সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সংখ্যা: ১৮৪তম সংখ্যা | বিভাগ:

মুসাম্মত তাছলীমা বেগম

চাটখিল, নোয়াখালী

সুওয়াল: ওশর তথা জমি থেকে উৎপাদিত ফসলের যাকাত আদায়ের সঠিক মাসয়ালা ও প্রদানের উপযুক্ত ক্ষেত্র জানিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

هو الذى انشا جنت معروشت وغير معروشت والنخل والزرع  مختلفا اكله والزيتون والرمان متشابها وغير متشابه كلوا من ثمره اذا اثمر واتوا حقه يوم حصاده.

“তিনিই উদ্যানসমূহ সৃষ্টি করেন যা মাচার উপর তোলা হয় আর কতগুলো আছে যা মাচার উপর তোলা হয়না এবং খেজুর বৃক্ষ ও শস্যক্ষেত্র যেগুলো খেতে নানাবিধ স্বাদ রয়েছে এবং যাইতুন ও আনার সৃষ্টি করেন যা একে অন্যের সাদৃশ্যপূর্ণ এবং সাদৃশ্যহীন। অতএব এগুলোর ফল ফলাদি খাও যখন ফলন্ত তথা উৎপাদিত হয় এবং কর্তনের সময়ে শস্যাদির যে হক রয়েছে তা আদায় কর।’’ (সূরা আনয়াম-১৪১)

উপরোক্ত আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে জমির উৎপাদিত ফসলের যাকাত অর্থাৎ ওশর ফরয করা হয়েছে। তবে কতটুকু অংশ দিতে হবে তা এখানে বলা হয়নি। তবে কাকে দিতে হবে সে প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক অন্যত্র বলেন,

والذين فى اموالهم حق معلوم. للسائل والمحروم.

 অর্থঃ “ধনী ব্যক্তিদের ধন-সম্পদে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য নির্ধারিত হক বা অধিকার রয়েছে।’’ (সূরা মায়ারিজ-২৪,২৫)

উৎপাদিত ফসলের যাকাত তথা

ওশরের পরিমাণঃ

 উল্লেখিত আয়াত শরীফ-এ এবং হাদীছ শরীফ-এ উৎপাদিত ফসলের জন্য কোন সুনির্দিষ্ট নিছাব নির্ধারিত হয়নি।

তাই আমাদের হানাফী মাযহাবের ইমাম হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি ফতওয়া দিয়েছেন যে, ক্ষেতের ফসল কম হোক বা বেশি হোক অবশ্যই তার যাকাত দেয়া ফরযের অন্তর্ভুক্ত। তবে উৎপাদিত ফসলের কতটুকু পরিমাণ যাকাত দেয়া ফরয এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা দলীল হিসেবে পেশ করেন।

হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে হাদীছ শরীফ বর্ণিত আছে, “যে সব ক্ষেত থেকে বৃষ্টির পানি দ্বারা ফসল আপ্সেআপ উৎপাদিত হয় তা থেকে ওশর তথা দশ ভাগের এক ভাগ ফসল গরীব, মিস্কীন ইত্যাদি ধরনের ব্যক্তিকে দেয়া ফরযের অন্তর্ভুক্ত।’’ আর যেসব ক্ষেতে কূপের পানি, নদীর পানি তথা সেচ, সার ও শ্রম দিয়ে উৎপাদন করা হয় সেসব উৎপাদিত ফসলের নিছ্ফুল ওশর অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ ফসল যাকাত বা ওশর হিসেবে দেয়া ফরয। (ইবনে কাছীর, আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী, মিশকাত, মছাহাবীহুস সুন্নাহ ইত্যাদি হাদীছ শরীফ, তাফসীর ও সমূহ ফিক্বাহ-ফতওয়ার কিতাব দ্রষ্টব্য)

তবে অনেকে বলে থাকে, খেরাজী জমির অর্থাৎ যে জমির খাজনা দেয়া হয় তার ফসলের যাকাত তথা ওশর দেয়া লাগবে না। তাদের এ বক্তব্য দলীলবিহীন, মনগড়া, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং হারামখোর বানানোর কুচক্রান্ত, ইবাদত বিনষ্টকরণের ষড়যন্ত্র।

অথচ হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতে, জমি কম হোক বা বেশি হোক, তা থেকে উৎপাদিত ফসল কম হোক বা বেশি হোক, তা থেকে অবশ্যই ওশর তথা দশ ভাগের এক ভাগ অথবা নিছ্ফুল ওশর তথা বিশ ভাগের এক ভাগ ফসল যাকাত হিসেবে দেয়া ফরয। বছরে উক্ত জমি থেকে যতবারই যত প্রকারের ফসলই হোক না কেন। জমির খাজনা দিলেও, কর দিলেও, বর্গা দিলেও বা নিলেও ফসলের যাকাত দেয়া ফরয। চাই সে ফসল নারিকেল হোক, সুপারী হোক, কলা হোক, শাক-সবজি হোক, ধান, পাট, গম, ইক্ষু, বাদাম, আলু, রসুন, পিঁয়াজ, কদু ইত্যাদি যাই হোক না কেন সকল প্রকারের ফল-ফলাদি ও ফসলের যাকাত তথা ওশর দেয়া ফরয।

যাকাত তথা ওশর আদায়ের ফযীলত

অসংখ্য আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ যাকাত ও দান ছদ্ক্বার ফযীলত সম্পর্কে বর্ণিত আছে, “দান-ছদ্ক্বা বালা মুছীবত মিটিয়ে দেয় বা দূর করে দেয়। আর বিশেষ করে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, বিশেষ ৩টি কারণে এলাকায় দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ফসলাদি তথা ক্ষেত- খামারের নোক্বছানী দেখা দেয়। যেমন: (১) যে এলাকায় মুয়ায্যিন বিনা অযুতে আযান দেয়, (২) যে এলাকায় ওজনে কম দেয়, (৩) যে এলাকার অধিবাসী ক্ষেতের ফল ফলাদি ও ফসলাদির যাকাত তথা ওশর আদায় করে না।

কাজেই, যদি কোন ব্যক্তি ফসলের যাকাত তথা ওশর আদায় করে তাহলে তার উৎপাদিত ফসল পবিত্র হবে, জমির হক্ব আদায় হবে, গরীব ও মিস্কীনদের হক্ব খাওয়া থেকে পবিত্র থাকবে, শরীর পবিত্র ও সুস্থ থাকবে, তার সম্পদ বৃদ্ধি হবে, বিপদ-আপদ তথা বালা মুছীবত থেকে পরিত্রাণ পাবে, ফসলের ক্ষতি, মহামারী ও নোক্বছানী থেকে রক্ষা পাবে, ইবাদত কবুল হবে। উৎপাদিত ফসলের হক্ব আদায় করলে অর্থাৎ যাকাত তথা ওশর দিলে, তাকে, তার জমিতে, তার ফসলে, কিভাবে গায়বী মদদ করা হয়।

 এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, বণী ইসরাঈলের একজন আল্লাহওয়ালা আলিম ব্যক্তি একটি গ্রামে গিয়ে দেখলেন সেখানকার সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। মাঠ ধু ধু করছে। বৃষ্টির অভাবে সমস্ত অঞ্চলটি শুকিয়ে গেছে। হঠাৎ করে আকাশে একটি মেঘ দেখা গেল। আর আকাশ থেকে গায়িবী নেদা হল অমুক ব্যক্তির জমিতে বৃষ্টি বর্ষণ কর। সঙ্গে সঙ্গে মেঘটি দ্রুত বেগে একদিকে ছুটতে লাগলো। সেই আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিটিও মেঘের সঙ্গে ছুটলেন।

আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি তথায় উপস্থিত হয়ে দেখলেন যেই ক্ষেতে বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছে সে ক্ষেতে এক ব্যক্তি কোদাল দিয়ে ক্ষেতে পানি যাওয়ার রাস্তা করে দিচ্ছেন। তিনি ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নাম কি? তখন সেই ব্যক্তি বলল কেন  কি হয়েছে, কেন তার নাম জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে তা জানতে চাইলেন। তখন আল্লাহওয়ালা ব্যক্তি পুরো ঘটনাটি খুলে বললেন। তখন সেই ব্যক্তি বললেন, মেঘের মধ্যে যার নাম শুনেছেন সেটাই আমার নাম।  তখন তিনিও পুরো ঘটনাটি খুলে বললেন যে, আমার জমির শস্য কখনও নষ্ট হয় না। আমার জমির শস্য উঠার পর আমি সেই শস্য তিন ভাগ করি। একভাগ আল্লাহ পাক-এর রাস্তায় গরীব-মিস্কীনদের দান করি অর্থাৎ  জমির হক্ব তথা ওশর আদায় করি। এক ভাগ নিজের খাওয়া-দাওয়া, ব্যবহারের জন্য রেখে দেই। আরেক ভাগ আগামীতে চাষের জন্য রাখি।” এভাবে সম্পদের ব্যবহারের কারণে আমার ফসল কখনও নষ্ট হয়নি। বরং প্রতিবারেই এইরূপ কুদরতীভাবে আমার ফসলের চাষ হয় এবং প্রতিবারেই বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। সুব্হানাল্লাহ্। (বুখারী শরীফ)

ওশর পাওয়ার হক্বদার কারা

অন্যান্য ফরয-ওয়াজিব দান-ছদক্বা যে আটটি খাতে দেয়ার হুকুম ওশরের ক্ষেত্রেও সে একই হুকুম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই দান-ছদক্বা ফকির, মিসকীন, যাকাত-ওশর ইত্যাদি আদায়কারী কর্মচারী, চিত্তআকর্ষণ করা প্রয়োজন এমন ব্যক্তি অর্থাৎ নও মুসলিম, দাস মুক্তির জন্য, ঋণে জর্জরিত ব্যক্তির ঋণ মুক্তির জন্য, আল্লাহ তায়ালার পথে জিহাদকারী এবং মুসাফিরের জন্য। এটা আল্লাহ পাক-এর নির্ধারিত বিধান। এবং আল্লাহ পাক সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা তওবা-৬০)

আটটি খাত যথাক্রমে-

১। ফকিরঃ ফকির ঐ ব্যক্তি যার নিকট খুবই সামান্য সহায় সম্বল আছে।

২। মিসকীনঃ ঐ ব্যক্তি যার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি এবং আত্ম সম্মানের খাতিরে কারও কাছে হাত পাততে পারে না।

৩। আমিলঃ যাকাত-ওশর ইত্যাদি আদায় ও বিতরণের কর্মচারী।

৪। মন জয় করার জন্য নও মুসলিমঃ অন্য ধর্ম ছাড়ার কারণে পারিবারিক, সামাজিক ও আর্থিকভাবে বঞ্চিত হয়েছে। অভাবে তাদের সাহায্য করে ইসলামে সুদৃঢ় করা।

৫। ঋণমুক্তির জন্যঃ জীবনের মৌলিক বা প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য সঙ্গত কারণে ঋনগ্রস্ত ব্যক্তিদের ঋণ মুক্তির জন্য।

৬। দাসমুক্তিঃ কৃতদাস মুক্তির জন্য।

৭। ফী-সাবীলিল্লাহ বা জিহাদঃ অর্থাৎ ইসলামকে বোল-বালা বা বিজয়ী করার লক্ষে যারা কাফির বা বিধর্মীদের সাথে জিহাদে রত সে সকল মুজাহিদদের প্রয়োজনে।

৮। মুসাফিরঃ মুসাফির অবস্থায় কোন ব্যক্তি বিশেষ কারণে অভাবগ্রস্ত হলে ঐ ব্যক্তির বাড়িতে যতই ধন-সম্পদ থাকুক না কেন।

স্মরনীয় যে, যাকাত, ফিতরা আদায় করার  জন্য নিছাব নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু ওশর আদায় করার জন্য আমাদের হানাফী মাযহাবে কোন নিছাব নেই।

উল্লেখ্য, দ্বীনি শিক্ষার্থীদেরকে জমির ফসলের ওশর, মালের যাকাত, ফিতরা, কাফ্ফারা, মান্নত, দান, ছদক্বা, কুরবানীর চামড়া ইত্যাদি দান করে দ্বীনি শিক্ষায় সহযোগিতা করা সবচেয়ে উত্তম ও আফজল। (মাকতুবাত শরীফ)

কাজেই, আপনাদের ফসলের ওশর, মালের যাকাত, ফিতরা, কাফ্ফারা, মান্নত, দান, ছদক্বা, কুরবানীর চামড়া বা তার মূল্য বর্তমান বিশ্বে একমাত্র ইল্মে শরীয়ত ও ইলমে মা‘রিফত সমৃদ্ধ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ মাদ্রাসায়’ দিয়ে ইহকালীন ও পরকালীন নাজাতের পথকে সুগম করে নিজেকে ধন্য করুন। কারণ এ প্রতিষ্ঠানের মহান প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক যামানার খাছ লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত্ ত্বরীক্বত, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস্ সুন্নাহ, কতুবুল আলম, গাউছুল আ’যম, হাবীবে আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা ইমাম রাজারবাগ শরীফ-এর হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। আর উনারই মুবারক তত্ত্বাবধানে হাক্বীক্বীভাবে গরীব, মিস্কীন ও ইয়াতীমদের লেখাপড়া ও জীবন যাপনের যাবতীয় ভরণ-পোষণের সুব্যবস্থা করা হয় এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদায় এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুমহান সুন্নতী আদর্শে ইলমে দ্বীন শিক্ষা ও আমলে পরিপাটি করে তোলা হয়।

বিঃদ্রঃ- আপনি ইচ্ছা করলে সরাসরি কর্তৃপক্ষের কাছে অথবা অত্র প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমেও পৌঁছিয়ে দিতে পারেন।

মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ

সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, মালিবাগ শাখা, ঢাকা।

একাউন্ট নং-২০০০০৭৫৬৯

মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান

ঝাউতলা স্টেশন রোড, চট্রগ্রাম।

 সুওয়াল:ঃ চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্র ডিসেম্বর-জানুয়ারি /২০০৬ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একটি মাসিক পত্রিকার কথা উল্লেখ করে “আল ফিকহু আলা মাযাহিবিল আরবায়া, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ ও রদ্দুল মুখতার” কিতাবের বরাত দিয়ে বলেছে, “আযানের মৌখিক জবাব দেওয়া মুস্তাহাব”…।

এখন আমার সুওয়াল হল- তারা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে যে সকল কিতাবের ইবারত উল্লেখ করেছে তা কতুটুকু গ্রহণযোগ্য?

 জাওয়াব:ঃ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া সম্পর্কে রেযাখানীদের অখ্যাত মাসিক মুখপত্রের উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং স্ববিরোধী, ভুল ও অশুদ্ধ হয়েছে এবং ছহীহ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ ও ফতওয়ার  কিতাবসমূহে বর্ণিত তারজীহ্ বা প্রাধান্যপ্রাপ্ত তথা মুখতার বা গ্রহণযোগ্য মতের সম্পূর্ণ খিলাফ হয়েছে। কারণ আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকারীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব। আর এই আযানের মৌখিক জাওয়াব না দিলে সে ওয়াজিব তরককারী হিসেবে সাব্যস্ত হয়ে নাফরমানের অন্তর্ভুক্ত হবে।

সুতরাং মুয়াজ্জিনের আযান শুনে আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা জিহালতী ও গুমরাহী বৈ কিছুই নয়।

রেযাখানী মৌলভী ছাহেবরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে। নিম্নে পর্যায়ক্রমে তাদের প্রতিটি দলীলের খন্ডনসহ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া উল্লেখ করা হচ্ছে-

(ধারাবাহিক)

রেযাখানী মুখপত্রে প্রদত্ত “আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ” কিতাবের বক্তব্য পর্যালোচনা-

উল্লেখ্য, রেযাখানীরা “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুসতাহাব বলে জাওহারাতুন নাইয়ারাহ কিতাবের যে দলীল দিয়েছে, তা ফতওয়াগ্রায্য নয় বরং। ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভযোগ্য বিশ্বখ্যাত অনুসরণীয় ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে বর্ণিত ফতওয়াগ্রায্য মত হলো মৌখিক আযানের জবাব দেয়া ওয়াজিব।

দ্বিতীয়তঃ রেযাখানীরা আল জাওহারাতুন্ নাইয়ারাহ্ কিতাবে একাধিক মত থেকে শুধুমাত্র একটি উল্লেখ করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

তৃতীয়তঃ রেযাখানাি আল জাওয়াহরাতুন নাইয়ারাহ্ কিতাবের ইবারত কারচুপি করেছে। কারণ রেযাখানীরা আল জাওহারাতুন্ নাইয়ারাহ কিতাবের ৫৭ পৃষ্ঠার বরাত দিযে যে ইবারতগুলো তাদের পত্রিকায় উল্লেখ করেছে। তাদের পত্রিকায় উল্লিখিত ইবারতগুলোর পরে আরো অনেক ইবরত আছে যা রেযাখানীরা কারচুপি করা ইবারতগুলোর শেষে বলা হযেছে, আযানের সময় কোন কথা বলা যাবে না। এবং আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ব্যতীত কোন কাজ করা যাবে না।

যেমন, আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ কিতাবে ৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

وينبغى لسامع الاذان لا يتكلم فى حال الاذان اوالاقامة ولا يشتغل بشيئ سوى الاجابة.

অর্থঃ “আযান শ্রোতাদের উচিত যে আযান ও ইক্বামতের সময় কোন বলবে না। এবং আযানের জবাব দেয়া ব্যতীত কোন কাজেই মশগুল হবে না।”

সুতরাং প্রমাণিত হলো রেযাখানীরা যে ইবারত উল্লেখ করে “আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহাব বলেছে, অথচ উক্ত ইবারতগুলোর শেষে বলা হয়েছে আযানের সময় কোন কথা বলা যাবে না। আর আযানের সময় যে কোন কথা বলা যাবে না- এটা ওয়াজিবের নিদর্শন।

যেমন, “উমদাতুল ক্বারী” বিতাবের ৫ম খ-ের ১১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

احتج بقوله (فقولوا) اصحابنا ان اجابة المؤذن واجبة على السامعين لدلالة الامر على الوجوب… ألاترى ان يجب عليهم قطع القراءة وترك الكلام والسلام ورده وكل عمل غير الاجابة فهذا كله امارة الوجوب.

অর্থঃ “হাদীছ শরীফ-এর ইবারতে উল্লিখিত فقولوا শব্দটির ভিত্তিতে আমাদের হানাফী মাযহাবের আছহাবগণ দলীল গ্রহণ করে বরেছেন যে, আযান শ্রোতাদের সকলের উপর মৌখিকভাবে মুযায্যিনের আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। কেননা হাদীছ শরীফ-এর ইবারতে উল্লিখিত فقولوا শব্দটি امر (আমর) যা আমলকে ওয়াজিবের উপর দালালত করে। আর তুমি কি দেখ না! অর্থাৎ তুমি জেনে রাখ প্রত্যেক আযান শ্রোতাদের জন্য ওয়াজিব হলো, আযান চলাকালীন অবস্থায় যদি কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে, তাহলে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বন্ধ করবে, কথাবার্তা, সালাম-কালাম বন্ধ করবে, সালামের জাওয়াব দেয়া ব্যতীত কোন কাজই করবে না। সুতরাং উপরোক্ত প্রত্যেকটি কাজ থেকে বিরত থাকাই হলো ওয়াজিবের নিদর্শন। অর্থাৎ আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ওয়াজিব বিধায়, আযান চলাকালীন অবস্থায় কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা, কথাবার্তা, সালাম-কালাম বন্ধ করা, সালামের জাওয়াব না দেয়া। এমনকি আযানের মৌখিক জবাব দেয়া ব্যতীত সমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকাও ওয়াজিব।”

এছাড়া “তিরমিযী শরীফ”-এর ১ম খন্ড ২৯ পৃষ্ঠার ৩নং হাশিয়ার উল্লেখ আছে,

قال الشيخ فى اللمعات اجابة المؤذن واجبة ويكره التكلم عند الاذان.

অর্থঃ “শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি “লুময়াত” কিতাবে বলেছেন, “মুয়ায্যিনের আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব এবং  আযানের সময় কথা বলা মাকরূহ্ তাহরীমী।”

“আবূ দাউদ শরীফ” কিতাবের ১ম খন্ডের ৯৩ পৃষ্ঠায় ৬নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

اجابة المؤذن واجبة ويكره التكلم عند الاذان.

অর্থঃ “মুয়ায্যিনের আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের সময় কথা বলা মাকরূহ তাহ্রীমী।”

“ইবনে মাজাহ্ শরীফ-এর” ৫৩ পৃষ্ঠার ৩নং হাশিয়ায় উল্লেখ আছে,

واجابة المؤذن واجبة ويكره التكلم عند الاذان.

অর্থঃ “মুয়ায্যিনের আযানের মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব। আর আযানের সময় কথা বলা মাকরূহ তাহ্রীমী।”

চতুর্থতঃ আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ কিতাবের মতটি ছহীহ বা বিশুদ্ধ মত নয়। কারণ রেযাখানীরা তা প্রমাণ করতে পারেনি এবং রেযাখানীরা ক্বিয়ামত পর্যন্ত আল জাওহারাতুন নাইয়ারাহ্ কিতাবের মতটি ছহীহ বা বিশুদ্ধ মত প্রমাণ করতে পারবে না। (ইন্শাআল্লাহ)

কেননা রেযাখানীদের মুরুব্বী আহদ ইয়ার খান সাহেব সরচিত “মিরয়াতুল মানাজীহ” কিতাবে উল্লেখ করেছেন- “ছহীহ বা বিশুদ্ধ মতে মৌখিক আযানের জাওয়াবা দেয়া ওয়াজিব।” যেমন, “মিরয়াতুল মানাজীহ্” কিতাবের ১ম খন্ডের ৪০৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,

صحیح یہ ہے کہ پہلی اذان سننے پر دنیاوی باتوں سے خاموش ہو جانا اور جوابا کلمات اذان ادا کرنا واجب ہے.

 অর্থঃ- “ صحيح বিশুদ্ধ কথ এই যে, প্রথমে আযান শুনার পর সমস্ত দুনিয়াবী কথাবার্তা থেকে চুপ থাকবে এবং মৌখিক আযানের জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।”

সুতরাং উপরোক্ত দলীলভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমাণিত হলো যে, ফতওয়াগ্রাহ্য মত বা বিশুদ্ধ ফওওয়া হলো, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে আযান শ্রবণকরীর সকলের জন্যই আযানের জবাব মৌখিকভাবে দেয়া ওয়াজিব এবং এর উপরই ফতওয়া। হানাফীদের জন্য এর বিপরীত মত পোষণ করা হিহালতী ও গুমরাহী বৈ কিছুই নয়। তবে শাফিয়ী মাযহাব মতে আযানের মৌখিক জবাব দেয়া মুস্তাহব।

আতএব, প্রমাণিত হলো, রেযাখানী মৌলভী সাহেবরা “আযানের জবাব মৌখিক দেয়া মুস্তহাব বলে জিহালতী ও গুমরাহীর পরিচয় দিয়েছে এবং কিতাবের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়েছে।

খন্দকার সেলিম আহমদ

পাহাড় কাঞ্চনপুর, টাঙ্গাইল

সুওয়াল: হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত অখ্যাত মাসিক পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে, মাসিক আল বাইয়্যিনাত-অক্টোবর ২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রদত্ত “মীলাদ-ক্বিয়াম” সম্পর্কিত বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে  এবং একই বিষয়ে এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী ও মে-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় এছাড়াও মাসিক মদীনা পত্রিকা ফেব্রুয়ারী-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে একই ধরনের জবাব দেয়া হয়েছে।

তাদের বক্তব্যগুলোর মধ্যে যে বিষয়গুলো আমার নিকট সন্দেহজনক তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-

যেমন, এপ্রিল-২০০৫ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে বলা হয়েছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি। আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মীলাদ ও ক্বিয়াম সম্পর্কে কোন প্রকার হাদীছও বর্ণিত নেই। ….”

এখন আমাদের সুওয়াল হলো, প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কিত তাদের উল্লিখিত বক্তব্য কতটুকু দলীলসম্মত? কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত মীলাদ-ক্বিয়াম সম্পর্কে হাটহাজারী মাদরাসার অখ্যাত মাসিক পত্রিকার জিজ্ঞাসার সমাধানে এবং অপর একটি পত্রিকার প্রশ্নোত্তর বিভাগে যা বলা হয়েছে তা শুদ্ধ তো হয়ইনি, বরং সম্পূর্ণই ডাহা মিথ্যা, ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন এবং অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহগণের সর্বজনমান্য ও স্বীকৃত বিশ্ব বিখ্যাত ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহের বক্তব্যের বিপরীত ও বিরুদ্ধমত। যা ইতোপূর্বে আমাদের “মাসিক আল বাইয়্যনাত শরীফ”-এর অনেক সংখ্যায় খ-ন করে সঠিক ও দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হয়েছে। আর “মাসিক আল বাইয়্যিনাত শীরফ”-এর জাওয়াবকে খ-ন করা হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হয়নি, হবেও না ইনশাআল্লাহ।

এরপরও হাটহাজারীর মৌলভী সাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়রা বার বার মীলাদ ক্বিয়াম সম্পর্কে বিনা তাহক্বীকে ও বিনা দলীলে উক্ত ভুলেরই পূনরাবৃত্তি করে যাচ্ছে।

(ধারাবাহিক)

যেমন, উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের প্রথমেই তারা বলেছে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী, যা সম্পূর্ণভাবে মাকরূহে তাহরীমি।”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই দলীলবিহীন, ডাহা মিথ্যা ও কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ, “আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত, যা সম্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ মীলাদ-ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যামানাতেই ছিল। তবে মীলাদ শরীফ-এর বর্তমান তরতীব হচ্ছে সুন্নতে উম্মত ও মুস্তাহসান।”

দ্বিতীয়তঃ উল্লিখিত প্রথম বক্তব্যের দ্বিতীয় অংশে তারা বলেছে, “আইম্মায়ে মুজতাহিদীন কারো থেকে এই প্রচলিত মীলাদ ও ক্বিয়াম প্রমাণিত নয়।…..”

এর জবাবে বলতে হয় যে, তাদের এ বক্তব্যও ডাহামিথ্যা ও কুফরীমুলক হয়েছে। কারণ, তাদের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে, তারা আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে অস্বীকার করেছে। অথচ আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, সলফে-ছালেহীন, বুযুর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে এই প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়ামের অনেক প্রমাণ রয়েছে, যা আমরা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এর বিগত সংখ্যায় আইম্মায়ে মুজতাহিদীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকে অনেক দলীল-আদিল্লাসহ দিবালোকের ন্যয় প্রমাণ করেছি।

এছাড়াও হাটহাজারী মৌলভী সাহেবদের গুরু মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ছাহেব তাঁর “তরীক্বায়ে মীলাদ” কিতাবের ৮ম পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

ভাবার্থঃ “ঐ সকল কার্যাবলী (অর্থাৎ শিরনী, ক্বিয়াম ইত্যাদি) প্রকৃতপক্ষে মুবাহ কাজসমূহের অন্তর্ভূক্ত। তাতে কোন ক্ষতি নেই এবং সেজন্য প্রকৃত মীলাদ শরীফ-এর ব্যাপারে কোন প্রকার নিষেধ আসতে পারে না।”

মাওলানা আশরাফ আলী থানবী ছাহেব তাঁর “ইমদাদুল ফতওয়ার” ৪র্থ খ-ে ৩২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,

والاحتفال بذكر الولادة ان كان خاليا عن البدعت المروجة جائز بل مندوب كسائر اذكاره صلى الله عليه وسلم. والقيام عند ذكر ولادته الشريفة حاشا الله ان يكون كفرا.

অর্থঃ “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিলাদত শরীফ-এর বর্ণনা করার জন্য মাহফিল করা জায়িয বরং মুস্তাহাব, যখন উহা (হিন্দুস্থানে) প্রচলিত বিদয়াত হতে পবিত্র হবে এবং (মীলাদ শরীফে) তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার সময় ক্বিয়াম করা কখনো কুফরী নয়।“

আর এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, মীলাদ শরীফ-এ  যে ক্বিয়াম করা হয়, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শন বা তা’যমী-তাকরীম করার জন্যেই করা হয়।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী ছাহেব, গাঙ্গুহী ছাহেবসহ সকল ওলামায়ে দেওবন্দের পীর ও মুর্শিদ শায়খুল আরব ওয়াল আ’যম, আল্লামা হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই মীলাদ-ক্বিয়াম করেছেন, যা তিনি তাঁর “হাফতে মাসায়িল” ও “মরকূমাতে ইমদাদিয়া” কিতাবে উল্লেখ করেছেন।

যেমন- “হাফতে মাসায়িল” কিতাবে উল্লেখ করেন যে,

مولود  شر یف کو ذریعہ برکات سمجھ کر ہر سال منعقد کرتا ہوں اور قیام کے وقت بے حد لطف ولذت پاتا ہوں.

অর্থঃ “মীলাদ শরীফ-এর মাহফিলকে বরকত লাভের ওসীলা মনে করে আমি প্রতি বৎসর মীলাদ শরীফ-এর মজলিস করি এবং মীলাদ মাহফিলে ক্বিয়াম করার সময় আমি অশেষ আনন্দ ও স্বাদ উপভোগ করি।”

তাছাড়া বড় কাটরা ও লালবাগ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা, মুজাহিদে আ’যম, খাদিমুল ইসলাম, হযরত মাওলানা শাসুল হক ফরিদপুরী ছাহেব ক্বিয়াম সম্পর্কে তাঁর “তাসাউফ তত্ত্ব” কিতাবে লিখেন যে, “মীলাদ শরীফ-এর মধ্যে ক্বিয়াম করা আদব, শরাফত বা ভদ্রতা।”

উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম সম্পর্কিত হাটহাজারীর মৌলভী ছাহেব এবং তাদের সকল সমজাতীয়দের বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কারণ ‘আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম ইসলামী শরীয়ত পরিপন্থী নয়। বরং শরীয়তসম্মত, যা সস্পূর্ণভাবে সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সুন্নতে ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম স্বয়ং নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ্ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যমানাতেই ছিল। তাছাড়া সকল আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, সলফে-ছালিহীন, বুযর্গানে দ্বীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ থেকেও এই প্রচলিত মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম-এর অনেক প্রমাণ রয়েছে। যা দলীলসহ ছাবিত করা হলো। (চলবে)

মুহম্মদ ইব্রাহীম জুনায়েদ, চট্টগ্রাম

 

সুওয়ালঃ “মাসিক মদীনা সেপ্টেম্বর/২০০৮ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে বলা হয়েছে, “পীর একটি ফারসি শব্দ। ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং আমাদের এই উপমহাদেশের বাইরে আর কোথাও এই শব্দের প্রচলন নেই। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথাও এই শব্দের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।

এখন আমার সুওয়াল হলো- “পীর শব্দের অস্তিত্ব সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়েছে কি? আর সত্যিই কি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও এই পীর শব্দের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না? দয়া করে দলীলভিত্তিক জাওয়া দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াবঃ পীর শব্দের অস্তিত্ব সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সঠিক হয়নি। বরং ভুল হয়েছে। কারণ پیر (পীর) শব্দটি যদিও ফার্সী শব্দ। কিন্তু আরবীতে অর্থাৎ কুরআন শরীফে, হাদীছ শরীফে شيخ (শায়খ) বা مرشد (মুরশিদ) বলে। আর پیر  (পীর), شيخ (শায়খ), مرشد (মুরশিদ) ইত্যাদি শব্দের সঠিক অর্থ হলো, হক্কানী-রব্বানী আলিম, আল্লাহওয়ালা, কামিল ব্যক্তি। পীর ছাহেব বা শায়খ যা তথা কথিত নামধারী লোকদের মত নয়।

দ্বিতীয়তঃ پیر (পীর) শব্দের অস্তিত্ব যদি কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও খুঁজে পাওয়া না যায় তাহলে খোদা, নামায, রোযা ইত্যাদি শব্দের অস্তিত্বও তো কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ-এর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন ছাহেব কি খোদা, নামায, রোযা ইত্যাদি ছেড়ে দিবে?

সুতরাং, আবারো প্রমাণিত হলো “ پیر (পীর) শব্দের অস্তিত্ব সম্পর্কে মাসিক মদীনার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল। কারণ “ پیر (পীর) শব্দের অস্তিত্ব যেমন কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে রয়েছে, অনুরূপ খোদা, নামায, রোযা ইত্যাদি শব্দের অস্বিত্বও কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে রয়েছে।

যেমন خدا (খোদা) শব্দটি ফার্সী শব্দ। কিন্তু আরবীতে অর্থাৎ কুরআন শরীফে ও হাদীছ শরীফে الله (আল্লাহু) বলে। যেমন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

قل هوالله احد الله الصمد

অর্থঃ “বলুন, আল্লাহ পাক, এক।” আল্লাহ পাক  বেনিয়ায অর্থাৎ আল্লাহ পাক কারো মুখাপেক্ষি নন। (সূরা ইখলাছ-১, ২) এমনিভাবে نماز (নামায) শব্দটিও ফার্সী শব্দ। কিন্তু আরবীতে অর্থাৎ কুরআন শরীফে ও হাদীছ শরীফে صلوة (ছলাত) বলে। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

اقيموا الصلوة

অর্থঃ “তোমরা নামায আদায় কর।” (সূরা বাক্বারা-৪৩)

অনুরূপ روزہ (রোযা) শব্দটিও ফার্সী শব্দ। কিন্তু আরবীতে অর্থাৎ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে صوم (ছওম) বা صيام (ছিয়াম) বলে। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

يايها الذين امنوا كتب عليكم الصيام

অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে।” (সূরা বাক্বারা-১৮৩)

সুতরাং প্রমাণিত হলো খোদা, নামায, রোযা ইত্যাদি শব্দের অস্তিত্ব যেমন কুরআন শরীফে, হাদীছ শরীফে রয়েছে, অনুরুপভাবে “পীর  (پیر) শব্দের অস্তিত্বও কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে রয়েছে।

যেমন- কুরআন শরীফে পীর (پیر) তথা شيخ (শায়খ) ও مرشد মুর্শিদ-এর গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,

من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مرشدا.

অর্থঃ “আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে সে কোন ওলীয়ে মুরশিদ অর্থাৎ কামিল পীর ছাহেবকে লাভ করতে পারে না।” (সূরা কাহাফ-১৭)

অর্থাৎ যারা কামিল পীর, কামিল শায়খ বা কামিল মুরশিদ-এর নিকট বাইয়াত হয় না তারা পথভ্রষ্ট। কারণ তখন তাদের পথ প্রদর্শক হয় শয়তান।

অনুরূপভাবে (پیر) পীর শব্দের অস্তিত্ব হাদীছ শরীফেও রয়েছে।

যেমন- হাদীছ শরীফে কামিল পীর, কামিল শায়খ বা কামিল মুরশিদ-এর গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

الشيخ لقومه كالنبى فى امته.

অর্থঃ “শায়খ তাঁর ক্বওমের মধ্যে তদ্রুপ, যেরূপ নবী আলাইহিস্ সালাম তাঁর উম্মতের মধ্যে।” (দায়লামী শরীফ, মাকতুবাত শরীফ)

অর্থাৎ নবী আলাইহিস্ সালাম-এর দ্বারা যেরূপ উম্মতের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়, সেরূপ কামিল পীর, কামিল শায়খ বা কামিল মুর্শিদ  দ্বারাও মুরীদের বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ সবক্ষেত্রে ইছলাহ লাভ হয়।

তাছাড়া “ (پیر) পীর শব্দের অস্তিত্ব কুরআন শরীফে, হাদীছ শরীফে রয়েছে, বিধায় ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের কিতাবেও কামিল  পীর, কামিল শায়খ বা কামিল মুর্শিদ-এর গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।

যেমন- সুলতানুল আরিফীন, হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে,

من ليس له شيخ فشيخه شيطان.

অর্থঃ “যার কোন شيخ (শায়খ) বা  پیر (পীর ছাহেব) নেই তার شيخ (শায়খ) পথ প্রদর্শক হলো শয়তান।” (ক্বওলুল জামীল, নূরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)

ইমামুল আলিম, শঅইখুল কামিল, খতিমাতুল মুফাসসিরীন, শায়খ হযরত ইসমাঈর হাক্বী রহমর্তুলাহি আলাইহি “তাফসীরে রুহুল বয়ান ৫ম খন্ডে ২৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

من لم يكن له شيخ فشيخه الشيطان وفى المثنوى.

অর্থঃ যার কোন شيخ (শায়খ) বা پیر (পীর ছাহেব) নেই তার شيخ (শায়খ) বা پیر (পীর ছাহেব) হলো শয়তান।। অনুরূপ “মসনবী শরীফেও” উল্লেখ আছে।

অতএব, নবী আলাইহিস্ সালাম-এর উম্মত না হয়ে যেরূপ হিদায়েত লাভ করা যায় না। তদ্রুপ  কামিল شيخ (শায়খ), কামিল (مرشد) (মুর্শিদ)  বা কামিল پیر (পীর) ছাহেব-এর নিকট বাইয়াত না হয়ে ইছলাহ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায় না। বরং শয়তানের ওয়াস্ওয়াসায়, প্রবঞ্চনায় পড়ে গোমরাহীতে নিপতিত হওয়াই স্বাভাবিক। (চলবে)

মুসাম্মত সানজিদা আক্তার

সভানেত্রী- ছাত্রী আনজুমানে বাইয়্যিনাত

মুহম্মদপুর, ঢাকা।

সুওয়াল: অখ্যাত মাসিক রাহমানী পয়গাম এপ্রিল/২০০৩ ঈসায়ী সংখ্যায় জিজ্ঞাসা-জবাব বিভাগে নিম্নোক্ত ১২৪৭ নং জিজ্ঞাসার জবাব ছাপা হয়।

জিজ্ঞাসাঃ ছাহাবী আবু সাঈদ খুদরী ও আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা বলেন যে, রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন আমার মৃত্যুর পর পূর্ব দেশগুলির মধ্য হতে কোন একটি দেশ থেকে আমার উম্মতের ভিতর হতে একটি দল বের হবে। এই দলের সদস্যরা হবে অশিক্ষিত ও মুর্খ! এদের মধ্যে কোন শিক্ষিত লোক গেলে সেও হয়ে যাবে মুর্খের মত। তাদের বক্তৃতা হবে বহু বহু গুণের ফযীলতের। তাদের মত বক্তৃতা বা বয়ান কারো হবে না। …… তারা কুরআনের উপর আমল কিম্বা কুরআন প্রতিষ্ঠার একটু চেষ্টাও করবে না কখনো। উক্ত অখ্যাত পত্রিকা হাদীছ শরীফ ছহীহ স্বীকার করলেও মন্তব্য করেছে যে, প্রচলিত তাবলীগের কার্যক্রম পুরোপুরি শরীয়ত সম্মত। ইসলাম পরিপন্থি কোন কিছু এতে নেই।

উক্ত অখ্যাত পত্রিকার উল্লিখিত “জিজ্ঞাসা-জবাবের” প্রেক্ষিতে আমার সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো-

…. (৪) প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগীদের পৃষ্ঠপোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে উল্লিখিত সুওয়ালগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের আক্বীদা, আমল হিফাযতে সহায়তা করবেন বলে আমরা আশাবাদী।

জাওয়াব: প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে উক্ত অখ্যাত পত্রিকার জবাব শুদ্ধ হয়নি। বরং ভুল, মনগড়া ও দলীলবিহীন হয়েছে।

তাই নিম্নে সুওয়ালে বর্ণিত বিষয়গুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দেয়া হলো-

ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে প্রশ্নে উল্লেখিত অখ্যাত পত্রিকার অপব্যাখ্যা ও

মিথ্যাচারিতার খণ্ডনমূলক জবাব (৪)

প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগ সম্পর্কে অখ্যাত পত্রিকার ‘জিজ্ঞাসার জবাবের প্রেক্ষিতে আপনার চতুর্থ সুওয়াল হলো-

(৪) “প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগের পৃষ্ঠ পোষকতায় বা পরিচালনায় যারা রয়েছে তারা সকলেই হক্কানী আলিম, তাদের এ দাবী কতটুকু সঠিক? আসলে হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতি কি?

আপনার উক্ত সুওয়ালের প্রেক্ষিতে বলতে হয় যে, প্রচলিত ছয় উছূলীদের উক্ত দাবী সম্পূর্ণই অবান্তর, মিথ্যা ও দলীলবিহীন। কারণ গত দুই সংখ্যায় প্রদত্ত হক্কানী আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচিতিমূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হক্কানী আলিম বা সত্যিকার নায়িবে নবী তিনিই (১) যিনি ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত অনুযায়ী আক্বীদা পোষণ করেন, (২) ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করে তাছাউফ চর্চা করত: অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করেছেন, (৩) অর্জিত ইলম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন, (৪) সুন্নতের পূর্ণ  পায়রবী করেন, (৫) হারাম-নাজায়িয ও শরীয়তবিরোধী কাজে লিপ্ত হননা। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের দৃষ্টিতে তারাই আলিম বা নায়িবে নবী।

অথচ প্রচলিত ছয় উছূলীদের কথিত আলিমদের মধ্যে উল্লিখিত গুণাবলিসমূহের কোনটাই বিদ্যমান নেই। আমরা যদি উল্লিখিত পাঁচটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করি তবে বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।

হক্কানী আলিম হওয়ার জন্য দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে-

২. ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার সাথে সাথে একজন হক্কানী শায়খ বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে ইলমে তাছাউফ চর্চা করতঃ অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহভীতি বা তাক্বওয়া অর্জন করা।

অথচ ছয় উছূলীরা ইলমে ফিক্বাহ যৎসামান্য শিক্ষা করলেও ইলমে তাছাউফ মোটেও শিক্ষা করেনা বরং ইলমে তাছাউফ ও পীর মাশায়িখ সম্পর্কে এলোমেলো কথা বলে থাকে। অথচ ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে ইলমে তাছাউফ অর্জন করা, হক্কানী পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া, ছোহবত ইখতিয়ার করা, ক্বলবী যিকির করা প্রত্যেকটাই ফরযে আইন। নিম্নে এ সম্পর্কে দলীল-আদিল্লাসহ আলোচনা করা হলো।

কামিল পীর বা শায়খের নিকট বাইয়াত হওয়া ফরয

 [বিঃদ্রঃ- তাছাউফের আ’মালী বিষয়সমূহ হাছিল করা যেহেতু একজন কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত, সেহেতু এখানে সংক্ষিপ্তভাবে কামিল পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়ার আহ্কাম ও কামিল পীরের পরিচয় বর্ণনা করা হলো]

স্মরণযোগ্য যে, অন্তর পরিশুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইল্মে তাছাউফ অর্জন করতে হলে এবং দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে মশগুল থাকার জন্য বা হুজুরী ক্বাল্ব অর্জন করতঃ অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করতে হলে, অবশ্যই একজন কামিল পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করতে হবে। কারণ কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ব্যতীত ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুজুরী হাছিল করা বা বেলায়েতে আম হাছিল করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

তাই অনুসরণীয় ইমাম, মুজ্তাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরামগণ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর দৃষ্টিতে ইজ্তিহাদ করতঃ রায় বা ফতওয়া দেন যে, ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা ও হুজুরী ক্বাল্ব হাছিল করতঃ বেলায়েতে আম হাছিল করার জন্য একজন কামিল পীর বা মুর্শিদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা ফরয।

কেননা এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, ইল্মে তাছাউফ অর্জন করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করতঃ হুজুরী ক্বাল্ব হাছিল করা তথা অন্ততঃপক্ষে বেলায়েতে আম হাছিল করা ফরয। এ ফরয ততক্ষণ পর্যন্ত আদায় করা সম্ভব হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত না হবে। তাই বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে মাজহারীতে” উল্লেখ আছে যে,

كل ما يترتب عليه الاثر من الفروض الاعيان فهو فرض عين.

অর্থঃ “যে কাজ বা আমল ব্যতীত ফরযসমূহ আদায় করা সম্ভব হয়না, ফরযগুলোকে আদায় করার জন্য সে কাজ বা আমল করাও ফরয।”

হানাফী মায্হাবের মশহুর ফিক্বাহের কিতাব “দুররুল মুখ্তারে” উল্লেখ আছে যে,

ما لا يتم به الفرض فهو فرض

অর্থঃ “যে আমল ব্যতীত কোন ফরয পূর্ণ হয়না, সে ফরয পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাটাও ফরয।”

উল্লিখিত উছুলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে এটিই প্রমাণিত হয় যে, ফরয পরিমাণ ইল্মে তাছাউফ যেহেতু অর্জন করা ফরয, আর তা যেহেতু কামিল মুর্শিদ বা পীর ছাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্জন করা সম্ভব নয়, সেহেতু একজন কামিল মুর্শিদ অর্থাৎ যিনি সর্বদা আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে মশগুল, তাঁর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করাও ফরয।

শুধু তাই নয়, কামিল মুর্শিদের বা ওলী আল্লাহ্গণের সোহ্বত লাভ করা বা তাঁদেরকে অনুসরণ করার নির্দেশ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফেও রয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে সূরা তওবার ১১৯নং আয়াত শরীফে বলেন,

يايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الص‍ادقين.

 অর্থঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর এবং ছদেক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও।”

উপরোক্ত আয়াত শরীফে ছদেক্বীন দ্বারা তাঁদেরকেই বুঝানো হয়েছে, যাঁরা জাহির-বাতিন, ভিতর-বাহির আমল-আখলাক, সীরত-ছূরত, ক্বওল-ফে’ল সর্বাবস্থায় সত্যের উপর কায়েম রয়েছেন। অর্থাৎ যাঁরা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাছাউফে তাক্মীলে (পূর্ণতায়) পৌঁছেছেন। এক কথায় যাঁরা আল্লাহ্ পাক-এর মতে মত এবং আল্লাহ পাক-এর রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পথে পথ হয়েছেন এবং সর্বদা আল্লাহ্ পাক-এর যিকিরে মশগুল অর্থাৎ যাঁরা কামিল পীর বা মুর্শিদ, তাঁদেরকে বুঝানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক আরো বলেন,

واصبر نفسك مع الذين يدعون ربهم با الغداوة والعشى يريدون وجهه.

 অর্থঃ “আপনি নিজেকে তাঁদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধায় তাঁদের রবকে ডাকে তাঁর সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য।” (সূরা কাহাফ-২৮)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বাল্বী যিকির করেন, তাঁর অনুসরণ ও ছোহ্বত ইখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আল্লাহ্ পাক এ প্রসঙ্গে আরো বলেন,

واتبع سبيل من اناب الى

অর্থঃ “যে ব্যক্তি আমার দিকে রুজু হয়েছেন, তাঁর পথকে অনুসরণ কর।” (সূরা লোকমান-১৫)

কামিল মুর্শিদের গুরুত্ব সম্পর্কে কালামুল্লাহ্ শরীফে আরো এরশাদ হয়েছে,

من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مرشدا.

অর্থঃ “আল্লাহ্ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হিদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, সে কখনই কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (কামিল পীর) পাবেনা।” (সূরা কাহাফ-১৭)

অর্থাৎ যারা কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়না তারা পথভ্রষ্ট। (চলবে)

নায়েক মির্জা মুহম্মদ আনোয়ারুল হক

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকা।

সুওয়াল:  হানাফী মাযহাবে –

(১) নামাযের মুছল্লায় দাঁড়িয়ে অর্থাৎ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়ে এবং নামাযের নিয়ত করে থাকে।

(২) ইমামের পিছনে মুক্তাদী সূরা ফাতিহাসহ কোন সূরা পাঠ করেনা।

(৩) জামায়াতে নামায আদায়কালে টাখনুর সাথে টাখনু বা গায়ের সাথে গা বা কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়।

(৪) ‘আমীন’ চুপে চুপে বলে।

(৫) রুকু-সিজদায় যাওয়ার ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করেনা।

(৬) ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে।

(৭) তিন রাকায়াত বিতির নামায দু’বৈঠকে আদায় করে এবং তৃতীয় রাকায়াতে সূরা-ক্বিরায়াত শেষে দু’য়া কুনূত পড়ে।

(৮) ইক্বামত আযানের মতোই তবে ইক্বামতে লফ্য বা শব্দগুলো যেরূপ জোড়া জোড়া তদ্রুপ ইক্বামতেও, তবে ইক্বামত আযান অপেক্ষা কিছুটা নিম্নস্বরে পড়ে এবং দু’বার ক্বদক্বামাতিছ্ ছলাহ বলে।

(৯) তারাবীহ্র নামায বিশ রাকায়াত পড়ে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

(১১) জুমুয়ার ছানী বা দ্বিতীয় আযানের পর ইমাম জুমুয়ার খুৎবা দেন।

(১২) উন্নতমানের আটার মূল্যে ছদক্বাতুল ফিতর আদায় করে। ইত্যাদি।

কিন্তু লা-মাযহাবীরা উল্লিখিত মাসয়ালার বিপরীত আমল করে। আর ধারণা করে যে, হানাফী মাযহাবে হয়ত মাসয়ালাগুলোর কোন দলীল-প্রমাণ নেই।

অতএব, দয়া করে মাসয়ালাগুলোর দলীলভিত্তিক জাওয়াব দিয়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব: বিগত সংখ্যাগুলোতে অত্র সুওয়ালের জাওয়াবে মাযহাব মানা ফরয এবং মাযহাব অস্বীকার করা বা মাযহাবের বিরোধিতা করা কুফরী সে ফতওয়া সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণনার পাশাপাশি হানাফী মাযহাবের ইমাম ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হানাফী মাযহাব সম্পর্কে কিছুটা আলোচনা করা হয়েছে। আর ১৬১তম সংখ্যা থেকে উল্লেখিত মাসয়ালাগুলোর ধারাবাহিক জাওয়াব পেশ করা হচ্ছে।

(১০) ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে।

এর জাওয়াব হলোঃ আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, হানাফী মাযহাবের ইমাম, ইমামে আ’যম হযরত আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি হাদীছ শরীফের হাকিম ছিলেন। অর্থাৎ তিনি সমস্ত হাদীছ শরীফ সম্পর্কে ইলম রাখতেন। যার কারণে তাঁর প্রতিটি মাসয়ালার স্বপক্ষে হাদীছ শরীফ থেকে দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে।

অতএব, হানাফী মাযহাবে “ঈদের নামায অতিরিক্ত ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করে” এ সম্পর্কে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে।

উল্লেখ্য, যে সকল হাদীছ শরীফে আট তাকবীর ও নয় তাকবীরের উল্লেখ রয়েছে সে হাদীছ শরীফগুলোও হানাফী মাযহাবের দলীল। অর্র্থাৎ আট তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের দলীল তার বর্ণনা ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। আর নয় তাকবীরের হাদীছ শরীফগুলো কিভাবে ছয় তাকবীরের স্বপক্ষে দলীল হতে পারে এর ব্যাখ্যায় ‘ফতহুল ক্বদীর শরহে হিদায়াহ্’ কিতাবে বর্ণিত আছে-

المراد بالخمس تكبيرة الافتتاح والركوع  وثلاث زوائد وبالاربع بتكبيرة الركوع .

অর্থঃ প্রথম রাকয়াতে পাঁচ তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীর আর ক্বিরায়াতের পূর্বে যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর । দ্বিতীয় রাকয়াতে চার তাকবীরের ব্যাখ্যা হচ্ছে: ক্বিরায়াতের পর যাওয়ায়িদ বা ঈদের অতিরিক্ত তিন তাকবীর এবং চতুর্থ তাকবীর হচ্ছে রুকুর তাকবীর।

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

যেমন এ প্রসঙ্গে  আরো বর্ণিত রয়েছে-

ذكر ابن ابى شيبة فقال حدثنا هشيم انا خالد هو الحذاء عن عبد الله بن الحارث هو ابو الوليد نسيب ابن سيرين قال صلى بنا ابن عباس رضى الله تعالى عنه يوم عيد فكبر تسع تكبيرات خمسا فى الاولى واربعا فى الاخرة  ووالى بين القراءتين وهذا سند صحيح.

অর্থঃ হযরত ইবনু আবী শাইবাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ‘মুছান্নাফ’-এ বর্ণনা করেছেন যে, আমাদের কাছে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত হাশীম রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে খবর দিয়েছেন হযরত খালিদ আল্হাযা রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত আব্দুল্লাহ বিন  হারিছ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে। যাঁকে আবুল ওয়ালীদ ও নসবী নাম ইবনু সীরীন বলা হয়। তিনি এক ঈদের দিনে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর পিছনে নামায পড়লেন। এতে তিনি অর্থাৎ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নয় তাকবীর বললেন। প্রথম রাকায়াতে পাঁচ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে চার তাকবীর বললেন। তাকবীর ছিল প্রথম রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পূর্বে আর দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পরে। আর এ সনদটি ছহীহ্ বা বিশুদ্ধ। (মুছান্নাফ- ইবনে আবী শাইবাহ)

আল মুয়াত্তা লিল ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি কিতাবের   باب التكبير فى العيدينঅধ্যায়ে বর্ণিত আছে-

قال محمد قد اختلف الناس فى التكبير فى العيدين فما اخذت به فهو حسن وافضل  ذلك عندنا ماروى عن ابن مسعود رضى الله تعالى عنه انه  كان  يكبر  فى كل عيد تسعا خمسا واربعا فيهن تكبيرة  الا فتتاح وتكبيرتا الركوع ويوالى بين القراءتين ويؤخذها فى الاولى ويقدمها فى الثانية. اخرجه الطبرانى بسند صحيح

 অর্থঃ ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ দু’ ঈদের নামাযের তাকবীরের সংখ্যা নিয়ে ইখতিলাফ করেছেন। তবে আমি আমাদের হানাফী মাযহাবে উক্ত বর্ণনা থেকে যা গ্রহণ করেছি তাই হাসান বা উৎকৃষ্ট ও আফযল বা অধিক গ্রহণযোগ্য ও বিশুদ্ধ। যা হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনু মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে। নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেক ঈদের তাকবীরে নয় তাকবীর পাঠ করতেন। প্রথম রাকায়াতে তাকবীরে তাহরীমা ও রুকুর তাকবীরসহ পাঁচ তকবীর, আর দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীর বলতেন। প্রথম রাকায়াতে তাকবীর ক্বিরায়াতের পূর্বে এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াতের পরে। তাই প্রথম রাকায়াতে ক্বিরায়াত তাকবীরের পরে পড়তেন। আর দ্বিতীয় রাকায়াতে ক্বিরায়াত তাকবীরের আগে পড়তেন।  ইমাম তবারানী রহমতুল্লাহি আলাইহি এ রেওয়ায়েতটি ছহীহ সনদে উল্লেখ করেন। (চলবে)

মুহম্মদ রাশেদুল আবেদীন,

৮৪-৩৪, ১৬৯ স্ট্রিট, দ্বিতীয় তলা, জানাইকা

এনওয়াই, ১১৪৩২, ইউএসএ-২০৩৪

সুওয়ালঃ কোন নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয কিনা? আমাদের এখানে কতিপয় মাওলানা ফতওয়া দিয়েছেন যে, কোন নবী-রসূল, আওলিয়া তো দূরের কথা, স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওসীলা দিয়েও কোন দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই। (নাঊযুবিল্লাহ)

এখন আমাদের জানার বিষয় হলো, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ এবং ইজমা-ক্বিয়াসে ওসীলা দিয়ে দুয়া করা জায়িয থাকলে তার দলীল-আদিল্লাহ পেশ করে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযত করবেন বলে আশা রাখি।

জাওয়াবঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম কিংবা কোন আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া করা অবশ্যই জায়িয। শুধু জায়িযই নয় বরং দুয়া কবুল হওয়ার কারণও বটে। এমনকি তাঁদের অজুদ মুবারক, তাঁদের নাম মুবারক ও তাঁদের তবারুকসমূহও সৃষ্টিরাজির জন্যে মহান ওসীলা। এটা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দ্বারা প্রমাণিত।

কাজেই, যারা বলবে, নবী-রসূল ও ওলী-আওলিয়ায়ে কিরামগণের ওসীলা দিয়ে দুয়া বা আরজি পেশ করা জায়িয নেই তারা কাদিয়ানী অথবা তারা হাদীছ শরীফে বর্ণিত ৭২টি বাতিল ফিরক্বার কোন না কোন একটির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ তারা ওহাবী, খারিজী, শিয়া, মু’তাজিলা, মুশাবিহা, মওদুদী, জামায়াতী, দেওবন্দী, তাবলীগী, সালাফী, লা-মাযহাবী ইত্যাদির অন্তর্ভুক্ত। তারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত নয়।

নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণকে ওসীলা গ্রহণ করা প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফের বহু আয়াত শরীফে এবং বহু হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে। যার বর্ণনা বিগত সংখ্যাগুলোর মধ্যে পেশ করা হয়েছে।

মূলতঃ হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং সমস্ত উম্মতের ইজমা বা ঐক্যমত এবং আক্বীদা হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য মহান ওসীলা এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তোফায়েলে ওলীগণও ওসীলা।

যারা নবী ও ওলীগণের ওসীলা গ্রহণকে অস্বীকার করে থাকে এরা দু’ শ্রেণীতে বিভক্ত। এক শ্রেণী হচ্ছে, যারা ওসীলাকে একচ্ছত্রভাবে অস্বীকার করে থাকে। আর কেউ কেউ রয়েছে যারা কেবল বিছালপ্রাপ্ত বুযুর্গগণের ওসীলাকে অস্বীকার করে। তবে জীবিত বুর্যুগগণের ওসীলাকে সমর্থন করে। এবং এ উভয় শ্রেণী ওসীলা গ্রহণের উপর অর্থাৎ ওসীলার বিরুদ্ধে যেসব প্রশ্ন উপস্থাপন করে দলীল ও যুক্তি প্রদান করে থাকে সেসব প্রশ্নের খ-নমূলক জাওয়াব পেশ করা হলো।

৩. ওসীলা অস্বীকারকারীদের প্রশ্ন:

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

سواء عليهم استغفرت لهم ام لم تستغفر لهم لن يغفر الله لهم.

অর্থঃ হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাদের জন্য মাগফিরাতের দুয়া করুন বা না করুন তাদের জন্য উভয়ই সমান। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। (সূরা মুনাফিকূন-৬)

অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুয়া মাগফিরাতের ওসীলা নয়। যখন স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুয়া ক্ষমা বা মাগফিরাতের ওসীলা হচ্ছে না তাহলে অন্যান্য নবী-রসূল কিংবা ওলীগণের ওসীলার গ্রহণযোগ্যতা কোথায়?

এর জাওয়াবে বলতে হয়, এ আয়াত শরীফখানা ঐ সকল মুনাফিক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অস্বীকার করতো। এ আয়াত শরীফ-এর পূর্বে বর্ণিত হয়েছে-

واذا قيل لهم تعالوا يستغفرلكم رسول الله لووا رءوسهم ورأيتهم يصدون وهم مستكبرون.

অর্থঃ যখন ঐ সকল মুনাফিককে বলা হলো যে, তোমরা আস আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের জন্য মাগফিরাতের দুয়া করবেন। তখন উনার থেকে তারা অর্থাৎ মুনাফিকরা মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অহংকার করতঃ উনার দরবার শরীফে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকে। (সূরা মুনাফিকূন-৫)

অতঃপর আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যারা আপনার দরবার থেকে বেপরওয়া হয়ে যাবে আর আপনি আপন কৃপায় তাদের জন্য মাগফিরাতের দুয়া করেও ফেলেন, তবুও আমি তাদের ক্ষমা করবো না। কেননা আমার এটা কাম্য নয় যে, কেউ আপনার ওসীলা ছাড়া বেহেশতে প্রবেশ করুক।

এ আয়াত শরীফ দ্বারা তো ওসীলাই প্রমাণিত হচ্ছে।

আর মুসলমানদের জন্য তো আল্লাহ পাক তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সরাসরি দুয়া করতে বলেছেন। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-

وصل عليهم ان صلوتك سكن لهم

অর্থঃ হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!  আপনি মুসলমানদের জন্য দুয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনার দুয়া তাঁদের জন্য প্রশান্তি বা নাজাতের কারণ হবে। (সূরা তওবা-৩)

যদি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দুয়া বৃথা হতো তাহলে তার নির্দেশ দেয়া হলো কেন?

জনৈক কবি বলেছেন-

باراں کہ در لطافت طبعش خلاف  نیست

در باغ لالہ روید ودشورہ  بوم وخس

অর্থাৎ- বৃষ্টি তো উপকারী কিন্তু দুর্ভাগ্য লবণাক্ত ভূমি তা দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। এতে ঐ ভূমির নিজের দোষ, বৃষ্টির নয়। (চলবে)

মুহম্মদ জুনাইদ, চট্টগ্রাম।

সুওয়ালঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেবের কয়েক বছর পূর্বের ঘটনাকে টেনে এনে মিথ্যা ও মনগড়াভাবে উপস্থাপন করে রাজারবাগ শরীফ ও তাঁর অনুসারীদের ব্যাপারে যেসব অশ্লীল ও অশালীন মন্তব্য করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমার জানার বিষয় হলো-

  ৬. হাটহাজারী আক্বীদায় বিশ্বাসী কোন ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা?

কুরআন শরীফ, সুন্নাহ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে জাওয়াব দিয়ে বিভ্রান্তি বিস্তারকারীদের বিভ্রান্তি থেকে সর্বসাধারণের ঈমান হিফাযতে সহায়তা  করবেন বলে আমি আশাবাদি।

জাওয়াবঃ মাসিক মুঈনুল ইসলাম অক্টোবর-২০০৭ ঈসায়ী সংখ্যার জিজ্ঞাসা-সমাধান বিভাগে হাটহাজারীর খারিজী ও বিদ্য়াতী মৌলবীরা রাজারবাগ শরীফ, তাঁর অনুসারী ও বিশেষ করে রংপুর, সেনপাড়া মসজিদের ইমাম ছাহেব সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছে তা শুধু অশ্লীল-অশালীনই নয় বরং সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, বানোয়াট, দলীলবিহীন ও মিথ্যা। নিম্নে সুওয়ালে উল্লিখিত আপনার প্রতিটি সুওয়ালের দলীলভিত্তিক ধারাবাহিক জাওয়াব দেয়া হলো-

… ৬. হাটহাজারী আক্বীদায় বিশ্বাসী কোন ইমামের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা?

এর জবাবে বলতে হয় যে, শরীয়ত ইমামের জন্য কিছু শর্ত-শারায়েত নির্ধারণ করে দিয়েছে। যেমন ইমাম হওয়ার শর্ত-

১.         আক্বীদাঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বায়েদ মোতাবেক হতে হবে।

২.         দ্বীনি ইলমঃ কমপক্ষে ফরয পরিমাণ ইলম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয় প্রকার ইলম থাকতে হবে। বিশেষ করে নামাযের প্রয়োজনীয় সকল মাসয়ালা-মাসায়িল জানা থাকতে হবে।

৩.         ক্বিরায়াতঃ কুরআন শরীফ তিলাওয়াত বিশুদ্ধ হতে হবে।

৪.         আমলঃ আমল-আখলাক, সীরত-ছূরত, সুন্নত মোতাবেক হতে হবে। অর্থাৎ সর্বাবস্থায় সুন্নতের পাবন্দ হতে হবে।

৫.         ইখলাছঃ ইখলাছ হাছিল করতে হবে অথবা ইখলাছ হাছিলের জন্য কোশেশে মশগুল থাকতে হবে।

উপরোক্ত শর্তসমূহের মধ্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে আক্বীদা। অর্থাৎ ইমামকে প্রতি ক্ষেত্রে এবং প্রতি বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর আক্বীদায় বিশ্বাসী হতে হবে। এর খিলাফ একটি আক্বীদাও যদি ইমামের মধ্যে থাকে তবে উক্ত ইমামের পিছনে নামায পড়া বা উক্ত ইমামকে ইমাম হিসেবে রাখা জায়িয হবেনা।

স্মর্তব্য যে, আপনার উল্লিখিত হাটহাজারী মৌলবীরা যেহেতু পরিপূর্ণরূপে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে বা অনেক বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস বিরোধী তথা অসংখ্য কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী তাই বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয নেই।

নিম্নে হাটহাজারী মৌলবীদের কতিপয় কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা-ক্বিয়াস বিরোধী তথা কুফরী আক্বীদা তুলে ধরা হলো।

১. কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক প্রদত্ত ইলমে গাইব-এর অধিকারী। অথচ হাটহাজারী মৌলবীরা তা সম্পূর্ণরূপেই অস্বীকার করে থাকে। (নাউযুবিল্লাহ)

২. নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লহ পাক প্রদত্ত ক্ষমতায় হাজির-নাযির হওয়ার অসংখ্য প্রমাণ কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে থাকার পরও হাটহাজারী মৌলবীরা তা অস্বীকার  করে। (নাউযুবিল্লাহ)

৩. সরাসরি কুরআন শরীফ-এর আয়াত শরীফ, অসংখ্য ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও ইমাম-মুজতাহিদগণের অসংখ্য ক্বওল শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  নূরে মুজাস্সাম। অথচ হাটহাজারী মৌলবীরা বলে থাকে যে, “নবীজি মাটির তৈরী মানুষ।” (নাউযুবিল্লাহ)

৪. কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কারো মত নন। আর ব্যাপারে হাটহাজারী মৌলবীদের বক্তব্য হলো “নবীজি আমাদের মত সাধারণ মানুষ। (নাউযুবিল্লাহ)

৫. ক্বদমবুচী অসংখ্য ছহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা সুন্নতে ছাহাবী প্রমাণিত। অথচ হাটহাজারী মৌলবীরা এটাকে নাজায়িয, বিদয়াত ও র্শিক বলে ফতওয়া দেয়। (নাউযুবিল্লাহ)

৬. মীলাদ-ক্বিয়াম অসংখ্য দলীলের দ্বারা সুন্নত প্রমাণিত। কিন্তু হাটহাজারী মৌলবীদের আক্বীদা হচ্ছে- মীলাদ-ক্বিয়াম বিদয়াত ও শিরক। যারা মীলাদ-ক্বিয়াম করবে তারা জাহান্নামী হবে। (নাউযুবিল্লাহ)

৭. সরাসরি হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করেছেন। অথচ হাটহাজারী মৌলবীরা এ আমলকে বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম বলে ফতওয়া দেয়। (নাউযুবিল্লাহ)

৮. ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া, ইসলামের নামে ভোট নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, হরতাল করা, লংমার্চ করা, নারী নেতৃত্ব মানা শরীয়তে হারাম। অথচ হাটহাজারী মৌলবীরা এগুলো করছে এবং এগুলোকে জায়িয বলেও ফতওয়া দিচ্ছে। (নাউযুবিল্লাহ)

এছাড়াও আরো বহু কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ বিরোধী বা কুফরী আক্বীদায় তারা বিশ্বাসী। তাদের উল্লেখিত প্রতিটি কুফরী আক্বীদার প্রমাণ আপনারা পাবেন তাদের “ফতওয়া দারুল উলূম হাটহাজারী”নামক কিতাবে এবং “মাসিক মুঈনুল ইসলামে”।

কাজেই, যেখানে একটি কুফরী আক্বীদা থাকলেই তাকে ইমাম বানানো বা তাঁর পিছনে  নামায পড়া হারাম। সেখানে অসংখ্য কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী হাটহাজারী ইমামদের পিছনে নামায জায়িয হবে কিভাবে?

মূলতঃ উল্লেখিত কুফরী আক্বীদা যাদের মধ্যে থাকবে তাদের পিছনে নামায পড়লে নামায হবে না। তাই এরূপ লোকদেরকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেয়াও হারাম। যেসকল মসজিদে উল্লেখিত কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ইমাম রয়েছে সে সকল ইমামকে অতি সত্তর অপসারণ করে ছহীহ আক্বীদা ও আমল সম্পন্ন ইমাম নিয়োগ করা মসজিদ কমিটি, মুসল্লিসহ সকলের জন্যই ফরয ওয়াজিব।

 সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ

সুওয়াল – জাওয়াব বিভাগ