেন। আর আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা ছেড়ে দিয়েছেন।

এর জাওয়াবে প্রথমত: বলতে হয় যে, যদি বিছাল শরীফপ্রাপ্ত বুযূর্গগণের ওসীলা গ্রহণ নিষিদ্ধ হতো তাহলে আবশ্যক হয়ে যেত যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিছাল শরীফ-এর পর ‘কালিমা শরীফ’ হতে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক ‘মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ’ পৃথক করে দেয়া, শুধু ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’কে অবশিষ্ট রাখা। এবং আত্তাহিইয়াতু অর্থাৎ তাশাহ্হুদ-এর মধ্যে নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দেয়া বন্ধ করে দেয়া এবং দুরূদ শরীফ পাঠও বন্ধ করে দেয়া। কারণ এসব তো নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলার অন্তর্ভুক্ত। অথচ এগুলো অবশিষ্ট রাখা হয়েছে।

সুতরাং প্রমাণিত হলো, আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি-এর ওসীলা গ্রহণের হুকুম উনার হায়াত মুবারকে যেরূপ, তদ্রুপ একই হুকুম উনার বিছাল শরীফ-এর পরেও।

এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

حياتى خيرلكم ومماتى خيرلكم

অর্থঃ আমার হায়াতে যিন্দেগী এবং আমার বিছাল শরীফ-এর পরবর্তী যিন্দেগী উভয়ই তোমাদের জন্য কল্যাণকর। অর্থাৎ রহমত, বরকত, মাগফিরাত, সাকীনা ইত্যাদি লাভের কারণ।

আলোচ্য ওসীলার সুওয়াল-এর জাওয়াবে প্রথম দিকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পরবর্তী সময়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চুল মুবারক ও কোর্তা মুবারক ধুয়ে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে পান করাতেন এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা সুস্থ হয়ে যেতেন। আর উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বৃষ্টির জন্য রওযা শরীফ-এর ছাদ মুবারক খুলে দিয়েছিলেন। যখনই রওযা শরীফ-এর সোজা উপরে খুলে দেয়া হয়েছিল আর তখনই বৃষ্টি হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (চলবে)

মুহম্মদ কামাল শাহ

মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম

সুওয়াল: ভাড়া করা অথবা বিনা ভাড়ায় অনুমোদিত জায়গায় জুমুয়া ও ঈদের নামায আদায় করা জায়িয আছে কি না?

জাওয়াব: ওয়াক্তিয়া নামায যেমন দুনিয়ার সমস্ত পাক স্থানে আদায় করা জায়িয তদ্রুপ জুমুয়া ও ঈদের নামাযও আদায় করা জায়িয।

হাদীছ শরীফ-এর ছহীহ কিতাব মুসলিম শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

جعلت لى الارض مسجدا

অর্থাৎ-“আমার জন্য সমস্ত যমীন মসজিদ অর্থাৎ সিজদার স্থান করে দেয়া হয়েছে।”

 তবে হযরত ইমাম তাহতাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আবু সউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণনা করেন যে, অন্যের জমিতে তার বিনা অনুমতিতে নামায পড়া মাকরূহ। তবে রাস্তায় নামায পড়তে কোন অসুবিধা নেই। কেননা রাস্তায় তার হক্ব রয়েছে। আর ভাড়া করা হোক অথবা ভাড়া ছাড়া অনুমোদিত জায়গায় হোক এসব জায়গায় নামায পড়ার ক্ষেত্রে কোন রকম বাধা-নিষেধ নেই। এসব জায়গায় নামায পড়া সর্বসম্মতিক্রমে জায়িয। তা ওয়াক্তিয়া হোক, জুমুয়া হোক, ঈদ হোক, তারাবীহ হোক অথবা অন্য কোন নামায হোক।

স্মরণীয় যে, আমাদের হানাফী মাযহাবে জুমুয়া ও ঈদের নামায পড়ার জন্য ওয়াক্ফকৃত জায়গা শর্ত নয়। রাস্তা, মাঠ, ঘাট, বাজার, বন্দর, অফিস, আদালত, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি যে কোন স্থানেই জুমুয়া ও ঈদের নামায পড়া জায়িয। এছাড়া কোন স্থান সেটা নিজের হোক অথবা ভাড়া করা হোক, ওয়াক্ফ করা ব্যতীত সেখানে মসজিদ কিংবা ঈদগাহ বানিয়ে তাতে পাঞ্জেগানা, জুমুয়া, ঈদ ইত্যাদি সর্বপ্রকার নামায পড়া জায়িয রয়েছে।

(দলীসমূহ: মুসলিম, শরহে মুসলিম, মিশকাত, মিরকাত, মাছাবীহুস্ সুন্নাহ, মুখতারুন্ নাওয়াজিন, ফতওয়ায়ে আলমগীরী, শামী, তাহতাবী, ইমদাদিয়া ইত্যাদি)

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ